মাহামাকুত বুদ্ধিষ্ট টেম্পলে এক বিকেলে
![মাহামাকুত বুদ্ধিষ্ট টেম্পলে এক বিকেলে](https://priyoaustralia.com.au/wp-content/uploads/2018/05/31531539_725458004510688_7949061278855593984_n-890x395_c.jpg)
আমাদের শৈশবের বিনোদনের অন্যতম উপকরণ বিটিভিতে শুক্রবারটা ছিল আমাদের জন্য অনেক বেশি আনন্দের। সকালে বিভিন্নরকমের অনুষ্ঠানের শেষে বিকেলে টেলিভিশনের অনুষ্ঠান শুরু হতো পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে। এরপর গেরুয়া পোশাক পরা এক ভদ্রলোক ত্রিপঠক পাঠ করতেন। উনার নাম আজ আর মনে করতে পারছি না। শুরুটা ছিল এমনঃ বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি, ধম্মং শরণং গচ্ছামি, সংঘং শরণং গচ্ছামি। আর শেষটা ছিল, সব্বে সত্তা সুখীতা ভবন্তু। প্রতি শুক্রবারে শুনতে শুনতে এই কথাগুলো আমাদের এমনভাবে মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল যে এখনও মনেআছে।
অস্ট্রেলিয়াতে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ খুবই সুন্দরভাবে সকলের সাথে সম্প্রীতি বজায় রেখে বসবাস করে চলেছে এবং তার মধ্যে বৌদ্ধরাও আছেন স্বমহিমায়। বাচ্চাদের স্কুল হলিডের একেবারে শেষের দিকে একদিন বিকেলে আমার মেয়ের বান্ধবী জেইনার মা বললেন, আমাদের বাসার খুব কাছেই একটা বৌদ্ধ মন্দির আছে, চলেন সবাই মিলে বেড়িয়ে আসি। যেহেতু আমাদের বাসা থেকে মাত্র পাঁচ মিনিটের ড্রাইভ তাই কোন চিন্তভাবনা ছাড়াই আমরা রাজি হয়ে গেলাম। তবে সিডনী শহর থেকে যেতে চাইলে প্রায় ঘন্টাখানেক লাগবে। লুমিয়া সাবার্বে অবস্থিত এই বৌদ্ধ মন্দিরের নাম, মাহামাকুত বুদ্ধিষ্ট টেম্পল। মন্দিরে ঢোকার মুখেই গেটের পাশে মন্দিরের নাম ও ঠিকানা সংবলিত একটা নামফলক আপনাদেরকে স্বাগত জানাবে।
একটু ভিতরে এগুলেই রয়েছে পর্যাপ্ত গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। গাড়ি পার্ক করে আমরা দুই পরিবারের মোট আটজন সদস্য হৈহৈ করে নেমে পড়লাম পুরো এলাকা ঘুরে দেখতে। ঢোকার মুখেই রয়েছে একটা প্রার্থনা মন্দির। প্রার্থনা মন্দিরটার বিশেষত্ব হচ্ছে এর ভিতরের দেয়ালে চারপাশে অনেকগুলো বড় আয়না সেট করা। তাই ভেতরের জায়গাটা অত্যন্ত ছোট হওয়া সত্ত্বেও অনেক বড় মনেহবে। তাহিয়া আর জেইনা ভিতরে ঢুকে গৌতম বুদ্ধের প্রার্থনার ভঙ্গিতে মাদুরে বসে পড়লো। আমরা ছবি তুলে নিলাম।
প্রার্থনা মন্দিরের সামনেই রয়েছে ঝাউয়ের সারি। এই ঝাউগাছগুলোর বিশেষত্ব হচ্ছে এগুলো অনেক সুন্দর করে ছেটে পদ্ম কুঁড়ির আকৃতি দেয়া হয়েছে। হঠাৎ দেখলে মনেহতে পারে একগুচ্ছ বড় আকারের পদ্ম কুঁড়ি দুই সারিতে দাঁড়িয়ে আছে। প্রার্থনা মন্দিরের এক পাশে গাছের গোড়াগুলোকে কাঠ দিয়ে বাধিয়ে বসার জায়গা করা হয়েছে। এখানে বসলে মুহুর্তেই আপনার মনের সকল ক্লান্তি দূর হয়ে একটা শীতল পরশ বয়ে যাবে। অন্যপাশে আরো একটা প্রার্থনা মন্দির। তার পাশ দিয়ে লাল ইটের রাস্তা ধরে এগুলে আপনি আরও মজার একটা জিনিস দেখতে পাবেন। এখানে সারিবদ্ধ ঝাউগাছগুলোর মাঝ বরাবর কেটে মন্দিরের দরজার আকৃতি দেয়া হয়েছে।
আরো একটু সামনে এগুলেই আরও একটা বসার জায়গা। সেখানেও গাছের গোড়াগুলোকে বাধিয়ে সেখানে ছোটছোট পাথরের টুকরার উপরে স্থাপন করা হয়েছে গৌতম বুদ্ধের ছোটছোট সব মূর্তি। তার পাশেই রয়েছে একটা সোনালি বর্ণের মাঝারি আকৃতির ড্রাগনের মূর্তি। ঠিক তার সামনেই কয়েকটা সিড়ি ভেঙে উপরে উঠলেই আরো একটা প্রার্থনা মন্দির। সেখানে গৌতম বুদ্ধের জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ের মূর্তি। মূর্তিগুলো দেখতে খুবই দৃষ্টিনন্দন। কোনটাতে বুদ্ধ বসে আছে প্রার্থনার ভঙ্গিতে আবার কোনটাতে দাঁড়িয়ে আছেন আর সবশেষেরটাতে উনার সেই বিখ্যাৎ শুয়ে থাকার ভঙ্গি। এর ঠিক কোণার একটা জায়গায় রয়েছে একটা ছোট ঘর যেটা দেখলে চীনের মন্দিরগুলোর কথা মনেপড়ে যাবে নিশ্চিত।
সেখান থেকে আরো একটু ভিতরের দিকে এগুলেই রয়েছে একটা ছোট জঙ্গলের মত জায়গা কিন্তু ভালোকরে লক্ষ করলে বোঝা যাবে এটা আসলে জঙ্গল নয় একটা সুন্দর বাগান। যেখানে বাঁশ থেকে শুরু করে, কলাগাছ, মরিচের গাছ, টমেটোর গাছ আর হরেক রমকের ফুলের গাছ। তবে আমরা সবচেয়ে খুশি হয়েছিলাম অনেকদিন পর জাম্বুরা ভর্তি জাম্বুরার গাছ দেখতে পেয়ে। মন্দিরের জায়গাটা এত বেশি পরিপাটি আর পরিচ্ছন্ন করে রাখা হয়েছে যেটা আপনাকে আবারো এখানে আসতে বাধ্য করবে।
আমাদের ঘুরাঘুরি শেষ হলে আমরা পাশের খোলা মাঠের মধ্যে দিয়ে ফিরে আসতে শুরু করলাম। এই খোলা জায়গাটা আসলে বিশাল কার পার্কিং। কিন্তু আজ গাড়ির তেমন আনাগোনা না থাকাতে বাচ্চারা দৌড়ঝাঁপ করে সারা মাঠে খেলে বেড়াচ্ছিল। হঠাৎ করে পরিকল্পনা করেই আজ আমরা গিয়েছিলাম তাই আবারো আমাদের যাওয়ার পরিকল্পনা করে ফেললাম। পরবর্তিতে আমরা যখন যাবো সাথেকরে ফ্লাস্কে চা নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে যাতেকরে আমরা গাছের গোড়ার কাঠের পাটাতনে বসে নির্ভার হয়ে চা পান করতে পারি।
শহুরে কর্মব্যস্ত জীবনে হাপিয়ে উঠলে আপনি যেতে পারেন লুমিয়ার মাহামাকুত বুদ্ধিষ্ট টেম্পলে। কিছুক্ষণের জন্য হলেও জীবনের সকল কর্মব্যস্ততা ভূলে আপনি হারিয়ে যাবেন প্রকৃতির মাঝে আর মনের মধ্যে সঞ্চয় করে নিবেন কিছু অমূল্য স্মৃতি। আর বাচ্চাদেরকে সাথে করে নিয়ে গেলে একই জায়গা থেকে অনেকগুলো গাছের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে পারবেন। তাই আর দেরি কেন ঘন্টাখানেক সময় হাতে নিয়ে ঘুরে আসুন গৌতম বুদ্ধের সংস্পর্শ থেকে।
![Md Yaqub Ali](https://priyoaustralia.com.au/wp-content/uploads/2017/12/Yaqub-Ali-150x150.jpg)
Md Yaqub Ali
আমি মোঃ ইয়াকুব আলী। দাদি নামটা রেখেছিলেন। দাদির প্রজ্ঞা দেখে আমি মুগ্ধ। উনি ঠিকই বুঝেছিলেন যে, এই ছেলে বড় হয়ে বেকুবি করবে তাই এমন নাম রেখেছিলেন হয়তোবা। যাইহোক, আমি একজন ডিগ্রিধারী রাজমিস্ত্রি। উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করতে অস্ট্রেলিয়াতে আমার আগমন ২০১৫ সালের মার্চে। আগে থেকেই ফেসবুকে আঁকিবুকি করতাম। ব্যক্তিজীবনে আমি দুইটা জীবের জনক। একটা হচ্ছে পাখি প্রকৃতির, নাম তার টুনটুনি, বয়স আট বছর। আর একজন হচ্ছে বিচ্ছু শ্রেণীর, নাম হচ্ছে কুদ্দুস, বয়স দুই বছর। গিন্নী ডিগ্রিধারী কবিরাজ। এই নিয়ে আমাদের সংসার। আমি বলি টম এন্ড জেরির সংসার যেখানে একজন মাত্র টম (আমার গিন্নী) আর তিনজন আছে জেরি।
Related Articles
Dramatist, Novelist Journalist Anisul Huq visits Canberra
When many amongst us were longing for a qualitative change in our audio-visual entertainment arena almost clogged with low-quality, cheap
Natun Aloy Alokito Bangladesh Chai
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী: নতুন আলোয় আলোকিত বাংলাদেশ চাই ৯/১১-র ঘূর্ণিঝড় এবং ১/১১ সুনামি আর ২৯শে ডিসেম্বরের নির্বাচন আমাদেরকে যে নতুন আলো
রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ
বাংলাদেশে আশ্রয় পাওয়া রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ। সম্প্রতি স্যাটেলাইট চিত্রের বিশ্লেষন করে অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউট (এএসপিআই) এর আন্তর্জাতিক