আমস্টার্ডামে এ্যানা ফ্র্যাংক যাদুঘর ও…

মাসটা সেপ্টেম্বর। খাল বা ক্যানালে ক্যানালে আকীর্ন ছিমছাম ছোট্ট সুন্দর শহর আমস্টার্ডাম। সমুদ্র পিঠের চেয়ে নীচে বলেই খাল কেটে পানি বইয়ে দিয়ে স্থলের অস্তিত্ত রক্ষার উপায় বের করেছে এরা। এমনি এক খালপারের মিউজিয়ামে ঢুকবে বলে সারি বেঁধে মানুষ দাড়ানো। আমিও সে সারিতে একজন। স^ভাবগত অভ্যাসে আনমনা হলাম মুহূর্তের জন্য। কার কাছে প্রথম শুনেছিলাম কিশোরী এ্যানা ফ্রাংকের কথা? কার কাছে? মনে পড়েছে। আমার মায়ের কাছে জেনেছিলাম। মা হয়তো বইটি পড়েছিলেন। তারপর নিজে বড় হয়ে ওর ডায়েরী পড়েছি। এ্যানারা ইহুদী ছিল। হিটলার ছিল ইহুদী নিধনে বদ্ধপরিকর। হিটলারের নাৎসীবাহিনীর হাত থেকে প্রাণ বাঁচানোর জন্য ওরা লুকিয়েছিল। যে অফিসবাড়ীর গোপন উপরতলায় এ্যানা মা-বাবা ও আরও পরিচিত ক’জনের সাথে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়ে প্রাণের ভয়ে আত্মগোপন করেছিল সেটিই এখন এ্যানা ফ্রাংক মিউজিয়াম। মাত্র ১৩বছর বয়সে যুদ্ধের সময়ে গুপ্তমহলের লুক্কায়িত জীবনের খুঁটিনাটি সবকথাই সে ডায়েরীতে লিখে রাখতো। লিখেছিল রেডিওতে শুনেছে হিটলার গ্যাস দিয়ে মানুষ মারছে ইউরোপে, ভারতবর্ষে গান্ধীজি অনশন করছেন জাতির স্বাধীনতার জন্য। প্রাণ শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি। প্রায় দু’বছরের সামান্য বেশী সময় বা সঠিকভাবে বললে পঁচিশমাস আত্মগোপন থাকার পরে তারা নাৎসীদের হাতে বন্দি হয়। হিটলারের গ্যাস চেম্বারে মা-বোনের মতই এ্যানার মৃত্যু হয়। অবিশ্বাস্য রকম ভাবে বেঁচে গিয়েছিলেন এ্যানার বাবা অটো ফ্র্যাংক। এ্যানার জীবনে ইতি ঘটে ১৫বছর বয়সে। অটো ফ্র্যাংক বেঁচে না থাকলে ওর লেখা ডায়েরীর বিষয়টি মানুষজন কবে জানতে পারতো কে জানে?
এই শহরে জায়গা কম বলে এখানে সিড়িগুলো ভীষন খাড়া আর অপ্রসস্থ। দু’জন মানুষ একসাথে পাশাপাশি সিড়ি বেয়ে উঠবে সে উপায় নেই।
আধা ঘণ্টা লাগিয়ে এ্যানাদের আত্মগোপন করে থাকার আস্তানা ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। ভিতরে ছবি তুলতে নিষেধ করেছে। সেই যুদ্ধকালীন পরিবেশে ঠিক যেমন ছিল জীবনযাপন তা অনুভবের জন্যই বাইরের আলো ঢুকার উপায় যাদুঘরে নেই। যুদ্ধের দিনগুলোতে দিনের বেলা বাথরুম-টয়লেট ব্যবহার ছিল বিপদজনক। তাতে নীচের তলায় কাজ করতে আসা লোকেরা উপরে এ্যানাদের অবস্থান টের পেয়ে যেতে পারে। জানিয়ে দিতে পারে। যুদ্ধ মানুষে মানুষে বিশ্বাস নষ্ট করে, মানবিক সহমর্মিতাও করার ইচ্ছাও কারোর ধ্বংস হয়ে যায়। তবে সবার নয়।
এই বদ্ধ পরিবেশে বসেই কিশোরী এ্যানা তার ডায়েরী লিখে গেছে।
একটা জায়গায় এসে দেখলাম গোল ঘুরানো স্ট্যান্ডে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত এ্যানা ফ্র্যাংকের ডায়েরীর কপি রাখা। চোখে পড়লো রুশভাষায় অনূদিত ‘দিনিয়াবিœক এ্যানা ফ্রাংকা’ লিখিত বইও। বাংলা অনুবাদ দেখতে পেলাম না যেন। আসলে বিষাদময় পরিবেশে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসছিল তাই ভালকরে খুঁজে দেখার মনের জোর পেলামনা। তবে বাংলায়ভাষায় অবশ্যই অনুবাদ হয়েছে। তা না হলে মা কিভাবে পড়লেন? আমার মা জার্মান বা ইংরেজী কোন ভাষাই জানতেন না।
শেষে ভিজিটর বুকে বাংলাতে মন্তব্য লিখে ইংরেজীতে নিজের নাম ও বাংলাদেশ লিখলাম। একজন ব্যাপারটা খেয়াল করলেন। জানতে চাইলেন
-কোন ভাষায় লিখেছ?
-বাংলা?
-এ্যানার ডায়েরী কি তোমার বাংলাভাষায় পাওয়া যায়?
-নিশ্চয়ই, তবে এখানে দেখলাম না তো?
-আমাদের একটা কপি পাঠাতে পারবে আমরা রাখবো স্ট্যান্ডে
আমার মনটা খুশীতে ভরে উঠলো। আমি বাংলায় মন্তব্যের খাতায় না লিখলে এই কথোপকথন হতোনা। এ্যানা ফ্র্যাংক মিউজিয়ামে বাংলায় বইটি রাখার কথাও হয়তো উঠতো না।
কথা হল আমার মা বাংলায় বইটি পড়েছিলেন এবং এই কাহিনীও যতœ করে শুনিয়েছিলেন আমাদের তাইতো আমার মাথায় বাংলায় মন্তব্য লেখার ভাবনাটি এসেছিল।
যদি কারোর কাছে এ্যানা ফ্র্যাংক ডায়েরীর প্রথম বাংলা অনুবাদের কপি থেকে থাকে জানালে কৃতজ্ঞ হব।
দিলরুবা শাহানা
Related Articles
এই ছাত্রলীগকে আমরা চিনিনা
একদল দেখি ফেসবুকে এভাবে প্রোফাইল আপডেট করছেন! ছাত্রলীগে জব শুরু করেছেন? ছাত্রলীগ তাহলে জবও দেয়? তা বেতন কতো? আর অন্যসব
Life is a tale told by an idiot
Sometimes we pose a question to ourselves “What is life?” We contemplate about the purpose of life and how it