ফেঁসে যাচ্ছে ফরিদপুরের বাচ্চু রাজাকার – শেখ মফিজ শিপন ফরিদপুর

ফেঁসে যাচ্ছে ফরিদপুরের বাচ্চু রাজাকার –  শেখ মফিজ শিপন ফরিদপুর

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ফরিদপুর অঞ্চলের আলবদর বাহিনীর প্রধান ও রাজাকার কমান্ডার মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের নেতৃত্বে হত্যা, লুটপাট, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ তথা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে পুলিশ। তাকে ধরতে তার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের সালথা উপজেলার খারদিয়া গ্রামসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি চলছে বলে জানা গেছে।

২০ এপ্রিল সালথার পুরুরা গ্রামের ভক্ত রঞ্জন বিশ^াস ও ৩ মে নগরকান্দা উপজেলার ফুলবাড়িয়া গ্রামের জ্যোৎস্না রানী দাস রাজাকার মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ও তার শ্যালক মোহাম্মদ কাজীসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলা করেন।

এ দুই মামলায় মাওলানা আজাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হত্যা, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগরকান্দা থানার এসআই আবদুল হক মোল্লা জানান, নগরকান্দা থানায় করা যুদ্ধাপরাধ মামলার আসামি আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। অন্যদিকে জেলার সালথা থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আক্কাস আলী জানান, এ মামলার প্রাথমিক তদন্তে তার (বাচ্চু রাজাকার) বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর সত্যতা পাওয়া গেছে।

নগরকান্দা থানার ওসি মো. শামসুল হক পিপিএম জানান, যুদ্ধাপরাধের এ মামলায় পলাতক আসামিদের ধরতে জোর তৎপরতা চলছে। এ লক্ষ্যে পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও কাজ করছে। তিনি জানান, মামলার আসামির বিরুদ্ধে এলাকায় অসংখ্য সাক্ষী পাওয়া গেছে।

তিনি বলেন, যেহেতু মামলায় উল্লিখিত অপরাধের সময়কাল ’৭১ সাল, তাই স্থানীয় বয়স্ক লোকদের সঙ্গে কথা বলে প্রাথমিক সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে অগ্রসর হচ্ছে পুলিশ।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে মাওলানা আবুল কালাম আজাদের স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকার প্রত্যক্ষদর্শী জেলার বোয়ালমারীর কালিনগরের মুক্তিযোদ্ধা মো. ইদ্রিস ফকির জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় বাচ্চু রাজাকার অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাকে পাকবাহিনীর হাতে ধরিয়ে দিয়েছে এবং আর্মি ক্যাম্পে গিয়ে বন্দিদের মধ্য থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের শনাক্ত করেছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে মেয়েদের ধরে এনে সে পাক সেনাদের ক্যাম্পে সাপ্লাই দিতো। ১৯৭১ সালের আনুমানিক ২ মে পাকবাহিনী ফরিদপুরের হাসামদিয়া ও ময়েনদিয়া গ্রামে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ চালায়। এ সময় তাদের প্রধান দোসর হিসেবে বাচ্চু রাজাকার তাদের সঙ্গে ছিল এবং সে নিজে চার নিরীহ গ্রামবাসীকে হাত বাঁধা অবস্থায় গুলি করে হত্যা করে।

জানা যায়, ১৯৭৫-এর পর বাচ্চু রাজাকার ফরিদপুর শহরের টেপাখোল মসজিদে ইমামতি করতো। সে সময় স্থানীয় একটি মেয়ের শ্লীলতাহানি করায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী তাকে তাড়িয়ে দেয়।

মুক্তিযোদ্ধা ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ মাসুদ হোসেন জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে ফরিদপুর স্টেডিয়ামের পাশে বন্দি শিবিরে আটকা পড়েন। সেখানে বাচ্চু রাজাকার আটককৃতদের নির্যাতন করতো। তিনি বলেন, রাজাকার বাচ্চু কেবল গ্রামঅঞ্চলে নয় শহরেও অস্ত্র নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় হানা দিয়েছে।

ফরিদপুর সালথা উপজেলার চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, রাজাকার আবুল কালাম আজাদ দেশ স্বাধীনের পর যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে দীর্ঘদিন হাজতবাস করেছে।

original source


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment