অথৈ সাগরে ভাসতে বিদেশ যাবেন না

অথৈ সাগরে ভাসতে বিদেশ যাবেন না

ফজলুল বারী: বাংলাদেশের পত্রিকা-টিভিতে নিউজ হয়েছে তিউনিশিয়ার উপকূলে সাগরে ভাসছেন বেশ কিছু বাংলাদেশি। কিছুদিন আগে ভূমধ্য সাগরে ডুবে বাংলাদেশিদের মৃত্যুর মানবিক কাহিনীর রিপোর্ট ছাপা-প্রচার হয়েছে। মানব পাচার চক্রের দৌরাত্ব সহ নানাকিছু আলাপ হচ্ছে টিভির টকশোগুলোতে। কিন্তু সে তুলনায় সংশ্লিষ্টদের অজ্ঞতা-লোভ এসব নিয়ে কম আলোচনা হয়। আদম ব্যাপারি অথবা দালাল অমুক অমুক শিকার ধরছে বিদেশ নিয়ে যাচ্ছে, এদের করুন পরিণতি দেখে শুনে আপনি উফ আহ করছেন, কিন্তু দালাল আপনাকে শিকার হিসাবে ধরতে পারেনা কেনো? পর্যালোচনাটি হওয়া দরকার বহু পাক্ষিক। অবৈধভাবে অন্ধের মতো বিদেশ যাত্রার বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। মিডিয়া সহ সম্ভাব্য সব মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে কোন পথটি বৈধ কোনটি অবৈধ। অবৈধভাবে বিদেশ গেলে হয়রানি-মৃত্যু ছাড়া সহজ গন্তব্য নেই। 

আমাদের দেশের বিজ্ঞজনরা এখন সারাক্ষন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে আতংকগ্রস্ত। বিপন্ন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে, প্রশাসনিক দক্ষতায় এক রকম দুর্নীতিমুক্ত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় কার্যক্রম চালিয়ে বিপুল প্রশংসিত দেশটি যেন এখন সেই দশ লিটার দুধ দেয়া গাভীর গল্পের দিকে ধাবমান। দশ লিটার দুধ দিয়ে গাভী যখন তা আবার লাথি মেরে ফেলে দেয় তখন সেটির কোন প্রশংসা থাকেনা। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে বেড়াতে আসেনি। জীবনের ভয়ে এসেছে। এখানে তারা থাকতেও চায় না। যে যেভাবে পারছে চলে যাবার চেষ্টা করছে। রোহিঙ্গারা মানবপাচার চক্রের পাল্লায় পড়ে বিভিন্ন দেশে যাবার চেষ্টা করছে এ নিয়েও অনেকে উদ্বিগ্ন। রোহিঙ্গারা এখানে থাকুক তা তারা চান না। কেউ চায় না। বার্মা তাদের নেবেনা এটাও সত্য। আবার রোহিঙ্গারা নিজেদের মতো করে অন্য কোথাও চলে যেতে চাইলে তাও দেবেননা! এটির এক কথায় প্রকাশ কী স্ববিরোধিতা হয়?

আবার রোহিঙ্গা না, দেশের লোকজন যে সারা বছরই অবৈধপথে বিদেশ পাড়ি জমাতে চায় সে উদ্বেগ বাংলাদেশে তুলনামূলক কম। রাজনৈতিক আশ্রয়ের আশায় বিভিন্ন দেশে গিয়ে বাংলাদেশিদের অনেকে নকল রোহিঙ্গাও সাজছে। কারন এই মূহুর্তে বিশ্বে রোহিঙ্গারাই প্রকৃত শরণার্থী। তাদের কোন দেশ নেই। বা তাদের দেশ তাদের স্বীকার করেনা। বাংলাদেশের যারা বিভিন্ন দেশে গিয়ে আশ্রয় চান তারা মূলত অর্থনৈতিক শরণার্থী। জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক চার্টারে যে সব দেশ স্বাক্ষর করেছে তারা জীবন বিপন্ন এমন রাজনৈতিক শরণার্থীদের আশ্রয় দেবার বিষয়ে দায়বদ্ধ। অর্থনৈতিক শরণার্থীদের ব্যাপারে নয়।

বাংলাদেশের মতো দেশের যে কারও বিদেশ যাবার মূল টার্গেটটি হলো উন্নত নিরাপদ জীবন। কাজের নিশ্চয়তা। দেশে  নানাকিছুর মতো কাজের বাজারটিও দুর্নীতিগ্রস্ত। আওয়ামী লীগ হলেই কাজ পাওয়া যায় না। টাকা দিতে হয়। দলের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে টাকা নেবার শরম-ঝুঁকি এড়াতে আওয়ামী লীগের নেতারা বিএনপি-জামায়াতের লোকজনকে টাকার বিনিময়ে কাজ-ব্যবসা দেয়। আবার কোন ঘটনা ঘটলে বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র খোঁজে! বিএনপি-জামায়াত যে এক যুগের  বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় নেই, কাজেই কথায় কথায় ষড়যন্ত্র না খুঁজে টাকাখোর নেতাদের খোঁজেনা! সাধারন লোকজনেরব্যবসা করতে গেলে পদে পদে বাধা-হয়রানি। সামাজিক রাজনৈতিক প্রশাসনিক নানা অন্যায়-জুলুম-অবিচারের কারনে রাষ্ট্র এখানে নাগরিকদের স্বপ্ন দেখায়না। কিন্তু এই অবস্থা থেকে মুক্তির আকাংখায় যারা দেশ ছাড়ছেন তাদের সিংহভাগ বিদেশ যাত্রার পদ্ধতিটি যে অবৈধ তা এরা জানেননা অথবা জেনেও ঝুঁকি নিয়ে যান।

আজকাল নানা দেশের প্রায় সব তথ্যই অনলাইনে পাওয়া যায়। অভিবাসন ইচ্ছুক সিংহভাগের সে ব্রাউজিং জ্ঞান নেই অথবা এরা দালালের কথা চোখ বুঝে বিশ্বাস করেন। দালাল যখন কাউকে টার্গেট করে তখন প্রথম শর্ত যেটি দেয় তাহলো বিদেশ যাবার পুরো তথ্যটি গোপন রাখতে হবে। এমন অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অনেক তথ্যের সত্যমিথ্যা যাচাই করতে অনেক সময় আমার সঙ্গেও যোগাযোগ করে। তখন এদের মূল বক্তব্যটি থাকে অমুকে বলেছে এটা এ রকম। এভাবে যাওয়া-থাকা যায়, কোন সমস্যা হয়না, ইত্যাদি। এক্ষেত্রে আসল তথ্যটি দিলেও তারা বিশ্বাস করেনা। উল্টো এমন প্রতিক্রিয়া দেখায় যে আমি বিদেশে আছি, ভালো আছি, আমি চাইছিনা সে বিদেশ যাক, ভালো থাকুক। এমন অনেকে এখন দালালের মাধ্যমে ভুলপথে বিদেশ গিয়ে বিভিন্ন দেশের জেলখানায় আছে।

অবৈধভাবে  ভারতে গেলেও যে কারও জেলখানায় যাবার ঝুঁকি থাকে, ভাষা-সংস্কৃতির কারনে ভারতের জেলখানা যত সহজ অন্য দেশের জেলখানা যে ততোটা কঠিন এটা অনেকে জানতে বুঝতে চান না। আপনি উন্নত জীবনের জন্যে বিদেশ যাচ্ছেন, বৈধপথে না গেলে যে গন্তব্য জেলখানা, সাগরে ডুবে মৃত্যু অথবা দাস জীবন, এসবের জন্যে কেনো ঝুঁকি নিয়ে বিদেশ যাবেন। এরচেয়ে দেশে সব্জি চাষ করা অনেক সহজ এবং লাভজনক।

বিদেশে কাজের জন্যে কেউ যেতে চাইলে সে কাজের বিপরীতে তার নামে ইস্যুকৃত একটি বৈধ ভিসা থাকতে হবে। এরসঙ্গে গুরুত্বপূর্ন হলো ভাষাজ্ঞান এবং সংশ্লিষ্ট কাজ সম্পর্কে ধারনা ও অভিজ্ঞতা। বাংলাদেশের শহরে-বন্দরে-গ্রামগঞ্জে বিপুল প্রচারিত একটি ভিসার নাম হচ্ছে ফ্রি ভিসা। এটি থাকলে নাকি বিদেশে গিয়ে যে কোন কাজ করা যায়। কিন্তু আদতে পৃথিবীর কোন দেশে ফ্রি ভিসা নামের কোন ভিসা নেই। এটি আসলে টুরিস্ট ভিসা। এই টুরিস্ট ভিসায় ভারতে গিয়ে আপনি কলকাতা বা যে কোন শহরে শাড়ি-থ্রি পিস কিনতে পারবেন। বিয়ার খেতে পারবেন। কিন্তু কোন কাজ করতে পারবেননা। বাংলাদেশেও কেউ একজন টুরিস্ট ভিসায় বেড়াতে আসতে পারবে। কিন্তু কাজ করতে পারবেনা। পৃথিবীর কোথাও টুরিস্ট ভিসায় গিয়ে কাজ করা যায়না। কিন্তু দালালরা একজন শিকার আদমকে কোন একটি দেশের টুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশ থেকে বের করে নিয়ে যায়। টুরিস্ট ভিসার মেয়াদ শেষে তার টাইটেল হয় অবৈধ।

আজকাল অনেক দালাল অনেক শিকার আদমকে টুরিস্ট ভিসায় সংযু্কত আরব আমিরাতে নিয়ে যাচ্ছে। সে দেশের তিরিশ দিন মেয়াদী টুরিস্ট ভিসার জন্যে বাংলাদেশি টাকায় ফী ২৮ হাজার ৩৪২ টাকা। কিন্তু দালালরা এরজন্যেই দুই আড়াই লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এরপর সেখানে তাকে ট্রান্সফার করছে ইনভেস্টরস ভিসায়। এটি সে দেশটায় বিনিয়োগকারী ব্যবসায়ীদের ভিসা। তিন বছর মেয়াদী এ ভিসায় থাকা অবস্থায় দেশটায় ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে হয়। আমিরাত সরকারের কাছে জমা রাখতে হয় ১৪ হাজার মার্কিন ডলার। ১৪ হাজার মার্কিন ডলার থাকলে আপনি দেশে নানাকিছু করতে পারেন। মরুর দেশের শ্রমিক হতে যাবার দরকার কী। কেউ তাদের এ কথাগুলো বুঝিয়ে বলছেনা। অথবা বললেও কেউ শুনছেনা। দালালরা আবার টাকার কথাগুলো একসঙ্গে বলেনা। শিকার জালের ভিতর নেবার পর দফায় দফায় বলে।

বিদেশ পৌঁছবার পর নিয়ে নেয় শিকারের পাসপোর্ট। এরপর শিকারকে দিয়ে দেশে ফোন করায়। কাঁদায়। এখন আবার তাদের কান্না ভালো দেখার জন্যে হোয়াটআপ, ইমো সহ নানান মাধ্যম আছে। তাদের কান্না দেখে মা কাঁদেন। পরিবারের সদস্যরা কাঁদেন। আমি কিছুদিন আগে এমন এক শিকার ছেলেকে নিয়ে কাজ করেছি। ছেলেটির বাবা বেঁচে নেই। দুই লাখ টাকায় টুরিস্ট ভিসায় তাকে দুবাই নিয়ে গেছেন তার চাচা। এরপর থেকে ইনভেস্টরস ভিসার টাকা নিয়ে পীড়াপীড়ি চলতে থাকে। ছেলেটির মা নিজের অবশিষ্ট অবলম্বন একমাত্র জমি বন্ধক দিয়ে পঞ্চাশ হাজার টাকা পাঠান। এরপর বাকি টাকা কাজ করে কিস্তিতে পরিশোধের শর্তে রাজি হন দালাল চাচা। কিন্তু আটকে রাখেন শিকার ভাইপোর পাসপোর্ট। না জেনে টুরিস্ট ভিসায় আরব আমিরাতে গিয়ে বিপদে পড়া এমন হাজার হাজার বাংলাদেশি যুবকের কান্নায় ভারাক্রান্ত মরুর দেশটি। এদের কারনে সমস্যার সৃষ্টি হয় বাংলাদেশের বৈধ শ্রম বাজারে।

 একেকজন বিদেশ চলে যাচ্ছেন,কিন্তু না জানেন ভালো ইংরেজি অথবা সে দেশের ভাষা। অনলাইনে ব্রাউজ করেও দেশটার তথ্য জানতে জানেননা। অতএব দালাল যা বলে সেটিই তাদের কাজ আইন-সংবিধান সবকিছু। বেআইনিভাবে কাজ করার জন্যে এরা ধরা পড়ে জেলে যাচ্ছেন ডিপোর্টেট হচ্ছেন। ভেঙ্গে চুরমার হচ্ছে বিদেশ যাবার স্বপ্ন। দেশে ফিরে এসে বলছেন নানান প্রতারনা নির্যাতনের গল্প। সে সব নিয়ে মানবিক রিপোর্ট হচ্ছে মিডিয়ায়। কিন্তু অবৈধভাবে বিদেশ গেলে যে এটাই নিয়তি তা সেভাবে তুলে ধরা হচ্ছেনা। উল্টো তুলে ধরা হচ্ছে নানান ভুল গল্প।

এক টিভিতে দেখলাম এক অভিবাসন এনজিও কর্মকর্তা বলছেন ইতালি সহ জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক চার্টারে স্বাক্ষরকারী দেশ মাত্রই নাকি যে কোন আশ্রয়প্রার্থীকে আশ্রয় দেয় বা আশ্রয় দিতে বাধ্য। এমন ঢালাও মন্তব্য অনেককে বিপদগামী করে। আশ্রয়প্রার্থী সেখানে পৌঁছার পর তাদের সঙ্গে মানবিক আচরন করা হয় এটা ঠিক আছে। কিন্তু চূড়ান্ত আশ্রয় পাবার পথটি মোটেই সহজ নয়। আর নৌকায় অবৈধপথে কোন দেশে প্রবেশ মানেতো প্রথম গন্তব্য জেলখানা।

অস্ট্রেলিয়া তেমন একটি দেশ যেটি জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক চার্টারে স্বাক্ষর করেছে। এর সুযোগ নিয়ে ইন্দোনেশিয়া থেকে এক সময় অভিবাসীরা আশ্রয়ের আশায় নৌকায় করে অস্ট্রেলিয়ার জলসীমায় পৌঁছবার চেষ্টা করতো। অস্ট্রেলিয়ার জলসীমায় পৌঁছবার পর তাদের আটক করে নিজেদের জাহাজে তুলে নিতো অস্ট্রেলিয়ার নৌবাহিনী। এদের নিয়ে আটক রাখা হতো ক্রিসমাস আইল্যান্ড নামের একটি দ্বীপের জেলখানায়। সেখানে তার কথা শোনার চেষ্টা করতো মানবিক অস্ট্রেলিয়া রাষ্ট্র। এরপর আশ্রয় পাবার মতো সত্যিকারের প্রার্থী থাকলে তাদের দেয়া হতো শরণার্থী মর্যাদা। অন্যদের আবেদন প্রত্যাখাত হলে তারাও আপিলের সুযোগ পেতো।

কিন্তু রাজনৈতিক আশ্রয় পেতে একজন লোক তার দেশ সম্পর্কে যত খারাপ কথা বলা সম্ভব তাই বলে। তার নামে দেশে নানান মামলা, তার দেশ একটি ভয়ংকর দেশ। দেশে গেলে তাকে মেরে ফেলা হতে পারে এসবও বললে। কিন্তু এসব দেশ যেহেতু জানে আশ্রয় পেতে অনেকে সাজানো মিথ্যা গল্প বলে তাই তার সব কথা লিখে তা তদন্তের উদ্যোগ নেয়া হয়। যেমন বাংলাদেশের আশ্রয়প্রার্থীদের বক্তব্য সত্য কিনা তা তদন্ত করে যথাযথ রিপোর্ট দিতে ডক্টর কামালের ফার্মের মতো বড় আইনি ফার্মগুলোকে দায়িত্ব দেয়া হয়। এর বিনিময়ে এই প্রতিষ্ঠানগুলো উচ্চহারে পারিশ্রমিক পায়। সে কারনে এরা কাজগুলো খুব যত্মের সঙ্গে করে। কাজেই একজন বিদেশে গিয়ে আশ্রয়ের জন্যে একটা সাজানো গল্প ফেললো আর সে আশ্রয় পেয়ে গেলো এমন ধারনা ঠিক নয়।

কিন্তু এসব আশ্রয় দেয়া নিয়ে দেশে দেশে অভ্যন্তরীন রাজনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। কারন এসব আশ্রয়ের সঙ্গে বিপুল পরিমানের অর্থনৈতিক বিষয়াদি জড়িত। এটি নিয়ে আপত্তি তুলতে শুরু করেছে বিভিন্ন দেশের নাগরিক সমাজ। তাদের করের টাকা রাষ্ট্র আশ্রয়প্রার্থী বিদেশিদের পিছনে খরচ করবে এতে তারা সম্মত নয়। এসব আশ্রয়কে কেন্দ্র করে আবার বিভিন্ন দেশের আইনশৃংখলা পরিস্থিতি সহ নানাকিছুর সমস্যা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ায় লেবার পার্টির সরকার ক্ষমতায় থাকতে অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ে পঞ্চাশটির বেশি নৌকা অস্ট্রেলিয়ার জলসীমায় আসে। অভিবাসন নিয়ে লেবার পার্টির নমনীয় নীতির কারনে তাদের উদ্ধার ও মানবিক সহায়ক ভূমিকার কারনে দলটি নির্বাচনে ক্ষমতাচ্যুতও হয়েছে। এখনকার ক্ষমতাসীন লিবারেল কোয়ালিশন অবৈধ অভিবাসীদের ব্যাপারে এতোটাই কড়া যে এমন কোন নৌকা এরা অস্ট্রেলিয়ার জলসীমায় ঢুকতেই দেয়না।

কিন্তু এরপরও এদেশে মতলবি প্রবেশ থেমে নেই। অস্ট্রেলিয়ায় ভিজিট ভিসা ফী বাংলাদেশি টাকায় ৮ হাজার ১৪০ টাকা। কিন্তু আমি সম্প্রতি এক বাংলাদেশি ছেলেকে পেয়েছি যে দালালকে পঁচিশ লক্ষ টাকা দিয়ে ভিজিট ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় এসেছে! এই ছেলেটি এসএসসি পাশ করেনি। ইংরেজি বলতে পারেনা। ঢাকার পাশের এক জেলার ব্যবসায়ী পরিবারের হিন্দু ধর্মাবলম্বী আওয়ামী লীগ সমর্থক পরিবারের ছেলেটি এখানে নির্যাতিত বিএনপি কর্মী হিসাবে সাজানো গল্প সহ রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্যে আবেদন করেছে। এরজন্য এক মাইগ্রেশন এজেন্টের বাংলাদেশি অফিস কর্মীকে দিয়েছে পাঁচ হাজার ডলার। এরমানে এভাবে সে এখানে একের পর এক টাকা দিতেই থাকবে।

এই ছেলেটি এখন এখানে ভাত খাওয়ার টাকা নেই বলে কান্নাকাটি করে একটা জব চায়। কিন্তু ইংরেজিভাষী এই দেশে সে যেহেতু ভাষা না জানা অজ্ঞ, মোটরবাইক, গাড়ি কিছুই চালাতে জানেনা, তাকে কোথাও জবের জন্যে পাঠানো যায়না। এখন দেশ থেকে তার তদন্ত রিপোর্ট আসবে। আওয়ামী লীগের কর্মীকে বিএনপির মোষ্ট ওয়ান্টড কর্মী বলে রিপোর্ট দেবেনা দেশের কোন প্রতিষ্ঠান, অতএব তার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হবে। আর যে পঁচিশ লাখ টাকা দালালকে দিয়ে ভিজিট ভিসা ম্যানেজ করে অস্ট্রেলিয়া এসেছে তাকে সোনার ডিমপাড়া রাজহাঁস দেখে টাকার জন্যে তাকে একেরপর কোর্টে নিয়ে যেতে থাকবে এখানকার মাইগ্রেশন এজেন্ট। অথচ এই ছেলেটি দেশের কোন হতদরিদ্র পরিবারের সদস্য নয়। পারিবারিক ব্যবসাসহ পরিবারটি এলাকায় প্রভাবশালী। কিন্তু অজ্ঞতা আর অবৈধ লোভের কারনে ছেলেটি এখানে অনিশ্চিত এক জীবনযাপন করছে। অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে আসা বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীদের আইনানুগ সংগ্রামের কারনে বাংলাদেশের ভিন্ন এক ভাবমূর্তি এমন গুটিকয় লোভীদের কারনে মলিন হয়। দেশের কর্মক্ষম ছেলেদের এই অনিশ্চিত জীবনে ঝাঁপ দেয়া ঠেকানো বাংলাদেশেই শুধু সম্ভব। যদি রাষ্ট্র চায়।


Place your ads here!

Related Articles

বাংলাদেশের রেমিট্যান্সে অষ্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশীদের অবদান ৫২মিলিয়ন ডলার

অজয় কর: অষ্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশীদের বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আয়ে অবদান মাত্র ৫২মিলিয়ন ডলার, বললেন প্রবাসী কল্যান ও ওয়েজ আর্নাস কল্যান বোর্ডের

ধলেশ্বরী-6

দিন ক্ষন আজ আর মনে করতে পারছিনা, সম্ভবত নব্বইয়ের শেষের দিকে, মফস্বল থেকে ঢাকাত এসেছি। ঢাকা শহরের অলি গলি তেমন

Ekushe Boi Mela (Book Fair)

28th February was the last day of the Book Mela (Book Fair) and every year it is held during the

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment