ক্রিকেট ভক্ত

ক্রিকেট ভক্ত

ফজলুল বারী, নেপিয়ার থেকে
আমার এক বন্ধু লিখেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেট কী এখনো হোয়াইটওয়াশের পর্যায়ে আছে? উত্তরটি বাংলাদেশের কন্ডিশনে না, বিদেশের কন্ডিশনে হ্যাঁ। বিশেষ করে নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে। এই রোদ এই বৃষ্টি এই বাতাস ক্ষনেক্ষনে আবহাওয়ার পরিবর্তনের জন্যে নিউজিল্যান্ডের উইকেটের চেহারাও ক্ষনেক্ষনে বদলায়। তাই ক্রিকেটারদেরও ক্ষনেক্ষনে পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে প্রতিটি বল খেলতে হয়। কোন একটি সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেছেনতো আউট। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের জন্যে আরও সমস্যার হলো তারা বড় দলগুলোর মতো প্রতি বছর অত বিদেশ ট্যুর পাননা। যেমন নিউজিল্যান্ডে এই ট্যুরটি হয়েছে ৫-৬ বছর পর।

বিদেশ ট্যুরে বাংলাদেশ দলের এখনও সামর্থ্যের অভাবের কথা লিখায় একজন রেগেমেগে লিখেছেন, তাহলে অত টাকা খরচ করে বিদেশে যাবার দরকার কি। দল দেশেই খেলুক। এমনিতে বিদেশ ট্যুর পাওয়া যায় কম এরওপর রেখেমেগে বিদেশ যাওয়া বন্ধ করে দিলে লাভ হবে কার? সুযোগ যত পাওয়া যাবে তত বেশি বেশি বিদেশ গিয়েতো খেলার অভ্যাস গড়তে হবে। আর দলতো আইসিসির সদস্য দেশ। আইসিসির সিদ্ধান্ত মেনে এ দলকে চলতে হবে। কেউ বিষয়টিকে ব্যক্তিগতভাবে নেবেন না। এমনিতে যারা এসব নিয়ে বেশি উষ্মা প্রকাশ করেন তাদের হয়তো অনেকে জানেন অথবা অনেকে জানেননা তাহলো বিদেশ মানে কী? দেশে আমাদের অনেককে অনেক পন্ডিত-প্রতাপশালী মনে হয়। কিন্তু বেশিরভাগ লোকের ক্ষেত্রে বিদেশের মাটিতে পা দিয়ে নিজের ওজন বুঝতে যায়। আর আমাদের ক্রিকেটারদের বেশিরভাগতো বাচ্চা ছেলে। ভারত-ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার বাইরে মুস্তাফিজের চতুর্থ দেশ নিউজিল্যান্ড। আর চোটের কারনে অস্ট্রেলিয়ায়তো কোন টুর্নামেন্ট খেলা হয়নি মুস্তাফিজের।

বিদেশের বাংলাদেশের মতো দলের কম সুযোগ পাবার পিছনে ক্রিকেট বানিজ্যের মতো বাস্তব কিছু দিক আছে। দ্বিপাক্ষিক সফরে অতিথি দলের নানা খরচ জোগায় আয়োজক দেশ। এসব খরচাপাতির জন্য তারা স্পন্সর খোঁজে। বাংলাদেশ টেস্ট মর্যাদা পাবার আজ ষোল বছর। ওই মর্যাদা পাবার পরপর ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে টেস্ট খেলতে এসেছিল। আর বাংলাদেশ ভারতে ফিরতি সফরে যাচ্ছে ষোল বছর পর! কারন স্পন্সর। ক্রিকেট বানিজ্যের কারনে ভারতীয় স্পন্সররা বাংলাদেশের মতো দলের সফর আয়োজনের পিছনে টাকা খরচ করতে রাজি হয়না। মাঠের দর্শকসংখ্যা এক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সীমাবদ্ধতা। কতো আর বাংলাদেশি দর্শক খেলা দেখতে ভারত যাবে? আর খেলাতো কলকাতায় না, হবে হায়দরাবাদে। নিউজিল্যান্ডতো দূর অস্ত।

অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মতো দেশগুলোয় বড় ক্রিকেট ভেন্যুগুলোয় বাংলাদেশের খেলার আয়োজন করা হয়না। কারন বড় ভেন্যুগুলো ব্যয়বহুল। এগুলো ভরতে সত্তুর আশি হাজার বা এরও বেশি দর্শক দরকার। এতো বাংলাদেশিও এসব দেশে নেই। গত বিশ্বকাপে মেলবোর্ন-এ্যাডিলেইডের মাঠের গ্যালারিতে বাংলাদেশের সাকুল্যের দর্শক সমগ্রের সংখ্যা সবাই দেখেছেন। বাংলাদেশ দলের অস্ট্রেলিয়া সফরের সময় দারউনের মতো ছোট শহরগুলোয় খেলার আয়োজন করা নয়। নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে বড় ভেন্যু অকল্যান্ডে। সেখানে বাংলাদেশের খেলা রাখা হয়নি। কারন ২০০৭ সালে বাংলাদেশের খেলা আয়োজন করতে গিয়ে এরা গ্যালারির অবস্থা দেখেছে। এবার ক্রাইস্টচার্চ, নেলসন, নেপিয়ার, মাউন্ট ম্যাঙ্গানুয়ে, ওয়েলিংটন এসব ছোট ছোট ভেন্যুতে খেলার আয়োজন করা হয়েছে। এসবের মাঠ-গ্যালারি ছোট। মেলবোর্নের বড় মাঠে দেখা গেছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা মারতে গিয়েই ক্যাচ হয়ে যাচ্ছেন। আর কন্ডিশনের কারনে বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ডের ভেন্যুগুলোয় সারাক্ষন খোলসের মধ্যে গুটিয়ে থাকছে। খোলস থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতে গেলেই ওঠে যাচ্ছে আম্পায়ারের আঙ্গুল! এসব কিছু এখানকার কন্ডিশনে কম খেলার কুফল। যত বেশি খেলার সুযোগ করা যাবে তত বদলাবে পরিস্থিতি।

নিউজিল্যান্ড সফরের শুরুতে একটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। কন্ডিশনিং ক্যাম্পটি সিডনিতে না করে করা উচিত ছিল নিউজিল্যান্ডে । কারন সিডনির পরিবেশটা অনেকটা বাংলাদেশের মতো। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে এর কোন মিল নেই। নিউজিল্যান্ড সফরের এখন পর্যন্ত ভালো একটি খবর হচ্ছে বাংলাদেশ এ দলের সঙ্গে এদেশের এ দলের সফর বিনিময়ের ব্যবস্থা হয়েছে। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর সঙ্গে ক্রিকেট নিউজিল্যান্ডের কর্মকর্তাদের বৈঠকে হয়েছে এ সিদ্ধান্ত। এ ধরনের উদ্যোগ সিদ্ধান্তে বিদেশে দেশের ক্রিকেটের চেহারা বদলাবে। দলের বাজে পারফরমেন্সে হতাশ হয়ে অনেকে যতকিছু লিখছেন তারাও ক্রিকেটকে বাংলাদেশ দলকে ভালোবাসেন। ভালোবাসার ক্ষেদ-ক্রোধও অনেক ধারালো হয়। দলের সদস্যরাও তা বোঝেন। তারাও জানেন একটা জয় সব বদলে দেবে। বদলে দেবে দলকে ভক্তদেরও। সে একটি জয়ের জন্যে তারাও চেষ্টা করছেন। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশন তাদের অনুকূল নয়। তবু কাঁটার বদলে গোলাপ পাবার চেষ্টার শেষ নেই।

 


Place your ads here!

Related Articles

লেখক নাসরীন জাহান এর সাথে একটি সাহিত্য সন্ধা

আধুনিক লেখক নাসরীন জাহান এর সাথে একটি মনোরম সাহিত্য সন্ধা Vanue: Glen Waverley Community Centre (Glen Waverley Community Centre, 700

ফিরে যাচ্ছে দেশে টিম বাংলাদেশ

বৃহস্পতিবার এমসিজিতে ভারতের কাছে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ শেষ! প্রায় দেড়মাসের ট্যুর শেষে রোববার দেশে ফিরে যাচ্ছে টিম বাংলাদেশ। বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার

এমএলসি মুভমেন্ট, এবং এর উপর্যুপরি ঐতিহাসিক সাফল্যে প্রচ্ছন্ন ‘শক্তি’, এবং অতঃপর

নির্মল পাল: ফোনটি ধরতেই অপর প্রান্ত থেকে “ … ভাই ক্যামন আছেন, অনেক দিন কথা-বার্তা হয় না, আমি কামরুল বলছি,

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment