প্রবাসে আমাদের শিশুরা
মাঝে মাঝেই ভাবি, দেশ ছেড়ে সুদূর এই বিদেশে এসে আমাদের থাকবার প্রধান কারনই হচ্ছে বুঝি ছেলেমেয়েদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত তৈরি করা। আমাদের স্বপ্ন ওদেরকে সার্থকভাবে বড় করে তোলা আর সেজন্যেই এতদুর আসবার চিন্তা করি যেন বিদেশের এই উন্নত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ওরা যাতে সুস্থ-সুন্দর ও নিরাপদ ভাবে গড়ে ওঠে। কিন্তু বিদেশের এই সম্পূর্ন ভিন্নধর্মী পরিবেশে দেশী কায়দায় ছেলেমেয়েকে বড় করে তোলা কি এতটাই সহজ ?
বাচ্চারা যখন একটু ছোট থাকে তখন তাদেরকে বুঝিয়ে বলে অনেক কিছুই করানো যায়, কিন্তু বড় হতে থাকার সাথে সাথে তাদের সামনে বর্তমান পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিজ দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, সমাজ ব্যবস্থাকে তুলে ধরা আমাদের পক্ষে সহজ হলেও, ওদের পক্ষে শেখা, মেনে নেয়া ততটা সহজ নয়। আর এই কষ্টসাধ্য ব্যাপারটাকে সহজ করে তোলার জন্য আমরা বাবা-মায়েদের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি !
আমাদের শিশুদেরকে নিজস্ব সংস্কৃতি এবং ধর্ম সম্পর্কে পরিপূর্ণ ভাবে শেখাতে চাইলে শৈশব থেকেই তাদেরকে জানাতে এবং বোঝাতে হবে ওদের জন্ম-মাতৃ স্থান- পরিচয় এর কথা। দেশে- বিদেশে যেখানেই থাকি না কেন ওদেরকে নিজেদের দেশের ইতিহাস, সমাজ- সংস্কৃতি, কালচার, ধর্ম এই সমস্ত ব্যাপারে ঠিকভাবে জ্ঞান দান করতে হবে। আর এই শিক্ষা দেয়ার ব্যপারটা নির্ভর করছে ঘরে বাইরে আমরা ওদেরকে কে কতটা সময় দিতে পারি তার ওপর।
বিদেশে আসবার পর কম-বেশী আমরা সবাই অনেক ব্যস্ত হয়ে পড়ি, নিজ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে এসে থাকবার জন্য শুরু হয় বিভিন্ন রকম সংগ্রাম । সারাদিন অফিসের কাজ শেষে ঘরে ফিরে বিভিন্ন রকম ঘরের কাজ করা ছাড়াও বাজার করা, সামাজিকতা রক্ষা করা এইসব কিছুতে নিজেকে জড়িয়ে আমরা এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়ি যে অনেক করনীয় কাজ করার কথা অনেক সময় খেয়ালই থাকে না আবার খেয়াল হলেও সময় বের করতে পারিনা।
কিন্তু আসলে চাইলে মনে হয় অনেক কিছুই সম্ভব ! এখানে নিজেদের হাজারো কাজের ব্যস্ততার মাঝেও আমরা বাবা-মায়েরা সময় পেলেই আমাদের ছেলে-মেয়েদেরকে নিয়ে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। যতটা সম্ভব চেষ্টা করি ওদেরকে নানান কিছু শেখাতে। যেমন, ধর্মীয়, সংস্কৃতি, আরবি, বাংলা ভাষা, ইত্যাদি যার পক্ষে যতটুকু সম্ভব শেখানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। হাতে কলমে শেখানো ছাড়াও আমরা বড়রা নিজেরা এই সমস্ত ব্যাপার চর্চা করে গেলে অনেক সময় শিশুরা দেখে দেখেও অনেক কিছু শেখে এবং আয়ত্ত করতে পারে।
বিদেশে বসে শিশুদের নিজেদের ঘরে এবং স্কুলের পড়াশোনার পাশাপাশি এই সমস্ত সংস্কৃতি এবং নিজস্ব ধর্মীয় শিক্ষা শেখার উৎসাহটা একদিকে যেমন ঘরে তৈরি হচ্ছে তেমনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গুলিও তাদেরকে এই সমস্ত কাজে সহায়তা করে তাদেরকে আরো বেশি করে শেখবার জন্য অনুপ্রেরণা যুগিয়ে যাচ্ছে। বলাবহুল্য এইসব প্রতিষ্ঠান গুলির মহৎ উদ্যোগের কারণে বাবা-মায়েরাও অনেক শান্তি এবং স্বস্তি পাচ্ছেন এই ভেবে যে তাদের ছেলেমেয়েরা ঠিকমতোই তাদের সংস্কৃতি এবং ধর্মকে যথাযথ মর্যাদা অনুযায়ী গ্রহণ করতে পারছে। অন্যদিকে সকলের সাথে মিলেমিশে শেখবার সুযোগ পেয়ে শিশুদেরও শেখার উৎসাহ আরো অনেক গুণে বেড়ে যাচ্ছে।
এই সমস্ত প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলি বড়, শিশু বিভিন্ন বয়সীদেরকে শিক্ষা দেয়ার ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এরা মাঝে মাঝে নানান রকমের অনুষ্ঠান বিশেষ করে দেশীয় ঐতিহ্যপূর্ণ এবং স্মরণীয় দিন গুলিকে বিশেষ মর্যাদা সহকারে স্মরন করে এবং পালন করে, যেখানে শিশুদের অংশগ্রহণ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এরা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক মূলক অনুষ্ঠান করে শিশুদেরকে একদিকে যেমন সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে শারীরিক-মানসিক ভাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করছেন অপরদিকে শিশুদের দক্ষতার সৌন্দর্যকে চারিদিকে ছড়িয়ে দেবার সহায়তায় নিজেদেরকে নিবেদিত করছেন। এদের প্রচেষ্টায় আমাদের শিশুরা অনেক ছোট থেকেই অনেক কিছু শিখতে এবং জানতে পারছে যা তাদের জানা দরকার। ঈদ, নববর্ষ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি এমনসব উল্লেখযোগ্য দিনগুলি এবং এর উৎস- ইতিহাস সম্পর্কে বিদেশে বসে আমাদের শিশুদেরকে জানাতে এবং বোঝাতে সাহায্য করতে পারাটা সত্যি প্রশংসনীয়।
এমন মানবিক কাজে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যারা নিজেদের সময় এবং নিষ্ঠাকে নিয়োজিত করে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে বিভিন্নভাবে শিক্ষা দিয়ে তাদের জ্ঞানের পরিধিকে আরো বিস্তৃত করে তুলছেন এবং দেশীয় সংস্কৃতি ও মর্যাদাকে বিদেশে প্রতিস্থাপনের সাহায্য করে যাচ্ছেন তাদের প্রতি আমার বিশেষ কৃতজ্ঞতা। প্রার্থনা করি সবার এ প্রচেষ্টা সফল হোক আর আমাদের শিশুরা সুন্দর ও সার্থক ভাবে গড়ে ওঠে সমাজ, দেশ ও জাতির মুখ আরো বেশি করে উজ্জ্বল করে তুলুক।
Dr Naila Aziz Meeta
Home town is Bangladesh, live in Australia. Love to write, read, travel, and listening to music.
Related Articles
Dilruba Shahana's Bangla Article Unsolved
অমিমাংসিত আলেখ্য – দিলরুবা শাহানাটেলিফোনটা রাখার পর পরই আবার বাজলো। অস্বস্বি লাগছে। রিসিভার তুলবো কি না ভাবছি। বেজেই চলেছে। থামছেই
Consular Camp in Melbourne on Friday 11 April Saturday 12 April 2014
Dear Respected Community Members Bangladesh High Commission (Canberra) has organized a Consular Camp in Melbourne on 11th & 12th April