অস্ট্রেলিয়া যেভাবে সামাল দিচ্ছে করোনার দ্বিতীয় প্রবাহ

অস্ট্রেলিয়া যেভাবে সামাল দিচ্ছে করোনার দ্বিতীয় প্রবাহ

আজ আমাদের পারিবারিক ডাক্তার জিপির কাছে একটা রেফারেল লেটার আর ওষুধের প্রেসক্রিপশনের জন্যে গিয়েছিলাম। বাংলাদেশি ডাক্তার মামুন চৌধুরী এখানে আমাদের পারিবারিক ডাক্তার। চমৎকার মানুষ। সিডনির লাকেম্বায় বসেন।

আমাদের এখানে কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখাতে জিপির মাধ্যমে তাঁর রেফারেল সহ যেতে হয়। নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দাদের জিপির ফী দেয় সরকার। ছাত্রদের জিপির খরচ ইন্সুরেন্স কোম্পানির মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়।

জিপির এই ফী ৭৫ ডলারের কম নয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অনেকে বাল্ক বিলিং এর মাধ্যমেই রোগী দেখেন। অর্থাৎ এরাও রোগী থেকে আলাদা ফী নেননা। আর যে সব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগীর কাছ থেকে ফী নেন,

জিপির রেফারেল লেটার সহ দেখা করতে গেলে তাঁর ফীর একটি অংশ সরকার রোগীর ব্যাংক একাউন্টে ফেরত দেয়। অনলাইনে এই কাজটা করে দেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সহকারী।

পেনশনার এবং নিম্ন আয়ের মানুষজনকে ওষুধও দেয়া হয় স্বল্পমূল্যে। এসবের জন্য অন্য কোথাও যেতে হয়না। প্রোগ্রামিং করা আছে সবকিছু। ডাক্তার-ফার্মাসিস্টও শুধু কার্ডের নাম্বার ধরে বাটনে ক্লিক করলেই চলে।

তাঁর ফী-রোগীর জন্য সরকারি সহায়তা-ওষুধের সরকারি সহায়তার অংশ অটোমেটিক তাঁর-তাদের ব্যাংক একাউন্টে চলে আসে। ডাক্তার-ফার্মেসির পাওনা আবার ট্যাক্স কেটে তাদের একাউন্টে গিয়ে ঢুকবে। এসবকেই বলা হয় ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা।

এরজন্যে এই দেশটিকে আলাদা করে কেউ ডিজিটাল অস্ট্রেলিয়া বলেনা। পৃথিবীর মানুষ-দেশ ডিজিটাল হয় তাঁর যুগের প্রয়োজনে। সময় বাঁচাতে এবং কম জনশক্তি দিয়ে বেশি কাজ করাতে ডিজিটাল হয়।

আর চিকিৎসা সুবিধা সহ সামাজিক সহায়তার নানাকিছু  যে একটি রাষ্ট্র এর জনগনকে দেয় এসব কোন দয়া মায়া নয়। এসব নাগরিকদের মৌলিক অধিকার। অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা-চিকিৎসাকে মৌলিক অধিকার বলা হয়েছে সংবিধানে।

 নাগরিকদের এসব মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলে একটি সরকার শপথ নেয়। কিন্তু বাংলাদেশে এসবকে কিছু লোকজন ‘বিশেষ করেছি’ শিরোনামে প্রচার করে! নাগরিকদের একাংশও তাতে ‘আহা বেশ বেশ বেশ’ বলে তালিয়া বাজান!

বাংলাদেশে যে পরিমান দূর্নীতি হয় যে পরিমান টাকা বিদেশে পাচার হয়, এসব বন্ধ করা গেলে নাগরিকদের সবগুলো মৌলিক অধিকার পূরন করা সম্ভব। এবার করোনায় চিহ্নিত হয়েছে বাংলাদেশের চিকিৎসা অবকাঠামোটি ভঙ্গুর এবং দূর্বল।

চিকিৎসার নানান অবকাঠামোর কারনে শুরু থেকে অস্ট্রেলিয়ায় করোনায় মৃত্যুহারও কম।  বাংলাদেশে করোনার শুরুর দিকে যেভাবে অসহায় মানুষজন হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরছিল কিন্তু ভর্তি হতে পারছিলোনা তা যে কোন সভ্য দেশে অবিশ্বাস্য।

টেস্ট জালিয়াতি-বিনা অনুমতির হাসপাতাল জালিয়াতি এসব মানুষের কল্পনাকেও হার মানাবে। অস্ট্রেলিয়ায় যে কারও একটি ফোন নিতে গেলেও সবার আগে তার ক্রেডিট চেক করা হয়। সঙ্গে বলতে যা বলছি তা সত্য।

 ক্রেডিট হিস্ট্রিতে গোলমাল পাওয়া গেলে সেই লোকটি কোন ফোন পাবেনা, ব্যাংক একাউন্ট,  বাড়িভাড়াও করতে পারবেনা। হাসপাতাল বা কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানতো দূরের দিল্লী। বাংলাদেশের নানাকিছুর গলদ গোড়ায়।

অস্ট্রেলিয়ায় প্যারাসিটামলের মতো কিছু ওষুধ, ভিটামিন এসব ছাড়া জরুরি সব ওষুধ কিনতে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন লাগে। আমি আমার গ্লুকোমার চোখের ড্রপ আর প্রেসারের ওষুধের প্রেসক্রিপশনের জন্যে গিয়েছিলাম।

এবার জিপির এপোয়েন্টমেন্ট করার সময় ফোন রিসিভার বরাবরের মতো মুখস্ত কিছু প্রশ্ন করছিলেন। যেমন আমার কোন কোভিড-নাইন্টিনের উপসর্গ আছে কিনা। গত ১৪ দিনের মধ্যে বিদেশ বা ভিক্টোরিয়া রাজ্য থেকে ফিরেছি কিনা।

করোনার সময় শুরুর পর থেকে এখানকার মেডিকেল সেন্টারগুলোয় এপোয়েন্টমেন্ট নেবার সময় এ প্রশ্নগুলো করা হয়। কিন্তু এবার প্রথমবারের মতো বলা হলো, আমি যাতে মাস্ক পরে যাই। প্রথম প্রবাহ চলাকালীন এটা ছিলোনা।

অস্ট্রেলিয়ায় জনসংখ্যা কম। বাংলাদেশের চাইতে বায়ান্নগুণ বড় দেশটায় জনসংখ্যা আড়াই কোটি। এরজন্যে এখানে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা সম্ভব। বিস্তর যানবাহন আর মানুষ সচেতন থাকায় মোটামুটি সবাই সামাজিক দূরত্ব মেনে চলেনও।

 এখানে মানুষের সচেতন থাকার মূলে কাজ। কাজ পাওয়া ধরে রাখা। এই করোনার সময়ে শুধু নয়, সাধারন সময়েও কারও ফ্লু থাকলে তাকে কাজ থেকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়। কারন একজনের ফ্লু থেকে তা আক্রান্ত করতে পারে পুরো টিমকে।

আর এখনতো করনো মহামারীর সময়। এখানে সবাই জানেন সামাজিক দূরত্ব মেনে চললে মাস্ক না পরলেও চলে। এরজন্যে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বা প্রধান নেতাদের কোন মাস্ক পরা কোন ছবি নেই।

কিন্তু এবার ভিক্টোরিয়া রাজ্যভিত্তিক করোনার দ্বিতীয় প্রবাহকে কেন্দ্র করে এখন মাস্ক পরাতে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আজ আমার জিপি মামুন চৌধুরীকেও দেখলাম মাস্ক পরে রোগী দেখছেন। বললেন, সরকারের আদেশ।

করোনা মোকাবেলায় অস্ট্রেলিয়ায় নানা ব্যবস্থাপনা বলতে বলতে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে একপ্রস্থ হতাশাও প্রকাশ করলেন ডাঃ চৌধুরী। প্রবাসে দুই বাংলাদেশির দেখা হলে দেশের প্রসঙ্গ থাকবেই। আমরা সবাই আমাদের দেশকে ভালোবাসি।

যে বিদেশে গেছে সে জানে দেশের জন্যে সারাক্ষন প্রান কিভাবে কাঁদে। বিদেশ যাওয়া সহজ। নানা কারনে দেশে ফেরা কঠিন। আমরা আবার স্বার্থপরের মতো একটি নিরাপদ দেশে-সমাজে-জীবনে অভ্যস্ত হয়ে গেছি।

আজ আমার জিপির মেডিক্যাল সেন্টারে দেখলাম করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। কিন্তু তা মেডিকেল সেন্টারের ভিতরে নয়। এপোয়েন্টমেন্ট করা রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা হয় মেডিকেল সেন্টারের বাইরে তার গাড়িতেই।

মেডিকেল সেন্টারের সামনে গিয়ে ফোন করলে নমুনা সংগ্রাহক বাইরে এসে নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যান। যথারীতি এই নমুনা সংগ্রাহক পিপিই এবং মুখে শিল্ড পরা ছিলেন। অতএব সবার সব কাজই চলছে কোন হয়রানি ছাড়াই।

যে সার্ভিসের সঙ্গে হয়রানি জড়িত এটিকে সেবা খাত বলা চলেনা। সারা দুনিয়ার চিকিৎসা খাত একটি সেবা খাত। সেবার মনোভাব, গ্রাহকদের আস্থা অর্জনের কারনেই ভারতের বিশেষ বিশেষ ডাক্তার-হাসপাতাল বাংলাদেশের রোগীদের এত প্রিয়।

এই করোনা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের চিকিৎসাখাতটি কত ভঙ্গুর-কত দূর্বল। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অযোগ্যদের আখড়া। এটি জায়গায় জায়গায় শেখ হাসিনাকেও জিম্মি করেছে। শেখ হাসিনার সঙ্গেও প্রতারনা করেছে।

নাগরিকদের প্রাপ্য চিকিৎসা সেবা দিতে চাইলে অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে সরকারকেই। দুর্নীতি বন্ধ করতে না পারলে ফলাফল শূন্য। করোনা মহামারীকেও যে বাংলাদেশে দুর্নীতির সুযোগ হিসাবে দেখা হয়েছে এটি এখন দিনের আলোর মতো সত্য।

অস্ট্রেলিয়ায় এখন চলছে করোনার দ্বিতীয় প্রবাহ। এর ধকলে নাকাল দেশটির ভিক্টোরিয়া রাজ্য। বিশেষ করে মেলবোর্ন শহর। জনসংখ্যার ঘনত্বে সিডনির পর মেলবোর্ন অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর।

করোনার কারনে অস্ট্রেলিয়ার আন্তর্জাতিক সীমান্ত এখনও বন্ধ। এদেশের চারপাশে তাসমান সাগর-আর প্রশান্ত মহাসাগর। তাই এর কোন স্থল সীমান্ত নেই। বিমানই এখানে আসার সহজ পথ।

করোনার কারনে বিভিন্ন দেশে আটকাপড়া নাগরিকদের চার্টার্ট ফ্লাইটে মেলবোর্নে আনা হচ্ছিল। সেখানে চৌদ্দ দিনের হোটেল কোয়ারিন্টানের পর সবাই যার যার রাজ্যের বাড়িঘরে সড়কপথে ফিরে যান।

কিন্তু এই বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের সঙ্গে করোনাও এসে ঢুকেছে অস্ট্রেলিয়ায়। অথচ প্রথম প্রবাহ অস্ট্রেলিয়া বেশ কম লোকক্ষয়ের মাধ্যমে সামাল দিয়েছিল। জানুয়ারিতে এখানে প্রথম রোগী পাওয়া যায়।

রুবি প্রিন্সেস নামের একটি প্রমোদতরী তখন অস্ট্রেলিয়ায় করোনা সংক্রমনে ভূমিকা রাখে। বৃদ্ধনিবাসগুলোও এই করোনার নির্মম শিকার হয়েছে। এদেশে করোনায় মারা  যাওয়া প্রায় সবাই বৃদ্ধ।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন স্বীকার করেছেন বৃ্দ্ধনিবাসগুলোকে করোনার থাবা থেকে রক্ষার পর্যাপ্ত প্রস্তুতির অভাব ছিল। এরজন্যে তিনি জাতির কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন। এই ক্ষমা চাওয়ার সংস্কৃতি বাংলাদেশে গড়ে তুলতে হবে।

করোনার প্রথম প্রবাহ ঠেকাতে সারা অস্ট্রেলিয়া জুড়ে নাগরিকদের জব সিকার, জব কিপার নামের দু’ধরনের ভাতার ব্যবস্থা করে অস্ট্রেলিয়া সরকার। নিউ স্টার্ট এলাউন্স,  জব সিকার নামের বেকারভাতা অস্ট্রেলিয়ায় বরাবরই ছিল।

প্রতি দুই সপ্তাহে এটি ৫৫০ ডলার করে দেয়া হতো। করোনার কারনে এই ভাতা দুই সপ্তাহে বাড়িয়ে করা হয় ১১ ডলার। জব কিপারদের প্রতি দুই সপ্তাহে ১৫শ ডলার করে ভাতা দেয়া হয়।

করোনার কারনে যে সব ব্যবসা মালিক কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছেননা তাদের  ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে বেতন এক্ষেত্রে সরকার দিচ্ছে। এই জব কিপার ভাতা সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ করার কথা ছিল।

কিন্তু করোনার দ্বিতীয় প্রবাহের কারনে তা এখন বন্ধ করা হচ্ছেনা। উল্লেখ্য অস্ট্রেলিয়ায় পেনশনারদের প্রতি দুই সপ্তাহে ৭’শ ডলারের বেশি ভাতা দেয়া হয়। অস্ট্রেলিয়ান ছাত্রদের ইয়ুথ এলাউন্স-অস্টাডি নামেও ভাতা আছে।

করোনার কারনে পেনশনারকে দু’বার ৭৫০ ডলার করে হার্ডশীপ ভাতা দেয়া হয়েছে। করোনা মহামারীর  দ্বিতীয় প্রবাহে অস্ট্রেলিয়ায় ভিক্টোরিয়া রাজ্যটির অবস্থা এখন  বেশি নাকাল। ভিক্টোরিয়া আবার অস্ট্রেলিয়ার রাজনৈতিক সৌন্দর্যকে সামনে এনেছে।

সরকার-বিরোধীদল সবাই মিলে হাতে হাত রেখে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে। রাজনৈতিক কর্মীরা অবশ্য এদেশে মাঠেঘাটে কাজ করেনা। জরুরি পরিস্থিতি সামাল দিতে মাঠেঘাটে সবচেয়ে বেশি থাকে পুলিশ।

এখনও স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে পুলিশ কাজ করছে সবচেয়ে বেশি। প্রথম দফায় সারা অস্ট্রেলিয়ায় সংক্রমনের সংখ্যা ছিল ৭ হাজারের মধ্যে। ১০৪ জন মারা যান তখন। আক্রান্তদের সিংহভাগ সুস্থ হয়ে গেলে দৃষ্টান্তের সৃষ্টি হয়েছিল।

কিন্তু দ্বিতীয় প্রবাহে সংক্রমনের সংখ্যা এরমাঝে ২৩ হাজার ছাড়িয়েছে।  এখানেও সবকিছু বেশি ভিক্টোরিয়া রাজ্যে। বিশেষ করে মেলবোর্ন মেট্রোপলিটন এলাকায়। প্রথম-দ্বিতীয় প্রবাহ মিলিয়ে এরমাঝে অস্ট্রেলিয়ায় মৃত্যুবরন করেছেন ৪৩৮ জন।

 শুধু ভিক্টোরিয়া রাজ্যেই প্রান হারিয়েছেন ৩৫১। এখন দ্বিতীয় প্রবাহে এসে ভিক্টোরিয়া রাজ্যেই ১৭ হাজার ২৩৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। তবে তাদের ৯৪১৩ জন এরমাঝে সুস্থ হয়ে গেছেন।

এখন অবশ্য সারা অস্ট্রেলিয়া জুড়ে একটিভ কেস তথা করোনা রোগী আছে ৭৭৫৪ জন। এদের মধ্যে ৬৮২ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। আইসিইউতে আছেন ৫২ জন। কিন্তু আইসিইউর ক্যাপাসিটি আছে ৩৩৭৮ জনের।

প্রথম থেকে অস্ট্রেলিয়া করোনা বিতাড়নে বেশি বেশি টেস্টকে গুরুত্ব দিচ্ছে। আড়াই কোটি মানুষের এরমধ্যে প্রায় ৫৪ লক্ষ মানুষের টেস্ট হয়েছে। এলাকায় এলাকায় সামিয়ানা টাঙ্গিয়ে টেস্ট চলছে।

প্রথম থেকে এ দেশ যেখানে যে রোগী পেয়েছে তার সংস্পর্শে আসা লোকজনকে কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং এর মাধ্যমে চিহ্নিত করে সমাজকে নিরাপদ করতে চেয়েছে। এখনও তাই করে যাচ্ছে। কোথাও কোন কিছু থেমে নেই।

 সিমটম নেই বলে কাউকে বলা হচ্ছেনা টেস্ট করার দরকার নেই। যেমন সিডনিতে এরমাঝে একাধিক স্কুলে পজিটিভ রোগী ছাত্র পাওয়া গেলে ওই স্কুল ৭২ ঘন্টার জন্যে বন্ধ করে দেয়া হয়। ওই সময়ে ক্লিন-নিরাপদ করা হয় স্কুলের পুরোটা।

ক্লাস চলেছে অনলাইনে। একই মালিকের দুটি থাই রেষ্টুরেন্টও সাময়িক বন্ধ করা হয়েছিল। এরপর খোঁজা শুরু হয় ওই রেস্টুরেন্ট দু’টোয় অমুক দিন অমুক সময় থেকে অমুক সময় পর্যন্ত কারা কারা খেতে গিয়েছিলেন।

তাদের শনাক্ত করে কভিড টেস্ট-আইসোলেশনের ব্যবস্থা করা হয়। এখন মেলবোর্নে চতুর্থ দফা লকডাউন, জরুরি অবস্থা, রাত্রিকালীন কার্ফু চলছে। আর ভিক্টোরিয়া রাজ্যের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ আছে অন্য সব রাজ্যের।

ভিক্টোরিয়া রাজ্যে থেকে কেউ এলে তাকে বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের কোয়ারিন্টানে থাকতে হয়। কভিড নিয়ন্ত্রনে অস্ট্রেলিয়া শুরু থেকে জরিমানার কড়াকড়ি আরোপ করে। জরিমানায় এখানে ধনী-গরিব ভেদাভেদ নেই।

জরিমানা দিতেই হবে। একসঙ্গে না পারো কিস্তি করে দেবে। যেমন শুরুতে সিডনিতে সামাজিক দূরত্ব কেউ ভঙ্গ করলে তাকে ১৬৬৫ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এদেশে নামী দামি লোকজনের শাস্তির পরিমান বাড়ে।

ছবি দেখেও জরিমানা হয়। স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গ করে বারবিউ পার্টি, শিকার করেছিলেন তিন তারকা রাগবি খেলোয়াড়।  ইনস্ট্রাগ্রামে তাদের পোষ্ট করা ছবি দেখে ৫০ হাজার ডলারের বেশি জরিমানা ও খেলার ব্যাপারেও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

মেলবোর্নে চলতি সংকটের নেপথ্যে কিন্তু বিভিন্ন  দেশ থেকে যাওয়া অভিবাসীরা। ঈদ উৎসব সংশ্লিষ্ট সংক্রমনও আছে। কিন্তু কার দোষ-কে ছড়িয়েছে এটা না দেখে কিভাবে উদ্ধার পাওয়া যাবে সে ব্যাপারে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।

সবার অপেক্ষা ভ্যাকসিন আসবে কবে। অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন আগামী বছরের মাঝামাঝি নাগাদ আসতে পারে। অস্ট্রেলিয়া এরমাঝে এর তিন কোটি ডোজের অর্ডার দিয়ে রেখেছে। আর বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন ভ্যাকসিন লাগবেনা।

করোনা নাকি এমনি এমনি চলে যাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে! বাংলাদেশের মানুষের দূর্ভাগ্য এমন লোকজনকে মন্ত্রিসভা থেকে বের করে দেবার কোন স্বয়ংক্রীয় ব্যবস্থা নেই। মঙ্গলবার পর্যন্ত বাংলাদেশে এই মহামারীতে অফিসিয়েলি ৩৭৪০ জন মারা গেছেন।

কমটেস্টে মঙ্গলবার পর্যন্ত বাংলাদেশে ২ লাখ ৮২ হাজার ৩৪৪ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। প্রকৃত রোগীর সংখ্যা আসলে কত কেউ জানেনা। কারন মানুষকে টেস্ট বিমুখ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীকে সংক্রমনের উদ্দেশে কভিড পজিটিভ ডাক বিভাগের ডিজিকে তাঁর সামনে নিয়ে গেছেন ডাক মন্ত্রী! তাঁর বড় ভাগ্য এমন একটি কান্ডজ্ঞানহীন কাজ করার পর তিনি এখনও বহাল! এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেই!

করোনা দেশে দেশে রাজনীতিতেও নানান প্রভাব রাখছে। মানুষকে আস্থায় নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ায় অস্ট্রেলিয়ার সাম্প্রতিক জনমত জরিপগুলোতে ক্ষমতাসীন মরিসন সরকারের জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে।

 আর বাংলাদেশে বিকারহীন অথর্ব স্বাস্থ্যমন্ত্রী আর তার সাঙ্গপাঙ্গদের কারনে মানুষের যত রাগ সব গিয়ে পড়ছে সরকারের ওপর। ওবায়দুল কাদেরদের এন্টেনায় কী তা ধরা পড়ছে? না নিজেকে নিজে জনপ্রিয় তিনি ভাবতেই আছেন? 


Place your ads here!

Related Articles

Saga of Indian rice to Bangladesh!

Cyclone Sidr on the 15th November last year caused nightmare in Bangladesh. Ripping through the south western coast, killing thousands

Hasina’s peace model and realities on the ground

Recently in New York, the Bangladesh prime minister Sheikh Hasina presented her new global peace model for development at the

On departure of Pamela Bone by Dilruba Shahana

This is sad to know that Pamela Bone is no more there to write her column. She is the one

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment