অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার

অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার

অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার সম্পর্কে যত ভালো কথা লেখা সম্ভব এর খানিকটা আজ লিখে ফেলেছেন প্রিয় Abdun Noor Tushar (click here). আমি একটু পচা কথা লিখি 🙂 কী যে দুর্ভাগ্য আমার তাঁর সংগে স্বপ্নের সাক্ষাতটা আমার দুর্ভাগ্যজনকই হয়েছে 🙁

মূলত কৈশোর থেকে টেলিভিশনে তাকে দেখে দেখে তাঁর প্রতি আমার মধ্যে বিশেষ একটি দূর্বলতা, শ্রদ্ধাবোধ তৈরি হয়। কত রাত জেগে জেগে স্বপ্ন দেখেছি কোন দিন ঢাকা গেলে তার সংগে দেখা করতে যাবো। সামনাসামনি বসে শুনবো তার ভরাট কন্ঠস্বর। কিন্তু সবার ভাগ্যেতো সবকিছু জোটেনা।

পায়ে হেঁটে বাংলাদেশ ভ্রমনের সময় যখন ঢাকা আসি তখন বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে গেলাম স্যারের সংগে দেখা করতে। চত্বরটায় ঢুকতেই দেখি স্যার একজনের সংগে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন। আমার পায়ে হেঁটে চলার ক্লান্ত বিধ্বস্ত চেহারা। পিঠে বাংলাদেশ ভ্রমনের যাবতীয় সম্পত্তি ভর্তি ব্যাগ। এক পর্যায়ে একটু সাহস করে তাঁর সামনে গিয়ে দাঁড়াই। তাকে নিজের পরিচয় দিয়ে বলি, স্যার আমি আপনার একজন ভক্ত। আপনার সংগে দেখা করতে কথা বলতে এসেছি।

স্যার একজনকে ডাকলেন। সে লোকটি এসে বললো আমার সংগে আসুন। আমি তার পিছু পিছু হেঁটে একটা অফিসে গিয়ে ঢুকলাম। তিনি একটা রসিদে আমার নাম লিখে স্বাক্ষর দিতে বললেন! স্বাক্ষর দিতেই ৫০ টাকার একটা নোট হাতে দিয়ে বললেন আপনি এখন যান! আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে আমতা আমতা করে বললাম আমিতো এখানে টাকার জন্যে আসিনি। লোকটা একটু বিরক্তির স্বরে আপনি এখন যানতো বলে চেঁচিয়ে ওঠেন। আমি দ্রুত সেখান থেকে বেরিয়ে রাস্তায় চলে আসি। আমার দুই চোখ ভর্তি অনেক পানি তখন। চোখের পানির ধারা থামছিলোনা। মনকে এই বলে শান্তনা দেই এখানে হয়তো আমার মতো এমন অনেকে টাকার জন্যে আসে। স্যার মনে হয় তেমন আরেকজন মনে করে ভুল করেছেন।

এরপর অবশ্য আর বহুবার বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে গেছি। স্যারের অনেক বক্তৃতার এসাইনমেন্ট করেছি। টেলিফোনে বহুবার কথা বলে তা অনেক রিপোর্টেও কাজে লাগিয়েছি। কিন্তু এ কথাগুলো কোন দিন তাকে বলা হয়নি। এমন সব কথা কী তাকে বলা যায়?

মাঝে আওয়ামী লীগ সরকারের সংগে যখন তার সম্পর্ক খারাপ হলো, আওয়ামী লীগের অন্যতম দুর্নীতিবাজ নেতা শেখ সেলিম যখন সংসদে তাঁর বিরুদ্ধে বললেন, এর প্রতিবাদ করে লিখেছি। শেখ সেলিমের বক্তব্যের জবাবে স্যার যখন বলেন, ম্যাগসেসাই পুরস্কার না পেলে আমার নিয়মিত রক্ত পরীক্ষার টাকাও হতোনা তখন তা হৃদয় ছুঁয়ে যায়। এখানে এদেশে আমাদের রক্ত পরীক্ষা সহ চিকিৎসার নানা খরচ সরকার দেয়। এসব সময়েও স্যারের কথা মনে পড়ে। সারাজীবন শিক্ষকতা করেও বাংলাদেশের আবদুল্লাহ আবু সায়ীদরাও কত অসহায় সব মানুষ 🙁 শুভ জন্মদিন স্যার♥ সুস্থ থাকুন <3 ভালো থাকুন <3


Place your ads here!

Related Articles

বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ড: ওভাল, লন্ডন

বাংলাদেশ ক্রিকেট দল জিততে শিখেছে, একদিনের ম্যাচে ৩০০ র বেশি রানও করছে, ভালো খেলছেও, তবে সমস্যা কোথায়? ইংরেজিতে একটা কথা

একজন শহিদুল্লাহ্‌র কথা

যখন বৈভবে বিতৃষ্ণা, আনন্দে অনীহা তখনই অন্য কিছু করার জন্য তাগিদ আসে। চৈতন্যের দরজায় কড়া নাড়ে কেউ একজন। তখন রবীন্দ্রনাথ,

কথক, মেলবোর্ন এর আয়োজন এমন দিনে তারে বলা যায়

বাংলা সাহিত্যে বর্ষা-বন্দনায় রবীন্দ্রনাথের জুড়ি মেলা ভার। তার কবিতায়, গানে ও গদ্যসম্ভারে বর্ষাদিনের ছড়াছড়ি, সেখানে টলটল করছে বর্ষার প্রাচুর্য ।

2 comments

Write a comment
  1. Dilruba Shahana
    Dilruba Shahana 26 July, 2017, 23:35

    খুব ভাল লাগলো আপনার ‘পচা কথা’! আসলে একদিনের বা ক্ষণিকের ব্যবহার দিয়ে স্যারকে যাচাই করেননি বলেই পরবর্তী সময়েও আবার স্যারকে নিয়ে আপনি লিখেছেন। স্যার তো মানুষ! ফজলুল বারী ধন্য আপনি!
    একটা কথা বলতে চাই ওইদিন স্যার ব্যক্তিগত বিদ্বেষ বা উপেক্ষা থেকে আপনাকে অবহেলা, দয়া দেখাননি অবশ্যই।
    তবে নিজের প্যাশনেট কাজ করে ক্লান্ত, বিব্ধস্থ হয়ে যার কাছেই যেতেন সে কি ভাবতো আপনি তার সাথে উচ্চাঙ্গের আলাপ করতে আগ্রহী তখন?
    এই ধরনের অভিজ্ঞতা সবার ভাগ্যে হয়না। আমার হলে তখন মন খারাপ হতো, কষ্ট পেতাম এতে কোনই সন্দেহ নেই তবে পরবর্তী সময়ে এ নিয়ে মজা করে অনেক কথা লিখতাম।

    Reply this comment
  2. Manzur Chowdhury
    Manzur Chowdhury 31 July, 2017, 10:24

    প্রিয় অষ্ট্রেলিয়া ওয়েভসাইটে সর্বজন শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে লিখতে গিয়ে ফজলুল বারী শেষে এসে অর্বাচীনের অহমিকা দেখালেন।
    ফজলুল বারী বিদেশে আছেন উনি তাই কত সহজে ডাক্তার দেখান, রোগবালাই নির্ধারনের জন্য পরীক্ষানীরিক্ষা করান যখনই প্রয়োজন হয়। তার করুণায় মন উথলে উঠে আমাদের দেশের শিক্ষক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের অবস্থা ভেবে। কতদূর আস্পর্ধা এমন কথা বলার!
    স্যারের বিত্তবেসাত কিছুই নাই তারপরও স্যার ফজলুল বারীর জীবনের জন্য লালায়িত নন।
    আপনার কষ্ট হয়েছে শুনে যে স্যার পুরস্কারের টাকা পেয়েছেন তাই দিয়ে রক্ত পরীক্ষা করাতে পারছেন। স্যারের এই সত্য ভাষণের জন্য স্যার শ্রদ্ধেয়, নমস্য। আপনার জানা আছে নিশ্চয় চাইলেই কেউ র‌্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার পায় না।
    আপনার অবগতির জন্য বলছি সংসদে স্যারকে নিয়ে ভিত্তিহীন মন্তব্যের কারনে সমস্ত জাতি বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল তারপর ওই বিষয়টি পার্লামেণ্টারী প্রসিডিং থেকে পাঞ্চ করা হয়।
    দিলরুবা শাহানা আপনার কাছে আরও সারগর্ভ ও কড়া মন্তব্য প্রত্যাশা করেছিলাম।

    সম্পাদকের কথা:
    জনাব মন্জুর চৌধুরী, নিজের মতামত জানাতে গিয়ে – অন্যজনকে অর্বাচীন বলাটা কি ঠিক? শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে – তাঁর, দেশের সংকট কালের ভুমিকা নিয়ে নানা জনের নানা মত আছে। অন্যের মতামতে শ্রদ্বা দেখাতে হবে – না হয় আলোচনার মূল বিষয়টাই হারিয়ে যাবে।
    ফজলুল বারীর জীবন সম্পর্কে আপনার কতটুকু ধারনা আছে?
    সমালোচনায় মানুষ, মানুষকে শ্রদ্বা করলে – সমালোচনায় গুরুত্ব কমে যায় না।

    Reply this comment

Write a Comment