সিডনিতে স্মরনীয় এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানানো হলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মুজিবকে
ফজলুল বারী: অনেক দিন পর সিডনির কোন অনুষ্ঠানে গেলাম। প্রশান্ত পাড়ের শহরটায় বাংলাদেশি বাঙালিদের সংখ্যাটি খুব বড় নয়। এরপরও এখানে নানান অনুষ্ঠান হয়। বাংলাদেশি রাজনীতির ভেদাভেদ গ্রুপিং এর কারনে এখানে রাজনৈতিক অনুষ্ঠানগুলো আমি এড়িয়ে চলি। সর্বশেষ গিয়েছিলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুষ্ঠানে। তিনি আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। অস্ট্রেলিয়া সরকার এখানে তাকে যে মর্যাদা দিয়েছে তা দেখেশুনে মন ভরে গিয়েছিল। দেশের প্রধানমন্ত্রীর সফরের বিরোধিতা করে প্রবাসীদের একাংশের বিরোধিতা-অশালীন গালিগালাজ দেখে মন বেদনার্ত হয়েছে। এরকারনেও আমি বিদেশে দেশীয় ভেদাভেদের রাজনৈতিক চর্চা নিষিদ্ধের পক্ষে। কিন্তু আমি একা চাইলেইতো আর এসব নিষিদ্ধ-বন্ধ হবেনা। এটিরও শিরোনাম নাকি আবার গণতান্ত্রিক চর্চা!
আবার সিডনির রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে গেলাম ব্যক্তিগত আগ্রহে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশের প্রথিতযশা আইনজীবী স ম রেজাউল করিম আমার বন্ধু মানুষ। এক সময় ভোরের কাগজ, প্রথম আলোর সুপ্রীমকোর্ট প্রতিনিধি ছিলেন। এখন আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক। আওয়ামী লীগে অনেক বাঘা আইনজীবী আছেন। কিন্তু যোগ্যতার কারনেই তুলনামূলক তরুন এই আইনজীবীকে আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের আইন বিষয়ক সম্পাদকের গুরু দায়িত্ব দিয়েছেন দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনা। দেশের টিভি চ্যানেলগুলোর টকশোতে তার বলিষ্ঠ বক্তব্য মুগ্ধ হয়ে শোনের শ্রোতা-দর্শকরা। আরেক কারনে রেজা ভাই আমার প্রিয়। বাংলাদেশের এই সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় তরুন নেতাকে আমি ভালোবাসি। চট্টগ্রামের নুরুল আজিম রনি। দলের কোন্দলে রনি যখন বিপদে পড়েন তখন সবার আগে একজনকে আমি ফোন করি। ইনিই সেই স ম রেজাউল করিম। আমি তাকে রনির একজন অভিভাবকও বলি।
এবার যখন রেজা ভাইর সিডনি আসার দিন তারিখ চূড়ান্ত হয় সেদিনই তার সঙ্গে কথা বলি। কিন্তু উদ্যোক্তারা যেহেতু জানেন আমি তাদের এসব অনুষ্ঠানে যাইনা তাই তারাও বিষয়টি আমাকে জানাননি। রেজা ভাই’র সিডনি রওয়ানা হবার রাতে আবার যোগাযোগ হয়। তাকে বলে রাখি সিডনি নেমেই আপনার নাম্বার দেবেন। কথা রাখেন। ছুটে যাই হোটেলে। দীর্ঘ বছর পর আমাদের দেখা-আলিঙ্গন হয়। উদ্যোক্তারা সেখানে আমাকে তাদের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রন জানান। রেজা ভাইর কারনে আমন্ত্রন গ্রহন করি আমি।
১৭ সেপ্টেম্বর রাতে সিডনির হলিডে ইন হোটেল মিলনায়তনের অনুষ্ঠানটি আমার মন ভরিয়েছে। পরিপাটি গোছানো এক অনুষ্ঠান। প্রথম ভালোলাগার কারন অস্ট্রেলিয়ায় আমাদের যে সব বাংলাদেশী বাচ্চার জন্ম হয়েছে, এখানে যারা বড় হচ্ছে তাদের দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানানো। কৃতিত্বটা অবশ্যই তাদের বাবা-মা’র। প্রিয় প্রজন্ম ঐতিহ্য তারিক ভরাট কন্ঠে আবৃত্তি করলো নির্মলেন্দু গুনের সেই বিখ্যাত কবিতা। “স্বাধীনতা শব্দটি কি করে আমাদের হলো।” ঈশান তারিক গাইল সেই কান্না আর আক্ষেপের গানঃ ” যদি রাত পোহালে শোনা যেতো বঙ্গবন্ধু মরে নাই।” সাফিনা জামান গাইলো “সেদিনের সূর্যটা—-” মিজানুর রহমান মিজানের সুর আর রফিক খানের কথায় ইংরেজি গান “শেখ মুজিব বাঙালি নেশন’ গাইল প্রিয় প্রজন্ম আনান রহমান। সেলিমা বেগমের উপস্থাপনায় বাচ্চাদের পুরো অনুষ্ঠান হয়।। রোকসানা রহমান সহ আমরা সবাই মিলে গাইলাম আমাদের জাতীয় সঙ্গীত “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি। সোমবার রাতের অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল হকের সভাপতিত্বে সাধারন সম্পাদক পি এস চুন্নুর সভাপতিত্বে অতিথি বক্তা ছিলেন সাংবাদিক কলামিস্ট অজয় দাশগুপ্ত। ক্যানবেরাস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রথম সচিব নাজমা আক্তার, অধ্যাপক মাসুদুল হক, রতন কুন্ডু সহ অনেকে বক্তব্য রাখেন।
এবার প্রধান অতিথি এডভোকেট স ম রেজাউল করিমের বক্তৃতা প্রসঙ্গ। আমি অনেক বছর ধরে দেশের বাইরে। এই বক্তার রাজনৈতিক বক্তৃতা এভাবে আগে আর কখনো শুনিনি। যেহেতু তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার প্যানেলের আইনজীবীদের অন্যতম একজন ছিলেন, নানা তথ্য উপাত্ত দিয়ে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা ষড়যন্ত্রের নানা দিক তুলে ধরেন। জিয়াউর রহমান কিভাবে এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত, জিয়া-খালেদা জিয়া কিভাবে এই হত্যাকান্ডের বেনিফেশিয়ারি, হত্যা ষড়যন্ত্রের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে খালেদা জিয়া কিভাবে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে গ্রেনেড হামলা নকশাকার এর সবিস্তার তুলে ধরেন স ম রেজাউল করিম। তিনি মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, হাইকোর্টে-সুপ্রিমকোর্টের বিচারে জিয়ার সমস্ত কার্যক্রমকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সে কারনে বিএনপি সহ জিয়ার সব রাজনৈতিক কর্মকান্ডও নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়েছে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতে। সেই সংগঠনটির সঙ্গে ঘাটছড়া বেঁধে যারা শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র করছেন তাদের ব্যাপারে তিনি সবাইকে সতর্ক করেন। পিন পতন নিস্তব্ধতায় মন্ত্র মুগ্ধের মতো হল ভর্তি দর্শকরা স ম রেজাউল করিমের বক্তব্য শোনেন। আমারতো বটে, সিডনির এই সাক্ষী শ্রোতা-দর্শকদেরও তার এই বক্তৃতা অনেক দিন মনে থাকবে।
Related Articles
ইতিহাস গড়েছে টাইগারস
দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ড – অস্ট্রেলিয়ার সর্ববৃহৎ জাতীয় অনলাইন নিউজ ব্র্যান্ড আজকের খেলার খবরে হেড লাইন: বাংলাদেশ বনাম অস্ট্রেলিয়া: ইতিহাস
বাংলাদেশ-ভারত টেস্ট
একটি মাত্র টেস্ট খেলতে বাংলাদেশ দল এখন ভারতের হায়দরাবাদে। কি ফলাফল হবে তা সবাই জানে। কারন বাংলাদেশ দলের আত্মবিশ্বাস এখন
‘ত্রয়ী পাবলিকেশন’ থেকে প্রকাশিত প্রথম বইয়ের জন্যে লেখা আহবান
প্রবাসে পাড়ি জমানো প্রায় প্রতিটা মানুষ বা পরিবারের পিছনেই থাকে কিছু না কিছু গল্প। অবশ্যই সব যে দুঃখের গল্প তা
ধন্যবাদ জানালে অসম্পূর্ণ হবে, জানাতে পারলামনা আমার অনুভূতি।
নিত্য শুভার্থী:-
শ ম রেজাউল করিম