একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক রনেশ মৈত্র’র পঁচাশিতম জন্মদিন

ফজলুল বারী: প্রিয় রনেশ দা’র আজ জন্মদিন। বয়স তাঁর মাত্র ৮৫ নট আউট। সেঞ্চুরি হতে আর মাত্র ১৫ বাকি। আশির দশকে আমি যখন পায়ে হেঁটে বাংলাদেশ ঘুরি তখন পাবনায় রনেশ দা’র কথা শুনি প্রথম। রনেশ মৈত্র। একাত্তরে পাবনায় মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। কিন্তু তাঁর সখ্য গড়ে ওঠে সিডনিতে। এখানে তার ছেলে প্রবীর মৈত্র থাকেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম নির্বাচিত বাংলাদেশি জনপ্রতিনিধি। ছেলের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্যে কয়েক বছর পরপর সিডনি আসেন রনেশ দা। তাঁর সঙ্গে এখানে সম্পর্কটা এখন পারিবারিক। রনেশ দা আমার দাদা। তার ছেলে প্রবীর দা আমার দাদা। প্রবীর দার ছেলে তরুন ক্রিকেটার অনির্বাণ আমার বন্ধু। ভাইপো পৃত্থিরাজ মৈত্র সিডনিতে পড়তে এসে আমাকে আঙ্কেল বলার চেস্টা করেছিল। এক ধমকে চুপ। বলেছি, আমি এখানে সবার ভাই, তোমারও ভাই। মিডিয়ার লোকজন সব সময় সবার ভাই হয়।
সিডনিতে গত এক দশকে অনেক স্মৃতি রনেশ দাকে নিয়ে। একটা গল্প সবাইকে বলি। ষাটের দশকের শেষের দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন ঢাকা জেলে বন্দি তখন পাবনা জেল থেকে পরীক্ষা উপলক্ষে রনেশ দাকে ঢাকা জেলে আনা হয়। বামপন্থী ছাত্রনেতা তখন রনেশ দা। শেখ মুজিব তখনও বঙ্গবন্ধু হননি। জেলখানার ভিতর প্রতিদিন সকালে বিকালে হাঁটতেন বঙ্গবন্ধু। তার হাঁটার সময় বন্দিরা দূরে দূরে থাকতেন অথবা তাদের দূরে দূরে রাখা হতো। একদিন রনেশ দা সাহস করে তার দিকে এগিয়ে গেলে বঙ্গবন্ধু সোহাগে তাকে ডেকে নিয়ে হাঁটার সঙ্গী করে নেন। এরপর থেকে প্রতিদিন তাঁর সংগে হাঁটতেন রনেশ দা।
বঙ্গবন্ধুর সংগে হাঁটতে হাঁটতে তাদের মধ্যে অনেক আলাপ হতো। তরুন বামপন্থী ছাত্রনেতা রনেশ মৈত্র বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি নিয়ে অনেক অভিযোগ করতেন। বঙ্গবন্ধু তা শুনতেন আর হাসতেন। একদিন বঙ্গবন্ধু রনেশ দাকে বলেন আমারতো লক্ষ্য ভিন্ন! আমার লক্ষ্যতো বাংলাদেশের স্বাধীনতা। বামপন্থী ছাত্রনেতা রনেশ দা বঙ্গবন্ধুকে মুখের ওপর বলেন, আপনাকে দিয়েতো আর যাই হোক স্বাধীনতা হবেনা। কারন আপনার মক্কা আমেরিকা। আমেরিকা অন্তত আপনাকে স্বাধীনতা সংগ্রাম করতে দেবেনা। বঙ্গবন্ধু তাকে বলেন, শোন রনেশ আমার বিভিন্ন উইং বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেছে। তাজউদ্দিন সহ যারা স্বাধীনতার জন্য কাজ করছে তাদের কাজ ভিন্ন। অন্যরা কাজ করছে ভিন্ন উইং’এ। বঙ্গবন্ধুর এ কথায় চুপ মেরে যান রনেশ দা। এখন যারা সুযোগ পেলেই বলতে চান বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা চাননি তাদের আমি রনেশ দা’র গল্প বলি। কারন রনেশ দা’ আওয়ামী লীগের কেউ না। কোনদিন আওয়ামী লীগ করেননি, এখনো না।
এমনি বাংলাদেশের অনেক কিছুর এনসাইক্লোপিডিয়া এই রনেশ মৈত্র। এক জীবন্ত কিংবদন্তি। সংবাদিকতা করেছেন দীর্ঘদিন। এখনো লিখছেন। সাংবাদিকতার জন্যে তাকে এবার একুশে পদক দেয়া হয়েছে। একুশে পদক দেবার সময় রনেশ দা সিডনিতে। তাঁর পক্ষে তাঁর ছেলে এই পদক গ্রহন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন সিডনিতে আসেন তখন রনেশ দার সঙ্গে দেখা করেন। অন্যরা লাইনে দাঁড়িয়ে দেখা করেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে উদ্যোগ নিয়ে রনেশ দাকে তার হোটেলে নিয়ে আসেন। জানতে চান তার শরীর স্বাস্থ্যে অবস্থা। কারন তিনি যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা।
একজন আপাদমস্তক ধর্ম নিরপেক্ষ মানুষ রনেশ দা। বয়সের তুলনায় শরীর স্বাস্থ্য তাঁর বেশ সুঠোম। শুধু একটু সমস্যা টের পাই এখন কানে একটু কম শোনেন। ফোনে কথা বলতে গেলে এক দু’ কথার পর বলে ম্যাসেঞ্জারে আসেন। এরপর জবাব লিখেন ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে । সিডনিতে আমার সবজি বাগান দেখার খুব ইচ্ছা ছিলো তাঁর। সর্বশেষ বাংলাদেশ ফিরে যাবার আগে একবার আমার বাগান দেখাতে নিয়ে এসেছিলাম। এখানে থাকলে সিডনির নির্মল আলো হাওয়ায় তাঁর স্বাস্থ্য ভালো থাকে। কিন্তু তিনি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন বাংলাদেশে। কারন তিনি যে বাংলাদেশের মাটিরই সন্তান। ভূমিপুত্র। ৪ অক্টোবর জন্মদিন প্রিয় রনেশ দা’র। শুভ জন্মদিন দাদা। অনেক ভালো থাকুন। আবার আসুন সিডনিতে। সবজি বাগান অনেক বড় হয়েছে। এবার দেখে ভালো লাগবে। সুস্থ থাকুন রনেশ দা সেঞ্চুরি পূর্ন করুন। আপনাকে আমাদের বাংলাদেশের অনেক দরকার। জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু।
Related Articles
Sectarian Riots, Hindu-Muslim Friendship and Sushant Singh Rajput: An Obituary
My first cinematic encounter with the actor Sushant Singh Rajput is with the film Kai Po Che! (2013). I did
Twenty fifth march 1971
Twenty fifth march 1971 is listed as Black Day in our History. In the dark of that night, West Pakistani