সিডনি থেকে ধর্মশালা

সিডনি থেকে ধর্মশালা

ফজলুল বারী, ধর্মশালা, হিমাচল প্রদেশ(ভারত): জন্মভূমির টিম বাংলাদেশকে লড়াকু মেজাজে দেখতে অনেক আশা নিয়ে অনেক দূরের শহর সিডনি থেকে ধর্মশালায় উড়ে এসেছিলাম। আশা ষোল আনাই উসুল। এবং এখন চড়া গলায় বলতে পারি, এখানে না এলে অনেক আক্ষেপ-মিস করতাম। যেমন অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড দলের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানোয় না এলে মিস করতাম বলে আক্ষেপ করতে হয়নি। বিরূপ আবহাওয়ার মধ্যে অনেক প্রতিকূল পরিবেশে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টেনে ওঠার লড়াইয়ে ধর্মশালায় তিনটি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। আগের রাতে হিমালয়ের নিচের হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট এসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে তুষার ঝরেছে! সেই মাঠে তামিমের অনবদ্য মহাকাব্যিক সেঞ্চুরির পর বাংলাদেশ যখন দু দফা বৃষ্টির বাগড়ার ম্যাচে ফিল্ডিং’এ নামে তখন ব্যতিক্রমী একটা বিষয়কি খেয়াল করেছেন? শীতে জবুথবু বেশিরভাগ ফিল্ডারের হাত ছিল পকেটে! বিসিবি এখানে দলের খেলা নিয়ে যদি কোন গ্রাউন্ডওয়ার্ক করতো তাহলে খেলোয়াড়দের জন্যে ফুল স্লিভ সুয়েটারেরও ব্যবস্থা করতো। কিন্তু তা না করাতে শীতার্ত ক্রিকেটাররা পকেটে হাত রেখে ফিল্ডিং করলেও কোন দূর্ঘটনা ঘটেনি। কারন এ বাংলাদেশ দল বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা উজ্জিবিত বদলে যাওয়া ভিন্ন এক দল।

DHARAMSALA-4

বৃৃষ্টির বাগড়ার কারনে রবিবার ধর্মশালায় নেদারল্যান্ডস-আয়ারল্যান্ডের ম্যাচটির ওভার কাটতে কাটতে ৬ ওভারের ম্যাচ হয়েছে! এখানকার আবহাওয়া বিভাগ বলেছিল রবিবার বিকাল ৫ টার পর আর বৃষ্টি হবেনা ধর্মশালায়। কিন্তু কাছেই যে হিমালয়! হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট এসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে বসেই দেখা যায় বরফাচ্ছাদিত হিমালয়ের ঝকঝকে সব চূঁড়া। বাংলাদেশ বড় ঝড়-বৃষ্টি হয় সমূদ্রে সৃষ্ট নিম্নচাপ থেকে। আর ধর্মশালায় বৃষ্টি হয় হিমালয়ে ধাক্কা খাওয়া মেঘ থেকে। সে জন্যে বিলাতের আবহাওয়ার মতিগতির মতো ধর্মশালায় বৃষ্টিপাতেরও মতিগতি অথবা আবহাওয়ার পূর্বাভাসের বালাই নেই! তাই টস হারা বাংলাদেশের ব্যাটিং ইনিংস নির্বিঘ্নে কাটলেও ওমানের ব্যাটিং ইনিংসে বৃষ্টি বাগড়া দিয়েছে দু’দফা। কিন্তু তার আগেই তামিম ঝড়ে বাংলাদেশ এমন এক নিরাপদ জায়গায় দাঁড়িয়ে গিয়েছিল যে ওমান বা কারো বলার সুযোগ ছিলোনা যে বাংলাদেশ বৃষ্টির দয়ায় জিতেছে! বরঞ্চ বৃষ্টি বাগড়া না দিলে আরও অনেক বেশি রানের ব্যবধানে জিততে পারতো টাইগার বাহিনী।

DHARAMSALA-3

আমি যেহেতু লিখি, আমার পাঠকরা যেহেতু আমার কাছে মাঠের নানান আপডেট চায় সেহেতু খেলা দেখা উপভোগের চাইতে গ্যালারির মানুষগুলোর উপভোগ-প্রতিক্রিয়ার দিকে নজর রাখতে হয়। যখন বাংলাদেশের খেলা উপলক্ষে গ্যালারিতে থাকি , বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত যখন বাজানো হয় তখন সেটির ভিডিও’র আপলোড দেবার চেষ্টা করি ফেসবুকে। রবিবার জাতীয় সঙ্গীত পর্ব ভিডিও করার সময় চোখ আটকে যায় গ্যালারির এক নারীর মুখে-চোখে! জাতীয় সঙ্গীত গাইতে গিয়ে জলের ধারা নেমেছে তার দুই চোখ দিয়ে! ধর্মশালায় কোন বাংলাদেশি দম্পতির সঙ্গে দেখা-পরিচয় হয়নি। জাতীয় সঙ্গীতের পর তাই সেই নারীর সঙ্গে কৌতুহল নিয়ে কথা বলি। ভদ্রমহিলার নাম নাহিদা হাসান। ঢাকার ধানমন্ডিতে বাড়ি। স্বামীর সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে দেশের খেলা দেখতে এসেছেন ধর্মশালায়! তার স্বামী অধ্যাপক ডাঃ এইচ এ এম নাজমুল হাসান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক। পপুলার মেডিক্যাল কলেজে মেডিসিন বিভাগে পড়ান। সিমলা হয়ে তারা এসেছেন ধর্মশালায়। নাহিদা হাসান আমাকে বললেন, এতদূর এসে দলের সঙ্গে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে পেরেছি। এই আনন্দ-আবেগেই আমার কান্না এসেছে। তাদের তখনই সকৃজ্ঞ সেলাম জানাই।

DHARAMSALA-2

রবিবারও বাঘ সেজে ধর্মশালার গ্যালারি মাতিয়েছেন দেশের দুই ক্রিকেট এম্বেসেডার টাইগার শোয়েব ও টাইগার মিলন। জবুথবু শীতে সবাই যেখানে নানান শীতবস্ত্রে নিজেদের রক্ষার চেষ্টায় ব্যস্ত, এই দু’জন শুধু ছিলেন শুধু বাঘ আঁকা টি-শার্ট পরনে! লাল সবুজ জাতীয় পতাকা দুলিয়ে তাদের প্রাণের নাচন কি কোন মূল্য দিয়ে পরিশোধ সম্ভব? এক কথার এর উত্তর ‘না’। এবার ধর্মশালা আসাতে দেশের আরেক দল তরুনের সঙ্গে পরিচিত হতে পারা, তাদের বন্ধু হতে পারা আরেক মূল্যবান অর্জন। এরা বাংলাদেশ ক্রিকেট সাপোর্টার এসোসিয়েশনের সদস্য। সৃষ্টি সুখের উল্লাসী এই তরুনদের দেখে নিজের স্কাউট জীবনের কথা মনে পড়েছে! স্কাউটদের সংগঠিত করা হয় দেশের যে কোন দূর্যোগে কাজে লাগাতে। আর নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো এ গ্রুপটি বাংলাদেশের ক্রিকেট দলকে ভালোবেসে দলকে উজ্জিবিত করতে ঘুরে বেড়ায় এক স্টেডিয়াম থেকে আরেক স্টেডিয়ামে! যেমন রবিবার খেলার শেষেই এ দলটি সড়কপথে রওয়ানা হয়ে গেছে পাঞ্জাবের জলন্ধরের উদ্দেশে। সেখান থেকে ট্রেন ধরে তারা যাবেন কলকাতায়। ষোল মার্চ সেখানে বাংলাদেশের লড়াই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে।

DHARAMSALA

রবিবার গ্যালারিতে ভারতীয় অনেক দর্শক বাংলাদেশ দলকে সমর্থন দিচ্ছিলেন। বিশেষ করে মায়ের সঙ্গে মাঠে আসা শীতান নামের এক মেয়ের ভূমিকা বিশেষ নজর কাড়ে। টটাইগার শোয়েবের সঙ্গে নেচে গেয়ে বাংলাদেশ দলকে সমর্থন করছিলেন শীতান। বাংলাদেশকে সমর্থনেম কথা হয়েছে তাদের বেশিরভাগ বাংলাদেশের সব খেলোয়াড়ের নাম ধরে ধরে চেনেন! আগে ভারতীয়রা মোহাম্মদ আশরাফুল, মাশরাফি, আইপিএল’এর কারনে সাকিব এদের নাম জানতেন। এখন তারা মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ-মুস্তাফিজ-সৌম্য-আল আমিন-সাব্বিরদেরও চেনেন জানেন! এর অন্যতম কারন সাম্প্রতিক বাংলাদেশের ধাড়াবাহিক সাফল্য! সর্বশেষ ভারতকে সিরিজ হারানো, এশিয়াকাপে রানার্সরআপ হওয়া এসব অন্যতম কারন। এমন আরও অনেক অভিজ্ঞতা ধর্মশালা থেকে নিয়ে গেলো বাংলাদেশ দল।


Place your ads here!

Related Articles

১৯৭১ ভেতরে বাইরে – একটি নিরপেক্ষ এবং নির্মোহ বিশ্লেষন – পর্ব ২

এই অধ্যায়ে জনাব এ, কে খন্দকার ১৯৭১ জানুয়ারী থেকে ২৬ মার্চ’ পর্‍যন্ত ঘটনাবলির উপর নিন্মোক্ত কয়েকটি বিষয়ে/ব্যাপারে মন্তব্য করেছেন্, যা

পাহাড়ে আহারে!

বিজয় দা’কে যখন এইবার ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুলের বাৎসরিক বনভোজনের দায়িত্ব দেয়া হল তখনই আমরা বুঝে গিয়েছিলাম এইবারের ভ্রমণ হতে যাচ্ছে

গণতন্ত্রের শেষ ট্রেনটি বেগম জিয়ার অপেক্ষায়

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হয়েছে। গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় বাঙালির ইতিহাসে এটি একটি মাইল ফলক। ১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment