Natun Aloy Alokito Bangladesh Chai

Natun Aloy Alokito Bangladesh Chai

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী: নতুন আলোয় আলোকিত বাংলাদেশ চাই

৯/১১-র ঘূর্ণিঝড় এবং ১/১১ সুনামি আর ২৯শে ডিসেম্বরের নির্বাচন আমাদেরকে যে নতুন আলো দিয়েছে তা দিয়েছে নতুন করে আগামী দিনের স্বপ্ন নির্মাণের সুযোগ । সেই আলোতে আলোকিত করতে হবে বাংলাদেশকে। ১৯৭২ সালের বাস্তবতা আর আজকের বাস্তবতা ভিন্ন বাস্তবতা। আমাদের বিশ্বাস দেশ পরিচালনায় এবং সংবিধান সংশোধনের প্রশ্নে আপনি যে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন তা সেই নতুন বাস্তবতারই প্রতিফলন।

১৯৭২ সালে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙালী জাতীয়তাবাদ উপযুক্ত সমাজ আদর্শ ছিল। ইতিমধ্যে ৪০ বছর পার হয়েছে। নতুন চেতনা আজ বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে। সবকিছু ছাপিয়ে গণতন্ত্র বেঁেচ আছে। আর সেই গণতন্ত্রই দাবি করছে সকল ধর্মের স্বাধীন চর্চার অধিকার। ধর্মনিরপেক্ষতার মাঝে ধর্মহীনতার একটি টান আছে। সমাজতšেত্রর একটি অর্থ সেই ধর্মহীনতাকে বন্ধু মনে করে। বাংলাদেশের মানুষ তাই নতুন করে তাদের পরিচয় বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে চায়। তাঁরা বাংলাদেশী বাঙালী, বাংলাদেশী চাকমা, বাংলাদেশী মুসলমান, বাংলাদেশী হিন্দু ইত্যাদি পরিচয়ে পরিচিত হতে চায়। তাঁদের সেই দাবির প্রতি যদি শ্রদ্ধা পোষণ করতে হয় তাহলে সংবিধানে মূলনীতি হবে সকল নাগরিকের প্রতি সমান সম্মান।

গণতন্ত্র মানে হল যে যেমন পরিচয়ে পরিচিত হতে চায় তাকে সেই পরিচয়ে পরিচিত হতে দিতে হবে। যদি বেগম জিয়া পাসপোর্টে জাতীয়তা বাংলাদেশী লিখতে চান, যদি মওলানা নিজামী বাংলাদেশী মুসলিম হিসেবে পরিচিত হতে চান তবে গণতন্ত্র বলে তাকে সেই ভাবে পরিচিত হতে সুযোগ দিতে হবে। অর্থাৎ নাগরিক পরিচয়ে বাংলাদেশী আর জাতীয়তা পরিচয় বাঙালী, মুসলিম বা চাকমা হতে পারে। চাকমাকে বাঙালী বলা যাবে না। সংবিধানে বাংলাদেশী বা বাঙালী জাতীয়তার প্রতিগুরুত্ব যেন কাঊকে কষ্ট না দেয় বা দুরে সরিয়ে রাখে। গণতন্ত্র মানে সর্বাধিক মানুষের সর্বাধিক সুখ নয়। বরং, গণতন্ত্র মানে সকলের প্রতি সমান সম্মান।

সকলের প্রতি সমান সম্মান- এই নাগরিক অধিকার যেমন আমার বেলায় প্রযোজ্য তেমনি প্রযোজ্য যারা গারো, খাঁসিয়া, মারমা, চাকমা, হিন্দু, বৌদ্ধ সবার জন্য। আপনি বলেছেন বিসমিল্লাহ থাকবে, রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম থাকবে আমি তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছি না। কারণ এখনও সময় হয়নি সঠিক আদর্শকে রাজনৈতিক রুপ দেওয়ার বা এগুলিকে বাদ দেওয়ার। মাননীয় সাংসদরা সংসদের শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত কোঠায় বসে যেসব কথা বলছেন সেসব বোঝা বা গ্রহন করার মত মানসিকতা আমাদের এখনও হয়নি। ওনারা কিভেবে বলেছেন জানি না, তবে একটা মস্তবড় ক্ষতি হয়ে গেছে। আর তাহল: যারা ২৯শে ডিসেম্বর ধিক্কারে সঙ্গে প্রত্যাখিত হয়েছিল তারা পায়ের নীচেয় মাটি পেয়ে গেছে। এই ভুলটি ওনারা না করলেই পারতেন।

২৯শে ডিসেম্বর আনতে জনগণকে অনেক ত্যাগ করতে হয়েছে এবং ধৈর্য্যর পরীক্ষা দিতে হয়েছে। আপনাকে কলঙ্কিত করতে তাঁরা কতনা চেষ্টা করেছে। কিন্তু জনগণ তাঁদের নেত্রীকে চিনতে ভুল করেনি। তাঁদের হৃদয়ে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ এক বিশাল মানচিত্রের মত জুড়ে আছে। তাঁদের কানে বাজে এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, তাঁদের হৃদয়ে ধ্বনিত হয় এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম। তাঁদেরকে অনুপ্রাণিত করে আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রয়ারী, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনল যারা কিংবা রিকসা ওয়ালা বলে কারে তুমি আজ ঘৃণা কর, কৃষক বলে এড়িয়ে চল, শ্রমিক বলে আজ ধমক মারো।

আপনি সেই জাতির জনকের কন্যা যিনি ঐ নিপিড়িত মানুষের পাশে ছিলেন সারাটা জীবন। আপনার ও বাংলাদেশের ধমণীতে বঙ্গবন্ধু জেগে আছেন। আজ সিডনী, নিঊ ইর্য়ক শহরে বাঙালী টেক্সীওয়ালারা নিজেদেরকে রিকসাওয়ালা পরিচয় দিয়ে গর্ববোধ করে। আজ মালয়েশিয়া থেকে সৌদি আরব কিংবা সিঙ্গাপুর থেকে তুরঙ্ক বাঙালী শ্রমিক দেশের অর্থনীতিকে এত র্দুযোগের মাঝে সচল রেখেছে। আজ বাংলার কৃষক কিভাবে দেশকে বাঁচিয়ে রাখছে তা সবারই জানা। আপনি ওদের ভুলবেননা। ওরাই আপনার শক্তি ওরাই আপনার সাহস।

আপনার চারপাশে এখনও অনেক মাইনাসপন্থী আছে। তাদের থেকে সাবধান হওয়ার সময় এসেছে। কেবল আপনার নীতির বিরুদ্ধে কথা বললেই মাইনাসপন্থী হয় না। ওবামার বিরুদ্ধে হিলারী ছিলেন, কিন্তু দেখুন কিভাবে তাঁরা সম্মিলিতভাবে দেশকে গড়ছে। যারা মিথ্যে তোষামোদ করে, দলের আপনজনদেরকে ও জনগণকে আপনার থেকে দূরে রাখে,বন্ধু বা আত্মীয়করণ করে যোগ্যদেরকে নির্যাতন করে, তারাও কিন্তু মাইনাসপন্থী। সময় এসেছে যাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছেন তাঁর কাজের হিসেব নেওয়ার। মাননীয় নেত্রঅ, কে কতটুকু নিরপেক্ষ ও সততার সঙ্গে কাজ করেছেন তাঁর বিচার আপনাকেই করতে হবে।

কথায় আছে বিপদে বন্ধুর পরিচয়। ১/১১-র পর কে কতটুকু অবদান রেখেছে সেই মানদন্ডে যদি প্রাপ্তি নিশ্চিত করা হয় তাহলে আপনার উন্নয়ন ভাবনা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হবে। মানুষ চায় তাদের কষ্টের কথা বলতে, সরকার প্রধান হিসেবে আপনি এখন আবার শুনবেন কি? কান পেতে আছে জনতা কখন আপনি তাঁদেরকে শুনবেন। প্রতিদিন আপনি অন্তত: একঘন্টা জনগণের কষ্টের কথা শুনুন প্লিজ! শোনা যাচ্ছে আপনার মন্ত্রী সাংসদ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। এই শোনা কথা মিথ্যে প্রমাণ করতে ইতিমধ্যে আপনি কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। এখন সতর্ক থাকার সময়। পদ্মা সেতুসহ, আমি মনে করি এর নামকরণ হতে পারে বিজয় সেতু যার দুই প্রান্তে থাকতে পারে মুক্তি(এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম) তোরণ ও স্বাধীনতা (এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির স্বাধীনতার সংগ্রাম) তোরণ, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প যখন চলছে তখন লোভীরা ওত পেতে অগ্রসর হচ্ছে। এখন আর সংবিধান, নারীনীতি বা ধর্ম বা পরিচিতি নিয়ে বিরোধ নয়। যারা এসব পরিবর্তন চান তাঁদের প্রতি অনুরোধ আরও ধৈর্য্য ধরতে হবে। এখনও গণতন্ত্রের শিশু হাটতে শিখেনি। এখনও ওই যুদ্ধাপরাধী এই শিশুকে হত্যা করতে খড়গহস্ত। জনদুর্ভোগ লাঘবে জনতার পাশে থাকতে যারা ইচ্ছুক তাঁদের নিয়ে হবে আপনার আগামী সরকার। সময় এসেছে মূল্যায়নের ও পরিবর্তনের। অনেক এজেন্ডা সবকিছুকে শেষ করে দিতে পারে। নেত্রী আপনি জানেন কিভাবে সতর্ক থাকতে হবে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে তাকে এগিয়ে যেতে দিতে হবে-এঁটাই হোক সবার লক্ষ্য।

2011/pdf/Letter_to_PM_Priyo_333552877.pdf ( B) 


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment