ক্ষমা চাইতে হবে ডক্টর কামাল

ফজলুল বারী: শুক্রবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে ডক্টর কামালের অবিশ্বাস্য এবং ঔদ্ধত্ব্যপূর্ন ভাষায় সাংবাদিকদের হুমকি দেবার ঘটনায় দেশজুড়ে এখন চাঞ্চল্য চলছে। বিশিষ্টজনরা হতবাক ডক্টর কামালের মতো একজন লোক তরুন একজন প্রশ্নকর্তা সাংবাদিককে এভাবে হুমকি দেন কী করে? দেশের সাংবাদিকদের একাংশ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে এর নিন্দা করেছে। এর নিন্দা করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দূঃখ প্রকাশ করেছেন ডক্টর কামাল। শনিবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন শুক্রবার বুদ্ধিজীবী স্মৃতি সৌধে তিনি জামায়াত প্রসঙ্গে ওই প্রশ্নের জবাব দিতে চাননি। বারবার প্রশ্ন করাতে তিনি যা বলেছেন তাতে কেউ আহত হলে তিনি দূঃখিত। সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ক্ষোভের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ডক্টর কামাল শনিবার ঐক্যফ্রন্টের ময়মনসিংহ রোড মার্চে যাননি। সোমবার তিনি রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎ চেয়েছেন। এ লেখায় এ সব বিষয়ে আলোকপাত করবো।
ডক্টর কামাল বলেছেন শুক্রবার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতি সৌধে তিনি জামায়াত ইস্যুতে প্রশ্নের জবাব দিতে চাননি! এটা তার স্খলন আড়াল করার কষ্টকর ব্যর্থ চেষ্টা ছাড়া কিছু নয়। কারন তিনি এখন যে জোটের নেতা বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকারী যুদ্ধাপরাধীদল জামায়াতও এর শরীক। ডক্টর কামালের মার্কা ধানের শীষ, জামায়াতেরও মার্কা ধানের শীষ। কাজেই নিজের রাজনৈতিক হত্যার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের অস্তিত্ব রক্ষার ধান্ধাবাজির ঘোলা পানিতে নেমেছেন বঙ্গবন্ধু সরকারের আইনমন্ত্রী । নোংরায় কাপড় ভিজেতো নোংরা হবেই। ডক্টর কামাল বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী জামায়াত প্রসঙ্গের প্রশ্নের উত্তর এড়াতে গিয়ে দেশের তরুন সাংবাদিকদের নীতি নৈতিকতা নিয়ে ধৃষ্ট প্রশ্ন তুলেছেন! জানতে চেয়েছেন তাকে এ প্রশ্ন করতে তারা কতো টাকা নিয়েছে! আইন ব্যবসায়ী ডক্টর কামাল টাকা ছাড়া কোর্টে দাঁড়াননা। টাকাওয়ালা অপরাধী সোনা চোরাচালানী, ইয়াবা ব্যবসায়ী কোন কিছুতে তার নিরাসক্তি নেই। অথবা কেউ একজন ব্যাংকের টাকা মেরেছে অথবা রাষ্ট্রের মোটা অংকের টাকা কর ফাঁকি দিয়েছে! সেখান থেকে বাঁচতে দাগী এসব অপরাধী মোটা টাকায় ডক্টর কামালকে ভাড়া করে!
তিনি যেমন এভাবে ভাড়ায় খাটেন সেজন্য সবাইকে তিনি এমন ভাড়ায় খাটা মনে করেন! নতুবা ডক্টর কামাল কিভাবে তরুন সাংবাদিকদের কটাক্ষ করে বলতে পারেন, এমন প্রশ্ন করার জন্যে তারা কত টাকা পেয়েছে! ঐক্যফ্রন্টের নেতা হিসাবে উঠতে বসতে তিনি তরুন ভোটার তরুন ভোটার বলে মুখের ফেনা তোলেন! মুখে বলেন তরুন ভোটাররা আগামী নির্বাচনের নিয়ামক শক্তি হবে। তরুনদের ক্ষমতায়ন ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম লক্ষ্য, ইত্যাদি। আর তরুন সাংবাদিকরা প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করলে জবাব দিতে তার শরম লাগে! উল্টো তাদের সততা নিয়ে কটাক্ষ! এই ধৃষ্ট বক্তব্য প্রত্যাহার করেননি ডক্টর কামাল! তার অন্তত জানা উচিত তার মতো নানা ধান্ধার সঙ্গে জড়িত বয়স্কদের তুলনায় দেশের তরুনরা, তরুন সাংবাদিকরা অনেক সৎ এবং পরিচ্ছন্ন। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে ফুল দিতে গেছেন ডক্টর কামাল। তার নেতৃত্বে যে বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীদের দল জামায়াতও যে জোটবদ্ধ, এ প্রশ্নটা সেখানে প্রাসঙ্গিক ছিল। সাংবাদিকরা সে প্রশ্নতো তাকে করবেই। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সন্তানরা এ নিয়ে তাদের অসন্তোষ জানিয়েছেন। তাদের প্রশ্নের উত্তর তাকে দিতেই হবে। ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা সেখানে আরেক ধৃষ্ট হুমকি দিয়েছেন! বলেছেন এই সাংবাদিকদের আগামীতে দেখে নেয়া হবে!
ডক্টর কামালের মতো একজন ব্যক্তি যার মূল তকমা সংবিধান প্রনেতা, তার কাছে এটি সুস্থ চিন্তায় ভাবা যায়? না এলোমেলো জোটের নেতা হয়ে ডক্টর কামাল এখন নিজেই মানসিকভাবে অসুস্থ? তার আর্থাইটিজের সমস্যার কথা আমরা জানি। মানসিক সমস্যা আমরা জানিনা। এ সমস্যা তার এ বয়সে হতেই পারে। সে চিকিৎসাও তার জরুরি মনে হয়। অবশ্য মুখে বঙ্গবন্ধু, মনে অন্যকিছু নিয়ে তার এখন যা রাজনৈতিক মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা তাতে চিকিৎসায় রোগ সারাইও সহজ নয়। শুক্রবার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতি সৌধে সে বিষয়টিই যেন প্রকাশ হয়ে পড়েছে। রোগটির প্রকাশ আবার কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়েছে সাংবাদিক কটাক্ষে!
যুদ্ধাপরাধীদের দল নিয়ে জোড়াতালির এই ঐক্যের শুরু থেকে এর নেতারা একের পর এক সাংবাদিকদের সততা নিয়ে আক্রমন-কটাক্ষ করেছেন! একাত্তর টিভির একাত্তর জার্নালে সাংবাদিক নজরুল কবিরের প্রশ্নের জবাবে বেসামাল আ স ম আব্দুর রব তা শুরু করেছিলেন। ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন নারী সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে ধৃষ্ট কটাক্ষ করে জেলে গেছেন। এরপর এ দলে যোগ দিলেন স্বয়ং ডক্টর কামাল হোসেন! যিনি সংবিধান প্রনেতা হিসাবে দেশে সম্মানীত ছিলেন। মানবাধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলতেন! কিন্তু এ ব্যাপারে তার মুখোশ প্রথম প্রকাশ পায় মাসুদা ভাট্টিকে অশোভন কটাক্ষের জন্যে তিনি ব্যারিষ্টার মইনুলের নিন্দা করেননি। উল্টো মইনুলকে গ্রেফতারের নিন্দা করেছেন! এখন তিনি প্রশ্নকর্তা তরুন সাংবাদিককে হুমকি দিয়ে বলেছেন আগামীতে তিনি তাকে দেখে নেবেন!
ডক্টর কামালের ধৃষ্ট বক্তব্যের প্রতিবাদে শনিবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দেশের সাংবাদিক নেতৃত্বের একাংশের উদ্যোগে একটি প্রতিবাদ হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত সমর্থক সাংবাদিকরা সেখানে ছিলেননা। বাংলাদেশের দূর্ভাগ্য দেশের সাংবাদিকরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এক জায়গায় দাঁড়াননা বা দাঁড়াতে পারেননা। পত্র-পত্রিকার চেহারাও একই রকম। যে পত্রিকাগুলো শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেনের গ্রেফতারের বিরুদ্ধে লিখেছে! ড কামালের সাংবাদিকদের কটাক্ষ-হুমকি নিয়ে এদের ভূমিকা এরমাঝে স্পষ্ট। তরুন সাংবাদিকদের একজোট হয়ে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর বিকল্প নেই।
সাংবাদিকদের হুমকি দিয়ে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ভয়ে ডক্টর কামাল ঐক্যফ্রন্টের ময়মনসিংহমুখী রোড মার্চে যাননি। বিএনপির প্যাডে এখন রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎ চেয়েছেন! রাষ্ট্রপতি এখন তাকে সাক্ষাৎ দেবেন কীনা জানিনা তবে দেশের আশাভরসার স্থল বঙ্গভবন একটি নৈতিক অবস্থান নিতে পারে আগে। ডক্টর কামালকে আগে দেশের সাংবাদিকদের সততাকে কটাক্ষ-সাংবাদিকদের হুমকি দেবার বক্তব্য প্রত্যাহার করে এরজন্যে ক্ষমা চাইতে হবে। দেশের প্রিয় প্রজন্ম তরুন সাংবাদিকদের বলি তোমাদের প্রতিবাদ অব্যাহত রাখতে হবে। সাংবাদিকতা পেশার মর্যাদা-নিরাপত্তার জন্যে এটি গুরুত্বপূর্ন।
Related Articles
Natun Aloy Alokito Bangladesh Chai
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী: নতুন আলোয় আলোকিত বাংলাদেশ চাই ৯/১১-র ঘূর্ণিঝড় এবং ১/১১ সুনামি আর ২৯শে ডিসেম্বরের নির্বাচন আমাদেরকে যে নতুন আলো
এক ধুনক যুবকের কিছু স্মৃতি
বাংলাদেশে এই কিছুদিন আগেও ধুনকেরা পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে লেপ-তোষক বানাত। হেমন্ততের শেষে কিংবা শীতের শুরুতে গ্রামে গ্রামে ফেরী করে বেড়াত
Since when Priyo Australia has become so politically polarised to publish such biased articles? There were many situations when BAL leaders have threatened, imprisoned and beaten up journalists. Balanced rational writing is expected in this platform.