শ্রীলংকার চেয়ে বাংলাদেশের নিরাপত্তা সতর্কতা ভালো

ফজলুল বারী: শ্রীলংকার ঘটনা নিয়ে আজ সারাদিন পড়লাম। মোট ১৩ জন আত্মঘাতী অংশ নিয়েছে রক্তক্ষয়ী এই হত্যাকাণ্ডে! বাংলাদেশে একদিনে ৫০০ বোমা হামলার ঘটনা মনে পড়ে গেলো। সেদিন শুধু মুন্সিগঞ্জে বোমা ফাটেনি। আমি তখন অনুসন্ধানে পেয়েছিলাম, মুন্সিগঞ্জে বোমার দায়িত্ব যার ছিল সে দেরি করে পৌঁছায় সেটি আর বিস্ফোরণ ঘটাতে পারেনি। চারদিনের পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে অবিস্ফোরিত সেই বোমাটি নিয়েই পালিয়ে যায়। ঢাকার আশেপাশের বোমাবাজরা বিভিন্ন এলাকায় বোমা ফাটিয়ে ঢাকার কাকরাইল মসজিদে এসে জড়ো হয়। এখান থেকে যার যার মতো করে পালিয়ে যায়।
তখন জঙ্গীদের মূল উদ্দেশ্য ছিলো নিজেদের শক্তি জানান দেয়া। মাঝে একবার চায়ের ফ্যাক্সে বিস্ফোরক নিয়ে আত্মঘাতী বোমাবাজ দলের প্রকোপ বেড়েছিল। এমন এক ঘটনায় একটি ছেলে দৈবাৎ মরেনি। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমি তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। আমাকে সে বলেছিল যে তাকে তৈরি করে পাঠিয়েছে আগের তিন রাত তার সঙ্গে ছিল। একসাথে খেয়েছে নামাজ পড়েছে। ঘটনার দিন সকালে তাকে অভিযানে বের করার আগে বলেছে পরের মিশনে সে আসছে। তার সঙ্গে তার দেখা হবে বেহেস্তে। সেই ঘটনায় বেঁচে যাওয়াতে সে অন্তত জানতে পারছে যে লোকটি তাকে পাঠিয়েছে সে কোনদিন মিশনেও যাবেনা। বেহেস্তেও তার সংগে দেখা হবেনা।
ওই ছেলেটি মাদ্রাসা পড়তো। আমি তাকে বলেছিলাম, তুমি মাদ্রাসায় পড়ো। এমনিতেতো বেহেস্তে যাবে। এসব করার দরকার কী। আমাকে সে জবাব দিয়ে বলেছিল, মাদ্রাসায় পড়লেই বেহেস্তে যাবার কোন গ্যারান্টি নাই ভাই। তখন আমি তার মগজ ধোলাইর মাত্রাটা বুঝতে পারি। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে এর নেতারা দেশে জঙ্গী উপস্থিতির কথা স্বীকার করতে চাইতেননা। বলতেন সব আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র। বাংলা ভাই নামের কেউ নেই, সব মিডিয়ার সৃষ্টি এমনওতো বলেছিলেন সেই সময়ের জামায়াতি যুদ্ধাপরাধী মন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী। গোপালগঞ্জের বানিয়ারচরের গির্জায় হামলার পর সেটিকে খ্রিস্টানদের অভ্যন্তরীণ বিরোধ বলার চেস্টাও হয়েছে।
জঙ্গী হামলার আশংকায় যখন প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের বাংলাদেশ সফরের সময় সাভার স্মৃতিসৌধে যাওয়া, বঙ্গবন্ধু মিউজিয়ামে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল হয়, তখন মিডিয়ায় লেখা হয়েছে আমেরিকা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে, বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যে ছিল, সেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট সাভার স্মৃতিসৌধ আর বঙ্গবন্ধু মিউজিয়ামে যান কী করে। অথচ মার্কিনীরা বলেছিল তাদের রাডারে দুই জঙ্গীর কথোপকথন ধরা পড়েছে। প্রেসিডেন্ট সাভারে হেলিকপ্টারে যাবার পথে কাঁধে বহনযোগ্য ক্ষেপনাস্ত্রের মাধ্যমে হেলিকপ্টারে আঘাত করার কথা বলছিল দুই জঙ্গী! ক্লিনটন এ অবস্থার মধ্যেও ঢাকা এসেছেন ঠিক, কিন্তু প্রচলিত এয়ারফোর্স ওয়ান ঢাকা আসেনি। ছোট একটি বিমানে সকালে দিল্লী থেকে ঢাকা এসে বিকালে আবার দিল্লী ফিরে যান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন বিরোধীদলের নেত্রী খালেদা জিয়া হোটেল সোনারগাঁওতে গিয়ে ক্লিনটনের সঙ্গে দেখা করেন। ক্লিনটন যতোক্ষন ঢাকায় ছিলেন, ঢাকায় এক রকম কার্ফুর অবস্থা বিরাজ করছিলো।
আবার শ্রীলংকার বিষয়ে ফেরা যাক। হোটেলের বুকিং দেখে এক আত্মঘাতীর নাম মোহাম্মদ আজম বলে শনাক্ত করা হয়েছে। সম্ভবত এটিও তার আসল নাম না। মোহাম্মদ আজমের যে ভিডিও ফুটেজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে সেটি দেখে শ্রীলংকার ঢিলেঢালা নিরাপত্তা ব্যবস্থারই যেন জানান দেয়। একটা লোক পিঠের ব্যাগে বিস্ফোরক নিয়ে হোটেলে লাইনে দাঁড়িয়ে নাস্তা নিয়ে খেলো। এরপর হেঁটে ঢুকে গেলো গির্জায়! কেউ কোথাও তার ব্যাগ চেক করেনি? সে তুলনায় বলবো বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখন অনেক ভালো। সর্বশেষ নানান জঙ্গী নির্মূলে বাংলাদেশের সক্ষমতার প্রমান পাওয়া গেছে। এই সক্ষমতা আরো বাড়াতে হবে।
একবার সার্ক সম্মেলন উপলক্ষে আমি শ্রীলংকা যাবার চেস্টা করেছিলাম। তামিল টাইগারদের আমলের কারনে তখন ভিসা নিয়ে বেশ কড়াকড়ি ছিল। হাতে সময় কম থাকায় আমারও তখন আর যাওয়া হয়নি। শ্রীলংকায় যে সব সহকর্মী রিপোর্টাররা গেছেন তারা বলেছেন, সেখানে তখন রাতবিরাতে ঘুম থেকে জাগিয়ে অতিথিদের হোটেল কক্ষ তল্লাশি করা হতো। তামিল টাইগারদের মেরেকুটে দেশছাড়া করে শ্রীলংকা নিজেদের যেভাবে নিরাপদ ভেবেছিল আদতে তা যে না এই ঘটনা সেটি সবার চোখে আংগুল উচিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।
এখন শ্রীলংকার বড় আয়ের উৎস পর্যটন। সারা দুনিয়া থেকে পর্যটকরা দেশটিতে ঘুরতে যান। সবচেয়ে বেশি যান ভারত থেকে। এখন সেখানে পর্যটনের ভরা মওসুম। গির্জা হত্যাকাণ্ডের মাশুল গুনবে শ্রীলংকার পর্যটন শিল্প। পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক করে পর্যটকদের মনে আস্থা আনতে দেশটি যে চেস্টা করছিল তাতে পানি ঢেলে দিয়েছে আমেরিকা। বৃহৎ শক্তিধর দেশটি শ্রীলংকায় আরও হামলার আশংকার কথা জানিয়েছে।
Related Articles
End of Gaddafi: Devil or Martyr
On 1st September last, Colonel Muammar Gaddafi would have been a ruler for exactly 42 years, making him the longest
আগে দর্শণধারী পরে গুণবিচারি
এই উপমহাদেশের মানুষের মধ্যে আকার এবং বর্ণের এত বৈচিত্র যা পৃথিবীর অন্য কোথাও মনেহয় দেখা যায় না। এর জন্য অবশ্য
Mamata meeting with Prime Minister Modi: Any hope for Teesta Agreement?
Mamata Banerjee, the chief minister of Bengal, met on March 9th Prime Minister Narendra Modi for the first time since