সিডনিতে ৯৬-৯৮ ব্যাচের প্রাক্তণ শিক্ষার্থীদের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশের পড়াশোনায় কলেজ জীবনের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। প্রাথমিক এবং মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে মাত্র দু’বছরের জন্য ছাত্রছাত্রীরা কলেজে ভর্তি হয় কিন্তু তার রেশ রয়ে যায় সারাজীবন কারণ মাত্র দু’বছরের এই সময়টায় তাদের জীবনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দেয়। এ ছাড়াও স্কুল জীবন শেষ করে একটু বাড়তি স্বাধীনতার স্বাদও পাওয়া যায় তাই মনের মধ্যে পাখনা মেলতে শুরু করে বিভিন্ন রকমের কোমল অনুভূতি। হঠাৎই কোন সহপাঠী বা সহপাঠিনীর চলাফেরা বিশিষ্ট হয়ে চোখে ধরা দেয় যদিও বিভিন্ন কারণে সেটা আর প্রকাশ করা হয়ে উঠে না। আমাদের প্রজন্ম বাংলাদেশের সবচেয়ে সৌভাগ্যবান প্রজন্ম কারণ আমরা একইসাথে সেকেলে মূল্যবোধগুলোর পাশাপাশি প্রযুক্তির বিবর্তনটাও চোখের সামনে দেখে বেড়ে উঠেছি। অভিবাবকদের চোখ রাঙানিকে পাশ কাটিয়ে মোবাইল, কম্পিউটার নামের অত্যাধুনিক সব যন্ত্রের সাথে আমাদের পরিচয় হয়ে যায় সেই কলেজ জীবন থেকেই এরপর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এসে সেটা আরো ডালপালা ছড়িয়ে ছিলো।
কলেজের গন্ডি পার হয়ে আবার আমরা বিভিন্নজন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে একে অপরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অবশ্য বিশ্বাবিদ্যালয়ে যেয়েও একই ব্যাচের অনেক নতুন নতুন বন্ধুও তৈরি হয় তখন আবার একটা নতুন পৃথিবীর সন্ধান পায় আমরা। এভাবে একটা প্রজন্ম একইরকমের প্রাণের টান অনুভব করতে শুরু করে। আমাদের মাধ্যমিক পাশের সাল ছিলো ১৯৯৬ আর কলেজ পাশের সাল ছিলো ১৯৯৮ কিন্তু আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করেছি সেটা হয়েছে ২০০০ সালের পরের কোন এক সময়ে। সেদিক দিয়ে হিসেব করলে আমরা আসলেই অনেক সৌভাগ্যবান যে আমরা একটা শতাব্দীর মিলনের সময়ে আমাদের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময় কাটিয়েছি এবং উপভোগ করেছি প্রাণভরে। অতঃপর কর্মজীবনে প্রবেশ এবং আবারো ছুটে চলা। দেশে এবং দেশের বাইরে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে রয়েছে আমাদের সফল পদচারণা।
অস্ট্রেলিয়াতেও আমাদের যাদের একই ব্যাচে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পাশ হয়েছিলো তাদের একটা অনলাইন সংগঠন আছে তার নাম ৯৬৯৮ অস্ট্রেলিয়া। সারাবছর জুড়েই আমরা বিভিন্ন রকমের কর্মকাণ্ড পালন করে থাকি। তারই ধারাবাহিকতায় এইবার একটু বড় পরিসরে ঈদ পুনর্মিলনীর আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আমাদের এই গ্রুপের মূল সংগঠক বন্ধু আরিফ যখন একটা ঈদ পূনর্মিলনীর প্রস্তাব করলো তখন সবাই সেটা একেবারে লুফে নিলো। প্রথমেই সবাই সুবিধা অনুযায়ী একটা তারিখ নির্ধারণ করা হলো কারণ অস্ট্রেলিয়ার রুটিন জীবনে অনেক আগে থেকেই সব কিছুর পরিকল্পনা করে রাখতে হয়। অবশেষে ঠিক হলো ৩০শে জুন ২০১৯ তারিখে হবে পুনর্মিলনী। এরপর কোথায় আয়োজন করা হবে সেই প্রসঙ্গ আসতেই বন্ধু মামুন প্রস্তাব করলো ওর বাসাতেই আমরা জড়ো হতে পারি। মামুন আর তার স্ত্রী সাথী দুজনই আমাদের ব্যাচমেট। সবাই একবাক্যে রাজি হয়ে গেলো ওদের বাসাতেই জড়ো হবার ব্যাপারে।

এরপর আসলো খাবারের প্রসঙ্গ। অস্ট্রেলিয়ার জমায়েতগুলোতে সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যবস্থা হচ্ছে “ওয়ান ডিশ পার্টি”। সেখানে সবাই একটা করে পদ রান্না করে নিয়ে আসে তারপর সেটাই সবাই ভাগাভাগি করে খায়। এবারও সেই প্রস্তাব রাখার পাশাপাশি খাবার ক্যাটারিঙের মাধ্যমে খাবার অর্ডারের বিকল্প রাখা হলো। সবাই ভোট দিয়ে ক্যাটারিং টাকেই বেছে নিলো তবে কেক তৈরির দায়িত্ব নিলো আমাদের ব্যাচের হানি। ইতোমধ্যেই ও কেক তৈরি করে সিডনিতে সুনাম কুড়িয়েছে। খাবারের বন্দোবস্ত হয়ে যাবার পর সবার জন্য পোশাক নির্ধারণ করে দেয়া হলো। বড়দের পাঞ্জাবি, শাড়ী বা ট্র্যাডিশনাল আর ছোটদের ঈদের পোশাক। এছাড়াও অনুষ্ঠানের দিন যাতে ছোটরা বিরক্ত না হয় তার জন্যও ব্যবস্থা রাখা হলো। এছাড়াও আমাদের ব্যাচের বিশিষ্ট দোতারা বাদক তারিক কথা দিলো সে লাইভ দোতারা বাজিয়ে সবাইকে গান গেয়ে শোনাবে। হাসিব আর রকি ও গান গেয়ে শোনাবে আমাদের। শব্দযন্ত্র নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব মামুন নিজ কাঁধে নিলো। আর বাংলা কারাওকের ব্যবস্থাও রাখা হলো বিকল্প হিসেবে।

৩০শে জুন সকাল থেকেই সবাই মামুনের ম্যাকুয়ারি লিংকের বাড়িতে জড়ো হতে শুরু করলো। সকাল এগারোটায় শীতের পিঠাপুলি দিয়ে সবাইকে স্বাগত জানানো হলো। এরপর দুপুরের খাবার। দুপুরের খাবারের পর ছিলো বাচ্চাদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা। বাচ্চারা সবাই সেটা খুবই উপভোগ করলো। সেটা শেষ হওয়ার পর গান বাজনার আয়োজন করা হলো। গান যেমনই হোক না কেন সবাই সেটার সাথে গলা মিলিয়ে গেয়ে উঠলো। শুনে মনেহচ্ছিলো যেন একদল কিশোর কিশোরী কলেজ থেকে বনভোজনে যেয়ে যেমন খুশি তেমন গাও প্রতিযোগিতায় নেমেছে। আর সাথে সাথেই চললো যেমন খুশি তেমন নাচো প্রতিযোগিতা। সবাই যারযার মতো করে হাত পা নেড়ে নাচ করে গেলো অনবরত।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল ঘনিয়ে এসেছে। তখন সবাই মিলে ছবি তুলতে শুরু করলো। আর ছবি তোলার দায়িত্বে ছিলো আমাদেরই ব্যাচের ইয়াসির। ইয়াসির সিডনির অত্যন্ত পরিচিত ফটোগ্রাফার। ব্যাচের ব্যানারের সামনে দাঁড়িয়ে দলবদ্ধ ছবি ছাড়াও অনেক যুগল ছবি এবং পারিবারিক ছবি তোলা হলো। ব্যাচের সুন্দর ব্যানারটার মূল কনসেপ্টটা ডিজাইন করে দিয়েছিলো আমাদেরই আরেক বন্ধু শারমিন। সে যদিও যোগ দিতে পারেনি কিন্তু ফেসবুকের কল্যাণে যুক্ত ছিলো সারাক্ষণই। এছাড়াও এই অনুষ্ঠানের জন্য বিশাল এক কেক তৈরি করে আনে আমাদের বন্ধু হানি। বাচ্চাসহ বড়দের জন্য কিছু বিশেষ খাবার আর মিষ্টি নিয়ে হাজির হয় আমাদের বন্ধু লোরা, নাজ, সাম্মী আর নীলা। বিকেলের চায়ের দায়িত্ব নেয় ইম্মি। দিনভর অনুষ্ঠান সঞ্চালকের দায়িত্বে ছিল বন্ধু পারভেজ আর যেকোন কাজে বাকি বন্ধুদের সাথে আমাদের ভাবী আর দুলাভাইরাও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন এই পরিবারের অংশ হিসেবেই। বাচ্চাদের পুরো প্রোগ্রামের দায়িত্বে ছিল বন্ধু মিতু আর সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিল বন্ধু আকাশ, মামুন, হিমেল আর আরিফ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পরপরই সবাই মিলে মামুন আর সাথীর বাড়ি পরিষ্কার করতে লেগে পড়লো অনেকটা স্কুলের সব বাচ্চা মিলে স্কুলের আঙিনা পরিষ্কার করার মতো করে।

সব আয়োজনেরই শেষ থাকে। এই আয়োজনেরও শেষ মুহূর্ত এসে উপস্থিত হলো। সবাই নিজেদের বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়ার সময় একে অপরের সাথে এমনভাবে কোলাকুলি করছিলো যেন কতদিন পর হারানো বন্ধুর সাথে তার দেখা হয়েছিলো। সবাই সবাইকে তাদের নিজ নিজ বাসায় যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে বিদায় নিয়ে যাওয়ার পর পুরোনো দিনের একটা গান আমাদের মনের কোন বেজে উঠছিলো
“আজ এই দিনটাকে মনের খাতায় লিখে রাখো
আমায় পড়বে মনে কাছে দূরে যেখানেই থাকো”

Md Yaqub Ali
আমি মোঃ ইয়াকুব আলী। দাদি নামটা রেখেছিলেন। দাদির প্রজ্ঞা দেখে আমি মুগ্ধ। উনি ঠিকই বুঝেছিলেন যে, এই ছেলে বড় হয়ে বেকুবি করবে তাই এমন নাম রেখেছিলেন হয়তোবা। যাইহোক, আমি একজন ডিগ্রিধারী রাজমিস্ত্রি। উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করতে অস্ট্রেলিয়াতে আমার আগমন ২০১৫ সালের মার্চে। আগে থেকেই ফেসবুকে আঁকিবুকি করতাম। ব্যক্তিজীবনে আমি দুইটা জীবের জনক। একটা হচ্ছে পাখি প্রকৃতির, নাম তার টুনটুনি, বয়স আট বছর। আর একজন হচ্ছে বিচ্ছু শ্রেণীর, নাম হচ্ছে কুদ্দুস, বয়স দুই বছর। গিন্নী ডিগ্রিধারী কবিরাজ। এই নিয়ে আমাদের সংসার। আমি বলি টম এন্ড জেরির সংসার যেখানে একজন মাত্র টম (আমার গিন্নী) আর তিনজন আছে জেরি।
Related Articles
Sheikh Mujibur Rahman ‘The Poet of Politics’
৩ বছর আগে প্রামাণ্যচিত্র নির্মানের কাজে ইস্ট লন্ডনের একটি স্কুলের ক্লাসে উপস্থিত থাকার সূযোগ হয়েছিল আমার। রেকডিং এর এক পর্যায়ে
ক্রিকেট ভক্ত
ফজলুল বারী, নেপিয়ার থেকে আমার এক বন্ধু লিখেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেট কী এখনো হোয়াইটওয়াশের পর্যায়ে আছে? উত্তরটি বাংলাদেশের কন্ডিশনে না, বিদেশের
Abdul Quader, an obituary
Abdul Quader (1955-2019) was not a big man in physique, but the shadow he threw on his life and time