ধলেশ্বরী-১

ধলেশ্বরী-১

ফিলের কথা খুব মনে পরে। ‍‍হাসপাতালে আমার পাশের বেড টাতে ও ছিলো। বয়শ প্রায় নব্বযের কোঠায। রাতের বেলা ঠিক বুঝতে পারিনি ও যে এতো বষঙ্ক। তবে কাশির শব্দ পেযেছি বেশ কয়েক বার। আর আমার চেতনাও ছিলো চেতনা নাশক ওশুধের প্রভাবে প্রভবিত। তাই পরিচযের সুযোগ হয়নি ওই রাতে। সকাল বেলা ঘুম ভাংল একটূ বেলা করেই। ততখনে জানালা দিয়ে বেশ রোদ এসে পড়েছে রুমটাতে। পাশের বেডের ফিল বেশ কয়েক বারই টয়েলেটে গিয়েছে, পায়ের আওয়াজও পেয়েছি। যদিও দেখা হয়নি কারনটা হচ্ছে – এদেশের হাসপাতালের বিছানা গুলো ধব ধবে সদা চাদোর দিয়ে তো ঢাকা তার উপড় সাদা পদ দিয়ে ঘেরা। আমার ব্যক্তিগত আনুভুতি – এ যেণো কাফনে আবৃত হয়ে, সাদা একটা বড় কবরে শুয়ে আছি। পদটা সরাতেই দেখলাম জানালার কাছে বযঙ্ক এক লো্‌ক, নাকে পো্টেবল অকি্েজনের সিলিন্ডারের নল লাগিয়ে সকালের মিঠে রোদে বসে আছে। আমার দিকে তাকিয়েই কুচকানো মুখে একটা হাসির ঝলক মিললো। নিজ থেকেই জানতে চাইলো- এই বযসে কেন হাসপাতালের বিছানায় শু্যে আছি? তো, আমার আসার কারনটা বলতেই আবার সেই শুঙ্ক হাসিটা উচ্ছসিত করে বললো- যাক আজ থেকে তু্মি অবার নতু্ন মানুষ হলে। আমি যতই শংষয় নিয়ে বলি- তাই নাকি, ও ততই জোর দিয়ে বলে- অব্শ্যই। আলাপ জমতে বেশীক্ষন লাগলো্না। আসলে যা হয়, নিসজ্ঞ মানুষ, কথা বলা্র শুজোগ পেলেই আলাপ জমিয়ে দেয়। আমার ও খারাপ লাগছিলোনা। কাফনে আবৃত্ত হয়ে পরকালে্র ভানার চেয়ে এই বৃ্দ্বই আমাকে পৃথিবীতে থাকার স্বাদটা ফিরিয়ে দিছিলো। ওর ফেলে আসা যৌবনের কথা শুরু করলো। ভালোই লাগছিলো, সময়ও কাটছিলো। আমি কোথা থেকে এসেছি জানতে চাইলো, বললাম- বাংলাদেশ। নামটা শুনতেই ওর চোখের কোনায় একটা ঝিলিক দেখলাম। বুঝলাম কিছু একটা আছে এই ঝিলিকে। জিঙ্গেস করলাম- তুমি জানো বাংলাদেশ কোথায়? আমাকে অবাক করে দিয়ে বললো- আনেক দিন আগে আমার সহ্কমী্কে তোমার দেশের চট্টগ্রামে্ কবর দিয়ে এসেছি।সকলের নরম রোদে, জানালার পাশে বসা এই বৃ্দ্বের মাঝে যে একটা কাহিনী আছে, তা আমাকে বেশ আ্গ্রহী করে তুলেছে। বাকি কাহিনী্টা ওর মুখে যা শুনলাম- ১৭ ব্যষর বযসে বৃটেশ বাহিনীতে যোগদেয। দ্বিতীয় মহাযুদ্বের শুরুর দিকে মিশরে বৃটিশ বাহিনীতে ছিলো, শেষে্র দিকে চলে আসে বৃটেশ ভারতে। যুদ্বের প্রায় শেষের দিকে জাপানীজ বোমার শিকার হয়ে মারা ওর বেশ কিছু সহকমী, যাদের কবর হয় চট্টগ্রামের ওয়ার সেমিটি্তে। যুদ্বের শেষে বৃটেনে ফিরে যায়, তার কিছু কাল পরে এক অইরিশ মহিলাকে বিয়ে করে চলে আসে এখানে। আর ফিরে যাওয়া হয়নি বৃটেনে। কিছু ক্ষন পর এক বৃদ্বা আসলো ওকে নিত, বুঝলাম এই সেই আইরিশ মহিলা। যাওয়ার আগে পরিচয় করিয়ে দিয়ে ছিলো। তা্রপর সেই পোটেবল সিলিন্ডারটা কোলের উপর বসিয়ে হুইল চেয়ারে বসে চলে গেলো ও্ল্ব হো্মে। বাকি যে কয়েক ঘন্টা হাসপাতালে ছিলাম শুয়ে শুয়ে ভাবলাম আমা্দের নিয়তী কথা। ধলেশ্বরীর পারের মানুষ আমি, বসত হলো এই শহরে আর ফিল টেমসের পার থেকে এখানে। ওর বন্দ্বু, সহকমী শুয়ে আছে বাংলাদেশে। আমাদের গন্তব্য কোথায় গিয়ে শেষ হবে? কেউ কি তা জানি?
মাকসুদ আলম, ক্যনবেরা কুইনবিয়ান হাসপাতাল, জুন ২০১০


Place your ads here!

Related Articles

Migration and Cultural Diversity

Diversity is often preached as quite a simple process which simply requires an immigrant coming from a foreign land with

সিডনিতে সাঁতার কাটতে গিয়ে সাগরে তলিয়ে গেলো বাংলাদেশি ছাত্র রাহাত

ফজলুল বারী: তিন বন্ধু। রাহাত-বাপন-ফয়সল। তিন বাংলাদেশি ছাত্র। তিনজনই বাংলাদেশের কুমিল্লার। অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে এসে তিন জন একসঙ্গে থাকতেন সিডনির ওয়ালি

Climate Change, Food and Energy Security: Bangladesh Context

While climate change is slowly and surely affecting agricultural production in Bangladesh, the fear is growing by the reports that

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment