নেলসন, ক্রিকেট ও প্রবাসী বাংলাদেশি

নেলসন, ক্রিকেট ও প্রবাসী বাংলাদেশি

ছোট একটি শহর নেলসন। জনসংখ্যা ৫০ হাজারের কম। ১০০ জনেরও কম প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা। এয়ার নিউজিল্যান্ডের এটিআর ৭২-৫০০/৬০০ নামের ৫৪ আসনের ছোট বিমানে করে লোকজন এখানে এসে নামেন এদেশের কান্ট্রিসাইড তথা গ্রাম এলাকার ছোট একটি বিমান বন্দরে। এখানকার ছোট একটি মাঠ–স্টেডিয়াম নেলসনের সেক্সটন ওভাল যার ধারন ক্ষমতা মাত্র ৫ হাজার। সেটিকে বিশ্বকাপ উপলক্ষে সাজানো হয়েছে এক রকম গ্রাম এলাকার বিয়ে বাড়ির সাজে! ভাড়া করে আনা প্লাস্টিকের ট্রিপলের অস্থায়ী ঘরে বানানো হয়েছে মিডিয়া সেন্টার, মিডিয়া ব্রিফিং রুম! প্লাস্টিকের ট্রিপলের ঘরে শীতাতপ যন্ত্র বসানো যায় না। বুধবার সে মিডিয়া সেন্টারে বসে কাজ করতে গিয়ে সাংবাদিকরা যখন গরমে অস্থির, তখন সেটির সামনের অংশের প্লাস্টিকের প্রাচীর তুলে দিয়ে সেখানে বসে কাজ করার মতো পরিবেশ তৈরি করা হয়। মিডিয়া সেন্টার লাগোয়া এলাকায় এনে বসানো হয়েছে ভাড়া করা কিছু অস্থায়ী টয়লেট।

মাঠের দুটি এলাকায় দর্শক গ্যালারি বানানোর কাজ শুরু হয়েছিল। তা এখনও শেষ হয়নি। মাঠের চারপাশে এমন ভিআইপি গ্যালারি সহ নানা কিছুও সাজানো-বানানো হয়েছে এমন অস্থায়ী আয়োজনে! মাঠের চারপাশে মাটিতে বসে খেলা দেখার ব্যবস্থাও স্বস্তিদায়ক হবেনা। কারন সেগুলোয় ঘাস লাগানোর কাজ শেষ হয়নি। এমন একটি অপ্রস্তুত মাঠেই বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ এক ম্যাচ! মেলবোর্নের এমসিজিতে শ্রীলংকার কাছে হারের পর দলের আর সমর্থকদের আস্থা ফেরাতে এ ম্যাচে জয়ের বিকল্প নেই বাংলাদেশের। স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে আগের চার দেখার তিনবারইই বাংলাদেশ জিতেছে। বৃষ্টিতে পন্ড হয়েছে চতুর্থ ম্যাচ। পরিসংখ্যানের বিচারেও বৃ্হস্পতিবারের ম্যাচে বাংলাদেশ ফেভারিট। বাংলাদেশ দলের ক্যাপ্টেন মাশরাফিও বুধবারের ব্রিফিং’এ বলেছেন, এটি বাংলাদেশের বিশ্বকাপের দ্বিতীয় পর্যায়ে এগিয়ে যাওয়ার ম্যাচ। শুধু এই ম্যাচ না পরের ম্যাচে এডিলেডে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে তারা দ্বিতীয় পর্যায় তথা কোয়ার্টার ফাইন্যাল নিশ্চিত করতে চান। আর স্কটিশ দলের ক্যাপ্টেন বলেছেন, আইসিসির পূর্নাঙ্গ সদস্য দল বাংলাদেশকে হারিয়ে তারা ঘটাতে চান অঘটন! এমন একটি চাপা ক্লাইম্যাক্সের খেলা বৃহস্পতিবার হবে নেলসনের সেক্সটন ওভালে।


কিন্তু বিশ্বকাপ নিয়ে কী সে রকম আবেগ-উত্তেজনা আছে নেলসনবাসীর? এমনিতে ছোট বিমান বন্দরটায় বিশ্বকাপের নানান ফেস্টুন-ব্যানার টানানো হয়েছে।কিন্তু স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে সে উত্তেজনার আঁচ পাওয়া যায়নি। বুধবার নেলসন বিমান বন্দরে নেমে হোটেলে যেতে যে ট্যাক্সি নেয়া হয়েছে সেটির চালাচ্ছিলেন মাঝবয়সী এক নারী। নাম কেট। ক্রিকেট খেলা দেখতে যাবে কিনা, জিজ্ঞেস করলে বলে, নাহ! সে ক্রিকেটে উৎসাহী না। কিসে উৎসাহী জানতে চাইলে বলে মোটর রেসিং’এ। এমনিতে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের এসব গ্রাম এলাকা তথা কান্ট্রি সাইটে বয়স্ক লোকজন বেশি থাকেন। যেহেতু খেলাটায় নিউজিল্যান্ড নেই তাই বুড়োবুড়িদেরও আগ্রহ নেই। এলাকাটিতে অবশ্য উল্লেখযোগ্য সংখ্যক স্কটিশ অরিজিন আছেন। তাদের অনেকে আসতে পারেন বৃহস্পতিবারের ম্যাচ দেখতে।

এর আগে ক্যানবেরায় বাংলাদেশ-আফগানিস্তানের ম্যাচ দেখতে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশির উপস্থিতিতে সেখানকার মানেকা ওভাল মিরপুর স্টেডিয়ামের চেহারা নিয়েছিল। বৃষ্টিতে ব্রিসবেনের ম্যাচ ভেসে গেলেও মেলবোর্নের এমসিজিতেও হাজির হয়েছেন কয়েক হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি। নেলসনে যে সেভাবে বাংলাদেশি নেই। ক্যানবেরা-মেলবোর্নে সিডনি সহ নানা শহর থেকে প্রবাসীরা গেছেন। নেলসেন থেকে ৪৫ মিনিট ফ্লাইট দূরত্বের ক্রাইস্টচার্চে বাংলাদেশি যারা আছেন তারাই নেলসন ম্যাচের মূল ভরসা। সেখান থেকে আসা সহ যদি বৃহস্পতিবারের ম্যাচে বাংলাদেশের সমর্থক সংখ্যা দুশো ছাড়ায় সেটি হবে বড় একটি খবর। বৃহস্পতিবারের ম্যাচে বাংলাদেশি সমর্থক ক্রাউড কত হবে না হবে তা বুধবারের মিডিয়া ব্রিফিং’এ এসেছিল। ক্যাপ্টেন মাশরাফি বলতে চেয়েছেন ক্যানবেরা-মেলবোর্নে দর্শক সমর্থকের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ একভাবে খেলেছে নেলসনে হয়তো খেলতে হতে পারে অন্যভাবে। তেমন একটি পরিবেশে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ খেলবে জয়ের উজ্জ্বল সম্ভাবনার একটি ম্যাচ। যে খেলা দলকে এগিয়ে দিতে পারে স্বপ্নের কোয়ার্টার ফাইন্যালের পথে।


নেলসনের আরো কিছু তথ্য: নেলসনের এই সেক্সটন ওভাল সেক্সটন ফিল্ড নামেও পরিচিত। নেলসন ক্রিকেট এসোসিয়েশন নির্মিত এই স্পোর্টসে কমপ্লেক্সে এথোলেটিক্স, এসোসিয়েশন ফুটবলল, হকি, সফটবল খেলার ব্যবস্থাও আছে। এখানে প্রথম ক্রিকেট খেলা হয় ২০০৯ সালে। সেটি অবশ্য ছিল একটি আঞ্চলিক টি-টুয়েন্টি টূর্নামেন্ট। প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেট প্রথম খেলা হয় ২০১১ সালে। ২০১০ সালে এখানে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড মহিলা ক্রিকেট দলের মধ্যে টি-টুয়েন্টি ইন্টারন্যাশনালের একটি ম্যাচ হয়েছে। এবারের বিশ্বকাপের আগে এখানে পঞ্চাশ ওভারের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়েছে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যে।


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment