দেশে ফেরার আগে আগে সবাই চায় একটি জয়

দেশে ফেরার আগে আগে সবাই চায় একটি জয়

ফজলুল বারী, বেসিন রিজার্ভ ক্রিকেট গ্রাউন্ড, ওয়েলিংটন থেকে

ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভ ক্রিকেট গ্রাউন্ডের প্রেসবক্সে বসে বুধবার যখন এ লেখাটা শুরু করেছি তখন স্থানীয় সময় বিকেল পৌনে পাঁচটা। বৃহস্পতিবার এ মাঠে শুরু হবে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট। আকাশ এখন মেঘলা । লিখতে লিখতে রোদও চলে এসেছিলো। আবার কিছুক্ষনের মধ্যে রোদ হাওয়া! এই হচ্ছে আবহাওয়া ওয়েলিংটনের। পূর্বাভাস দেখাচ্ছে বুধবার বৃষ্টির সম্ভাবনা ৫০ ভাগ। আর এখন বাতাস বইছে ঘন্টায় ৪৮ কিঃমিঃ গতিতে। বৃহস্পতিবার খেলা শুরুর দিন বৃষ্টির সম্ভাবনা ৯০ ভাগ। বাতাসের গতিবেগ থাকবে ঘন্টায় ৫৫ কিঃমিঃ! এসব নিয়ে অবশ্য এখানে মাথা ঘামায় খুব কম লোকজন। এই বৃষ্টি আসবে যাবে সাগর যখন পাশেই তখন বাতাস বইবে এ নিয়েইতো ওয়েলিংটন।

আমাদের সামনে সবুজ গালিচার মাঠ। এ মাঠেই শুয়ে থাকে ওয়েলিংটনের আলোচিত ঘাসের ঘাতক উইকেট! তবে বুধবার বিকেলের দিকে কিছুটা ছেটে ফেলা হয়েছে। এরপর উইকেটের চারপাশের ঘাসের গালিচায় পানি ফেলে এরপর চটের চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে উইকেট। ক্রাইস্টচার্চের এমন উইকেট দেখে মাশরাফি বিন মুর্তজা মজা করে বলেছিলেন প্রথম দিন উইকেট দেখেছিলাম সবুজ। পরেরদিন বাদামি। এরপরের দিন হয়তো সাদা। উইকেট যে রং-প্রকারের হোকনা কেন এরা তা বানায় কিউই পেসারদের পক্ষে। আমরা যেমন ঢাকা-চিটাগাং’এ বানাই স্পিনারদের উইকেট। এরা কিন্তু উইকেট ভীতিটা বাংলাদেশ দলের মনের মধ্যে ঢোকাতে পেরেছে। কিন্তু ক্রাইস্টচার্চ, নেলসন, নেপিয়ার, মাউন্ট মাঙ্গানুইতে হারার ব্যাটসম্যানরাই বলেছেন উইকেটগুলো ব্যাটিং-বান্ধব ছিলো।

বুধবার  দুপুরে বেসিন রিজার্ভ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল অনুশীলনের জন্যে পৌঁছতেই বাস থেকে নেমে উইকেট দেখতে চলে গেলেন বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির প্রধান আকরাম খান, প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু। তাদের পিছু পিছু উইকেট দেখতে মাঠে নামেন প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরু সিংহে, বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালস। সবার যেন মনে একটাই কথা। ‘তোমাদের দেশে যখন এসেছি ঘাস থাকুক আর যাই থাকুকনা আমরা খেলবোই, আগে দেখি আমাদের মাসুম বাচ্চাগুলোকে বধ করতে তোমরা কী উইকেট বানিয়েছো!’ উইকেটের ঘাস আর বাতাস এই মাঠের দুই ভিলেনের নাম। ওয়েলিংটনে যারা খেলতে আসেন তারা এখানকার মনুষ্য সৃষ্ট সবুজ ঘাসের উইকেটের কথা জেনেই আসেন। কিন্তু বাতাসের ওপরতো কারো হাত নেই! কিন্তু এসবের পরও এই মাঠের কিছু মাজেজা আছে! ঘাসের উইকেটে এরা বিদেশি দলগুলোকে যত ভয় দেখাক না কেনো এখানে মাঠে বাউন্স-সুইং এসব থাকে টেস্টের প্রথম দিনেই। দ্বিতীয় দিন থেকে এর উইকেট ব্যাটিং বান্ধব হয়ে যায়। এরজন্যে এখানে যে টসে জেতে সে চোখ বন্ধ করে বল নিতে চায় আগে। কিউইরাতো বল হাতে প্রথম দিনেই অলআউট করে দেয় প্রতিপক্ষকে। এরপর শুরু করে রান বন্যা। এ মাঠেই তিনশ রান করেছিলেন কিউই ব্যাটসম্যান ম্যাককুলাম।

বেসিন রিজার্ভের মাঠে বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালস গত দু’দিন ধরে তার সাকরেদদের উইকেট কিপারের পিছনের গালি এলাকাটায় ক্যাচ ধরার তালিম দিচ্ছেন। মাঠের প্রেসবক্স, গ্যালারি লাগোয়া এলাকাটায় শুরু হয়েছিল এই তালিমদান। কিন্তু বাতাসের দাপটে কিছুক্ষনের মধ্য ওস্তাদ-সাগরেদ সবাই চলে যান উল্টো পাশে। দল কেমন হবে প্রথম টেস্টের? যদ্দুর শোনা গেছে এই মাঠে ৫ উইকেট পেলেও খরুচে বোলার বিবেচনায় রুবেলকে প্রথম টেস্ট দলে না রাখার চিন্তা আছে! তাসকিনের অভিষেক হচ্ছে এটা নিশ্চিত বলা যায়। রুবেল না থাকলে পেস বোলারদের মধ্যে তাসকিনের সঙ্গে থাকবেন কামরুল ইসলাম রাব্বি, শুভাশীষ রায়।

ব্যাটসম্যান বাড়াতে সৌম্য সরকার থাকছেন বোলার হিসাবেও। স্পিন এটাকের জন্যে দলের সাকিবের সঙ্গে বিবেচনা পাচ্ছে মেহেদি হাসান মিরাজের নাম। পরিস্থিতি বুঝে দলে বল করার যোগ্যতা রাখেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ আর সাব্বির রহমান। কিন্তু পেস এটাকের দেশে ডেব্যুটেন্ট তাসকিন, শুভাশীষ রায় আর এক টেস্ট অভিজ্ঞতার কামরুল ইসলাম রাব্বিকে নিয়ে খেলবে শক্তিশালী কিউইদের বিরুদ্ধে? সাহস আছে বাংলাদেশ দলের নির্বাচকদের। যেখানে প্রতিপক্ষের ট্রেন্ট বোল্ট আর টিম সাউদির খেলার অভিজ্ঞতা ১০১ টেস্ট। ক্রিকেট অপারেন্সের চেয়ারম্যান আকরাম খান অবশ্য বলেছেন, এরা খেলতে খেলতে অভিজ্ঞ হবে। আর তাসকিন বলেছেন, কিউই বোলারদেরও একদিন অভিষেক হয়েছিল।

কিন্তু এসব গবেষনার বাইরে বাংলাদেশের টার্গেটসমূহ ফুটে এসেছে ক্যাপ্টেন মুশফিকুর রহিমের মুখের ভাষায়। ক্যাপ্টেন বলেছেন বল-ব্যাট যাই পাইনা কেনো আমাদের প্রথম টার্গেট থাকবে শুরুটা, বিশেষ করে প্রথম সেশনটা ভালো করা আর লম্বা সময় উইকেটে থাকা। সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়ে নাকানিচুবানি খাওয়া কিউই দল দেশের মাটিতে বাংলাদেশ দলকে পেয়ে যেন করে ফেলেছে ফর্মে ফেরার ‘মিশন সাকসেসফুল’! ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি মিলে পরপর ছয় ম্যাচ জেতা ব্ল্যাক ক্যাপস দল যেন উড়ছে। আর সব হারিয়ে আপাতত শান্তনা পুরষ্কারের সন্ধানে বাংলাদেশ। টেস্টে এ স্বপ্নটা দুরুহ। কিন্তু চেষ্টাতো চলবেই। অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম, ডেবুটেন্ট তাসকিন, শুভাশীষ, এক টেস্ট অভিজ্ঞতার কামরুল ইসলাম রাব্বি, ব্যাটসম্যানরা সিরিয়াস থাকবেননা এটা কেউ বলবেননা। দেশে ফেরার আগে আগে সবাই চায় একটি জয়। ক্রাইস্ট চার্চ, নেলসন, নেপিয়ার, মাউন্ট মাঙ্গানুই থেকে শুন্যহাতে বিদায় হওয়া টিম বাংলাদেশ ওয়েলিংটন বিজয় করে ফেলবে এটা এখন আর কেউ ভাবেননা। যদি করে এভাবে স্বপ্ন দেখার লোকের অভাব নেই।


Place your ads here!

Related Articles

কাহিনী সামান্য ২

আমার বন্ধু রোকেয়া ‘‘not at all intelligent’’ আমার বন্ধু বেগম রোকেয়া নিবিষ্ট পড়ুয়া। ফলে পরীক্ষার ফলাফল বরাবর ভাল। ডাক্তার হয়েও

Does Begum Khaleda Zia step out of anti-India posture?

Bangladesh people have to grasp geo-political realities of the country. One can choose friends but not neighbours because geography dictates

ইশতেহারে ডক্টরকামালের ধাপ্পাবাজি

ফজলুল বারী ইশতেহারেও ধাপ্পাবাজি করলেন ডক্টর কামাল! তারমতো নিজস্ব লোকবলহীন রাজনৈতিক ডিগবাজি খাওয়া কয়েক ব্যক্তির যুদ্ধাপরাধী দলের সঙ্গে ধানের শীষ

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment