ক্যানবেরায় দুর্গোৎসব হোক নতুন প্রজন্মের স্বার্থে

অজয় কর: বাঙালী হিন্দুদের সবচাইতে বড় ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে ‘দুর্গোৎসব’। গতবারের মতো এবারেও ক্যানবেরায় বাংলাদেশী হিন্দুদের সংঠন ‘বাংলাদেশ-অষ্ট্রেলিয়া পুজা এসোসিয়েশন (বাপা)’ ডাফি প্রাইমারী স্কুলের হল রুমে দুর্গোৎসবের আয়োজন করেছিল।
এ,বি,এস-এর ২০১৬ সেন্সাস অনুসারে কেনবেরাতে হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী মানুষের সংখ্যা ১০,২১১ জন যা কিনা ক্যানবেরার মোট জন সংখ্যার মাত্র ২ দশমিক ৬ শতাংশ। এসব হিন্দুদের সবাই দুর্গা পুজা করে না। দুর্গা পুজা বাঙ্গালী হিন্দুদের পুজা। তাই পুজাপার্বন পালনের মাধ্যমে প্রবাসে বাঙ্গালী হিন্দুরা বাংগালী সংস্কৃতিকে আগলে থাকতে চেষ্টা করে যাচ্ছে।
পুজা-পার্বন বাংগালী সংস্কৃতির অংশ। আর নাচ-গান সেই সংস্কৃতিকে দেয় পুর্নতা। পুজার অনুষ্ঠানে নাচ-গানের আয়োজনের মাধ্যমে বাঙ্গালীরা চেষ্টা করে যাচ্ছে বাংগালী সংস্কৃতিকে প্রবাসে বেড়ে উঠা নতুন প্রজন্মের মধ্যে চলমান রাখতে। তাই, বরাবরের মতো এবারেও ‘বাপা’ দুর্গা পুজা উপলক্ষ্যে আয়োজন করেছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের যেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক স্টেজ পারফরমার ছিল শিশু-কিশোরেরা।
‘বাপা’ দুই দিন ব্যাপি (শনিবার,৩০সেপ্টেম্বর – রবিবার,০১ অক্টোবর) দুর্গা পুজার আয়োজন করলেও পুজার ধুমধাম বলতে যা বুঝায় তা ছিল মুলতঃ শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর। এদিন কাঁসা আর ঢাকঢোলের বাজনার তালে তালে ধর্মীয় মর্যদায় দুর্গা প্রতিমার সামনে ধুপ-ধুনুতি নৃত্য (আরতি) যেমন ছিল, তেমনি স্টেজে ছিল স্থানীয় শিল্পীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তিথি অনুযায়ী প্রবাসে ধর্মীয় উৎসবের আয়োজন করা সবসময় সম্ভব না হলেও পুরহিতের মন্ত্রপাঠ, যজ্ঞ করা, শঙ্খ বাঁজানো, উলুধ্বনি দেওয়া, ঢাক বাজানো, ভক্তদের অঞ্জলি প্রদান সহ সব নিয়মকানুন মেনেই যথাযোগ্য মর্যদার সাথে বাংলাদেশী হিন্দুরা এদিন পুজা উদযাপন করেছিল।
রবিবার, ১লা অক্টোবর ছিল মুলতঃ মহিলাদের সিঁদুর খেলা। সংসারে সকলের সুখ-শান্তি আর দীর্ঘায়ু কামনা করে দুর্গার কঁপালে ও পায়ে সিঁদুর দেওয়া শেষ করে মহিলারা একে অপরের কঁপালে সিঁদুর পড়িয়ে দেয় সিঁদুর খেলায়।
‘বাপা’র এবারের পুজার আয়োজনে চিত্রাঙ্কনে অংশগ্রহনকারী শিশুদের মাঝে পুরস্কার বিতরনের কাজ থেকে শুরু করে স্টেজে নাচ, গান, ছড়া-কবিতা আবৃত্তিতে শিশু কিশোরদের অংশগ্রহন ছিল চোখে পরার মত। যেমন গানে তেমনি নাচে অসাধারন নৈপুন্য দেখিয়েছে ঐসব শিশু-কিশোরেরা। ক্যানবেরা ও ক্যানবেরার বাইরে থেকে আসা বিভিন্ন ধর্মের মানুষের সাথে মুগ্ধ হয়ে শিশু-কিশোরদের সেই পারফরমেন্স দেখেছেন অষ্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ দুতাবাসের রাষ্ট্রদূত মান্যবর কাজী ইমতিয়াজ হোসেন এবং অষ্ট্রেলিয়ান ক্যাপিটাল টেরিটরির সোশ্যাল সার্ভিস ডিপার্টমেন্ট –এর পরিচালক জ্যচিন্তা এভান্স। ওদের পারফরমেন্সর কনফিডেন্স দেখে সকলেই অভিভুত হন।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরুতেই শিশুদের মাঝে পুরস্কার বিতরন করতে বাপা’র সভাপতিকে সহযোগিতা করতে স্টেজে উঠে কিশোর বয়সের ‘অদিতি’ আর ‘অর্পন’।
পুরস্কার বিতরন শেষে দলীয় সঙ্গীত গাইতে স্টেজে উঠে এসেছিল ছোট্ট আরন্য, অনিষা, ঐশী, প্রাপ্তী, প্রমীত আর অদিত্ৰী । ওদের অনেকেই ঘরে হয়তো ঠিকমত বাংলা বলতে পারেনা। অথচ ওরাই সকলকে অবাক করে দিয়ে পরিস্কার ভাবে নির্ভুল বাংলা উচ্চারনে গেয়েছিল ‘আয়রে ছুটে আয়’ এবং ‘উই স্যাল ওভারকাম’ এই গান দুটো। বয়সের তুলনায় ওদের পারফরমেন্স ছিল অতুলনীয়।
ঘরে বাংলা ঠিক মত বলতে না পারলেও দক্ষতার সাথে এককভাবে বাংলায় গান গেয়ে, কবিতা পড়ে, ছড়া শুনিয়ে কিংবা বাংলা গানের তালে তালে নেচে দৰ্শকদের মন জয় করেছিল নাইশা, প্রিথু, আদি, রিনি, প্রাপ্তী, প্রমীত, অদিত্ৰী, ঐশী, অনিষা, স্নেহা, সৃষ্টি এবং তনিষা।
‘এলো যে মা’ –এই গানের তালে তালে স্টেজে দলীয় নৃত্যে সকলের মন ছুয়েছিল অরিত, গৌরভ, আদ্রিপ্রো, তিষান এবং অদ্বীপ।
স্টেজে শিশু-কিশোরদের পারফরম করার জন্যে বরাদ্ধ ছিল প্রায় ১ঘন্টা ১০মিনিট, আর প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্যে ১ঘন্টা ২০মিনিট। এছাড়াও গত ১১ বছরের (২০০৬-২০১৬) প্রচলিত নিয়ম ভেঙ্গে কিশোর বয়সের দু’জন কে (অদিতি আর অর্পণ) স্টেজে ডাকা হয়েছিল চিত্রাংকনে অংশ নেওয়া প্রতিটি শিশু’র হাতে শ্বান্তনা পুরস্কার তুলে দেওয়ার জন্যে।
শিশু-কিশোরদের জন্যে দীর্ঘ দিনের প্রচলিত নিয়ম ভাঙ্গা আর স্টেজে ওদের পারফরমেন্সের জন্যে লম্বা সময় বরাদ্ধ রাখায় এটা অনায়াসে বলা যেতে পারে যে বাপা’র ‘দুর্গোৎসব ২০১৭’-এর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দু ছিল শিশু-কিশোর বয়সের শিল্পীরা।
নতুন প্রজন্মকে শিখিয়ে-পড়িয়ে বাংগালী সংস্কৃতি’র সাথে আরো ঘনিষ্ঠ ভাবে পরিচিত হবার সুজোগ করে না দিতে পারলে সামনের দিনগুলিতে প্রবাসে বাংগালী সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখা দুঃসাধ্য হবে।
তাই প্রবাস জীবনের শত ব্যস্ততার মাঝে সময় বের করে নিয়ে পুজা মন্ডপ সাজানো থেকে শুরু করে শিশু শিল্পীদের স্টেজ উপযোগী করতে সংশ্লিষ্টরা যেভাবে ধৈৰ্য্য নিয়ে একসাথে কাজ করেছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়।
আশাকরি নতুন প্রজন্মকে বাংগালী সংস্কৃতি’র সাথে ঘনিষ্ঠ ভাবে পরিচিত করে তুলতে বাপা’র এই উদ্দোগ আগামিতেও অব্যাহত থাকবে।
Related Articles
ক্যানবেরায় ঢাকা থিয়েটার এর পঞ্চনারী আখ্যান
ঢাকা থিয়েটার এর নাটক- পঞ্চনারী আখ্যান, রচনা- হারুন রশীদ, নির্দেশনায় – শহীদুজ্জামান সেলিম, অভিনয়ে- রোজী সিদ্দিকী। ৪ নভেম্বর ২০১৭, সন্ধ্যা
রিফাত হত্যা মামলার তদন্ত প্রশ্নবিদ্ধ – দায়িত্ব দিন পিবিআইকে
ফজলুল বারী: বরগুনার চাঞ্চল্যকর রিফাত হত্যা মামলার তদন্তের নানাকিছু এরমাঝে প্রশ্নবিদ্ধ। রিফাতের স্ত্রী মিন্নির বাবা অভিযোগ করে বলেছেন তার মেয়েকে
মৃত্যুর দুয়ারে নারী: কার গালে চড় মারি!
মৃত্যুর দুয়ারে নারী: কার গালে চড় মারি! দিলরুবা শাহানা মনটা যখন খুশীর ধারায় স্নাত ছিল তখনি ঘটনাটায় ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ
Very nice article.
We were enjoying the puja event through the article. Thanks to the Author.