প্রবাসী বাংলাদেশিদের উৎসব

প্রবাসী বাংলাদেশিদের উৎসব

এডিলেডে যে এত বাংলাদেশি আছেন তা জানতোনা এডিলেডবাসী! বাংলাদেশিরা যে আনন্দমুখর উৎসব প্রিয় হয় তা তারা জানতোনা! সবচেয়ে অবাক এডিলেড ওভালের কর্মকর্তা কর্মচারীরা! এখানে এর আগে কখনো বাংলাদেশ দলের খেলা হয়নি বলে বাংলাদেশের দর্শক, তাদের বর্নিল সাজ-পোশাক, উৎসবপ্রিয় মানুষজন সম্পর্কে তাদের কোন ধারনা ছিলোনা! সোমবার তারা অবাক হয়ে পুরো ওভাল জুড়ে দেখেছে লাল সবুজ পতাকার নাচন! ওভালের কর্মকর্তা এন্ড্রু বললেন, সোমবারের খেলায় যে প্রায় চৌদ্দ হাজার দর্শক এসেছেন তাদের সিংহভাগই ছিলেন বাংলাদেশি! তাদের ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ চিৎকারে গান-নাচ-বাদ্য বাদন সবকিছু এক কথায় ওসাম। এমন প্রানবন্ত দর্শকদের কথা তাদের অনেক দিন মনে থাকবে।

সোমবার রাতে এ রিপোর্ট লেখার সময়টাতেও প্রবাসী বাংলাদেশিদের উৎসব চলছিল এডিলেড ওভালের বাইরে। হাজার হাজার মানুষ ঢোল- করতাল সহ নানান বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে নাচছিলেন আর বিজয় বন্দনা করছিলেন বাংলাদেশ আর বাংলাদেশ দলের! কারন দলে জিতেছে। সারাদিন ওভালের নানা অংশ জুড়ে যে সব বৃটিশ সমর্থকরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিলেন, হঠাৎ যেন তারা হাওয়া হয়ে যান! ওভালের সামনে উত্তাল নৃত্য চলছিল নানা বয়সী প্রবাসীদের। তাদের মুখে ছিল ক্রিকেটারদের বন্দনা। বিশেষ করে রুবেল, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ আর মুশফিকের। মেলবোর্ন, সিডনি, ক্যানবেরা সহ অস্ট্রেলিয়ার নানা শহর থেকে আসা প্রবাসীরা এই উৎসবে যোগ দেন। তাদের বেশিরভাগ আট থেকে বারো ঘন্টা গাড়ি চালিয়ে এই খেলা দেখতে এডিলেড এসেছিলেন! দীর্ঘ ভ্রমনজনিত ক্লান্তি ছিল চোখেমুখে! কিন্তু দল জয়ী হওয়াতে সব ভুলে তারা মেতে উঠেন উৎসব আনন্দে। তাদের অনেককে সুর করে গাইতে শোনা যায় ‘উসুলরে উসুল পয়সা উসুল’! ‘মাশরাফিরে মাশরাফি পয়সা উসুল’! ‘রুবেলরে রুবেল পয়সা উসুল’! উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অস্ট্রেলিয়ানকেও নেচে গেয়ে এই উৎসবে সামিল হতে দেখা যায়। উল্লেখ্য সোমবারের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ান দর্শকরা বাংলাদেশকে সমর্থন করেন। ক্রিকেটে ইংল্যান্ড দল তাদের বহু পুরনো জানি দুশমন! ভারতীয়-পাকিস্তানি দর্শকরা আবার ইংল্যান্ড দলকে সমর্থন করেন!

খেলা তখনো শুরু হয়নি, বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজছে। অ্যাডিলেইড ওভালে আসা প্রবাসী বাংলাদেশিরা উঠে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানালেন। ছবি: রয়টার্স

খেলায় বাংলাদেশ দল জয়ী হবার পর এডিলেড ওভালের বাইরে প্রবাসীরা একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরছিলেন আর ঈদের খুশির মতো কোলাকুলি করছিলেন! প্রবাসী বাংলাদেশি এস এ রহমান অরুপ বলেন, এডিলেড ওভালে এই প্রথম বাংলাদেশ খেলেছে এবং জিতেছে, এই খুশির বিষয়টি আমাদের সারা জীবন মনে থাকবে। কারন দেশের দল খেলেনি বলে এডিলেড প্রবাসী বাংলাদেশিদের খুব সংখ্যক এর আগে এডিলেড ওভালে ঢুকেছেন! ওভালের প্রথম বাংলাদেশি নারী সদস্যা নাজিয়া জেরিন হাসান বলেন, রোববার রাতে এক অনুষ্ঠানে মাশরাফিদের দেখা হয়েছিল। মাশরাফি তাকে তাদের জন্যে দোয়া করতে বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, জায়নামাজ নিয়ে যাবেন খেলার মাঠে। নাজিয়া বলেন এভাবে আমরা কতোভবে যে দলের জয় চেয়েছিলাম তা বলে বোঝাবার নয়। দল জিতেছে। আমাদের সবকিছু সার্থক।

মেলবোর্ন থেকে আসা ইমদাদুল হক সোমবার ওভালে বাঘ সেজে এসেছিলেন। তার দুই শিশু সন্তানকেও পরানো বাঘের সাজ-পোশাক। দেখে মনে হবে এক বাঘ তার দুই বাচ্চা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে! দল জয়ী হবার পর সামনে যাকে পাচ্ছিলেন তাকে জড়িয়ে ধরছিলেন ইমদাদুক হক। আর বলছিলেন, আমাদের সব কষ্ট সার্থক। জয় বাংলা। মেলবোর্ন থেকে আসা এ কে এম ইমরান বলেন, বাংলাদেশ দল এই প্রথম এডিলেড ওভালের মতো বড় কোন ভেন্যুতে জিতলো। এর সাক্ষী থাকতে পারলাম বলে ভালো লাগছে। দল জয়ী হওয়াতে এমন সব পাওয়ার আনন্দ ছিল সব প্রবাসীদের আনন্দ উচ্চারনে।


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment