ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রিয়া

ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রিয়া

ফজলুল বারী: প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে দায়ের করা রাষ্ট্রধর্ম মামলা খারিজ করেছে আদালত। এটি যথাযথ হয়েছে। কারন এখনই এ মামলা ভুল বার্তা দেবে। প্রিয়া মার্কিন সরকারের আমন্ত্রনে সেদেশে গেছেন। ঢাকার মার্কিন দূতাবাস এরমাঝে বিবৃতি দিয়ে বলেছে তারা তাদের দেশে আমন্ত্রিতদের মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। বাংলাদেশ সরকার বলেছে প্রিয়া ফিরলে এ নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। কাজেই এর আগে মামলা মানে সরকারের অবস্থানের স্ববিরোধিতা। আর এখন এই মামলাকে নিয়ে যে বার্তাটি বিদেশে যেত তাহলো ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে অভিযোগ করায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বাংলাদেশে! আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করার মতো। তাহলো দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিয়ে সদা চিন্তিত বিএনপি-জামায়াত-ডক্টর কামালগং এ ইস্যুতে চুপ! এরমানে বিদেশিদের কাছে তারা বরাবর এমন ঢালাও অভিযোগই করেন। প্রিয়ার ভিডিও প্রকাশ হয়ে গেছে। তাদেরটা প্রকাশ হয়না। অতএব এখন এই মূহুর্তে মামলাটি সরকার এবং দেশের জন্য একটি ফাঁদ হয়ে যেতো পারতো। 

প্রিয়া সাহা এখন বাংলাদেশের জনমানুষের কাছে ভীষন অপ্রিয়া। কারন তিনি দেশের ইস্যুতে হস্তক্ষেপ চেয়ে নালিশ করেছেন বিদেশিদের কাছে তথা আমেরিকার পাগল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে! মোটামুটি দেশের প্রায় বুদ্ধি-বিবেকবান প্রায় মানুষই এতে ক্ষুদ্ধ হয়েছেন। সংখ্যালঘু নির্যাতনের ইস্যুটি সত্য বাস্তব। কিন্তু প্রিয়ার তথ্য আজগুবি এবং ভয়ংকর। প্রিয়ার প্রোফাইল দেখে হাসিও পেয়েছে। একদা ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। শ্লোগান দিতেন মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে। হাত গুটাও মার্কিন ফুরিয়ে গেছে তোমার দিন। সেই প্রিয়া আজ মার্কিন প্রেসিডেন্টের সামনে যেতে পেরে কী নতজানু। আব্বু বলে প্রণাম-কদমবুচিটাই বাকি রেখেছেন! কমিউনিস্ট পচে গেলে নাকি দূর্গন্ধ বেশি বেরোয়।

 এক্ষেত্রে নিজস্ব স্বার্থে প্রিয়া ক্ষতি করেছেন বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। অংক পরীক্ষার খাতায় ইতিহাস লিখলে এমন ঘোড়ার আন্ডা পাওয়া যায়। এভাবে সরাসরি  মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে আর্জি জানিয়ে প্রিয়ার হয়তো আমেরিকায় রাজনৈতিক আশ্রয় হবে। তার দুই মেয়েরও নিরাপত্তা হয়ে যাবে আমেরিকায়। এক পর্যায়ে স্বামীকেও নিয়ে যাবেন। কিন্তু এতে দেশের নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের কোন উপকার হবেনা। ডোনাল্ড ট্রাম্প সাহেব অথবা আমেরিকা বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপদ করে দেবেনা। আর বাংলাদেশের মানুষের ওপর আমেরিকান প্রভাব শূন্য। আমেরিকার প্রভাব থাকলেতো একাত্তরে বাংলাদেশ স্বাধীনই হতোনা। উল্টো দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছেন অপ্রিয়া প্রিয়া সাহা। সোশ্যাল মিডিয়ার চেহারা দেখেই সে ধারনা পাওয়া যাচ্ছে। কিছু সরলমনা সংখ্যালঘু প্রিয়ার পক্ষ নিয়েছেন। কিন্তু দেশটা যে সবার। দেশের সমস্যার সমাধান করতে হবে দেশের মানুষজনকে সঙ্গে নিয়ে। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দিয়ে নয়। যে বাংলাদেশ কোথায় অবস্থিত সেটাই জানেনা। 

প্রিয়া কান্ড প্রকাশের পর দেশজুড়ে গবেষনা হচ্ছে এই মহিলা সেখানে ট্রাম্পের সামনে গেলোইবা কী করে। এটি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র কিনা, ইত্যাদি। ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের বিবৃতি প্রকাশের পর এ নিয়ে আর কারও মনে কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। সজিব ওয়াজদ জয়ও বিষয়টি ইঙ্গিত করেছেন। আমেরিকার ওয়াশিংটন ডিসির কর্মসূচিতে সংগঠনগতভাবে  আমন্ত্রিত হিসাবে বাংলাদেশ থেকে গেছেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের তিন প্রতিনিধি। প্রিয়া গেছেন ভিন্ন আমন্ত্রনে। এই আমন্ত্রনের পিছনে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের ভূমিকা আছে। প্রিয়ার বাড়ি পোড়ানোর ঘটনার নেপথ্যের সত্য ঘটনার রিপোর্ট এখন নানান মিডিয়ায় হচ্ছে। কিন্তু ঘটনার পর মিডিয়াগুলোয় এ নিয়ে হয়েছে কাঁদো কাঁদো টাইপ রিপোর্ট। ওইসব রিপোর্টে প্রভাবিত হয়ে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস সেদেশে স্টেট ডিপার্টমেন্টের কাছে প্রিয়ার নাম পাঠিয়েছে। বিভিন্ন দেশের নির্যতিত সংখ্যালঘুদের তালিকাটি করেছে স্টেট ডিপার্টমেন্ট। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সামনে যেতে পারার খুশিতে প্রিয়ার আবেগটি যে অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েছে তা এখনকার সত্য। প্রিয়া কী আশা করেছিলেন এভাবে বললে ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধে ইরাকের মতো সৈন্য পাঠাতেন? না বাংলাদেশের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করতেন? মোটা বুদ্ধি। আমেরিকা কী বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা-বানিজ্য বিনিয়োগ জানেনা? দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলায় মার্কিন সাহায্য চাইলেওতো এতোক্ষন তাকে নিয়ে হে প্রিয়া হে প্রিয়া প্রান প্রিয়া’ রব উঠতো। উল্টো দেশজুড়ে শুরু হয়েছে ছিঃ প্রিয়া ছিঃ প্রিয়া ঘৃনা।

অবশ্য এরমাঝে স্পষ্ট আমেরিকায় রাজনৈতিক আশ্রয়ের ক্ষুদ্র ব্যক্তিগত স্বার্থে প্রিয়া দেশের সংখ্যালঘু সমস্যার মাথা বেঁচেছেন। বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় যারা চায় তারা এভাবেই দেশকে ভয়ংকর খারাপ হিসাবে চিহ্নিত চিত্রিত করে। তারেক রহমানের রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদনটি আনা গেলে ঠিক এমনটিই জানা যেতো। কিন্তু দেশ যে সবার ওপরে। মাথার মনি। এরজন্যে দেশে হাজার সমস্যা থাকলেও প্রিয়া কান্ডে ক্ষুদ্ধ হয়েছেন দেশবাসী। এই মূহুর্তে দেশে ফেরার কোন পরিস্থিতিই নেই প্রিয়া সাহার। এটি তার দাওয়াতের উদ্যোক্তা ঢাকার মার্কিন দূতাবাসও ঢের বুঝতে পারছে। অতএব দেশের সংখ্যালঘুদের মাথা বেচা প্রিয়া সাহার স্বপ্নের মার্কিন রাজনৈতিক আশ্রয়টি মঞ্জুর হয়ে যাবে। হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহা হয়ে যাবেন আমেরিকায় আশ্রয়প্রাপ্ত নতুন শরণার্থী। এমন কত ক্ষুদ্র ব্যক্তিগত স্বার্থে প্রিয়ার মতো অনেকে বিদেশে নিজের দেশ-সম্প্রদায়কে বিক্রি করে।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সমস্যা আছে। অনেক সমস্যা। বাইরে সারাক্ষন মিষ্টি মিষ্টি কথা বললেও এখনকার গুরুত্বপূর্ন অনেকেও তার হিন্দু সহকর্মী-বন্ধুকে মালাউন-ড্যাডা এসব ছাড়া কথা বলেননা। আবার অনেক সংখ্যালঘু তাকে যতোই ভালোবাসা দিননা কেনো মনের দিক থেকে সে কাউকে সহজে আস্থায় নিতে পারেনা। রাষ্ট্র ধর্মসহ নানাকিছুতো আছে। বিশ্বজিৎকে কোপানো হয়েছিল শরীরের বাম দিকে। পোষ্টমর্টেম রিপোর্টেও বামদিকে আঘাতের কথা উল্লেখ করা। কিন্তু বিশ্বজিৎ হিন্দুতো, তাই পুলিশ সুরতহাল রিপোর্টে লিখেছিল আঘাত ডানদিকে। অতএব মামলা শেষ। 

বাংলাদেশের ব্রিটিশ আমলের ফৌজদারি দন্ডবিধি ভিডিও ফুটেজ দেখেনা। ভিডিও ফুটেজ তখন ছিলোনা। ফৌজদারি দন্ডবিধি দেখে পুলিশ রিপোর্ট। বিচারক নিজের ঘরের টিভিতে ঘটনা দেখেছেন। কিন্তু বিচার করেছেন পুলিশ রিপোর্টের ভিত্তিতে। এভাবে দেশে পদে পদে সংখ্যালঘুর অনেক সমস্যা। সবদেশেই সংখ্যালঘুদের সমস্যা থাকে। রাষ্ট্র সব সময় এসব নিয়ে তড়িৎ ভূমিকা নেয় না। কারন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ন দায়িত্বশীলরা সংখ্যাগুরুর দলের। সরকারি দলের শোপিস সংখ্যালঘু নেতারা চামচা টাইপের হয়। সবকিছুতে আহা বেশ বেশ বলা তাদের চাকরির দায়িত্ব। আবার রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্নরা তৎপর হলেও তাদের আদেশ-নির্দেশ ঘটনাস্থলে যেতে যেতে সংখ্যালঘু শেষ। কিন্তু এই সমস্যাগুলোর সমাধান বের করতে হবে জনগনের সমর্থনে। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দিয়ে নয়। দেশটা এদেশের জনগনের । প্রিয়া সাহা, তোমার জন্যে ঘৃনা। অংক বোঝো? তিন কোটি অত লাখ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান নিঁখোজ হলে দেশে কী আর ভিন্ন সম্প্রদায়ের কেউ থাকে? আসলে তুমি এখন নিখোঁজ প্রিয়া সাহা। বাংলাদেশের মানুষের মন থেকে নিখোঁজ। সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে আমরা যারা কাজ করি, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে ফেরত আনার জন্যে কাজ করি, তাদেরও তুমি বিব্রত বিক্ষুদ্ধ করেছো ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রিয়া। তুমি আর আমার বাংলাদেশের কেউনা। 


Place your ads here!

Related Articles

Happy Birthday to Joan, the most loved mum

জোন মর্গানের জন্মদিন ৬ই আগষ্ট। এইবার তার ৯৪তম জন্মদিন পালন করা হবে। ইনি শুধু তার সন্তানদের কাছে নন, পরিচিত জনদের

Why did Mamata Didi’s visit to Dhaka?

The West Bengal chief minister Mamata Banerjee (Didi) arrived in Dhaka on 19th February for a three day visit and

Judgment by the Court of Arbitration on sea boundary between Bangladesh and India: Victory for fairness and justice

The Permanent Court of Arbitration (PCA) at The Hague officially conveyed the result to both parties on 7th July 2014.

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment