প্রিয় মানুষের শহর – ১০

এই বাড়ন্ত জোয়ান বয়সে একবার এক প্রিয় তবলা শিল্পী কে বললাম – দাদা আমি তবলা শিখতে চাই। তিনি বললেন তাল টাল না বুজলতে তো তবলা শিখতে পারবেন না। কি করি – কি ভাবে তাল বুঝি, তাল শিখি ! শেষে চেয়ার টেবিল তালা বাটি বাজানো শুরু করলাম। কিছু তে কিছু হলো বলে মনে হয় না। আবার গেলাম – বললাম – দাদা, এখন তো ঢোল পিঠাইতে মন চায়। তিনি বললেন আপনারে দিয়া হবে না – আপনার বড় ছেলেকে পাঠিয়ে দিয়েন। শিখাবো – টাকা পয়সা লাগবে না।
বয়স বাড়লে ক্ষতি নাই, তবে কেউ যদি টের পায় যে, আপনি বয়স্ক, তা হলে দুঃখ আছে আপনার কপালে। আমার মতো – কোন সাদ আহ্লাদ থাকতে পারবে না – এই বয়সে। কিছু চাইলেই, বললেই, ছেলে মেয়ের ট্যাগ লাগবে আপনার পিছনে। আরে বাবা, আমার ছেলে মেয়েরা যা করে – ওদের কে কেউ কি বলে – তুমি না – তোমার বাবা’কে পাঠাও – তাকে শিখাবো !
হঠাৎ করে একজন ড্রামার কে পেয়ে গেলাম। খাতির করা শুরু করলাম। কইলাম, ভাইজান ঐটা (ড্রাম সেট টা দেখিয়ে) পিঠানো শিখুম। ভাইজান তো কয়েকবার না শুনার ভান করে রইলো। আমিও নাছোড় বান্দা। শেষে বললো – no worries – বুঝলাম না ; no worries শিখাবে ? না, no worries শিখাবে না? তবুও যোগাযোগ রেখে চলেছি – দেখি – কোন দিকের পানি, কোন দিকে গড়ায়। বলাতো যায় না।
কোথায় যেন পড়েছিলাম – যদি পড়ে যাও – ওখান থেকেও ভালো কিছু নিয়ে উঠো। দুষ্ট মন বুজতে চায় না ওসব। ভাবি, যে ময়লায় পড়ে যায় – ওখান থেকে, সে কি ভালো নিয়ে উঠবে? দেখুন, ময়লার মান নিয়ে, এখানে আমি কথা বলতে পারবো না। ওকে, আমার কথায় কান না দেয়াই ভালো।
ঝাড় ফুঁক শিখবো। এলাকার নাম করা – কবিরাজের কাছে গেলাম। উনি মাঝে মাঝে জিনের আসর বসান। জীন’দের নিয়ে আসেন। সবার মাঝখানে। কথাও বলেন জীন’দের সাথে। টেরা কবিরাজ। লক্ষী টেরা যাকে বলে। প্রতিদিন চা নাস্তা খাওয়াচ্ছি গুরুজীকে। পাত্তা দিচ্ছেন না। দিবেন বলেও মনে হয় না। কি করি? শেষে গুরুজী কে বললাম – গুরুজী, আমি আপনার শিষ্য হবো। উনি বললেন – আপনি (আমি যদিও ওনার অনেক ছোট্ট) শিক্ষিত মানুষ – আপনার ওসব শিখা লাগবে না। আমি বললাম গুরুজী, আমি এমনিতেই পরীক্ষা টোরীক্ষা নিয়মিত দেই না, আপনি বললে – লেখা পড়া পুরোপুরিই ছেড়ে দিবো। তবুও আমাকে শিষ্য করে নিন।
না, গুরুজী আমাকে শিখাননি কিছুই। বাড়ন্ত – আমাকে বলেছে – সব ভুয়া। এগুলি বিশ্বাস যেন না করি। কবিরাজি ঔষধ ছাড়া বাকি সব কিছুই নাকি ভুয়া! মানে – শিষ্য ওনার পছন্দ হয়নি। তবে, হা, তিনি আমাকে একটা তজবী শিখিয়ে দিয়েছিলেন – ১১ বার পড়তে হবে – যে কোনো কাজ শুরু করার আগে। তজবী টা পড়ি – এখনো পড়ি।
কখনো, কারো কাছে গান শিখিনি। আসলে বলতে হবে শিখায়নি কেউ। একবার হাইস্কুল এ, সম্ভবত ক্লাস ৬ এ, এক দাদাকে বললাম – দাদা আমাকে গান শিখাবেন? সাথে আমার বন্ধু ছিল – মেয়েলি কণ্ঠ – বললো – তুমি না, তোমার বন্ধুর গলা ভালো – ওকে শিখাবো। ও শ্রীমতি লতা’র গান ভালো গায়। আমি তখন শ্রীমান মান্না দে’র প্রেম বিরহের গান গলা ফাটিয়ে গাইছি। আমার ধারণা – গানের চয়েস দেখেই সবাই ভাবতো – এই ছেলে গেছে। দু’এক জন বন্ধু ছাড়া কেউই উৎসাহ দিতো না। এ কারণে দাদাও আমাকে গান শিখাতে রাজি হননি।
সে বার স্কুলের বার্ষিক সাংকৃতিক প্রতিযোগিতায় গানের সকল শাখায় প্রথম হলাম। এতো প্রাইস পেয়েছিলাম যে – একা নিয়ে যেতে পারিনি। ছোট আপা বললো – তুই তো – দেখতে, বয়সের তুলনায় অনেক ছোট। স্যার’রা আদর করে, মায়া করে তোকে প্রথম করেছে। তোর চেয়েও অনেকে – অনেক ভালো গেয়েছে। আমার, গলার অবমূল্যায়ন আর কাকে বলে! আপা আমার অপূর্ব সুরের গলার কদর বুজলো নাহ।
একটু ইঁচড়ে পাকা ছিলাম। মেট্রিক পরীক্ষা দিয়েই প্রেমে পড়ে গেলাম। গানের চাইতেও – বিরহকে বেশি ভালো বাসলাম। পরিবারের অত্যাচারে প্রাণ বাঁচানোই দায় হয়ে পড়লো তখন – গান তো দূর কি বাত।
একজন কে বললাম – ভাবছি গানের শিল্পী হবো। গাইবো – গলা ছেড়ে গাইবো। ভাইটি বললেন – গান লেখেন, ওখান পর্যন্ত থাকেন। গান গাইতে আইসেন না। ভাগ্গিশ বলে নাই – আপনার ছেলে বা মেয়েরে বলেন গাইতে – আপনারে দিয়া হবে নাহ।
[“প্রিয় মানুষের শহর” সব গুলোই কাহিনী। চরিত্রগুলোও কাল্পনিক। সত্য মিথ্যা জানতে চেয়ে বিব্রত করবেন না। গল্প – গল্পই। কারো সাথে মিলে যাবার কোন সম্ভবনা নেই। কাকতালীয় হবার সম্ভবনাও ক্ষীন।]
Related Articles
যদি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হও – মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের যুবক হও
ফজলুল বারী: প্রিয় প্রজন্ম, তোমাদের অনেকে আমার কাছে একটা প্রশ্ন প্রায় রাখো। তাহলো দেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় চলছে কিনা। সুশাসন, গনতন্ত্র
Indian Election 2014: Possible Impact on Bangladesh if BJP wins
On 5th March, the Election Commission has decided to hold the 16th parliamentary election of the Lower House (Lok Sabha)
Sujata Mehta’s visit to Dhaka
Ms. Sujata Mehta, Indian Ministry of External Affairs Secretary (Multilateral and Economic Relations) will visit Bangladesh from 5 to 7
“Kemon Kore gain koro he guni, obak hoye shuni kebol shuni”