তীব্র আবেগ উচ্ছ্বাসে দ্রবীভূত প্রশান্ত পাড়ে গড়ে উঠা এক খণ্ড বাংলাদেশ

তীব্র আবেগ উচ্ছ্বাসে দ্রবীভূত প্রশান্ত পাড়ে গড়ে উঠা এক খণ্ড বাংলাদেশ

হ্যাপি রহমান, সিডনি-অস্ট্রেলিয়া: প্রতি মানুষের সুস্থতা ও বাঁচিয়ে রাখার জন্য নিরন্তর চেষ্টা করে যান চিকিৎসকরা। সকল পেশার মানুষদেরকে একজন চিকিৎসকের প্রতি নির্ভরশীল হতে হয়, হওয়াটা বাধ্যতামূলক। সঙ্গত কারনেই চিকিৎসা মহান ও মহৎ পেশা। অনন্য মেধা, কঠোর সাধনা ও সংগ্রামের মধ্যদিয়ে একজন চিকিৎসক যখন উন্নতির শিখরে আরোহন করে দেশ ও জাতির জন্য বহুমাত্রিক অবদান রাখেন, তখন তা নিঃসন্দেশে প্রশংসনীয় এবং গর্বের।

অভিবাসন নিয়ে দেশ থেকে দূরে থাকা মানে দূরত্বে থাকা নয় বা দোষের কিছু নয়, বরং স্ব স্ব জায়গা থেকে সততা ও নিষ্ঠার সাথে পেশাগত দায়িত্ব পালনও কিন্তু দেশপ্রেম। বাংলাদেশ মেডিকেল সোসাইটি অব এন,এস,ডব্লিউ_ অস্ট্রেলিয়ার নিউ  সাউথ ওয়েলস রাজ্যে বসবাসকারী বাংলাদেশি চিকিৎসকদের একমাত্র সংগঠন।অস্ট্রেলিয়ায় সব’চে বড় পেশাজীবী সংগঠনগুলোর মধ্যে অন্যতম এটি। সংগঠনটির উদ্যোগে প্রতি বছর বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তারমধ্যে বার্ষিক নৈশভোজ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সাধারণ সভা, সায়েন্টিফিক মিটিং, ঈদ পুনর্মিলনী ও বার্ষিক বনভোজন উল্লেখযোগ্য। এই ধারাবাহিকতায় গত ২৯ এপ্রিল শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সংগঠনটির জাঁকজমকপূর্ণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বার্ষিক নৈশভোজ।সিডনি শহরের ওয়েন্ট অর্থভিল সাবারবের রেডগাম সেন্টারে আয়োজন করা হয়েছিল এই অনুষ্ঠানটির।

সিডনিতে বসবাসকারী প্রায় সকল প্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসক, তাদের পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবেরা যোগ দেন উক্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নৈশভোজে।সকলের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠান প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।কর্মব্যস্ততার অবসরে বাংলাদেশি চিকিৎসকদের এ মিলন মেলা সকলকে অফুরন্ত আনন্দ এনে দিয়েছিল, সকলে মেতেছিলেন উৎসবের আমেজে। এ যেন ছিল – তীব্র আবেগ উচ্ছ্বাসে দ্রবীভূত প্রশান্ত পাড়ে গড়ে উঠা এক খণ্ড বাংলাদেশ l গল্প-আড্ডাতে মুহূর্তেই মুখরিত হয়ে উঠেছিল প্রাণের মিলনমেলায়।একে নিছক গল্প-আড্ডার আসর বললে ভুল হবে, বরং দূরপ্রবাসে নিজেদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনকে আরও দৃঢ়তর করার একটা উপলক্ষ্য!

আয়োজকদের মতে বর্তমানে আনুমানিক প্রায় সাড়ে ৭০০ থেকে ৮০০জন বাংলাদেশি চিকিৎসক বসবাস করছেন নিউ সাউথ ওয়েলস এ,যদিও এর সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই।সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা ৩৫০ জনের অধিক।

নির্ধারিত সময়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ডাঃ আয়েশা আবেদিন এশা ও ডাঃ বুলবুলি নাতিয়া নাজ। নৈশভোজের পর শুরু হয় মূল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রথমে সংগঠনের সমাজকল্যাণ ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ডাঃ শায়েখ খান শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদানে অনুষ্ঠানটির সূচনা করেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি দুটি পর্বে সাজানো হয়েছিল। প্রথম পর্বে ছিল সংগঠনের কর্মকর্তা ও সদস্যবৃন্দের বক্তব্য প্রদান ও অনুপ্রেরণামূলক সম্মাননাস্বরূপ ক্রেস্ট বিতরণ এবং সংগঠনটির উদ্যোগে প্রথমবারের মত প্রকাশিত হয় ম্যাগাজিন “প্রতিধ্বনি”র মোড়ক উন্মোচন। দ্বিতীয় পর্বে অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিল বাংলাদেশের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী সামিনা চৌধুরীর একক সংগীতানুষ্ঠান।প্রবাসের কর্মব্যস্ততায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে নেচে-গেয়ে  সংগীতানুষ্ঠানটি উপভোগ করেন উপস্থিত সিডনিপ্রবাসী বাংলাদেশিরা।উল্লেখ্য, ম্যাগাজিনের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রবীন সদস্য ডাঃ সাদেক আহমেদ ও প্রকাশনা সম্পাদক ডা: ফখরুল ইসলাম।ডাঃ আইরিন কবির ও ডাঃ কাজী শাহরিয়ার রানার হাতে অনুপ্রেরণামূলক সম্মাননাস্বরূপ ক্রেস্ট তুলে দেন ডাঃ শরীফউদ্দৌল্লাহ ও ডাঃ আয়াজ চৌধুরী।

এ ছাড়া সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপতি ডাঃ মতিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মিরজাহান মাজু।
ডাঃ মতিউর রহমান তাঁর বক্তব্যে বলেন – ভালো ডাক্তার হতে হলে সবার আগে প্রয়োজন ভালো মানুষ হওয়া। নৈতিক দায়িত্ববোধ, কাজের প্রতি নিষ্ঠা ও সততা দিয়ে কাজে পেশাদারিত্ব বজায় রাখতে হবে, এখানকার মূলধারার সাথে নিজেদের আরও বেশী সম্পৃক্ত করতে হবে। বহিঃবিশ্বের আধুনিক ও তথ্য ভিত্তিক এবং বিজ্ঞান সম্মত চিকিৎসা সেবার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন ও পরস্পরের কর্মক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা আদান-প্রদানে আমরা চিকিৎসা ও চিকিৎসা শিক্ষাব্যবস্থাকে আরো উন্নত জায়গায় নিয়ে যেতে পারবো – আমি আশাবাদী।

সাধারন সম্পাদক ডাঃ মিরজাহান মাজু বলেন – চিকিৎসায় অবশ্যই সহমর্মিতা থাকতে হবে।এটি শুধু পেশা নয়, জীবনের মহৎ কর্তব্য ও। আমরা দেশ থেকে দূরে থাকলেও, দূরত্বে নাই। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কর্মক্ষেত্রে নিজেদের সততা ও মেধা দিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।বিএমএস সংগঠনের মাধ্যমে বাৎসরিক বিভিন্ন সভা-সেমিনার আয়োজনের মধ্য দিয়ে পরস্পরের সাথে সুদৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলার পাশাপাশি চিকিৎসা বিজ্ঞানের আধুনিক দিকগুলো নিয়ে সার্বক্ষণিক নিজেদের দক্ষ করে তোলা সম্ভব হচ্ছে। বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশী চিকিৎসকরা সুনাম অর্জন করছে এটি এখন আর নতুন কিছু নয়। সংশ্লিষ্ট সেক্টরের সবাইকে এক জায়গায় এসে কাজ করতে হবে। তবেই হয়তো আগামীর পথে এগিয়ে যাওয়া যাবে।তিনি আরো বলেন – ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস ও ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে তরুণ প্রজন্মের সাহিত্য-সাংস্কৃতি ও খেলাধুলা চর্চা কমে যাওয়া যায়। একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক চর্চায় নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করতে এবারই প্রথম ম্যাগাজিন প্রকাশনার সিদ্ধান্ত নেই। তাছাড়া ক্রমাগত কমিউনিটি বড় হচ্ছে, আগামীতে আরো ব্যাপক পরিসরে বার্ষিক এ নৈশভোজ উদযাপন করার জন্য   আশা ব্যক্ত করেন তিনি।

অনুষ্ঠান শেষে অতিথি শিল্পীদের হাতে আয়োজক সংগঠনের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা উপহার দেওয়া হয়।উপহার তুলে দেন ডাঃ জেসি চৌধুরী, ডাঃ জেসমিন শফিক, ডাঃ শায়লা ইসলাম, ডাঃ রফিকুর রহমান, ডাঃ মতিউর রহমান ও ডাঃ মিরজাহান মাজু।

সবার সম্মিলিত সহযোগিতায় এই মিলনমেলা আক্ষরিক অর্থেই পরিণত হয়েছিল প্রবাসের মাটিতে এক টুকরো বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, নিউ সাউথ ওয়েলসে বসবাসকারী বাংলাদেশি চিকিৎসকদের প্রায় প্রত্যেকেই বিভিন্নভাবে দেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রে অবদান রাখছেন এই সুদূর প্রবাসে থেকেও। তাদের সামাজিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে দেশ ও দেশের বাইরে বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সংগঠনটির পক্ষ থেকে আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা, ঢাকা আহসানিয়া মিশনের উদ্যোগে নির্মীয়মাণ ক্যানসার হাসপাতাল (আহসানিয়া মিশন ক্যানসার ও জেনারেল হাসপাতাল) এবং বেশ কয়েক বছর আগে আইলা বিধ্বস্ত জনপদসহ সাভারের রানা প্লাজার দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পঙ্গু মানুষের সাহায্যার্থে সিআরপিকে আর্থিক অনুদান দিয়ে সাহায্য সহযোগিতা। সংগঠনটি নেপালের শক্তিশালী ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থেও দেশটির ত্রাণ তহবিলে অর্থ দান করেছে। গত বছর অস্ট্রেলিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন একজন চিকিৎসক। তাঁর মরদেহ দেশে পাঠানো ও অন্যান্য সহযোগিতায় এগিয়ে আসে সংগঠনটি। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর উচ্চশিক্ষার্থে ও অভিবাসন ভিসা নিয়ে অনেক চিকিৎসক অস্ট্রেলিয়া আসছেন। কর্মক্ষেত্রে নিজেকে দক্ষ চিকিৎসক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নবীন চিকিৎসকদের পরামর্শ সাহায্য সহযোগিতা করে থাকে সংগঠনটি। যাতে তাঁরা অস্ট্রেলিয়া সরকার অনুমোদিত মেডিকেল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর স্থানীয়ভাবে কর্মক্ষেত্রে যোগদান করতে পারেন।প্রয়োজনে তালিকাভুক্ত সদস্যদের শর্তসাপেক্ষ্যে সুদহীন ঋণ দিয়েও সহযোগিতা করে আসছে সংগঠনটি।

সংগঠনটির কার্যকরী কমিটির অন্যান্য কর্মকর্তারা হলেন সহসভাপতি ডাঃ রশিদ আহমেদ, ডাঃ শফিক রহমান, ডাঃ সাব্বির সিদ্দিকি।যুগ্ম সম্পাদক ডাঃ মেহেদী ফারহান ও ডাঃ কাজী শাহরিয়ার রানা। কোষাধ্যক্ষ ডাঃ জেসমিন শফিক, সাংগঠনিক সম্পাদক ডাঃ শায়লা ইসলাম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ডাঃ ফখরুল ইসলাম, সমাজকল্যাণ ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ডাঃ শায়েখ খান, শিক্ষা সম্পাদক ডাঃ নাজমুন নাহার।কার্যকরী সদস্য ডাঃ জেসি চৌধুরী, ডা. আয়াজ চৌধুরী, ডা. শরীফউদ্দৌল্লাহ, ডাঃ রেজা আলী, ডাঃ আমীন মুতাসিম, ডাঃ আয়েশা আবেদিন, ডাঃ খালেদুর রহমান, ডাঃ রেজা আলী, ডাঃ জাকির পারভেজ, ডাঃ আইরিন কবির, ডাঃ রফিকুর রহমান বাবুল, ডাঃ শামসুল আলম বাবু, ডাঃ মইনুল ইসলাম, ডাঃ মামুন চৌধুরী, ডাঃ জান্নাতুন নাইম, ডাঃ শফিকুল বার চৌধুরী, ডাঃ হুসাইন আহমেদ।

বি,এম,এস-এর কর্মকর্তা ও সদস্যবৃন্দ

বি,এম,এস-এর কর্মকর্তা ও সদস্যবৃন্দ

প্রেসিডেন্ট ডা: মতিউর রহমান ও সাধারন সম্পাদক ডা: মিরজাহান মাজু

প্রেসিডেন্ট ডা: মতিউর রহমান ও সাধারন সম্পাদক ডা: মিরজাহান মাজু

সামিনা চৌধুরী

সামিনা চৌধুরী

ক্রেসট বিতরন

ক্রেসট বিতরন

০২.০৫.২০১৭ইং

 


Place your ads here!

Related Articles

ব্রিসবেনের আবহাওয়া নিয়ে বাংলাদেশের আগ্রহ!

শুক্রবার বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমিদের জানার আগ্রহের তালিকার পয়লা নম্বরে ছিল ব্রিসবেনের আবহাওয়া রিপোর্ট! সারাদিনই নানাজন ফোনে, ক্ষুদে বার্তায় অথবা ফেসবুকের ম্যাসেজবক্সের

Meet Geoff Lawton world renowned Permaculture consultant, designer and teacher

Meet Geoff Geoff Lawton is a world renowned Permaculture consultant, designer & teacher who developed sustainable projects in over 30

ACT Multicultural Award Recognises Outstanding Contributions to Create Canberra the Most Liveable City

On Friday 30 August 2019, the ACT Multicultural Minister Honorable Chris Steel announced the winner of the 2019 ACT Multicultural

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment