বাংলাদেশে বাল্য বিবাহ আইন

বাংলাদেশে বাল্য বিবাহ আইন

ফজলুল বারী: বাল্য বিবাহ আইন জায়েজ করতে কিছু জ্ঞানপাপী নানা মিডিয়ায় নানান অসত্য তথ্য দিয়ে যাচ্ছেন! বিদেশেও নাকি এমন আইন আছে ইত্যাদি! আসল তথ্য হচ্ছে বাংলাদেশে যেমন বয়স ১৮ হবার আগে একজন ভোটার হতে পারেনা বিদেশেও তাই। এরমানে ১৮ বয়সটাকেই এডাল্ট তথা প্রাপ্ত বয়স্ক হবার মানদন্ড হিসাবে ধরা হয়। আপনি ১৮ বছর বয়স হবার আগে ভোট দিতে পারবেননা, কিন্তু আপনি সেক্স করতে পারবেন এটা কী ধরনের মতলবী- সুবিধাবাদী যুক্তি? এক টেলিভিশনের আলোচনা অনুষ্ঠানে শুনছিলাম বাংলাদেশের অনেক পাত্র নাকি অপ্রাপ্তা বয়স্কা তথা অল্পবয়সী মেয়েদের বিয়ে করতে আগ্রহী হয়। এতে নাকি মেয়েটিকে তার নিয়ন্ত্রনে রাখতে ইচ্ছেমতো ব্যবহারে সুবিধা হয়! এই যদি হয় নিয়ত এটিতো এক ধরনের নির্যাতন। রাষ্ট্র কেন এসব নির্যাতকদের পক্ষ নেবে?

অস্ট্রেলিয়ার আইনে ১৮ বছরের নিচে কোন ছেলে বা মেয়ের সঙ্গে সেক্স করাটা দন্ডনীয় অপরাধ। বয়স ১৮ না হলে কোন ছেলে বা মেয়ে এদেশে মদ-সিগারেট কিনতে পারেনা। তাদের নাইট ক্লাবে-বারে ঢুকতে দেয়া হয়না। বাবা-মায়ের সঙ্গে তারা এসব লাইসেন্সড ভেন্যুর লাঞ্চ বা ডিনার পার্টিতে যায় বা যেতে পারে। ছোটবেলা থেকে তাকে এমনভাবে গড়া হয় মদ-সিগারেট এসব বড়দের খাবার। সে যেদিন প্রাপ্ত বয়স্ক হবে তখন সে এসব খাবে। এখন নয়।

এদেশের নাইট ক্লাব-বারের প্রবেশ পথে পরিচয়পত্র পরীক্ষা করা হয়। সেই পরিচয়পত্রে জন্ম তারিখ উল্লেখ করা থাকে। কাজে একজনকে প্রাপ্ত বয়স্ক নিশ্চিত হবার পরই তাকে বারে-নাইট ক্লাবে ঢুকতে দেয়া হয়। মদ-সিগারেটের দোকানে উল্লেখ করা থাকে যদি কাউকে দেখতে ২৫ বছরের কম মনে হয় তাহলে তার পরিপত্র পত্র পরীক্ষা করা হবে। কেউ পরিচয় পত্র দেখাতে ব্যর্থ হলে তার কাছে মদ-সিগারেট বিক্রি করা হবেনা। উল্লেখ্য ড্রাইভিং লাইসেন্সই অস্ট্রেলিয়ার মূল পরিচয় পত্র। অপ্রাপ্ত বয়স্ক কারো কাছে মদ-সিগারেট বিক্রির প্রমান হলে অস্ট্রেলিয়ায় সংশ্লিষ্ট দোকনির লক্ষাধিক ডলার জরিমানা হয়। ব্যবসার লাইসেন্সও বাতিল হয়ে যেতে পারে। এরজন্যে এমন ঝুঁকি এদেশে কেউ নেয় না।

বাংলাদেশে অনেকে তাদের লেখায়-আলোচনায় এমন ধারনা দেবার চেষ্টা করেন বিদেশে পথেঘাটে মেয়েরা ধর্ষনের শিকার হন! এরা আসলে এসব দেশের সেক্স স্ট্রাকচারটাই জানেননা। বাংলাদেশে যেখন একটি ছেলেমেয়ের মধ্যে প্রেম হয় তখন তারা পরিবার থেকে লুকিয়ে দেখা-সাক্ষাৎ করে। আর এসব দেশে ছেলে বা মেয়ে একজন আরেকজনের বাড়িতে যায়। একজন আরেকজনের সঙ্গে থাকে। এটা সমাজ-পরিবার অস্বাভাবিক চোখে দেখেনা। কারন তারা এডাল্ট। প্রাপ্তবয়স্ক। আর বাবা-মা ভাবেন তারাও যৌবনে এমনই দিন কাটিয়েছেন। এর কারনে এখানকার সেক্স স্ট্রাকচারটি হচ্ছে একজন ছেলে জানে সেক্স হবে তার গার্ল ফ্রেন্ডের সঙ্গে। মেয়েটি জানে সেক্স হবে তার বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে। এর বাইরে তাই এসব দেশে একজন আরেকজনের দিকে তাকায়ইনা। এর বাইরে যে এদেশে যৌন হয়রানি বা ধর্ষনের ঘটনা ঘটেনা তা নয়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় এসব ঘটনায় জড়িত দায়ী ব্যক্তিরা নানান তৃতীয় বিশ্বের দেশ থেকে আসা লোকজন! ভিন্ন সমাজ থেকে এসে ছেলেমেয়েদের এমন খোলামেলা আচরন-চলাফেরায় তাদের মাথা বিগড়ে গিয়েছিল! আরেক কারনে অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোর যৌন বিষয়ক অপরাধ নিয়ন্ত্রনে থাকার আরেক কারন এসব দেশে সেক্স ইন্ডাস্ট্রি বৈধ।

নানা কারনে অস্ট্রেলিয়ার বেশিরভাগ ছেলেমেয়ে বা প্রাপ্ত বয়স্ক নারী-পুরুষ বিয়ে করতে সন্তান নিতে চায় না। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক এদেশের আইন সমাজ যেহেতু অনুমোদন করে সে জন্যে ওই অবস্থাতেই অনেকে বাচ্চা নেয়। আবার কোন কারনে যদি কোন পিতা বাচ্চার পিতৃ্ত্ব গ্রহনে অস্বীকৃতি জানায় তাহলে রাষ্ট্র এই সিঙ্গেল মায়ের পাশে এসে দাঁড়ায়। এমন শিশুর জন্ম বড় হয়ে ওঠায় যাতে কোন নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি না হয় সে কারনে এই সিঙ্গেল মা’কে নানান আর্থিক ও চিকিৎসা সুবিধা দেয়া হয়। উল্লেখ্য অস্ট্রেলিয়ায় যে কোন শিশু অথবা বৃদ্ধের জীবন যাপনের যাবতীয় খরচ, স্বাস্থ্য-শিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করে রাষ্ট্র। এরকারনে এমন শিশুদের জন্ম-ভরনপোষন নিয়ে কোন সমস্যার সৃষ্টি হয়না।

অস্ট্রেলিয়ার বিরোধী দল লেবার পার্টি। এদেশে সদস্য-সমর্থকদের ব্যালটে দলের নেতা নির্বাচন হয়। লেবার পার্টির গত নির্বাচন অন্যতম প্রার্থী এন্টনী আলবানি তার প্রচারপত্রে নিজের পরিচয় উল্লেখ করে লিখেছিলেন তিনি একজন সিঙ্গেল মায়ের সন্তান। তাই সিঙ্গেল মায়েদের সংগ্রাম তিনি জানেন। এমন সব মুক্ত সমাজ-চিন্তার দেশের নানাকিছু জেনে না জেনে যারা ভুল প্রচার করেন-করান তারাই প্রকৃত জ্ঞানপাপী।

বাংলাদেশের বাল্য বিবাহ আইনটি বাংলাদেশের ভবিষ্যত মূল্যায়নের জন্যে কালো একটি অধ্যায় হয়ে থাকবে।


Place your ads here!

Related Articles

পৈতৃক পেশার শ্রদ্ধাবোধেই আজ বিশ্বনন্দিত মিস মারঠা কিং

নতুন প্রজন্মের শিশু কিশোরদের ডিজিটালমুখী বিজ্ঞান প্রযুক্তির উত্তালের আশীর্বাদ মোবাইল ফোন, কম্পিউটার গেইম নির্ভর ব্যস্ততায় ছুটাছুটি করেই সময় কেটে যায়।

ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুলে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ২০১৮ অনুষ্ঠিত

কাজী আশফাক রহমান: ক্রীড়া সৃষ্টি করে বন্ধুত্ব, ক্রীড়া উৎসাহিত করে সহযোগিতা, ক্রীড়া নিশ্চিত করে সহমর্মিতা। এই ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রত্যয়ে

21st February: Are we achieving the goal of the language martyrs?

21st February is a day of national mourning and reflection. It is the Language Martyr’s Day. On this day in

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment