প্রিয় ছাত্রলীগ এবার থামো!
ফজলুল বারী: কয়েকদিন ধরে মনটা বেশ খারাপ। প্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কিছু নেতার বক্তৃতা-বিবৃতির ভাষায় বাংলাদেশ বিরোধী শক্তির বিরোধিতা উধাও! হঠাৎ করে সবকিছুর অনাবশ্যক কেন্দ্রবিন্দু যেন ‘ইমরান পিটাও’! গণজাগরন মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারকে ‘কুত্তার মতো পিটানোর’ আহবান! ঘোষনা দিয়ে কাউকে পিটানো, এটিই কী বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কাজ? আশ্চর্য! ঘটনাক্রমে এরশাদ আমলের একটি বক্তৃতার কথা মনে পড়লো। ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বে প্রাণ গেছে ছাত্রলীগের এক কর্মীর। টিএসসিতে স্বোপার্জিত স্বাধীনতার সামনে এক সমাবেশে সাজেদা চৌধুরী তার বক্তৃতায় বলছিলেন, ‘পতাকা লইয়া যারা ঘুইরা বেড়ায় তাদের দেখোনা?’ সাজেদার বক্তৃতায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিজেদের নিজেদের মারামারির বিষয়ে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন এভাবেই। এখানে ইমরান এইচ সরকার ছাত্রলীগের প্রোডাক্ট-সাবেক নেতা। আওয়ামী লীগের মিডিয়া সেলের সাবেক কর্মী। এ ঘটনাটি বাংলাদেশের দূর্বল গণতন্ত্রের আরেক রূপ।
এ দলের নেতারা সরকারি খরচে উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে ঘোরেন। কিন্তু ওইসব ট্যুর থেকে কিছু শেখেননা বা শেখার চেষ্টা করেননা। বাংলাদেশের প্রধান দুই দলের গণতন্ত্রের সংজ্ঞাটি হলো, ‘সবকিছুতে হ্যাঁ বলিতে হইবে!’ কোথাও কোন ওপেন স্পেস থাকতে পারবেনা! ৪৬ বছর বয়সী একটি দেশের গণতন্ত্রের একি রূপ! সে কারনে ছাত্রলীগের অল্পবয়সী ছেলেদের কাজকর্মটি যে আখেরে দলের জন্যে ভালো হচ্ছেনা দেখেও এ দলের মুরব্বি নেতারাই বা চুপ কেনো? তারাতো রাজনীতি করে করেই এতদূর এসেছেন। কে পক্ষ কে বিপক্ষ তা তাদের চেয়ে কে বেশি জানেন? এখন আবার আরেক মুখস্ত হয়রানি তৎপরতা শুরু হয়েছে! দেশের বিভিন্ন স্থানে মামলার নামে হয়রানি! এরমানে দেশের আদালতগুলোর বারান্দায় বারান্দায় ঘোরো! অথচ আইন হচ্ছে একই অভিযোগে একাধিক মামলা হতে পারেনা। এক মুরগি বারবার জবাই করা যায়না।
একটু ব্যাখ্যা বিশ্লেষন করলেই দেখা যাবে ইমরান এইচ সরকারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগটি আনা হয়েছে অপরাধটি তার ব্যক্তিগত নয়। মিছিলে একজন শ্লোগান দিচ্ছিলেন, ‘ছি! ছি! ছি! হাসিনা,—-’! কোন পরিস্থিতিতে সে শ্লোগান? সুপ্রীমকোর্টের সামনে থেকে মধ্য রাতে বহুল আলোচিত একটি ভাস্কর্য অপসারন করা হয়। দেশের প্রধান টিভি চ্যানেলগুলো সে পরিস্থিতি লাইভ দেখাচ্ছিল। যা দেশের শিল্প-সংস্কৃতির তুলনামূলক রক্ষকদল আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলেনা। তাদের আমলে এমন একটি ঘটনায় খাঁটি আওয়ামী লীগরাই বিব্রত বোধ করছিলেন। তখন কী মিছিলের শ্লোগান হবার কথা ছিল ‘ধন্যবাদ শেখ হাসিনা’! বা আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ কী ধন্যবাদ দিয়ে এ নিয়ে কোন মিছিল করেছে? না তা তাদের পক্ষে সম্ভব ছিলো? ভাস্কর্যটি আহামরি কিছু ছিলোনা তা অনেকেই বলেছেন। কিন্তু হেফাজতের জেদাজেদিতে সেটিতো একটি প্রতিকী হয়ে উঠেছিল। আর সে কারনেইতো তা সুপ্রীমকোর্টের সামনে উচ্ছেদের চব্বিশ ঘন্টা পেরুবার আগে তা আবার এনেক্স ভবনের সামনে পুনঃস্থাপিত করতে হয়েছে।
এখন ভাস্কর্য উচ্ছেদ পরবর্তি ক্ষোভের একটি মিছিলের শ্লোগানের দায় যদি ছাত্রলীগ তাদের সাবেক নেতা ইমরানকে দেয় তাহলে দেশের সব মন্দ কাজের দায় কী শুধু শেখ হাসিনাকে দিতে রাজি হবে? নিশ্চয় নয়। শেখ হাসিনা এদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব মানুষের ভরসার নেত্রী। তাঁর নেতৃত্বে দেশে অবিস্মরনীয় সব উন্নয়নযজ্ঞের পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের অকল্পনীয়-অবিস্মরনীয় যে কাজটি হয়েছে এবং এখনও সে বিচার চলছে। ইমরান এইচ সরকার এই বিচারের একটি পর্যায়ের তরুনদের নেতা। সেক্ষেত্রে ইমরানের নেত্রীও শেখ হাসিনা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলনের একটি অবিস্মরনীয় পর্ব শাহবাগ আন্দোলন তথা গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন গড়ে ওঠে। সেই আন্দোলনের অন্যতম প্রধান শক্তিও ছাত্রলীগ এবং বেনিফেশিয়ারি আওয়ামী লীগ। সেই আন্দোলনের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা মৌলবাদী বিরোধিতার নাম হেফাজতে ইসলামী। একাত্তরের এটি বাংলাদেশ বিরোধী সংগঠন নেজামে ইসলামী। এখন পর্যন্ত এ সংগঠনের নেতাকর্মীদের কেউ জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গায় না। এদের ভোটে কি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিলো? না আগামিতে এদের কোন ভোট পাবে?
ঢাকার শাহবাগে তখন আন্দোলন চলছিল যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে। আর হেফাজত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির গণদাবি এড়িয়ে সেই বিশাল জনসমুদ্রকে কটাক্ষ করে দাবি করে বসে সেখানে দেশের নাস্তিকরা সমবেত হয়েছে! এরপর মতিঝিল তান্ডব সহ নানা ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে বাংলাদেশ। ছাত্রলীগসহ সব সংগঠন মিলেতো সেদিন ইমরানকে তখন আন্দোলনের গণজাগরন মঞ্চের মুখপাত্র বানিয়েছে। সেই আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে আওয়ামী লীগ সংসদে আইন সংশোধন করে প্রশস্থ করেছে রাষ্ট্রপক্ষের আপীল সুবিধা তথা যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির ব্যবস্থার পথ। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে জামায়াতের প্রতিরূপ হেফাজত কী করেছে তা সবাই জানে। মতিঝিল তান্ডবের পরও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো রেলের জমি দেয়া হয়েছে, তাদের কথায় দেশের কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের ধর্ম নিরপেক্ষতার পথ থেকে সরাতে পাঠ্যপুস্তক পরিবর্তন করা হয়েছে, তরুন ছাত্রশক্তি ছাত্রলীগ এসবের প্রতিবাদ করেছে কী? এসব কী দেশজুড়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজন, আওয়ামী লীগের নীরব সমর্থকদের মনের মধ্যে-ক্ষোভ-প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেনি? এসব কথা-প্রতিক্রিয়া যার কাছে জানানো যায় তারা সেটি গ্রহন না করুক মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নিজের লোকজনকে টার্গেট করবে কেনো? আর এর জন্যে ব্যবহার করা হছে কী রূপ ভাষা! হেফাজতের বাবু নগরীর, আমার দেশের মাহমুদুর রহমানের সমান ভাষা কী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মুখে মানানসই?
আমি আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ সহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তির সংহতি চাই। বিপদে-আপদে ভবিষ্যতে এই সংগঠনগুলোই পরষ্পরের পাশে দাঁড়াবে। এটি মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে নানা ঘটনায় প্রমানিত। জামায়াত-হেফাজত এদের সঙ্গে কৌশল করা যাবে কিন্তু আখেরে এরা কোনদিন আওয়ামী লীগের পক্ষে যাবেনা না কোনদিন এরা নৌকায় ভোট দেবেনা। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ছোট ছোট সংগঠনগুলোকে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ যদি বুকে টেনে না নেয় তাহলে লাভ কার। শেখ হাসিনাকে ছি ছি বলাতে ছাত্রলীগের ক্ষোভ যুক্তিহীন নয়। কিন্তু যাকে ভালোবাসা যায় না পাবার ক্রোধতো তার ওপরই যায়। এখানে এ ক্রোধতো কোন টেন্ডার বা সম্পদের ভাগবাটোয়ারা নয়। আলাদা একটি গণজাগরন মঞ্চ বানানোর উদ্যোগ সফল হয়নি। এখানে যদি মাঠেময়দানে গণজাগরনের স্মৃতিবাহী সোনালী অতীত সংঘ নামের একটি সংগঠন থাকে তাতে আওয়ামী লীগের ক্ষতি কী? ১৪ দল আওয়ামী লীগ যাদের নিয়ে করেছে লালন করে গণজাগরন মঞ্চের আবেদন-গ্রহনযোগ্যতা তাদের অনেকগুলোর চেয়ে বেশি। আওয়ামী লীগ-গণজাগরন মঞ্চের মুরব্বি নেতারা এসব বিরোধ মিটমাট করতে পারেন। গণজাগরন মঞ্চ মানেই ইমরান এইচ সরকার না। গণজাগরন মঞ্চ বা শাহবাগ আন্দোলনের ধারক-বাহক আমরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষেরা। আমাদের সংগঠনগুলোকে সংঘবদ্ধ করা গেলে আমাদের হেফাজতের মতো কপুমন্ডুক অপশক্তিগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা করা লাগবেনা। কপুমন্ডুক অপশক্তিগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা ডিজিটাল আওয়ামী লীগের একটি এনালগ রোগ। তরুনদেরই এটি আওয়ামী লীগ নেতাদের বোঝাতে হবে। কারন আওয়ামী লীগ হেরে গেলে যে আমরা সবাই হেরে যাই। এবার হারলে অনেক অনেক দূর যে পিছিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
Related Articles
বিশ্বকাপ ফুটবল কড়চা – খেলা উপভোগ করুন
১৯৮৭ সালে জমজমাট ঢাকা ফুটবল লীগের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ খেলা: মোহামেডান-আবাহনী। আবাহনী ড্র করলেই লীগ চ্যাম্পিয়ন হবে, আর মোহামেডান জিতলেই তবে
An Attractive Educative Seminar on Cardiovascular Diseases by Dr. Moyazur Rahman
On Friday 30 October, 2009, a very educative & informative seminar on different aspects of cardiovascular disease and their treatment
ধর্মে বিশ্বাস আছে কি নেই – দ্বায় আপনাকে নিতেই হবে
আমার ক’জন ভাল বন্ধু, যারা আমাকে বেশ ভালবাসেন, তারা আমাকে অনুরোধ করেছেন, ড: অভিজিত হত্যাকাণ্ড নিয়ে কিছু না লেখার জন্য।