রুবি চলে গেলো অস্ট্রেলিয়া ছেড়ে

রুবি চলে গেলো অস্ট্রেলিয়া ছেড়ে


ফজলুল বারী: অতঃপর চলে গেলো রুবি। এটি অবশ্য বাংলা গানের কবিতার সেই রুবি রায় নয়। রুবি প্রিন্সেস। সেই আলোচিত সমালোচিত প্রমোদতরী। ক্রুজ। একদিন অস্ট্রেলিয়ার জলসীমায় রুবি ছিল বিশেষ এক আলোচনা আহ্লাদের নাম। পর্যটক নিয়ে চলাচল করে অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ডের বন্দর থেকে বন্দরে।
কিন্তু করোনা ভাইরাস সংক্রমনকে কেন্দ্র করে সেই রুবি হয়ে গিয়েছিল এক ধরনের ভীতি-আতঙ্কের নাম। রবি মানে করোনা! রুবি মানে মৃত্যু! মৃত্যুপুরী! রুবি হয়ে গেলো আসামী। জাহাজ হয়ে গেলো ভাসমান কারাগার। কারন এক জাহাজ থেকে ছ’শ’র বেশি করোনা ভাইরাসের রোগীর উৎপত্তি হয়েছিল। মৃত্যু হয়েছে তাদের ২১ জনের।
রুবির বিরুদ্ধে তদন্ত করেছে অস্ট্রেলিয়ার পুলিশ। অভিযোগ ফৌজদারি অপরাধের! জব্দ করেছে এর ব্ল্যাক বক্স সহ নানান প্রমানাদি। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে খাবার সরবরাহকারী কোম্পানির মাধ্যমে রুবি এর যাত্রীদের মধ্যে মরনব্যধি করোনার জীবানুও সরবরাহ করেছে।
অতএব রুবি তুমি আসামী। তোমার বিচার হবে আদালতে। তবে এই বিচারের জন্যে তদন্ত শেষ করতে লেগে যাবে পাঁচ-ছ’মাস সময়। এই সময়ে এমন মহামারী আর মৃত্যুপুরী জাহাজটিকে অন্তত অস্ট্রেলিয়ার জলসীমায় রাখা যায়না।
এরজন্য পুলিশ বলেছে তুমি চলে যাও রুবি। অস্ট্রেলিয়া ছাড়ো। রুবিকে অস্ট্রেলিয়া ছাড়া নির্দেশ দেয়া হয়েছিল গত রবিবারের মধ্যে। এরপর এর ক্রুদের স্বাস্থ্যগত কারনে এর যাত্রা বিলম্বিত করা হয়। কারন পুলিশ কড়া হলেও মানবিক অস্ট্রেলিয়া সবকিছু পারেনা।
এরমাঝে ক্রুদের সবার করোনা পরীক্ষা করা হয়। করোনা সিমটম যুক্ত ৩৩ ক্রুকে আইসোলেশনে স্থানান্তরিত করা হয়েছে সিডনির হোটেলে। অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্য বিভাগের ছাড়পত্র পেলেই তারা তাদের দেশের উদ্দেশে রওয়ানা করতে পারবেন।
উল্লেখ্য ৫০ দেশের এক হাজারের বেশি ক্রু ছিল রুবিতে। এদের ১০৯ জনের মধ্যে কভিড নাইন্টিনের সংক্রমন পাওয়া গিয়েছিল। যাদের সিংহভাগ সুস্থ হয়ে গেছেন। ক্রুদের প্রায় সবাই কোয়ারিন্টান-আইসোলেসনে থাকতে হয়েছে জাহাজের ভিতর।
বৃহস্পতিবার যাবার দিন ৩৫০ জনের বেশি ক্রুকে সামাজিক দূ্রত্ব মেনে একেকটিতে ১৫ জনের মতো করে ২৫ টি বাসে করে বৃহস্পতিবার সিডনি কিং জর্জ আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বিশেষ একটি বিমানে তারা রওয়ানা হন ফিলিপাইনের ম্যানিলার উদ্দেশে।
কভিড নাইনটিন পজিটিভ যুক্ত ১১ ক্রু আপাতত থাকছেন সিডনির এক হোটেলে ১৪ দিনের কোয়ারিন্টানে। গত ৩ দিনে সুস্থ ছাড়পত্র পাওয়া ৫৪২ জন ক্রু জাহাজ থেকে নেমে পুলিশ স্কটে বিমান বন্দরে গিয়ে যার যার দেশ ব্রাজিল, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, মেক্সিকো, নিউজিল্যান্ড, ব্রিটেন, আমেরিকার উদ্দেশে রওয়ানা হয়ে যান।
এসব আনুষ্ঠানিকতার পর পোর্ট কেম্বলা বন্দর ছেড়ে আন্তর্জাতিক জলসীমার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে রুবি। এপ্রিলের ৬ তারিখ থেকে জাহাজটি সেখানেই ছিল। অনেকটা অপরাধী আসামীর মতো দাঁড়িয়েছিল। তদন্তের সুবিধার্ধে সিডনি থেকে রুবিকে নিয়ে যাওয়া হয় পোর্ট কেম্বলায়।
ততোদিনে ভাসমান করোনার জাহাজ হিসাবে এর ক্রুদেরও স্বাভাবিক জীবন ছিলোনা। পোর্ট কেম্বলায় কেনো এই জাহাজ এ নিয়ে সেখানে বিক্ষোভও হয়েছে। এমন নাকিছুর ভিতর থেকে পার করতে হয়েছে অস্ট্রেলিয়ায় এবারের দূর্যোগপূর্ন পাঁচ সপ্তাহ!
অতঃপর বৃহস্পতিবার বিকেল ৫ টার দিকে পোর্ট কেম্বলা ছেড়ে যাবার সময় ৫০০’র মতো ক্রু ছিলেন রুবিতে।
যাবার সময় পোর্ট কেম্বলা যে এলাকায় সেই ইলাওয়ারা বাসীর উদ্দেশে ধন্যবাদ জানিয়ে জাহাজের পিছনে ব্যানারে লেখা হয়েছিল থ্যাংকু ইলাওয়ারা। ওই এলাকার একটি চ্যারিটিকেও যাবার আগে শুভেচ্ছা হিসাবে পনের হাজার ডলার দিয়ে গেছে রুবি প্রিন্সেস।
উল্লেখ্য এই মওসুমে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড রুটে রুবি প্রিন্সেস ট্রিপ দিতে পেরেছে মাত্র দুটি। প্রথম দফায় মার্চের ৮ তারিখে দ্বিতীয় দফায় মার্চের ১৯ তারিখে এটি সিডনি হারবারের সার্কুলার কিউ বন্দরে নোঙর করে। ১৯ তারিখে নোঙরের পর থেকে জাহাজ থেকে নেমেছেন মোট ২৭০০ যাত্রী।
মার্চের ২০ তারখেই শনাক্ত হয় জাহাজ দিয়েছে ডজনের বেশি করোনা রোগী। এর একদিনের মাথায় জানা যায় রুবি থেকে নামা ৩০০’র বেশি রোগী করোনায় আক্রান্ত। মার্চের ২০ তারিখেই নিউসাউথ ওয়েলসের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুবির মাধ্যমে রাজ্যে করোনা রোগী ছড়িয়ে পড়া নিয়ে তার উদ্বেগের কথা জানান।
নিউসাউথ ওয়েলসে যে ২৯৭৬ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে এর ১৩ ভাগ রোগী দিয়েছে এই আসামী ক্রুজ। নিউসাউথ ওয়েলসের বাসিন্দা ৮ জন রোগী রুবিতে ঘুরতে করোনায় প্রান হারিয়েছেন।
অস্ট্রেলিয়ার বাইরে প্রায় ৯০০ আন্তর্জাতিক যাত্রী ছিলেন রুবিতে। তাদের ৩৫ জন করোনায় আক্রান্ত, ২ জন মৃত্যুবরন করেছেন।
আর অস্ট্রেলিয়া ত্যাগের পর জানা গেলো রুবির কর্মচারীদের নেতা পদত্যাগ করেছেন। কারন তাঁর মনে হয়ে দূর্যোগের সময়টায় তিনি যথাযথভাবে রুবির কর্মচারীদের স্বার্থরক্ষা করতে পারেননি।


Place your ads here!

Related Articles

21st Century Architect’s!

“My greatest challenge has been to change the mindset of people. Mindsets play strange tricks on us. We see things

চোখের আয়না মনের জানালা

দাদি মেজোকে কোলে নিয়ে আমাকে বলল চল নদী দেখে আসি। আমি দাদির শাড়ির আচল ধরে পিছনে পিছনে চললাম। নদীর পাড়ে

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment