উল্টো পথের সচিব

উল্টো পথের সচিব

ফজলুল বারী: জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকের জনপ্রিয় একটি উদ্যোগের নাম ফেসবুক লাইভ। এর মাধ্যমে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা নিজেদের উপভোগ্য নানা অভিজ্ঞতা বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারেন। আমিও প্রায় ফেসবুক লাইভে আসি। তবে তা নিজেকে দেখানোর জন্যে না। নিজেকে দেখানোর মতো অতো সৌম্য সুন্দর আমি না। ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়া নামের ছবির মতো সাজানো সুন্দর দেশটির পথঘাট সহ নানা কিছু দেখানোর চেষ্টা করি। আমরা সবাই স্বপ্ন দেখি আমাদের বাংলাদেশটাও একদিন এরচেয়েও অনেক সুন্দর-উন্নত হবে। এখানে এই সিডনিতে আমার গাড়িতে চলার পথে বাজে বাংলাদেশের গান। এর একটি কারন আমাদের বয়সীদের দেহটা বিদেশে থাকলেও মনটা সারাক্ষন বাংলাদেশে। আরও সহজ করে বললে বিদেশ গেলে দেশটাকে অনেক বেশি অনুভব-মিস করা হয়। দেশ থেকে সুহৃদ-বন্ধুরা যখন নানা উপহার পাঠাতে চান তাদের কাছে বাংলাদেশের নানা সাইজের পতাকা আর গানের সিডি চাই। এসব গানই আমি চলার পথে গাড়িতে বাজাই। ফেসবুক লাইভে অস্ট্রেলিয়ার সিডনির সাজানো-সুন্দর পথঘাটের সঙ্গে বাংলাদেশের গান খুব পছন্দ করেন আমার বন্ধুরা।

ফেসবুক লাইভে আবার গান বাজানোর বিপদও আছে। যে সব গানের কপি রাইট করা আছে তেমন গান যেমন রবীন্দ্র সংগীত, ভারতীয় জনপ্রিয় শিল্পীদের পুরনো দিনের জনপ্রিয় গানগুলোর বেশিরভাগই কপি রাইট করা। এসব গান লাইভে ব্যবহার করলে তা ধরা পড়ে ফেসবুকের প্রোগ্রাম করা ফাঁদে। ফেসবুক তখন শাস্তি হিসাবে লাইভ করার ব্যাপারটি তিনদিনের জন্য ব্লক করে রাখে। এর কারনে সিডি অনেক থাকলেও সব গান ফেসবুক লাইভে ব্যবহার করা যায়না।

আমার ফেসবুক লাইভে ভিউয়াররা তাদের মন্তব্যে সবচেয়ে যেটি উপভোগ করেন তাহলে অস্ট্রেলিয়ার ট্রাফিক ব্যবস্থা। ‘এতো সুন্দর পথ, সবাই কি সুন্দর ট্রাফিক আইন মেনে চলে’ এমন মন্তব্য অনেকে প্রায় করেন। এরমাধ্যমে সুন্দর একটি ট্রাফিক ব্যবস্থার জন্যে প্রকাশ পায় তাদের মনের আকুতি। অস্ট্রেলিয়ার ট্রাফিক ব্যবস্থা সুন্দর-আইনানুগ এটি অনেকদিনের চেষ্টায় গড়া। প্রয়োগেও কড়াকড়ি আছে। আইন এখানে সবার জন্যে সমান। আপনি বিচারপতি হয়েছেন বা সচিব হয়েছেন তাতে কী হয়েছে। রাস্তার আইন বিচারপতি বা সচিবের জন্যে আলাদা কিছু নেই। বাংলাদেশের মতো দেশে আইনের খড়গের টার্গেট আমজনতা। ঘড়েল প্রভাবশালীরা আইন মানেননা অথবা আইন যে তারা মানেনা এটিকে তারা তাদের প্রতাপের ব্যারোমিটার হিসাবে দেখাতে চায়। আপনি সাংবাদিক হয়েছেনতো কী হয়েছে? গাড়িতে আবার সাংবাদিক, প্রেস এসব লিখে রেখেছেন কী কারনে? বেঁচে গেছেন ভাইজানেরা, লোকজন আপনাদের ভয় পায় বলে কিছু বলেনা। কিন্তু এখন বলতে শুরু করেছে। বিচারপতি, সচিবরা আইন মানেনা এসব কী আগে কখনো মানুষকে এমন প্রতিবাদী বলতে শুনেছেন? সবাইকে একই আইনের আওতায় আসতে হবে। সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থা-আইনানুগ সড়ক শাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা ছাড়া দেশের মানুষকে চলতি জিম্মিদশা থেকে মুক্ত করা যাবেনা। প্রতিদিন পথে মানুষের যে মূল্যবান কর্মঘন্টা নষ্ট হয় এ অবস্থার উন্নতি ছাড়া অধরা থেকে যাবে উন্নত দেশ হবার স্বপ্ন।

এই অস্ট্রেলিয়ায় দেখি পুলিশ প্রভাবশালী কাউকে পেলে সেটিকে গুরুত্ব দিয়ে ধরে। একবার এক ম্যাজিস্ট্রেটকে গাড়ি চালানো অবস্থায় মোবাইল ফোন ব্যবহার করার অপরাধে পুলিশ ধরলো। এদেশে এটি গুরুতর ট্রাফিক অফেন্স। জরিমানা বাংলাদেশের পঁচিশ হাজার টাকার বেশি। আর দুই পয়েন্ট কাটা। ওই ম্যাজিস্ট্রেট ফোন ব্যবহারের কথা প্রথম অস্বীকার করেছিল। পুলিশ প্রমান দিয়ে বলে ওইদিন ম্যাজিস্ট্রেট অতটার সময় ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। অতটার সময় তার মোবাইলে একটি কল এসেছিল এবং তিনি তা রিসিভ করে কথাও বলেছেন। পুলিশ ওই প্রমান উপস্থাপন, মামলা রুজুর পর ওই ম্যাজিস্ট্রেট পদত্যাগ করেন। আমাদের দায়িত্বশীল লোকজনের চামড়া মোটা। এদের লজ্জাশরম নেই। সারাক্ষন অধোঃস্তনদের ওপর দোষ চাপিয়ে চোটপাট দেখিয়ে বেড়ায়। অধঃস্থনদের শাস্তির ব্যবস্থা করে। অথচ তাদের ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করা না পর্যন্ত চেয়ার ছেড়ে যেতে চায় না।

অস্ট্রেলিয়ার গাড়ি চালকদের শতভাগ শিক্ষিত। এখানে প্রায় সবাই মূলত যার যার গাড়ি চালান। বাস-ট্রাক-অ্যাম্বুলেন্স-ফায়ার ব্রিগেড, পোস্টাল-কুরিয়ার সার্ভিসের গাড়ি এসবের জন্যেই মূলত পেশাদার ড্রাইভার লাগে। এর বাইরে এমপি, সচিব থেকে শুরু করে সাংবাদিক-পুলিশ সবাই যার যার গাড়ি নিজে চালান। ভাড়া গাড়ির পেশাদার ড্রাইভারদের অনেকের আবার স্পেশাল ট্রেনিং-লাইসেন্স। তারাও শিক্ষিত এবং তাদের মজুরিও বেশি। আবার ট্রাফিক আইনটি তাদের ক্ষেত্রেও সমান। ড্রাইভিং লাইসেন্স-পয়েন্টস না থাকলে চাকরি থাকবেনা, বউ-বাচ্চা নিয়ে জীবন ধারন কঠিন হয়ে যাবে, জরিমানা হলে টান পড়বে সাপ্তাহিক বাজেটে, এরজন্যে এরাও গাড়ি চালান সতর্কতার সঙ্গে। এদেশে সবাই যার যার গাড়ি চালানোর কারন ঘন্টা হিসাবে মজুরি দিয়ে ড্রাইভার বা কাজের লোক রাখার সামর্থ্য এদেশের একশতাংশ মানুষের আছে কিনা সন্দেহ। সে জন্যে এদেশে আমরা সবাই একেকজন কাজের বুয়া, সবাই একেকজন ড্রাইভার। ট্রাফিক ব্যবস্থা সুশৃংখল থাকার অনেক কারনের অন্যতম চালকদের সচেতনতা। ট্রাফিক আইনের প্রয়োগ কড়াকড়ি। আরেকটা কথা আমি এদেশে নতুন আগতদের মজা করে বলি। তাহলো এদেশের রাষ্ট্র সারাক্ষন আমাদের পিছনে বেত হাতে ঘুরে বেড়ায়। বেতটির নাম ফাইন। ব্যয়বহুল জীবনে চলতে সপ্তাহে সাতশ থেকে হাজার ডলার খরচ হয়। এরমাঝে যদি কোন সপ্তাহে ৪-৫ শ ডলার ফাইন হয় তাহলে গড়বড় হয়ে যায় সাপ্তাহিক বাজেট।

কোন অপরাধে কত ডলার জরিমানা, কত পয়েন্ট কাটা পড়বে, সব তথ্য অনলাইনে দেয়া আছে! আপনি এসব জানেন না বলে পার পাবার সুযোগ নেই। আইন জানাটা আপনার নিজস্ব দায়িত্ব। আর এদেশের ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে যে পদে পদে সংগ্রাম তা ওয়াফিহালরাই জানেন। এরজন্যে মজা করে বলা হয় অস্ট্রেলিয়ায় ড্রাইভিং লাইসেন্স পাবার চাইতে অভিবাসন পাওয়া সহজ। আর ট্রাফিক আইনের পুরো ফোকাসটি হচ্ছে রাস্তা যারা ব্যবহার করছেন তাদের নিরাপত্তার জন্যে এটা জরুরি। যেমন আপনি মোটর বাইক চালান বা পিছনে চড়েননা কেনো, দুজনেরই হেলমেট ব্যবহার বাধ্যতামূলক। এটি আপনার নিরাপত্তার জন্যে জরুরি। কারন মোটর বাইক দূর্ঘটনায় চালক এবং আরোহী দুজনেরই মাথা থেতলে গিয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু পারে। দেশের আলোচিত মন্ত্রী ওবায়দুর কাদেরের হেলমেটবিহান অবস্থায় মোটরবাইক চড়ে বিভিন্ন স্থানে যারা ছবি প্রায় সোশ্যাল মিডিয়ায় ছাপা হয়। মন্ত্রী এ সংক্রান্ত আইন জানেননা অথবা আইনের পরোয়া করেননা এমন আলোচনা হয়। মন্ত্রী বাহাদুর আপনি সতর্ক হোন। কারন দেশের লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়ে আপনাকে অনুসরন করে। আপনি এভাবে নিজের এবং অনুসারীদের অকালমৃত্যুর কারন হবেননা প্লিজ।

রাস্তায় উল্টো পথে গাড়ি জরুরি প্রয়োজনে অস্ট্রেলিয়াতেও চলে। তবে সেগুলো অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার ব্রিগেড বা জরুরি কোন খবর পেয়ে দ্রুত ধাবমান পুলিশের গাড়ি। এই গাড়িগুলোও ওই সব পরিস্থিতিতে সাইরেন বাজিয়ে চলে। আর সাইরেন বাজিয়ে চলা অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার ব্রিগেড বা পুলিশের গাড়িকে কিভাবে পথ করে দিতে হবে তা ড্রাইভিং প্র্যাকটিস শুরুর আগেই লারনার লাইসেন্স পাবার আগেই একজনকে শেখানো হয়। আপনি একজন মন্ত্রী-বিচারপতি-সচিব-পুলিশ অফিসার বা সাংবাদিক হয়ে গেছেন বলেন উল্টোপথে গাড়ি চালিয়ে চলেন যাবেন, এটি এদেশে অকল্পনীয়। সভ্যতা-ভব্যতার চিন্তার বাইরে। আর এরজন্যে বাংলাদেশের টাকায় ৩০ হাজার টাকার বেশি জরিমানার বিষয়তো আছেই। জরিমানার চাইতে গুরুত্বপূর্ন হলো এটির অপর দিক থেকে আসা গাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার জন্যে বিপদজ্জনক।

এদেশে পার্কিংএর নির্ধারিত স্থান ছাড়া আপনি যেখানে সেখানে গাড়ি পার্ক করতে পারবেননা। ব্যস্ত এলাকাগুলোর পার্কিং’এর রাস্তার পাশের নির্ধারিত জায়গাগুলো পনের মিনিট, আধাঘন্টা, এক ঘন্টা এভাবে মার্ক করা আছে। এরবেশি সময় গাড়িটিকে সেখানে পার্ক করা পাওয়া গেলে যে জরিমানা তা বাংলাদেশের সাত হাজার টাকার বেশি। আর বাস লেইন বা প্রতিবন্ধীদের পার্কিং’এ আপনার গাড়ি পাওয়া গেলেতো বাংলাদেশের টাকায় কুড়ি হাজার টাকার বেশি গোনায় পড়বেন। রাস্তাঘাটে ক্যামেরা-পুলিশ ট্রাফিক আইনের কড়াকড়ি বাস্তবায়নের কাজ করে। এখানে প্রতি আবাসিক এলাকা থেকে শুরু করে সর্বত্র নানান তথ্য সম্বলিত বোর্ড লাগানো। এখানে গাড়ি থেমে দাঁড়ানো বা পার্ক করা যাবেনা। এখানে ডানে মোড় দেয়া যাবেনা বা ইউটার্ন নেয়া যাবেনা। সামনে স্পিড ক্যামেরা বা রেডলাইট ক্যামেরা, এভাবে তথ্য দিতে হবে আগে এরপর জরিমানা। কোথাও কোন নগদ টাকা জরিমানা হিসাবে নেবার ব্যবস্থা নেই। চিঠি চলে আসবে বাসার চিঠির বাক্সে। অমুক তারিখের মধ্যে জরিমানা শোধ করতে হবে। আপনি ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করেছেন আপনি বিচারপতি হন বা সচিব-পুলিশ অফিসার বা সাংবাদিক যেই হোননা কেনো, আপনি আইনভঙ্গ করেছেন, আপনার বিরুদ্ধে নেয়া শাস্তির সিদ্ধান্তে কোন হেরফের হবেনা।

আমাদের এখানে আবাসিক এলাকায় গাড়ির গতিসীমা ৫০, স্কুল শুরুর এবং শেষের দেড়ঘন্টা গতিসীমা ৪০। এরপর আমাদের পথগুলোর গতিসীমা ৬০, ৭০, ৮০, ৯০, ১০০ এবং ১১০। রাস্তা বুঝে এই গতিসীমার নিচে থাকলে পিছনের গাড়ির চালক বিরক্ত হবে। নির্ধারিত গতিসীমার বেশি চললে ক্যামেরা বা পুলিশের হাতে ধরা পড়বেন। জরিমানার অংক আর পয়েন্ট খোয়ানোর চিঠি চলে আসলে এরপর সে টাকা পোস্ট অফিসে গিয়ে দেবেন না অনলাইনে দেবেন না ফোন করে দেবেন সেটি আপনার পছন্দের ব্যাপার। এক সাথে এত ডলার দেয়াটা আপনার সামর্থ্যের বাইরে হলে ফোন করলে আপনাকে কিস্তি করে পরিশোধের সুযোগ করে দেবে। কিন্তু জরিমানার অর্থ আপনাকে দিতেই হবে। একটা জরিমানায় পড়লে সপ্তাহের বাজেটে টান পড়ে। সে কারনে সবাই সতর্ক থাকার চেষ্টা করে যাতে জরিমানা না হয়। এই সতর্কতা মানে ট্রাফিক আইন মেনে গাড়ি চালানো। এরমাধ্যমেই নিয়ন্ত্রিত হয় সড়ক শাসন।

বাংলাদেশের রাস্তাঘাট অস্ট্রেলিয়ার রাস্তাঘাটের চেয়ে ছোট বা কম চওড়া নয়। বাংলাদেশের সমস্যা হলো ছোটদেশে মানুষ বেশি। বাংলাদেশের চেয়ে পয়ষট্টিগুন বড় দেশ অস্ট্রেলিয়ার জনসংখ্যা আড়াই কোটি। এখানে মানুষ বাংলাদেশের মতো রাস্তায় হাঁটেনা। যেখান সেখান দিয়ে রাস্তা পার হয়না। এমন যেখান সেখান দিয়ে রাস্তা পেরুবার জরিমানাও সত্তুর ডলার। বাংলাদেশের পথের বড় সমস্যা অনিয়ন্ত্রিত পার্কিং। যখন তখন রাস্তায় নামে মিছিল-প্রতিবাদ। রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর যাতায়াত উপলক্ষে রাস্তা বন্ধ করা হয়। একবার রাস্তা বন্ধ করলে এরজের সারাদিন ধরে চলে। যানজটের কারনে বাংলাদেশে এখন যে উল্টো পথে আইন অমান্য করে গাড়ি চালানো শুরু হয়েছে এসব আগে ছিলোনা। এসব কোন সাধারন মানুষের গাড়িনা। মন্ত্রী-এমপি-সচিব-বিচারপতি-পুলিশ-সাংবাদিক এদের গাড়ি। কারন এরা দেশে নিজেদের প্রভাবশালী, আইনের উর্ধে মনে করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি বেআইনিভাবে উল্টোপথ দিয়ে চলা রুখতে পথে নেমেছিলেন একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। যানজটে স্থবির বসে থেকে প্রভাবশালীদের আইন অমান্য করে উল্টোপথে চলা দেখে দেখে আমজনতা ক্রোধের পাহাড়ে জমেছিল। সচিবসহ প্রভাবশালী নানাজনের গাড়িকে জরিমানার ঘটনায় সে ক্রোধ বিস্ফোরিত হয়েছে।

ভারপ্রাপ্ত সমবায় সচিব মাফরুহা সুলতানার গাড়ি পরপর দুদিন উল্টো পথে চলার অপরাধে জরিমানা হলো। দু’দিনই গাড়িতে বসা ছিলেন মাফরুহা সুলতানা। এ নিয়ে হৈচৈ শুরু হলে বাংলাদেশের বর্নবাদী প্রশাসন আবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে মনে করিয়ে দিলো তারা রক্ষা করবে সচিবকে। জবাই করবে তার গাড়ি চালক বাবুল মোল্লাকে। এই সচিব নিজে গাড়িতে বসে থেকে আইনভঙ্গের আমব্রেলা এক্ষেত্রে তার কোন দায় নেই? সচিবের মত-সায় ছাড়া তার উপস্থিতিতে কী একজন গাড়িচালকের সাহস আছে আইনভঙ্গ করে চলার? কিন্তু তা এড়িয়ে গেছে দেশের একচোখা প্রশাসন! ফজলুল হক নামের একজন অতিরিক্ত সচিব আমাকে লিখেছেন উল্টোপথে গাড়ি চালাবার দায় গাড়ি চালকের। সচিবের নয়। সচিব তখন গাড়িতে বসে কী ঘুমাচ্ছিলেন? জিজ্ঞেস করলে জবাব আসেনি। উল্টোপথে চলা সচিব মাফরুহা সুলতানা তাই একটি ক্রোধের নাম। পরপর দু’দিন তার উপস্থিতিতে তার গাড়ি জরিমানার শিকার হবার পরও প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। নির্লজ্জ সচিব এরজন্যে বিবেকের দংশনে পদত্যাগও করেননি। এমনকি প্রশাসন এই সচিবের কোন ব্যাখ্যা-কৈফিয়ত জানতে চেয়েছে কিনা তাও জানতে পারেনি দেশের করদাতা জনগন! দেশের আইনের শাসনের জন্যে একটি বাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকলেন এই উল্টোপথের সচিব মাফরুহা সুলতানা। তাকে এবং তার রক্ষাকবজ আমলা প্রশাসনের বর্নবাদী নপুংসক চরিত্রের মনে রাখবে বাংলাদেশের স্বপ্নের আইনের শাসনের ভবিষ্যতকাল। আপাতত আমরা এদের বিরুদ্ধে ঘৃণা জানিয়ে রাখি। বিচার বিভাগও এর বিরুদ্ধে সুয়োমোটো করবেনা। কারন বিচারকের গাড়িও চলে উল্টো বেআইনি পথে! বাংলাদেশকে যদি এর নেতৃত্ব স্বপ্নের উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যেতে চায় তাহলো এর সব পথ, সব চরিত্রকে আইনানুগ সোজা পথে আনতে হবে সবার আগে। এসব উল্টোপথের সচিব জাতীয়দের ছেটে ফেলে দিতে হবে। এদের নিয়ে সভ্য আইনানুগ উন্নত বাংলাদেশ হবেনা।


Place your ads here!

Related Articles

জিম্মি বাংলাদেশ সরকার! জিম্মি শেখ হাসিনা!

ফজলুল বারী: বাংলাদেশে মানুষ নানাভাবে সরকার ও রাষ্ট্রের হাতে জিম্মি হয়। কিন্তু সরকারও যে দেশটায় জিম্মি হয় তা নিয়ে এ

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment