মেলবোর্নের চিঠি – ৫

মেলবোর্নের চিঠি – ৫

[মেলবোর্নের চিঠি]

একটা সময়ের পর বাংলাদেশের মানুষের দেশের বাইরে যাওয়া আর কোন বিশেষ ঘটনা না। দেশের বাইরে যেতে হয় অনেককেই। হতে পারে স্বল্প সময়ের নোটিশে বা লম্বা সময়ের অপেক্ষা শেষে।

তবে প্রথম দেশের বাইরে যাওয়ার গোটা ব্যাপারটার মাঝে কিছু থাকে, যা পরবর্তী যতবার যাওয়া হোক প্রথম বারের অম্ল মধুর স্মৃতির কিছু না কিছু এসেই যায় সামনে। থাকে কিছু উত্তেজনা, বাড়তি সাবধানতা এবং অজানা আশংকার মৃদু হৃদ স্পন্দনের মাঝেও প্রথম উড়তে পারার অন্যরকম এক সুখ।

দেশের বাইরে যেতে হয় মুলত পরিবারের কারো চিকিৎসা বাবদ, প্রথম কোন পারিবারিক বা বন্ধুদের নিয়ে আনন্দ সফর বা হানিমুনেই যান অনেকে প্রথমবার।

প্রথমবার কোন আত্নীয় পরিজনের সাথে ট্রিটমেন্ট পারপাসে যেতে হলে, সেই যাওয়াটা একদমই অন্যরকম হয়। অসুস্থ মানুষটির সাথে যে বা যাদের যেতে হয়, বুকের মাঝে তার সবটুকু দুঃশ্চিন্তা সাময়িক চাপা দিয়ে হলেও যথেষ্ট রকমের শারীরিক এবং মানসিক একটা প্রস্তুতি নিতে হয় বা নেয়াটা জরুরী হয়ে যায়।

কতোটা জটিল অসুখ নিয়ে চিকিৎসা পর্ব শুরু হয়, তা অনেক সময় অনুমান করার অবস্থায় থাকে অনেক সময় একদমই না। সময়কাল ৭ দিন বা ৭০ দিন যাই হোক না কেন সাথে যাওয়া মানুষের মাথা ঠাণ্ডা রেখেই কিছু প্রস্তুতি নেয়া উচিত।

অসুস্থ মানুষটির অসুখ এবং তাঁর বয়েস মাথায় নিয়েই লাগেজ গুছানোর কাজটি করা উচিত। ধরুন তাঁকে লম্বা সময় ধরে হসপিটালে থাকতে হবে, সেক্ষেত্রে আর যাই হোক অনেক বেশি ব্যবহারের কাপড় চোপর নেয়ার প্রশ্ন নেই আসলে। লম্বা একটা সময় হসপিটালের দেয়া সবকিছুই তাকে ব্যবহার করতে হচ্ছে। তারপরও, একটু সুস্থ হওয়ার পর তিনি পড়তে পারেন এমন খোলামেলা কিছু পোশাক খুবই আরাম দায়ক স্লিপার বা কেডস, যদি হাঁটার মতন অবস্থা হয়, যেন সেটা কাজে লাগে এবং শীত কাপড় নিতে ভুলবেননা।

কোন দেশে যাওয়া হচ্ছে  সেটা একটা বিবেচ্য বিষয়, পাশের দেশ ভারত হলে কিছু বিশেষ সুবিধা আছে। আবার থাইল্যান্ড সিঙ্গাপুর হলে অবশ্যই ব্যাবহারের জিনিস বেশি কিনতে হলে একটু সমস্যা হতেই পারে শুরুতে।

মনে সব সময় রাখবেন যিনি অসুস্থ, তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন অবশ্যই এই বিশ্বাস এবং আশা নিয়েই আপনি সাথে যাচ্ছেন। তাই তাঁর শারীরিক সুস্থতায় ডাক্তারদের যা করার তার সাথে আপনি যদি একটু এভাবে ভাবেন, বিষয়টা কিন্তু আরো সার্বিক ভালোর দিকে যেতেই সাহায্য করবে।

কেউ কেউ আছেন পড়ুয়া। সুস্থ অবস্থায় যা পড়তেন সেরকম ২/৪ টা বই বা ধর্মগ্রন্থ সাথে নিয়ে নিন। উনি নিজে পড়তে না পারলে সাথে থাকা আপনি উনার সুস্থ হয়ে উঠার দিনগুলোতে অল্প অল্প করে পড়ে শুনাতে পারেন। যদিও আজকাল ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসেও পড়ার কাজ সারেন, তারপরও সেটা একটা বই হাতে নিয়ে পড়ার মত আনন্দ দিতে পারে কই। কেউ কেউ টিভি দেখেন গান শুনেন, সাথে রাখতে পারেন আই প্যাড বা এমন ডিভাইসও। প্রিয় কিছু বের করে অল্প সময় হলেও দেখাতে পারেন সুস্থ হয়ে উঠছেন যিনি তাকে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে।

কারো কাছে এইসব কিছুই অসহ্য লাগতে পারে, তাকেও মন চাঙ্গা রাখার কাজটা সাথে থাকা মানুষদের বিশেষ ভাবে মাথায় রাখা উচিত সম্ভাব্য অন্য যেকোন উপায়ে।

যদি এই চিকিৎসা পর্ব জুনিয়র কারো জন্যে হয় তার জন্যেও আরো একটু বেশি আয়োজন করে সময় নিতেই হবে সাথে নেয়ার সুটকেসটি গুছাতে। একদমই প্রয়োজনীয় জামা জুতো অল্প কিছু তো নিতেই হবে, সাথে নিতে পারেন বাসায় যা নিয়ে সময় কাটায় তার মাঝে প্রিয় দুই চারটা খেলনা পাতিও যা বহন যোগ্য।

আজকাল বাংলাদেশ থেকে অনেকেই যাচ্ছেন বাইরে চিকিৎসার জন্যে। অসুস্থতা যার হোক যা ই হোক শুভ কামনা জানিয়েই আজকের এই প্রসঙ্গগুলো নিয়ে আসা।

তবে যে কথাটি বলতেই চাই, অসুস্থ মানুষটির সাথে যাচ্ছেন আপনি। আপনাকে কিন্তু পুরো সময়টিতেই একটিভ থাকতে হবে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে যতোটা পারা যায়।

আপনাকে দেখে বা আপনার আচরণের যেন কোন নেতিবাচক প্রভাব অসুস্থ মানুষটির উপর নুতন করে না পড়ে। আপনাকে মাথায় রাখতেই হবে, এই ঘোর লাগা অন্ধকার  সময় কেটে যাবে, সে সুস্থ হয়ে যাবে।

সাথে কতো লম্বা সময় আপনাকে থাকতে হবে সে বিবেচনায় আপনিও যাওয়ার আগে লাগেজটি সাথে নিন একটু পরিকল্পনা করে। পড়ার অল্প কিছু কাপড়ের সাথে আপনার সময় কাটানোর কিছুও  নিয়ে নিতে পারেন। আপনার মানসিক সুস্থতা বা স্থিরতাটাও দরকার এটা বিবেচনায় আনা দোষের কিছু নয়।

দেশের বাইরে যেয়ে শুরুতেই খুব জরুরী ছাড়া কোন কেনাকাটায় সময় বা টাকা ব্যয় করাটা এড়াতে পারলেই ভালো। বস্তুত সব পরিবারের সেই সামর্থ্যও থাকেনা।

তবে বেড়াতে যাওয়া মানেই প্রবল উত্তেজনাময় একটা আনন্দ ছক। আর প্রথম বইদেশে বেড়াতে যাওয়া পুরো সময়টা আনন্দে কাটাবেন এই পরিকল্পনা  নিলে সেটাও শুরু করতে হবে লাগেজ দিয়েই। এটা ঠিক ১/২ দুইটা বিদেশ সফর হয়ে গেলেই বিষয়গুলো অন্যরকম হয়ে যায়। যা যা সমস্যা মোকাবেলা তাই মাথার ডিস্কে ঢুকে থাকে এবং পরের বার আর যাই হোক সেই ভুলগুলো হয়না।

পরিবার বা বন্ধু যাদের নিয়েই যাওয়া হোক, পুরো টিমের একটা সম্মিলিত প্রস্তুতি সময়গুলো সবারই কাংখিত এবং স্মরণীয় করে রাখতে পারে।

খুব যে কঠিন কিছু তা কিন্তু না, পাহাড় বা সমুদ্র কেমন জায়গায় থাকা হবে বা যদি এমন সব মিলেমিশে হয় সে জায়গা,  জামা কাপড় জুতো ওভাবেই নিন। বেড়াতে গেলে ফ্যাশনের পাশাপাশি বেশি গুরত্ব দিতে হয় আরামকে। যে জুতো পড়ে অনায়াসে অনেক হাঁটতে পারবেন তেমনটিই সবার আগে লাগেজবন্দি করুন।

পারিবারিক ট্যুর হলে কাউকে না  কাউকে দায়িত্ব নিয়ে সবার এইসব লক্ষ্য করলেই ভালো। যাওয়ার আগেই কোথায় যাচ্ছেন সেই জায়গা বিষয়ে পারস্পরিক জানা বা ধারণাগুলো শেয়ার করুন, কাজে লাগবে।

বিশেষ করে যে ঋতুতে যেখানেই যান শীত বস্ত্র নেয়াই উচিত। আর বাচ্চাদের এক গাদা কাপড় না নিয়ে একটু প্ল্যান করেই নিন।

বেড়াতে যাওয়ার সাথে যদি কেনাকাটার প্ল্যান থাকে সেক্ষেত্রে লাগেজ ওজনের বিষয়টা মাথায় রেখে জিনিস লাগেজ বন্দি করুন।  প্রথম বেড়াতে যাওয়ার সময়টাতেই লাগেজ ওজন নিয়ে এয়ারপোর্টে ভোগান্তির কোন মানে হয়না, নিঃসন্দেহে এটা কোন সুখকর স্মৃতি হবেনা।

মাথা ধরা, ছোট খাট কাটা ছেঁড়া, এসিডিটি প্রবলেম থাকলে বা অন্যকোন মেডিসিন যাদের দরকার হয় সম্ভব হলে প্রেসক্রিপশন সহ সবার আগে গুছিয়ে নিন। ৫/৭ দিনের বেশি ট্রিপ হলে শেইভিং কিটস এবং নেইল কিটসও সাথে নিয়ে নিন। এবং অবশ্যই হ্যান্ড লাগেজে না কিন্তু, এয়ারপোর্ট স্কেনিং এ ফেলে দেয়া হবে তা।

তবে যে জার্নি ই হোক না কেন, সবার আগে যা গুছিয়ে নেয়া উচিত নিজেদের পাসপোর্ট, ভিসা, ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স যদি থাকে। এখন বেশির ভাগ এয়ারপোর্ট ডিজিটাল ভিসাই চেক করে। স্মার্ট ফোনে সবকিছুর কপি তাই আগেই গুছিয়ে নিন ঠাণ্ডা মাথায়।

স্টুডেন্ট ভিসা, জব বা ইমিগ্রেশন নিয়ে দেশ ত্যাগ করছেন যারা তাদের জন্যে দেশ ছাড়ার আগের প্রস্তুতি এইসব থেকে অনেকটাই আলাদা।

যে দেশে যাচ্ছেন খুব ভালো হয় ২/৩ বছরের বেশি সময় ধরে আছেন এমন কোন ভাই বোন বন্ধুর পরামর্শ নেয়া, কি নেবেন, কি নেবেন না। একটা দেশে ২/১ বছর না থাকলে অনেক বাস্তবতাই পুরোপুরি জানা হয়ে উঠেনা, বিশেষ করে আবহাওয়া তো নয়ই।

নিজের একটু অভিজ্ঞতায় বলি, অস্ট্রেলিয়া আসার আগে কাছের দুই একজনের পরামর্শ নিয়েছি। কিন্তু ফ্লাই করার আগে শপিং করেছি নিজেদের মতন করেই কিছু উপদেশ না মেনেই। ফলাফল এই দেশে এসে অনেক  জিনিস বছর দুই পর ফেলে দিতে হয়েছে।

পড়তে আসছে তাদের জন্যে জামা কাপড় জুতো কাজে লাগলেও, অন্য যে বা যারা কাজ করতে আসছে এসে সে কি কাজ পাচ্ছে তা খুব কম জনেরই জানা থাকে মানে জানা যায়। তাই সাথে আনা জামা কাপড় অনেক বেশিই ইউজলেস হয়। কসমেটিকস আনা একদমই দরকার নেই। কেউ কেউ মশলাপাতি, হাঁড়িপাতিল নিয়ে আসে, এটাও আমার কাছে দরকারি মনে হয়নি, দুইএকটা ছাড়া, তবে প্রথম বার একদমই না।

সবচেয়ে বড় বিষয় যে দেশে যাওয়া হচ্ছে সেখানকার এয়ারপোর্ট একটা ফ্যাক্ট। প্রতিটা এয়ারপোর্টেই নিষেধাজ্ঞা থাকে, বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া একেকটা স্টেটে একেক রকম নিয়ম। জানা না থাকলে প্রথমেই এসে হয়রানীর মুখোমুখি হতে পারেন।

এয়ারপোর্ট প্রসঙ্গ এসে গেল, এয়ারপোর্ট অভিজ্ঞতা এবং অন্যান্য নিয়ে বেঁচে থাকলে কথা হচ্ছে আগামী চিঠিতে, সবার জন্যে শুভকামনা আপনার এইটুকুন সময়ের জন্যে!!!

হ্যাপি ট্রিপ, যে যেখানেই যাচ্ছেন!!!

নাদিরা সুলতানা নদী
মেলবোর্ন অস্ট্রেলিয়া

[মেলবোর্নের চিঠি]


Tags assigned to this article:
মেলবোর্নের চিঠি

Place your ads here!

Related Articles

Law of Maritime Boundary in the Bay of Bengal

Under the UN Convention of the Law of the Sea of 1982 (UNCLOS), a coastal state can claim jurisdiction of

Article on Bangla Language by Pro Nazrul Islam Habibi

“Bangla bhasar bishayon shomvob (1)” by Pro Nazrul Islam Habibi has written in Bangla. Please read the attached pdf file

তৃতীয় সাফল্য

ফজলুল বারী, ক্রাইস্টচার্চ থেকে: মুস্তাফিজ, তাসকিনের পর সাফল্য পেলেন সাকিব। তার এলবিডব্লিউর শিকার হন ব্রুম। ২২ রান করেছিলেন এই কিউই

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment