প্রধান বিচারপতি এবং সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনের থেমিস ভাস্কর্য

প্রধান বিচারপতি এবং সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনের থেমিস ভাস্কর্য

দেশের প্রশাসন ব্যবস্থার প্রতি বর্তমান প্রধান বিচারপতির অসন্তোষ দীর্ঘদিনের । আড়ালে আবডালে নয়, প্রধান বিচারপতি প্রায়ই প্রকাশ্যে বলছেন যে প্রশাসনের একাংশ দেশের বিচার ব্যবস্থাকে সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে । প্রশ্ন হচ্ছে ইতিপূর্বেকার প্রধান বিচারপতিগণ এমন করে বলেন নাই কেন? এর অনেক কারণ থাকতে পারে, কিন্তু আমার মনে হয় ইতিপূর্বে যারাই প্রধান বিচারপতি হয়েছেন তাদের কেউ বা তিন মাস, ছয় মাস, বা বড় জোর নয় মাস চাকুরী শেষে অবসরে গেছেন । তারা প্রশাসনের অন্যায্য মাতব্বরীকে মেনে নিয়ে চাকুরী শেষ করেছেন এই ভেবে হয়তো ঝামেলা করে লাভ কি, আর মাত্র কয়টা দিন! বর্তমান প্রধান বিচারপতির চাকুরীর মেয়াদ হয়তো একটু বেশি আছে, এবং তিনি ভেবেছেন প্রশাসন থেকে বিচার ব্যবস্থার পৃথকীকরণের যে রায় মাজদার হোসেন মামলায় হয়েছে তার সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হবে না কেন?

অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে গত তত্বাবধায়ক সরকারের সময় দেশের নিম্ন আদালতগুলোকে প্রশাসন বিভাগ থেকে পৃথক করে বিচার বিভাগের অধীনস্থ করার রায় সরকার মেনে নেয় । যদি তত্বাবধায়ক সরকার এইটা না করতো, আমি হলপ করে বলতে পারি, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারও নিম্ন আদালতের মাধ্যমে প্রশাসনকে ব্যবহার করতো নিজ স্বার্থে, পৃথকীকরণকে যতদিন সম্বভ ঠেকিয়ে রাখতো । দেয়ালে পিঠ না ঠেকলে পৃথকীকরণ করতো না । বিএনপির সময় বদমায়েশ এমকে আনোয়ার আর ধড়িবাজ মওদুদ আদালত থেকে কম করে হলেও চল্লিশবার সময় নিয়ে আদালতকে মুরগির ছানা দেখিয়েছে । এখন যেমন আওয়ামী লীগ সরকার প্রেসিডেন্টের নাম করে নিম্ন আদালতের বিচারকদের বদলি এবং পদোন্নতির ভার সুপ্রিম কোর্টের কাছে দিতে গড়িমসি করছে । চির কুমার ও ভদ্র মানুষ আইন মন্ত্রীর কাঁধে বন্দুক রেখে এটর্নি জেনারেল এবং সরকার এইটা সেটা বলে মাজদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থী কাজ করছে । এইসব যে প্রশাসনের একাংশের কুবুদ্ধিতে করছে, সেটা একজন সচেতন মানুষ বুঝতে পারলে প্রধান বিচারপতির না বুঝতে পারার কারণ নেই । যে দেশের প্রেসিডেন্ট নিজ থেকে বলেন সই করা ছাড়া তার কোনো কাজ নাই, সেই প্রেসিডেন্ট নাকি কিছু ধারার পরিবর্তন করতে বলেছেন এই জন্য সরকার গ্যাজেট প্রকাশ করতে পারছে না । এটাও দেশের মানুষকে বিশ্বাস করতে হয় । আসল কথা হচ্ছে, সুপ্রিম কোর্ট যদি নিম্ন আদালতের ভার নিয়ে নেয়, তখন সরকার বিচারকদের চাপ দিয়ে (পদোন্নতি, ছুটি, বদলি) যা ইচ্ছা তাই করাতে পারবে না । প্রশাসনের মাতব্বরি আরও কমে যাবে । মাজদার হোসেন মামলার রায়ের প্রাথমিক বাস্তবায়নের কারণে এখন যেমন ইউএনও আর ডিসি ভাইদের ‘আসামি ধরলাম’, ‘মাল খাইলাম’, ‘জামিন দিলাম’, ‘আবার ধইরা আনলাম’ বন্ধ হইছে । এই ক্ষমতা না থাকার কারণে ইউএনও এবং ডিসি ভাইদের জ্যোতি কমে গেছে । সরকার এই ইউএনও আর ডিসি ভাইদের দিয়ে নিম্ন আদালতকে নিজেদের মতো করে চালাতো । এখন সরকার সংসদকে পাশ কাটিয়ে অর্ডিন্যানাসের মাধ্যমে ইউএনও আর ডিসি ভাইদের খাবার ভেজাল, গাড়ির কাগজ পত্র, চালকের লাইসেন্স ইত্যাদি চেক করার দায়িত্ব দিয়েছে- নইলে উনাদের কেউ যে পুছে না!

এইসব অর্ডিন্যান্সও মাজদার হোসেন মামলার চেতনার পরিপন্থী- কোর্টে মামলা চলছে, সরকার ধানাই পানাই করে সময় নিচ্ছে । মাত্র নয় মাস উপজেলায় চাকুরী করেছিলাম খালেদা জিয়ার প্রথম টার্মে । দেশ কেমনে চলে কিছুটা হলেও বুঝেছিলাম- nine months were real eye opener. নয় মাসের সরকারি চাকুরী থেকে পদত্যাগ করে যে আনন্দ পেয়েছিলাম তা প্রেমিকার প্রথম চুমুর চাইতে কম ছিল না । চুমুতে একটু ভয় এবং শিহরণ ছিল, কিন্তু পদত্যাগে ছিল শুধুই আনন্দ ।

সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনের থেমিস ভাস্কর্য নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন খেলা । হেফাজত এখানে একটা উছিলা । প্রশাসনের একটা অংশ হেফাজতকে লেলিয়ে দিয়েছে । সরকার বলছে ভাস্কর্য সম্পর্কে তারা কিছু জানে না, আবার এইটা নিয়ে হেফাজতের সাথে গলা মিলিয়ে সমালোচনা করছে । বন্দুকখানা প্রধান বিচাপতির কাঁধে এরই মধ্যে রাখা হয়ে গেছে । প্রধান বিচারপতি ভাস্কর্য সরালে সরকার প্রগতিশীল শ্রেণীকে বলতে পারবে আমরা ভাস্কর্য সরাই নাই । ঐটা প্রধান বিচারপতি করেছেন, উনাকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেন । এই ভাবে প্রধান বিচারপতি এবং কোর্টকে সরকার এবং জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে । প্রধান বিচারপতির অনেক বিড়ম্বনা; উনি আবার অন্য ধর্মের, মাথায় টুপি দেন না, সোজা সাপ্টা কথা বলেন, অবসরে যেতে এখনো বেশ কিছু সময় বাকি ।

প্রধান মন্ত্রীও সরাসরি থেমিসকে তেমন পছন্দ করছেন না, বলতে পারছেন না, কারণ ঐখানেও ভোট আছে; তাই প্রধান মন্ত্রী গ্রিক ভাস্কর্যের গায়ে শাড়ি পরানো অপছন্দ করছেন । মৃনাল হক তাহলে একটা কাজ করতে পারেন, শাড়িটা খুলে ফেলে নাট-বল্টু মার্কা টপস আর স্কার্ট পরিয়ে দেন । তাহলে প্রধান মন্ত্রীর শাড়ির ঝামেলা চুকে যায় ।

হিপোক্র্যাট মুসলমানদের বলি পকেটে ডালের পাউনড (কত নাফরমানের ছবি থাকে ঐসবে) নিয়ে মক্কা মদিনা হজরে আসওয়াদ চুমা খাইলে কিছু হয় না, বছরে দুই দিন নামাজ পইরা সেলাম ফিরাইয়া ঐদিকে চোখ গেলে উনাদের পুন্নী নষ্ট হবে । আরে চুতিয়াসব, তোর মন যদি আল্লাহর দিকে থাকে, তাইলে নজর ঐদিকে যাইবো ক্যান! মক্কা শরীফে যে পুরুষ-মহিলা একসাথে বইসা এবাদত করো আর চক্কর দাও, তখন তোমার চোখ দুইটা কই থাকে?

ইন্দোনেশিয়ার মসজিদের দুয়ারে হিন্দুদের মূর্তির বেচাকেনা চলে- ঐটা নিয়ে কেউ হয় চৈ করে না । হেফাজতিদের বাবা এরদোগানের দেশের রাস্তায় যে পরিমান মূর্তি আছে… তা দিয়া কয়েক বায়তুল মুকাররম ভইরা ফেলান যাইবো ।

সেইদিন দেখলাম এক মাদার ফা**র কইতেছে পয়লা বৈশাখে পান্তা ভাত আর ইলিশ খাইলে হিন্দুদের সাথে পরকালে দাঁড় করানো হবে । এইসব শুনেও যখন যখন কোনো জাতি ঘুরে দাঁড়ায় না, সে জাতির কপালে দুর্ভোগ আছে । জিডিপি দশ হলেও ভূতের মতো পা পিছন মুখী থাকবে ।

বর্তমান প্রধান মন্ত্রী যদি এইসবে কাবু হয়ে পড়েন, তবে এই দেশের কি হবে? বঙ্গবন্ধু কি থেমিস নিয়ে কোন কথা বলতেন?


Place your ads here!

Related Articles

গাঙ্গালীন মসজিদ এবং ধর্মের নামে ধার্মিকরা

আমাদের কমিউনিটিতে চলছে নির্বাচনী আমেজ । দুই দলেরই চলছে বিপ্লবী চেতনার প্রচারনা; এক দলের আদর্শ খাঁটি ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে হবে,

লেখকের অনুভূতি

পরদেশে আসার পর থেকে ভাল করে লক্ষ্যকরি বয়স্ক মানুষের চালচলন। তাঁদের আচরণের মধ্যে কোন টা অসংগত কোনটা আঘাত প্রদ, ভাবতে

না ঘুমানোর দল

বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাথে চানখার পুল আর স্টার হোটেলের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। রাতজেগে পড়াশুনার পর সস্তায়

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment