ম্যাচ হারলেও অসুখি না লিউজিল্যান্ড প্রবাসীরা

ম্যাচ হারলেও অসুখি না লিউজিল্যান্ড প্রবাসীরা

সেডন পার্কে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে গেছে বাংলাদেশ। কিন্তু প্রাণভরে ম্যাচটি উপভোগ করেছেন মাঠে উপস্থিত কয়েক হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি। তাদের অনেকের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। এমন একজনকেও পাওয়া যায়নি ম্যাচটি হেরে যাওয়া নিয়ে কোন আক্ষেপ অথবা ক্ষেদোক্তি দেখিয়েছেন। তারা সবাই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের লড়াকু মনোবৃত্তির প্রশংসা, দলকে অভিনন্দিত করে বলেছেন, খেলাটি তারা প্রানভরে উপভোগ করেছেন। এমন লড়াই তারা দেখতে চেয়েছেন কোয়ার্টার ফাইন্যালে ভারতের বিরুদ্ধে।

ওয়েলিংটন থেকে খেলা দেখতে এসেছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশি আব্দুর রহিম মিয়া। আমাদের তিনি বলেন নিউজিল্যান্ডের এই দলটি তাদের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম ভালো দল। অস্ট্রেলিয়া-শ্রীলংকাও এই দলটির কাছে বিপুলভাবে হেরেছে। কিন্তু কিউই দলের বোলিং আক্রমনের বিরুদ্ধে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ শতরান সহ আরও কয়েকজন ব্যাটসম্যান যে দৃঢ়তা দেখিয়েছেন তা এক কথায় অসাধারন। বাংলাদেশ দলের লড়াকু মনোবৃত্তির প্রশংসা করে রহিম বলেন, আশা করি কোয়ার্টার ফাইন্যালে ভারতকে হারাবে বাংলাদেশ।

খেলা দেখতে অকল্যান্ড থেকে আসা আহসান হায়াত সেতু বলেন, নিউজিল্যান্ড এবারের বিশ্বকাপের টপ মোষ্ট ফেডারিট টিম। তাদের হোম গ্রাউন্ডে বাংলাদেশ এতোটা ভালো খেলবে আশা করিনি। দলের পারফরমেন্স আমাদের মন ভরিয়ে দিয়েছে। রুবেলকে কেন শেষের দিকে আরও কাজে লাগানো হলোনা তা নিয়ে সেতু হতাশা প্রকাশ করেন।


আব্দুল্লাহ আহমদ ইউসুফ ১৮ বছর ধরে শিক্ষকতা করেন অকল্যান্ডে। লুঙ্গি পরে গলায় গামছা ঝুলিয়ে খেলা দেখতে এসেছিলেন এই প্রবাসী শিক্ষক। আমাদের তিনি বলেন দেশে থাকতে ১২ বছর বয়স থেকে তিনি ক্রিকেট লীগে খেলতেন। ক্রিকেট তার রক্তে। দল জিততে না পারলেও সিডেন পার্কে বাংলাদেশ যে ক্রিকেট সামর্থ দেখিয়েছে তা এক কথায় চমৎকার এবং অসাধারন।

এমনিতে শুক্রবার বাংলাদেশের ব্যাটিং ইনিংসের পর হ্যামিল্টনের সেডন পার্কের প্রবাসীদের মনে হচ্ছিল তারা সবাই যেন সুখী মানুষ। হ্যামিল্টনে প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা হাতে গোনা। খেলাটি দেখতে প্রবাসীরা অকল্যান্ড সহ এরা নিউজিল্যান্ডের নানা শহর থেকে এসেছেন। অস্ট্রেলিয়া-ব্রাজিল এমনকি বাংলাদেশ থেকেও এসেছেন অনেকে। টাইগারদের লড়াকু ব্যাটিং পূঁজির পর তারা সবাই তাদের সন্তুষ্টির কথা জানান। শুক্রবার শত শত লাল সবুজ পতাকা উড়ছে সেডন পার্কে। বলে বলে চিৎকার করে সবাই শুধু বলছেন বাংলাদেশ বাংলাদেশ। হ্যামিলটনবাসী সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা রজার বিস্ফোরিত উচ্চারনে যা বললেন তার বাংলা ভাবার্থ দাঁড়ায়, চমৎকার প্রানোচ্ছল দর্শক তোমাদের। খুবই ক্রিকেট ভক্ত জাতি তোমরা। সেডন পার্কে এমন আমি আগে এতটা দেখেছি মনে পড়েনা।

নোয়াখালির কোম্পানিগঞ্জের যুবক মাসুম থাকেন ব্রাজিলে। শুক্রবার ভোরে হ্যামিল্টন এসে পৌঁছেছেন। দীর্ঘ ভ্রমনজনিত ক্লান্তি তার চোখে মুখে। কিন্তু সেডন পার্কে ঢুকেই তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ক্রিকেট উৎসবে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ তার টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পূরনের পর আনন্দে লাফাতে লাফাতে যেন শূন্যে ভাসেন মাসুম। চিৎকার করে বলতে থাকেন আমি এখন সুখী মানুষ একজন। এমন সুখ আমি জীবনে খুব কম অনুভব করেছি। অকল্যান্ড প্রবাসী বাংলাদেশি ছাত্র পাপ্পু। নিউজিল্যান্ডবাসের বয়স তার মাত্র পাঁচ মাস। শুক্রবার ক্লাস-কাজ ছিলোনা পাপ্পুর। সে কারনে খেলা দেখতে আসতে তার বিশেষ সুবিধা হয়েছে। পাপ্পু বললেন এখন টগবগ ফুটতে থাকা নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ এতটা ভালো খেলবে আশা করিনি। আসলেই খুব ভালো একটা সময় পার করছে প্রিয় বাংলাদেশ দল।


সেডন পার্কের মাঠটির বড় অংশ জুড়ে অবস্থান নিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ড সমর্থকরা। মাঠের শুধু বাংলাদেশ ফ্যান জোনেই অবস্থান নেন কয়েক হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি। মাঠের এই অংশটাতেই লাল সবুজ পতাকা বেশি ছিল। আর সারা মাঠ জুড়ে বিচ্ছিন্নভাবে লাল সবুজ পতাকার সমর্থকরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও দলের রান আর উইকেট উৎসবে সবাই সামিল হচ্ছেন সবাই। মাঠে বাংলাদেশের জার্সি ছাড়া বাংলাদেশ সমর্থক দর্শক খুঁজে বের করা কঠিন।মেয়েদের অনেকে পরেছিলেন লাল সবুজ শাড়ি। কপালে লাল টিপ। জার্সির সঙ্গে অনেকে লাল সেলোয়ারও পরে এসেছিলেন। বাচ্চাদের সাজানোও হয়েছিল বাংলাদেশ দলের জার্সি অথবা লাল সবুজ পোশাকে। সে কারনে উজ্জ্বল বর্নিল ছিল বাংলাদেশ গ্যালারি। দল আগেই কোয়ার্টার ফাইন্যালে চলে যাওয়াতে প্রবাসীরা বিশেষ নির্ভার। সিডনি থেকে আসা আব্দুর রব বলেন, দল ভালো খেলবে এটাই শুধু দেখতে এসেছিলাম। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ জিততে না পারলেও বিশেষ এক পরিতৃপ্তি নিয়ে ফিরে যাচ্ছি। কারন সিডেন পার্কের কিউই সমর্থকরা দেখেছেন, কোন হেলেফেলার দল নয় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment