জিম্মি বাংলাদেশ সরকার! জিম্মি শেখ হাসিনা!

জিম্মি বাংলাদেশ সরকার! জিম্মি শেখ হাসিনা!

ফজলুল বারী: বাংলাদেশে মানুষ নানাভাবে সরকার ও রাষ্ট্রের হাতে জিম্মি হয়। কিন্তু সরকারও যে দেশটায় জিম্মি হয় তা নিয়ে এ লেখায় আলোচনা করবো। পিঁয়াজ সংকটে একদল এরমাঝে সরকার-দেশের মানুষজনকে  জিম্মি করে বিপুল মুনাফা কামিয়ে নিয়েছে। একদল মুনাফাখোর মজুতদার, সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী পিঁয়াজ ইস্যুতে  ভিলেনের ভূমিকা নিলেও সরকার তাদের বুড়িও স্পর্শ করতে পারেনি। কিন্তু এরসঙ্গে যে দেশের একদল অদক্ষ আমলাতন্ত্র, সুদূর প্রসারী পরিকল্পনার অভাব, অথর্ব একজনের মন্ত্রিত্বও দায়ী হলেও এটি নিয়ে আলোচনা কম হচ্ছে। পরিবহন শ্রমিকদের ভয়েডরে সড়ক নিরাপত্তা আইনটি বেশকিছুদিন এক রকম লুকিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক অনুষ্ঠানে ঘোষনা দিয়ে বলেন নভেম্বরের ১ তারিখ থেকে আইনটি কার্যকর করা হবে। কিন্তু আইনটি কড়াকড়িভাবে কার্যকরের চেষ্টা শুরু হয় নভেম্বরের ১৮ তারিখ থেকে। এরসঙ্গে এর প্রতিবাদে খুলনা-কুষ্টিয়া অঞ্চলে শুরু করা পরিবহন ধর্মঘট এরমাঝে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে! এই ধর্মঘটের নেপথ্য সরকারি দলের পরিবহন মাফিয়া নেতা শাহজাহান খান, জাতীয় পার্টির মশিউর রহমান রাঙার যে কোনই আঙ্গুল নেই তা কেউ কী গারান্টি দিয়ে বলতে পারবে? সরকারের ভিতরে থাকা মাফিয়ারা এভাবে নেপথ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও খেলাধুলা করে। প্রধানমন্ত্রী এসব জানেননা-বোঝেননা তাও নয়।

এই যে আওয়ামী লীগ এখন টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এর মূল কৃতিত্বটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। সত্তুরোর্ধ বঙ্গবন্ধু কন্যা দিনেরাতে কমপক্ষে আঠারো ঘন্টা কাজ করেন। তাঁর অনুসারীরা দিনেরাতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ-শেখ হাসিনার আদর্শ বাস্তবায়নের শপথ আওড়ান অজস্রবার। কিন্তু কার্যত এদের বেশিরভাগ সুযোগ পেলেই শেখ হাসিনার নাম বেচে ধান্ধাবাজি করেন। গত দশবছরে এদের সিংহভাগের সম্পদ অবিশ্বাস্যহারে বেড়েছে। কতিপয় টকশোবাজ যারা এক সময় চাল-চুলোবিহীন ঘুরে বেড়াতেন তারাও এখন দেশের ধনাঢ্য বক্তিদের তালিকায়। শেখ হাসিনার নাম বেচে শেখ হাসিনার সঙ্গে এসবও যে বিশ্বাসঘাতকতা এটি কী তাদের একবারও মনে হয়? এর সব হিসাব যে আবার কোন না কোনভাবে শেখ হাসিনার কাছে চলে আসেন তা কী তারা এখন ভাবতে পারেন? সাংবাদিকও আছেন বেশ কয়েকজন। জাতির বিবেকের ফেরিওয়ালা। আয়নায় নিজের মুখ দেখেননা একবারও। ছোট দেশ। কোথাও কিছু লুকোনো থাকেনা।

চোখের সামনে ছাত্রলীগের শোভন-রাব্বানীর পরিণতি, যুবলীগের প্রতাপশালী ওমর ফারুক চৌধুরীর গণভবনে নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়া, সম্রাটদের হাতে হাতকড়া, স্বেচ্ছাসেবক লীগের ক্যাসিনো কাওসার-পঙ্কজ দেবনাথদের আর সংগঠনমুখো না হবার আদেশ দেখে কী ধান্ধাবাজরা কোন বার্তা পায়? আওয়ামী লীগের দূর্দিনের দিনগুলোতে রাজপথে যাদের পরিশ্রমী ভূমিকা ছিল পঙ্কজ দেবনাথ তাদের অন্যতম। শেখ হাসিনা তাকে মেহেন্দীগঞ্জ থেকে এমপি করে সংসদে নিয়ে আসেন। কিন্তু পঙ্কজ এর সুযোগে অবৈধভাবে কী পরিমান সম্পদ-দাপট অর্জন করেছেন, একবারও কী তিনি ভাবলেননা এসব শেখ হাসিনার জানার নানা ব্যবস্থা আছে! কুষ্টিয়ার আঞ্চলিক নেতা ছিলেন মাহবুবুল আলম হানিফ। তার এখন কত সম্পদ তা নিজেও ঠিকমতো হিসাব বলতে পারবেননা। আওয়ামী লীগের এমন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতার সংক্ষেপে একনাম হলো এরা শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রতারনা-বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।

বুয়েটে আবরার হত্যার দায় ছাত্রলীগ নামধারী কিছু গুন্ডার-খুনির। এদের একজনকেও ছাড় দেয়নি সরকার। আবরারের সহপাঠী-বুয়েটের সাধারন ছাত্রছাত্রীরা খুব স্বাভাবিক এর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। দেশবাসীকেও পেয়েছেন তাদের সঙ্গে। কিন্তু একটা আন্দোলন-প্রতিক্রিয়া নিয়ে কোথায় গিয়ে থামতে হয় তাদের বয়স তাদের ভাবতে শেখায়নি। বুয়েটের ছাত্রছাত্রীরা নামমাত্র খরচে পড়েন। তাদের পড়াশুনার খরচের প্রায় পুরোটাই বহন করে দেশের মানুষ-রাষ্ট্র। তারা ক্লাস করুক আর না করুক কোন ব্যয় একদিনের জন্যেও থেমে থাকেনা। অথচ এই বুয়েটের ছেলেমেয়েরা যখন অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে আসেন তখন ভিন্ন চরিত্র। একেকজন টের পান কত ধানে কত চাল! টিউশন ফীই প্রতি সেমিস্টারে বাংলাদেশের টাকায় দশ লাখ টাকার বেশি। প্রতি সপ্তাহে নিজেদের চলতে কমপক্ষে তিরিশ হাজার টাকা লাগে। এখানেও খুনের ঘটনা ঘটে। খুনের শিকারের উদ্দেশে ছাত্রছাত্রীরা শোক জানান। খুনের ঘটনার বাদবাকি দায়িত্ব পুলিশের। কিন্তু কোথায় কারও একটি ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখার সুযোগ নেই।  

আমাদের একজন ছাত্র নৃশংসভাবে খুন হয়েছে বলে আমরা একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ করে দেবো? অস্ট্রেলিয়া হলে কবে উনাদের ভিসা বাতিল করে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিতো। কারন সব দায়দায়িত্ব ছাত্রদের নয়। কার কী দায়িত্ব তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিকুলামে নির্দিষ্ট করে দেয়া আছে। বুয়েটের এই আন্দোলনকারীদের একটি দাবি সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। এটি বাংলাদেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কেউ হাইকোর্টে গেলেই বাতিল হয়ে যাবে। মাথা ব্যথার জন্যে মাথাকাটার মতো মুখরোচক এই দাবি সামরিক শাসনের সময় যুতসই। বুয়েটের এই ছেলেমেয়েরা পাশ করে কী কোন সাংগঠনিক রাজনৈতিক দলের সরকারের অধীনে চাকরি করবেনা?  সবার যার যার সীমারেখা নিয়ে অবগত থাকা ভালো। মানুষ হিসাবে আমরা অসীম কেউ নই। সবার চিন্তা ভাবনায় সীমাবদ্ধতা আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কথাগুলো বলা চেষ্টা করেছেন। কিন্তু জোর করেননি। কারন পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে প্রধানমন্ত্রীও যেন নিজেকে জিম্মি মনে করছেন। প্রধানমন্ত্রীকে জিম্মি করার চিন্তা ভালো নয়।

বাংলাদেশে দুর্নীতি নৈরাজ্যের অন্যতম খাত হচ্ছে পরিবহনখাত। দেশে যেহেতু জনসংখ্যা বেশি এ খাতে বিনিয়োগ-আয়ের ব্যবস্থা-টাকার ছড়াছড়ি বেশি। কিন্তু শুরু থেকেই এ খাতটি দুর্নীতিগ্রস্ত। পরিবহন ব্যবসার পণ্যের নাম যাত্রী। কিন্তু এ খাত এর পণ্য যাত্রীদের জিম্মি করতে অভ্যস্ত-পারঙ্গম। পয়সা দিয়ে গাড়িতে উঠে যাত্রীরা যেভাবে নিজেদের জিম্মি-অসহায় ভাবেন, পৃথিবীর আর কোন দেশে এটি সম্ভব তা তা খুঁজে বের করা কঠিন হবে। অথচ একজন যাত্রী যখন পয়সার বিনিময়ে গাড়িতে চড়েন, সঙ্গে নিজের অধিকারও কেনেন।  উন্নত বিশ্ব সবার আগে একদল দক্ষ-নিরাপদ-পথচারী-যাত্রী বান্ধব চালক সৃষ্টি করে। এসব দেশে চালক হবার প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল। একজনকে শতভাগ নিরাপদ মনে না হলে তাকে চালক হবার লাইসেন্স দেয়া হয়না। লাইসেন্স দিলেও অনিরাপদ প্রমান হলে সে লাইসেন্স বাতিল করে। এখানে কোন জরিমানাই বাংলাদেশের টাকায় পঁচিশ-তিরিশ হাজার টাকার কম নয়। একটি ডিমেরিটস পয়েন্ট কাটা গেলে সেটি ফেরত আসতে তিন বছর চার মাস সময় লাগে। একজন চালকের ১৩ টি পয়েন্ট কাটা গেলে সেই চালক তিন বছর চার মাস গাড়ি চালাতে পারেননা। চালক হতে যে সব ড্রাইভিং স্কুলে প্রশিক্ষন নিতে হয় এরসবই বেসরকারি। এক ঘন্টা প্রশিক্ষনে খরচ হয় তিন হাজার টাকার বেশি। একজন প্রশিক্ষনার্থীকে  কমপক্ষে প্রশিক্ষন নিতে হয় একশ কুড়ি ঘন্টা। জরিমানা আর ডিমেরিটস পয়েন্টের ভয়ে আমরা সারাক্ষন ভয়ে ভয়ে থাকি। কিন্তু বাংলাদেশের চালকরা সারাক্ষন সরকার ও রাষ্ট্রকে ভয় দেখায়! যে কোন মূহুর্তে গাড়ি বন্ধ করে দিয়েছে দেশ-জনগন-সরকারকে জিম্মি করে ফেলে।

বাংলাদেশে এতদিন সড়কে জরিমানার টাকার যে পরিমান ছিল তা কেউ আমল-পাত্তা দেয়নি। নতুন আইনে জরিমানার যে পরিমান এসেছে তা কড়াকড়িভাবে প্রয়োগ করা গেলে সড়কে শৃংখলা আসবে। কারন কোন চালকই জরিমানা দিতে রাস্তায় বেরোননা। সব চালককে সতর্ক থাকতে হবে যাতে জরিমানা না হয়। ডিমেরিটস পয়েন্টেসের ব্যাপারে আমরা সতর্ক থাকি কারন আমাদের ড্রাইভিং লাইসেন্সই যদি না থাকে তাহলে আমরা চাকরি-কাজ পাবোনা। এদেশে একজন ডাক্তার থেকে শুরু করে বেশিরভাগ চাকরি-কাজের ক্ষেত্রে ড্রাইভিং করাটা গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ যখন সড়কে শৃংখলা আনার উদ্যোগ নিয়েছে তখন পরিবহন ধর্মঘটের মুখে পড়েছে। আইন প্রণয়ন করবে সংসদ। আইন কার্যকর করবে পুলিশ-বিচার বিভাগ, পরিবহন শ্রমিকরা নয়। এরা এতোদিন সবাইকে জিম্মি করেছে। এখন শেখ হাসিনাকে জিম্মি করতে মাঠে নেমেছে। নেপথ্যে সরকারি মাফিয়া শাহজাহান খান-রাঙাগং। শেখ হাসিনা যদি এদের কাছে নিজেদের জিম্মি মনে করেন, এদের শক্তভাবে দমন না করেন তাহলে দেশের সড়ক শৃংখলার ভবিষ্যত অন্ধকার। বাংলাদেশের সড়ক নৈরাজ্যের আরেক কারন অনেক মিডিয়া কর্মী-পুলিশ নিজেদের আইনের উর্ধে মনে করেন। এদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে। কোনভাবে এই আইনের প্রয়োগ প্রশ্নে পিছনে চলে আসি বলা যাবেনা।

(প্রিয় প্রজন্ম, আমার এখন ফেসবুক একাউন্ট নেই। একাউন্ট ফেরত পাবার জন্যে অপেক্ষা করছি। কবে পাবো জানিনা। ফেসবুক একাউন্ট না থাকায় এক রকম বিচ্ছিন্ন জীবন কাটাতে হচ্ছে। আমি যাদের চাকরি-কাজের জন্যে চেষ্টা করি,  ব্যাহত হচ্ছে সে ইচ্ছা। এখন শুধু ভাইবার-ইমো-ই-মেইলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে। সবাই ভালো থেকো। সবাইকে ভালোবাসি।)

fazlulbari2014@gmail.com


Place your ads here!

Related Articles

Did we fail to detect political dynamics of India?

We are deeply disappointed not to have agreement on water sharing on Teesta and Feni Rivers. We are disappointed because

Dhaka Dialogue for LDC 4th UN Conference in Istanbul next year

The Least-Developed Countries are categorized by the UN on the basis of three criteria since 1971:• A low-income criterion, based

Quarantiny – Chapter 5 – Day 2

Saturday 18 April 2020 “Quarantine being colour blind,constantly reminding how colourful the world is” There was a knock on the

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment