বাঘদের সমর্থনে বাঘভক্তরা ধর্মশালায়!

বাঘদের সমর্থনে বাঘভক্তরা ধর্মশালায়!

[ফজলুুল বারী, ধর্মশালা, হিমাচল প্রদেশ(ভারত)] বাংলাদেশ ক্রিকেটের আজকের প্রসারের নেপথ্যের পথিকৃৎদের অন্যতম আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববিকে দেশের ক্রিকেট অন্তপ্রাণরা, বিশেষ করে মিডিয়ার লোকেরা ভালো চেনেন জানেন। বিদেশে দেশের ক্রিকেট ম্যাচের যে কোন আসরে গেলে এই ববি ভাইর দেখা পাইই পাই। এর ব্যত্যয় ঘটেনি ধর্মশালাতেও। এই শনিবার দুপুরে ববি ভাই ফোনে বলে রাখলেন বিকেলটা ফ্রি রাখবেন। আপনাকে এক জায়গায় নিয়ে যাবো। বিকেলে যথারীতি তিনি হাজির। গাড়ি আঁকাবাকা অনেক পাহাড়ি পথ মাড়িয়ে গিয়ে থামলো পাহাড়ের চূড়ার এক হোটেলে। সেখানে জমায়েত সব বাংলাদেশি! পুরো আয়োজনটি দেখেশুনে মন জুড়োয়। এদের সবাই বাংলাদেশ ক্রিকেট সাপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সদস্য। তাদের নেতার নাম জুনায়েদ পাইকার। বাংলাদেশের খেলা দেখতে দলবল সহ এসে হাজির ধর্মশালায়। অনেক গল্প হয় তাদের সঙ্গে। নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতো দেশের ক্রিকেট টিমকে ভালোবাসা নিয়ে তাদের আবেগ-আন্তরিক ত্যাগ-তিতীক্ষা সত্যি অবাক করার মতো। বাংলাদেশ দলের কাপ্তান মাশরাফির জীবন কাহিনী তারা এরমাঝে প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটের শুরু থেকে নানা বাঁক-উত্থান সহ তাদের সংগ্রহশালাটি নিয়ে একটা ক্রিকেট জাদুঘর হতে পারে।

DHARMASALA-2

গ্যালারিতে একজন টাইগার শোয়েবকে সবাই দেখেন। বাঘ সেজে গ্যালারি মাতান টাইগার শোয়েব। দলের সাফল্যে বাঘের মতো গর্জন করেন। ব্যর্থতায় হাউমাউ করে কাঁদেন। এই টাইগার শোয়েবও ছিলেন সেখানে। টাইগার শোয়েবেরও অন্যতম পৃষ্ঠপোষকও এই এসোসিয়েশন। এবারে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ উপলক্ষে এরা দলবল নিয়ে ভারত এসেছেন। ধর্মশালা পর্যন্ত তাদের পৌঁছবার সংগ্রামের গল্পটি মন ছুঁয়েছে। প্রথমে ছিল ভিসার সংগ্রাম। দলবদ্ধ হয়ে আবেদন করলে ভারতীয় হাইকমিশন যদি ভিসা না দেয় সে আশংকায় তারা স্বতন্ত্র আলাদা আলাদা আবেদন করেছেন। টাইগার শোয়েবকে প্রথমে ভিসা দেয়নি ভারত। তার মতো আরেকজন ভারতীয় গ্যালারির মুখ সুধীর তদবির করে তার ভিসা বের করে এনেছেন। এমন অনেকে আবেদন একবার প্রত্যাখ্যাত হলে আরও আবেদন করে ভিসা পেয়েছেন। আবার ভিসা না পাওয়াতে অনেকে আসতেও পারেননি। অতঃপর যারা আসতে পেরেছেন তাদের ১৯ জনের নাম লিখতে পেরেছি। এরা হলেন হাসান আহমেদ, মাহফুজ খান, আজিজ আরাফাত স্বজন, মোহাম্মদ মিজানুর রহমান,সজল বেঙ্গল, মোহাম্মদ জাহিদ বিন সিদ্দিক, মোহাম্মদ শিহাব আহসান খান, জুনায়েদ মোরশেদ পাইকার, মোহাম্মদ মেহেদি হাসান, মোহাম্মদ ইমরান হোসেন, মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান, ফারহান ইহসান, ইশতিয়াক মোল্লাহ, মোহাম্মদ রাফসানজানি রানা, মোহাম্মদ দেলোয়ার খান, তানভির আহমেদ, মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা, মোহাম্মদ খোরশেদ আলম এবং শোয়েব আলী।

এই সংগঠনের সদস্যদের বেশিরভাগ ছাত্র। এরপরও সংগঠনকে এরা মাসে ১২শ টাকা করে চাঁদা দেন। এবার ভারতে আসতে যাতায়াত-থাকা বাবদ সবার কাছ থেকে কুড়ি হাজার করে নেয়া হয়েছে। খাবার খরচ চালাচ্ছেন দলের সিনিয়ররা। ইন্টারনেট ঘেঁটে এরা ধর্মশালায় সবচেয়ে কমদামে থাকার ব্যবস্থাটি বের করেছেেন। বাজেট সীমিত বলে তারা ভারত এসেছেন সড়কপথে। কলকাতা থেকে দিল্লী ট্রেনে। এরপর ট্রেনে পাঠানকোট। সেখান থেকে আবার সড়কে ধর্মশালায়। দিল্লী পর্যন্ত ট্রেনে আসতে অনেক মজা হয়। তাদের সঙ্গে ঢোল সহ নানান বাদ্যযন্ত্র। ট্রেনে দেশের গান গাইতে গাইতে মাতিয়ে এসেছেন পুরোপথ। বাংলায় তাদের অফুরান প্রাণশক্তি দেখতে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন পশ্চিমবঙ্গবাসী এক যাত্রী! তার নাম তপন আইন। তাদের থেকে বিদায় নেবার আগে তিনি একখানি কবিতা লিখে দিয়েছেন। কবিতাটি এমনঃ ” দেখা হলো, কথা হলো/ বহু গান শোনা হলো/ বড় ভালো লেগেছিল তোমাদের গান।/ ইস্টিশন এসে গেলে/ সকলেই যাবে চলে/স্মৃতি তবু যাবে ফেলে/ যা, নিত্য অফুরান। / ভালো থেকো বাংলাদেশ/ ভালো থেকো ভাই, / এপার বাংলার মানুষ আমরা/ সালাম জানাই।।

DHARMASALA-1x

এমন অনেক গল্প। ধর্মশালা এসে অনেক অভিজ্ঞতা। ভারতীয় পুলিশ তাদের মাঠে ঢোল-করতাল নিয়ে ঢুকতে দেবেইনা। অনেক কষ্টে তাদের ম্যানেজ করা গেছে। এদের বক্তব্য আমাদের দলের উজ্জ্বল সাফল্য চার-ছক্কার সময়গুলোতে কি ঢোল-করতাল ছাড়া চলে? শনিবার আবার ধ র্মশালার ক্রিকেট কর্তৃপক্ষের শুভেচ্ছায় তারা অভিভূত! হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট নেতৃবৃন্দ শনিবার তাদের অভ্যর্থনা করে মাঠের ভিতর নিয়ে যান। তাদের সঙ্গে ছবি তোলেন। উপহার বিনিময় করে তাদের বলেন, তোমরা বাংলাদেশের সত্যিকার এম্বেসেডর। বাংলাদেশের খেলা দেখে আমরা মুগ্ধ। আজ মুগ্ধ তোমাদের দেখে। এই সাক্ষাতের ব্যবস্থাও করেছিলেন বিসিবির সদস্য আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি। এর কৃতজ্ঞতা জানাতে তারা টূর্নামেন্ট কভার করতে আসা বাংলাদেশি সাংবাদিকদের ডেকে নিয়েছিলেন তাদের ধর্মশালার অস্থায়ী ডেরায়।

DHARMASALA-3

ধর্মশালার শীতে এ দলের অনেকে কাবু।কিন্তু দলের অপরিহার্য সদস্য টাইগার শোয়েবের ভূমিকায় তাদের শীতও যেন উধাও! গ্যালারিতে দলের সদস্য সবার পরনে পর্যাপ্ত শীতের কাপড় থাকে। কিন্তু বাঘ সাজা টাইগার শোয়েব থাকেন এক রকম খালি গায়! শুক্রবার রাতে বৃষ্টির মধ্যে গায়ে শুধু বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা জড়িয়ে থরথর কাঁপছিলেন আর ফরিয়াদ করছিলেন আল্লার কাছে। আল্লা বৃষ্টিটা থামিয়ে দাও, আমাদের বাংলাদেশকে খেলতে দাও। দলের এক সদস্য বলেন এই টাইগার শোয়েবই আমাদের সব কষ্ট স্বীকার-ভুলে যাওয়ার অনুপ্রেরনা। শনিবার রাতের এই আড্ডার সময়েও গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল ধর্মশালায়। টাইগার শোয়েবকে বলি, রোববার খেলার সময়ও বৃষ্টি থাকতে পারে। শোয়েব আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেন, এমন কথা বলবেন না ভাই, আমরা জিততে চাই। রাতে এ দলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হোটেলে আসার পথে ভাবি, এমন দেশ আর ক্রিকেট অন্তপ্রাণ সাপোর্টার্স গোষ্ঠীর পাগল ভালো্বাসার কারনেই বুঝি শুধুই এগোচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেট! এত মানুষের আবেগ-ভালো্বাসা যে ব্যর্থ হতে পারেনা।

ফজলুুল বারী, ধর্মশালা, হিমাচল প্রদেশ(ভারত)


Place your ads here!

Related Articles

সম্প্রচার নীতিমালাঃ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সরকারের করণীয়

সরকার যেসময়ে, যেকারনে, যে অবস্থায় এ নাজুক সম্প্রচার নীতিমালার বিষয়টি নিয়ে এগুচ্ছে এতে করে স্পষ্টতঃই গণমাধ্যমের সাথে সরকারের সংঘাত সৃষ্টির

ভালোবাসায় বাংলাদেশ

আমেরিকায় জন্ম মিলিয়ার। এক সময় বাঁশি বাজাতেন। পঞ্চাশ বছর ধরে ক্যানবেরায় আছেন। বুধবার ক্যানবেরার মানেকা ওভালে বাংলাদেশ দলকে সমর্থন করতে

Teesta Water Issue: A Few Hard Facts

The Indian Prime Minister’s visit to Bangladesh is considered a failure in public perception in Bangladesh because his visit was

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment