সাংবাদিকদের সঙ্গে টিম বাংলাদেশের কোচ হাথুরু

সাংবাদিকদের সঙ্গে টিম বাংলাদেশের কোচ হাথুরু

বেশ ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন চন্দ্রিকা হাথুরুসিংহে। সোমবার সিডনির রাইড এলাকার এক শপিংমলের কফিশপে বিশ্বকাপ ক্রিকেট উৎসব কভার করতে আসা বাংলাদেশের সাংবাদিকদের সঙ্গে নানা বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেন টিম বাংলাদেশের এই শ্রীংকান কোচ। হাথুরু বিশ্বকাপে তার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দলের পারফরমন্সে সন্তুষ্টি জানিয়ে শুরুতে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার ভূয়সী প্রশংসা করে তাকে ‘গ্রেট লিডার’ অভিধা দেন। খেলোয়াড় অনেকের প্রশংসা করলেও বিশেষ করে উল্লেখ করেন সৌম্য সরকারের কথা। এই বিশ্বকাপে সৌম্যকে বাংলাদেশের অন্যতম অর্জন করে বলেন, তাকে দেখেশুনে গাইড করলে ভবিষ্যত বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনেক কিছু তার মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব। তার অনেক কিছু দেবার ক্ষমতা আছে। দলের নির্বাচন পদ্ধতিতে কিছুটা উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচকরা পনের সদস্যের একটা টিম ঠিক করে দিয়ে কোচের কাছে জয় চান। অথচ অস্ট্রেলিয়া দলের কোচেরও দল নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা থাকে। কোয়ার্টার ফাইন্যালে বিতর্কিত আম্পায়ারিং সম্পর্কে বলেন, আম্পায়ারিং’ এ ভুল-শুদ্ধ খেলারই একটি অংশ। সেই ম্যাচের আম্পায়ারিং নিয়ে বাংলাদেশের কোন তরফে কোন অভিযোগ দায়ের হয়েছে বলেও শোনেনি। হাথুরু বলেন ভারতের বিরুদ্ধে মেলবোর্নের খেলায় সেই দুটি সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে যে চাপ তৈরি হয়েছিল, সে চাপ তার খেলোয়াড়রা নিতে পারেনি। তার খেলোয়াড়দের এ ব্যাপারে কথাবার্তা বলার ব্যাপারে তিনি সাবধান করেছেন। তাদের বলে দিয়েছেন, কথাবার্তা তাই বলবে, যা তোমরা ধারন করতে পারবে। পাকিস্তান দলের সামনের বাংলাদেশ সফরকে বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে বলেন, পাকিস্তান অবশ্যই একটি শক্তিশালী ভালো টিম। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে ভালো কিছু করার যোগ্যতা এখন বাংলাদেশ দলের আছে। ওই সিরিজটা খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ন হবে আশা করছি।


হাথুরু বলেন, এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন অর্জন হলো খেলোয়াড়দের যার যার ক্ষমতার প্রতি আস্থা ফিরে আসা। আমাদের অনেক খেলোয়াড়ই জানতেন না তারা কী করার যোগ্যতা রাখেন। নিজস্ব আস্থা অর্জনের বিষয়টিতে ধারাবাহিকতা থাকায় দলও উপকৃত হয়েছে। আমাদের টার্গেট ছিল কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা।সে লক্ষ্য অর্জন হওয়াতে আমি সন্তুষ্ট। আমার চ্যালেঞ্জ ছিল আমি কী চাইছি তা প্লেয়ারদের ঠিকমতো কনভে করা। প্লেয়ারদের বারবার বলার চেষ্টা করেছি আমাদের দলের অনেক পটেনশিয়ালিটি আছে। তারা যে তা ঠিকমতো ধরতে পেরে নিজেদের সঠিক সময়ে মেলে ধরার চেষ্টা করেছেন, মেলে ধরেছেন, এটাই গুরুত্বপূর্ন। বাংলাদেশ দলের কোচ বলেন, আমাদের টিম ধারাবাহিক উন্নতি করছিল। সেটি ধরে রাখাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। তিন স্পিনার নিয়ে দল গঠনের সিদ্ধান্তটি তার নয় উল্লেখ করে বলেন এর উত্তর নির্বাচকরাই ভালো দিতে পারবেন। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের পরিবেশে পেসাররা ভালো কিছু করার সুযোগ পান। আমাদের তিন পেসারই ভালো করেছেন। আরও ভালো করা সম্ভব ছিল। মাশরাফির প্রশংসা করে বলেন, পায়ে এতগুলো অস্ত্রোপচারের ক্ষত নিয়ে সে যেভাবে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে তা বিরল। মাশরাফির আর কত দিন খেলা উচিত বা তার সরে দাঁড়ানোর এটি সময় কীনা সে ব্যাপারে বলেন, এটি তার ও নির্বাচকদের সিদ্ধান্তের বিষয়। তবে বিশ্বকাপে চমৎকার পারফরমেন্সের পর এটি এই মূহুর্তে বাংলাদেশে কেউ ভাবতে পারেন বলে মনে হয়না।

বাংলাদেশ দলের নয় মাস বয়সী কোচ হাথুরু দলের ওপেনারদের ব্যাপারে বলেন ভালো বোলিং এর বিরুদ্ধে ওপেনিং এমন ধীরগতির হতেই পারে। তামিম স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভালো একটি ইনিংস খেলেছে। মাহমুদুল্লাহ আর মুশফিকের ধারাবাহিক পারফরমেন্সের প্রশংসা করেন হাথুরু। দলের ব্যাটিংলাইনে মাহমুদুল্লাহকে আরও ওপরের দিকে তুলে আনার কথা বলেন। আবার বলেন এটাতো সিলেক্টররা ঠিক করেন এবং করবেন। মমিনুল কী এখন ওয়ানডের জন্যে ফিট না’ জানতে চাইলে বলেন, মমিনুল চেষ্টা করছিল। তবে সে জায়গায় ক্লিক করেছে সৌম্য। হাথুরু বলেন পারফরমেন্সের ভিত্তিতে একজন খেলোয়াড়ের দলে জায়গা পাওয়া বা বাদ পড়ার বিষয়গুলো ক্রিকেটেরই অংশ। অস্ট্রেলিয়া টিমের আজকের উজ্জ্বল অংশীদার স্টিভ স্মিথ বাদ পড়ার তিন বছর পর দলে ফিরে এসেছেন। কিন্তু বাংলাদেশে একজন বাদ পড়লে কবে ফিরে আসেন বা আসতে পারেন কিনা তা ভেবে দেখার বিষয় আছে।

ভারতের বিরুদ্ধের ম্যাচটি নিয়ে হাথুরু বলেন, ভারত অবশ্যই টূর্নামেন্টের অন্যতম শক্তিশালী দল। কিন্তু যে দলে সাকিব, তামিম আছেন ভারতের বিরুদ্ধের ম্যাচে যে কোন কিছু ঘটতে পারতো। খেলাটা প্রথম দিকে সেভাবে গড়াচ্ছিলও। কিন্তু পরে গড়বড় হয়ে যায়। সাকিবকে নিয়ে বিতর্ক সহ নানা সময়ে তার চুপচাপ থাকা নিয়ে বলেন, আমি জানতাম আমার কোন ভুল ছিলোনা। তাই ওসব গায়ে মাখিনি। বাংলাদেশ দল নিয়ে তার ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেন, এই বিশ্বকাপে দল যতটা অর্জন করেছে তা ধরে রাখা, ধারাবাহিকতা রাখাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। সিডনির রাইড থেকে ১০ মিনিট ড্রাইভের সাবাবে স্ত্রী, তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে থাকেন হাথুরু। বললেন পাঁচ বছর ধরে এই দেশটায় আছি। ছেলেমেয়েরা এই দেশটায় অভ্যস্ত হয়ে গেছে। স্ত্রী-ছেলে মেয়েকে সময় দেবার জন্যে দলের সঙ্গে ঢাকায় ফেরত যাননি। ঢাকায় ফিরবেন এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে। হাথুরু মনে করেন বিশ্বকাপের ফাইন্যাল হবে অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিন আফ্রিকার মধ্যে। আর কাপ জিতবে অস্ট্রেলিয়া।


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment