সময়ের কাহন

সময়ের কাহন

দিলরুবা শাহানা: প্রতিদিন পৃথিবীর নানা দেশে নানা খবরের কাগজে কত বিচিত্র সব খবর ছাপা হয় তার সীমা পরিসীমা নেই। খবরের পিছনে কত কাহিনী, কত দীর্ঘশ্বাস লুকানো আছে বা থাকে কেইবা তা জানতে পারে বা শুনতে পায়?
বেশ ক’বছর আগে তেমনি এক খবর একদিন চোখে পড়েছিল। বাংলাদেশের প্রথম আলো নামের দৈনিক পত্রিকাতে খবরটি প্রকাশ হয়। খবর হল রামপুরা বা তৎসংলগ্ন বাড্ডা এলাকায় বাড়ী নির্মাণের সময়ে চাঁদাবাজদের দাবী অনুযায়ী চাঁদা না দেওয়াতে ঘটেছে ভয়ংকর বিপত্তি। চাঁদাবাজরা বাড়ীর প্রবাসী মালিকের স্ত্রীকে হুমকি দিয়েছে তাদের চাহিদা পূরণ না হলে তারা মালিকের স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে তুলে নিয়ে যাবে। ভয়ে মহিলা কন্যাসহ আত্মগোপন করে আছেন। স্বস্থির বিষয় হল যে পুলিশ চাঁদাবাজদের ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য তথ্য পেয়ে অভিযান শুরু করেছে বলে জানা গেছে।

এর কিছুদিন পর অষ্ট্রেলিয়ার দি হেরাল্ড সান ও দি এইজ কাগজে অদ্ভুত এক খবর এক খবর ছাপা হল। ইমিগ্রেশন লইয়ারের সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে এই প্রথম দু’জন বাংলাদেশী যুবক নিজেদের গে ঘোষণা করে অষ্ট্রেলিয়াতে অভিবাসন পেয়েছে।

নিতান্ত সাদামাটা খবর। তবে গভীর মনোনিবেশ সহকারে কান পাতলে খবরের পেছনের গল্পটি শোনা যাবে।

এক সময়ে বঞ্চিত মানুষকে ক্ষীণ আশার আলো দেখাতো নিবেদিত আত্মত্যাগী মানুষেরা। এখন ত্যাগীদেরও বিপ্লবী পরিবর্তন ঘটানোর চিন্তা উধাও, আবার সরল মানুষ ধর্মনিষ্ঠায়ও শান্তি পাচ্ছে না। নিবেদিত প্রাণ ধার্মিকের প্রতিও অযথা সন্দিহান কেউ কেউ। কারন ধর্ম এখন অসাধু মানুষেরা লুন্ঠন করে ধর্মকে সন্দেহের আবর্তে ফেলে দিয়েছে। আত্মার শান্তির জন্য ধর্ম আর কষ্টকর অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য বিপ্লব সব যেন নাগালের বাইরে। সবাই নিজ নিজ স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত। সব কিছু নিয়ে বানিজ্য চলে। ভালবাসা এক অমল অনুভূতি তাও পণ্য হয়ে ষায় কখনো বা। আর মানুষ তা কিনেও নেয় বাধ্য হয়ে। নিঃসহায় মানুষ মরিয়া হয়ে বাঁচার পথ খুঁজতে গিয়ে আপোস করে। পেশাজীবীর কূটপরামর্শে নিজ ইচ্ছার বিরুদ্ধেও অনেক কিছু মেনে নিতে বাধ্য হয়। বাঁচার প্রয়োজনে আত্মপরিচয়ও পাল্টাতে হয় কখনো বা। তেমনি এই ঘটনার মূল চরিত্র দুই যুবক জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার জন্য অনন্যোপায় হয়ে খড়কুটোর মত অদ্ভুত মিথ্যে এক ভালবাসার ডালে আশ্রয় খুঁজে নেয়। দু’জন দূর্দশা তাড়িত মানুষ টিকে থাকার জন্য নিজ পরিচয় বিসর্জন দিয়ে ভেক ধরে অন্য পরিচয় নিয়ে টিকে থাকে। আর তাদের অসহায়ত্ব ও কষ্ট থেকে আপাতঃ ভাল মানুষেরা কিভাবে ফায়দা লুটে নেয় তারও কাহিনী জানা যাবে।


ঘটনা প্রবাসী নাইমের। অনেক কষ্ট করে, বহু অপমান সহ্য করে ধারকর্জ্জের মাধ্যমে অর্থ যোগার করে নাইমকে তার মা বিদেশে পাঠায়। তবে ইচ্ছা করে নয় বাধ্য হয়ে। নাইম যখন মায়ের গর্ভে তখন তার বাবা মারা যায়। আসলে তাকে খুন করা হয়। নাইমের বাবার পরিচয় বিচিত্র। কারো চোখে সে ত্যাগী, পরিবর্তনের বা বিপ্লবের স্বপ্নে বিভোর একজন মানুষ, কারো কাছে সমাজবিরোধী, আইনভাঙ্গা এক দুঃষ্কৃতিকারী। নিজের স্বার্থে যে কণামাত্র দুঃষ্কর্ম কোনদিন করে নি তার কপালেই জুটলো কিনা দুঃষ্কৃতিকারী শিরোপা। নাইমের মা ভুল পথে পা ফেলার জন্য, ভুল মতের মানুষের সঙ্গে জীবন জড়ানোর জন্য আপনজন থেকে বিতাড়িতা। যা হোক শিক্ষাদীক্ষা আয়ত্বে ছিল বলেই ব্যাংকে ক্যাশিয়ারের কাজ জুটিয়ে ঊষর জীবননদীর নাব্যতা ধরে রেখেছিল। নিজ ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্দ্ধে উঠে দুখী মানুষকে সুখী ও সুন্দর জীবন এনে দেওয়ার যে স্বপ্ন নাইমের মা নিজেও লালন করতো স্বামীর অকাল মৃত্যুর সাথে সাথে সে স্বপ্নেরও সমাপ্তি ঘটলো।
নাইমের কিশোর বয়সে মা সব একে একে খুলে বলেছিল তাকে। নিজেদের মতপথ, স্বপ্ন, দ্বিধাধন্ধ, মার খাওয়া, পিছিয়ে যাওয়া সব উগড়ে দিয়েছিল ছেলের কাছে। তবে সব শেষে বলেছিল
-শোন্ বাবা আমাদের মত স্বপ্ন দেখিস না, স্বপ্নের পেছনে ছুটিস্ না। স্বপ্নভঙ্গের কষ্ট অসহ্য। তবে একটা কথা বলি কখনো অন্যের ক্ষতি করো না, পারলে উপকার করো। দেখবে আর কিছু না থাকুক শান্তি থাকবে তোমার অন্তরে।
নাইম গভীর চিন্তায় মগ্ন থাকতে পছন্দ করতো। বন্ধুবান্ধব খুব একটা ছিল না তার। গায়ে পড়া মানুষের ডাকাডাকি, হৈ হল্লা এড়ানোর জন্য নাইম নিজের জন্য এক পন্থা বের করলো। কানে না শোনার ভান করতো সে। বিষয়টা জানতো কেবল তার মা।
নাইমের মায়ের ব্যাংকের গ্রাহক এক মহিলার বদান্যতায় তারা খুব সস্তায় বাড়িভাড়া পেয়ে গেল। মহিলার স্বামী পরবাসী। গুলশান-বাড্ডার সীমান্তে টিনশেড পাকা তিন কামরার বিল্ডিংয়ে সন্তানদের নিয়ে থাকতেন মহিলা। গাছপালা ঘেরা প্রশস্ত উঠোন। তারই এক কামরায় নাইমরা ঠাঁই পায়। তখন নাইমের বয়স এগারো কি বারো বছর। ধীরস্থির স্বভাব তবে নানা ভাবে কিছু না কিছু কাজে সবসময়ে নিজেকে ব্যস্ত ও মগ্ন রাখে। বাড়ীওয়ালীর সাত ও পাঁচ বছরের ছেলেদু’টির কাছে নাইম যেন হ্যামেলিনের বাঁশীওয়ালা। সারাক্ষন নাইমের পিছন পিছন ঘুর ঘুর করে বেড়ায় দুই ভাই। মেধার কারনে বাড়ীওয়ালীর ছোট ছোট ছেলে মেয়ে তিনটির শিক্ষকও হয়ে উঠে নাইম। তিন বছর পর ছুটিতে দেশে এসে বাড়ীর মালিকও নাইমকে দেখে সন্তুষ্ঠ হলেন খুব। স্ত্রীকে বলেন
-শোন নাইম আর আমাদের ছোট দুই ছেলেকে মাঝখানের ঘরে থাকতে দাও। ছেলেটা ভাল ওর সঙ্গ আমাদের বাচ্চাদের জন্য ভালই হবে।
ছেলেদের সাথে এক কামরায় নাইমের থাকার জায়গা মিলে যায়। এটা ছিল নাইমের মায়ের আশাতিরিক্ত প্রাপ্তি। নাইমের মাও মহিলাকে অনেক সাহায্য সহযোগিতা করতো, বাইরের অনেক কাজ সানন্দে করে দিত।
বিত্তবানের এলাকা গুলশানের বাসিন্দাদের সুবিধার জন্য রাস্তাঘাট তৈরী হচ্ছিল। গুলশান সীমান্তে নাইমদের বাসস্থানও পেয়ে গেল চমৎকার অবস্থান। আগের কাঁদাকংক্রীটে মাখামাখি গলিঘুঁজি উধাও। এখন বাড়ির সামনেই পিচঢালা মটরচলা গলিপথ। তারপর দু’বাড়ি পার হলেই বিশাল সড়কে পা রাখা। গাড়িবাস যাচ্ছে আসছে। রাস্তায় ভাঙ্গাচুড়া খানাখন্দ কিছু নেই। নাইমের মা এখন কাঁদাহীন সড়ক ধরে হেঁটে গুলশান ব্রাঞ্চে অফিস যেতে পারে। রাস্তাঘাটের উন্নতির কারনে জায়গার দাম বাড়লো। বাড়ীওয়ালী সাদাসিধা জীবনযাপন করে নীরবে বিদেশী টাকা সঞ্চয় করে রাখছিলেন। একসময়ে বাড়ি তৈরীর আয়োজন শুরু করেন। নাইমের মায়ের সাহায্য মহিলার অনেক কাজ সহজ করে দিল। ঋণ পাওয়া, সরকারী দপ্তরে বাড়ির নকশার অনুমোদন বা বাড়ির প্লান পাস করানোর মত জটীল কাজগুলো সহজ হল নাইমের মায়ের সহযোগিতায়।
নিতান্ত সাদামাটা জীবনযাপনের কারনে জৌলুসহীন টিনশেড দালানে বাস করা মানুষের প্রতি আশপাশের কারোর কোন আগ্রহ ছিল না। বরং অবজ্ঞাই ছিল বলা যায়। সমস্যা শুরু হল নির্মাণকারী লোকজন এসে যখন মাপজোক, ভাঙ্গচূড় করার কাজে হাত দিল। আসপাশের মানুষের চোখে বিস্ময় আর অন্তরে গোপন জ্বালা। এতদিন যাদের পাত্তা দেয়ার মত যোগ্য মনে করতো না তাদের অবস্থার উন্নতি অসহনীয় লাগলো। এই তুচ্ছ মানুষগুলো তাদের উঠোনের একপাশে ছোট পাখীর বাসা না ভেঙ্গেই অট্টালিকা তৈরীতে হাত দিয়েছে! চারদিকে ঈর্ষার তুষ ধিকিধিকি জ্বলে উঠলো। মানুষের হিংসার আগুন তাদের পুড়িয়ে মারতে উদ্যোত হল। পরশ্রীকাতর র্প্রতিবেশীদের লেলিয়ে দেওয়া গুন্ডাদের চাঁদা দিয়ে নিরস্ত করবে ভেবেছিল বাড়ীওয়ালী। তবুও রেহাই মিললো না। একজন প্রতিবেশী একসন্ধ্যায় এসে বাড়ীর নকশা পরিবর্তনের দাবী জানালেন। কারন তার বাগানে ছায়া ফেলবে মহিলার ইমারত। মহিলা নম্র ভাবে নকশা পরিবর্তন করা যাবে না বলে জানালেন। মহিলার যুক্তি আইনসঙ্গত। কারন সরকার নকশা অনুমোদন করেছে সবকিছু খতিয়ে দেখে। ওই প্রতিবেশী অশালীন ভাষায় মহিলাকে শাসিয়ে যায়। বাড়ীওয়ালীর স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে গুন্ডা লেলিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়।
নাইম তার নিভৃত নিঃশব্দ জীবনের সঙ্গী ক্যাসেট রেকর্ডারে পুরো হুমকিধামকি রেকর্ড করে। তারপর সে যে কান্ড করে তাতে বাড়ীওয়ালী মহিলার নিরাপত্তা প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়। তবে সে কান্ড নাইমকে ঠেলে দেয় তোপের মুখে।
পুলিশ, মানবাধিকার সংস্থা, নারী সংগঠন, এমন কি দেশবিদেশের সংবাদ মাধ্যমেও বিষয়টি আলোড়ন তুলে। কারন সবার কাছে হুমকির ক্যাসেট পৌঁছে গেছে। আর এদিকে আরেক কান্ড। রেকর্ডকরনেওয়ালাকে হন্যে হয়ে খুঁজে ফিরছে ভাড়াটে খুনী।
এই ভয়াবহ পরিস্থিতে আদমব্যাপারী ধরে নাইমকে বিদেশ পাঠানোর আয়োজন করে নাইমের মা। বাড়ীওয়ালী মহিলা নামাজ পড়ে নাইমের জন্য দোয়া তো করছিলই টাকা পয়সা দিয়েও নাইমের মাকে যথাসাধ্য সাহায্য করছিলো। প্রাণ বাঁচাতে দেশ ছেড়ে পালানোর সময় নাইমের মা ওকে বলেছিল
-বাবা দেশে আর ফিরিস না, পারলে ধারদেনা যা করেছি তা শোধ করার জন্য সময়সুযোগ মত টাকা পাঠাবি।
বিদেশগামীর কাছে আত্মীয়পরিজনের নিতান্ত সাদামাটা এতটুকু প্রত্যাশা থাকেই। নাইমের মা বেচারী ঋণগ্রস্থ। এদিকে বিদেশের টাকায় ঋণশোধ করার বদলে নাইম আরও ঋণ, আরও অদ্ভুত সব শর্তের দাসখত মেনে নিতে বাধ্য হয়। নাইমের ছয় সপ্তাহের ট্যুরিষ্ট ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই একজন পাকাপাকি থাকার ব্যবস্থা করার উদ্দেশ্য তাকে পরোপকারী এক দাড়িওয়ালা ভাইয়ের কাছে নিয়ে যায়। বিনয়ী ভাইকে আল্লাহ্তালার ফেরেস্তা মনে হল যখন উনি বললেন
-ইনশাহ্আল্লাহ উপায় একটা বার হবেই।
তবে তার পরের বাক্য শুনে নাইম আঁতকে উঠলো
-দরকার হলে রেসিডেন্সী পাওয়ার জন্য কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ করিয়ে দেব। টাকাপয়সা যা লাগে আপাততঃ আমিই দেব পরে রোজগারপাতি করে শোধআসলে ফেরত দিও।
দেখতে মুমিন দাড়িওয়ালা ভাইয়ের কল্যাণে কাজও একটা জুটে গেল। তারই বাড়ীর গ্যারেজে বসে খাবারের কৌটার লেভেল পাল্টানোর কাজ। মেয়াদ শেষ হওয়া খাবারের কৌটার পুরানো লেভেল ছিড়ে ফেলে নতুন ঝকঝকে লেভেল লাগানো। ইজরাইলের আম, ইতালীর অলিভওয়েল, ইন্ডিয়ার সর্ষের তেল আরও কত কি। কাজটা শুধু তুচ্ছ নয় অনৈতিকও বটে। স্বল্পভাষী নাইমের সামনে উন্মোচিত হওয়ার আঁকুতি নিয়ে আর এক অন্ধকার জগৎ হাজির হল।
নিরুপায় নাইম লেভেল পাল্টাতে পাল্টাতে ভালমানুষ ভাইয়ের অপেক্ষায় করে। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার অল্প ক’দিন আগেই দাড়িওয়ালা ভাই আসলেন।
-নাহ্ কন্ট্রাক্ট ম্যারেজের জন্য মেয়েদের পাওয়া গেল না। ওই ফিলিপিনো মেয়েগুলো বদের হাড্ডি। উড়নচন্ডী মেয়ে কোথায় গেছে কে জানে। চল ইমিগ্রেশন লইয়ারের কাছে যাই ওই ব্যাটা একটা না হয় আরেকটা পথ বার করবেই। বরিশালের হাকিমকেও নিয়ে যাব। পড়শুদিন তোমাদের দুইজনকে একসাথে নিয়ে যাব।


মুরুব্বী দাড়িওয়ালা ভাই চলে যাওয়ার পর পরই হাকিম তার কাহিনী শুরু করলো। হাকিম তার হতভাগী বোনের শ্বশুড়ের যৌতুকের দামী মিটাতে না পেরে ক্ষুব্ধ ও রাগে ফুঁসছিল। একদিন বৈঠা তুলে এমন গাট্টা দেয় বুড়োকে যে হসপিটালে যাওয়া ছাড়া বুড়োর আর কোন উপায় থাকে না। হাকিমও জান বাঁচানোর জন্য বিদেশে পাড়ি দেয়। তারও কাধে বিরাট ঋণের দায়। বিদেশে থেকে যেতে সেও মরণ পণ করে উপায় খুঁজছে। হাকিমও নাইমের সাথে সজ্জন(!) ভাইটির ওখানেই কাজ করছিল। হাকিম কিভাবে যেন শুনেছে মুমিন(?) ভাইটির ব্যবসা এক ইহুদীর সাথে যৌথমালিকানায়। নাইম-হাকিমদের মত অসহায় মানুষদের ঋণের দাসখতে আটকে রেখে খুব কম মজুরীতে কাজ করিয়ে নেয় এরা। অন্যায় দেখেও চুপ করে থাকে ভয়ে। কারন তাদেরকে ইমিগ্রেশনের ভয় দেখিয়ে প্রায় দাস করে রেখেছে ধার্মিক(?) ভাইটি ও তার ইহুদী বন্ধু। আপাত ভালমানুষ ধার্মিক ভাইটির উদার সাহায্যের পেছনে যে কুমতলব কাজ করে তা জানে নাইম ও হাকিমের মত দুর্ভাগারা।
নাইম কথাবার্তা তেমন বলেই না। হাকিম দেখলো ওকে কিছু বললে পাঁচকান হবে না। মন খুলে সে নাইমকে অনেক কথা বলে। একদিন বললো
-জানেন ভাই আমি একটা বিষয় আবিষ্কার করে ফেলেছি
নাইম স্বভাবগত ভাবে কথাটি না বলে জিজ্ঞাসু চোখে তাকালো। তখন হাকিম উৎসাহ নিয়ে কথা চালিয়ে গেল
-শুনেন ভাই মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব নয় সে হচ্ছে সৃষ্টির সেরা লোভী। আর এইটাই আমার আবিষ্কার। দেখেন এই যে মুমিনের আদলের দাড়িওয়ালা ভাই পুরানো খাবারের জিনিসের লেবেল ছিড়ে নতুন লেভেল লাগানোর ব্যবসা করে তাতে তার নামাজরোজা, কলমাকালাম কিছুই উৎসাহ দেয় না। উৎসাহ যোগায় তার লোভ বুঝলেন ভাই।
তবে দেখতে মুমিন কাজকর্মে কমিন মানুষটি কথা রেখেছেন। ওদের নিয়ে ঠিক সময়ে উকিলের কাছে পৌঁছে গেলেন। উকিলের কথাবার্তা পয়সায় বিকোয় তাই মূল্যবান আর সংক্ষিপ্ত। উকিল ভদ্রলোক বললেন
-দেখ তোমাদের এদেশে টিকে থাকার একটা উপায়ই দেখতে পাচ্ছি তা হচ্ছে যদি তোমরা নিজেদের ‘গে লাভার’ ঘোষণা কর। বাংলাদেশের দু’জনকে এই গ্রাউন্ডে রেসিডেন্সী পাইয়ে দিয়েছি।
অসহায় দু’জন মানুষকে জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার জন্য অদ্ভুত এক লেবাস ধারন করতে হল, আইনের ফাঁদে অভিনব এক ভালবাসার শাখায় আশ্রয় নিতে হল।


Place your ads here!

Related Articles

সাহিত্যে সম্পদ আহরণ ও সমাজ পরিবর্তনের ইঙ্গিত

সাহিত্যিক গবেষক নন তবে তার পর্যবেক্ষণ খুব গভীর ও নিবিড়। সাহিত্যিক নিরাসক্তভাবেই তার চেতনে, অবচেতনে  চারপাশে বহমান জীবনের ও চলমান

Fundraising Dinner donation amount: Thanks from BAAC EC 2013-14

Dear Community Members, BAAC is proud of the Bangladeshi Canberra community for overwhelming responses and the active donation through participating

নৌকায় কেন ভোট দেবেন

দেশে থাকতে শেষ ভোট দিয়েছিলাম ১৯৯১ সালে। আইএসআই, শ্যাম চাচা, সুবিধাবাদী শ্রেণী আর দেশ প্রেমিক বাহিনীর একাংশের কারনে আমার ভোটটি

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment