জীবন ভ্রমন ৯ , ১০ :

জীবন ভ্রমন ৯ : এক বড় ভাই এর কথা । এক দিন এলাকার এক মুরুব্বি তাকে বলল: “…..এই ছেলে, এই সমস্ত কর কেন ! বেহেস্থ যাবি না ! ” উত্তর : ” দোজকে যাব , মাধুরির সাথে থাকব , তবুও ….কারণ আপনারা পানের পিক , নাকের রস ফেলে বেহেস্তও নস্ট করে ফেলবেন ।” মুরুব্বি : ” কি বললি ! তোর বাপের কাছে এর বিচার দিব । ” উত্তর: ” যান আব্বা বাসায় আছে ”
হীরক রাজার দেশ । যার যা খুশি কর । সিভিক সেনস এর বালাই নেই । এক দিন বিকালে কয়েকজন স্কুল বব্ধু মিলে মতিঝিল মাজার সংলগ্ন রাস্তায় হাটছিলাম । একজন পায়জামা পাঞ্জাবি পরা মুরুব্বিকে দেখে ‘ আসলামুআলাইকুম – আঙ্কেল ‘ বলে সম্বোধন করলাম । সাথে সাথে উনি ক্ষেপে গেলেন । “এই ছেলে আঙ্কেল বললে কেন , সালামও দিতে জানোনা , আমি তোমার আঙ্কেল হই নাকি ! ”
আমরা অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম । ব্যাপার কি ! বাবার বয়সী । সম্মান করে সালাম দিলাম , হিতে বিপরীত । একটু ইতস্ত করে জিগ্গেস করতেই মুরুব্বি বললেন স্যার বলে সম্বোধন করতে হবে । সাথে আরো কিছু ছবক দিলেন । মুখ চেপে হাসি আটকে রাখলাম । পরে আবার একদিন উনার সাথে দেখা । সবাই এক সাথে স্যার বলে সালাম দিলাম । এইদিন ও উনি ক্ষেপে গেলেন । আমরা আবার হোচট খেলাম । মুরুব্বি বললেন ” ফাজলামু কর ” । মনে মনে বললাম কিছুটা । নিজ থেকেই বললেন একজন সালাম দিলেই হয় ।
আসলে সেই মুরুব্বি ঠিক বলেছিলেন । একেবারে অপরিচিতদের স্যার বলে সম্বোধন করাই শ্রেয় । এই প্রবাসে তাই দেখছি । চাকুরী জীবনে দুই দিন (রাত বাদে ) তাবলিগে গিয়েছিলাম । কারণ আমার বস তাবলিগে যেতেন । আমাকে কনভিন্স করেছিলেন । বিকালে দাওয়াত এর কাজে বের হলে একজনে সালাম দিতেন এবং বাকিরা চুপচাপ থাকতেন । তখন ওই মুরুব্বির কথা মনে পড়ে ।
একবার ফাইনাল পরীক্ষার পর গ্রীন রোডে খালার বাসায় বেড়াতে যাই । কাজিন শামীম সহ সন্ধায় কিছু একটা করার জন্য রাস্তায় আসতেই এক হুজুর টাইপ লোক ধরে বসল । নামাজ সুরা ইত্যাদি নানা প্রশ্নের উত্তর দিতে হল । ভয়ে সূরা তাসাহুদ একটু ওলট পালট হয় আমাদের দুজনের । আর যাই কই । আমাদেরকে হুজুর নিয়ে যায় কলা বাগান মসজিদে । এশার নামাজ পর্যন্ত সুরা মুখস্ত করন ও নানাবিধ ছবক । এশার আজান পড়লে অজুর কথা বলে এদিক ওদিক তাকিয়ে চলে এলাম । এর পর থেকে জানতে পারি উনারা তাবলিগ হুজুর ।
নামাজের সময় নাকি শয়তান মাথা বুলাতে থাকে যাতে ঘুমের নেশাটা ভালো হয় । ইউনিভার্সিটি জীবনে প্রায়ই আছরের নামাজের সময় এক বন্ধু দাওয়াতের কাজে রুমের দরজা নক করতেন । আর ওই সময় ঘুমটা পোক্ত হত । বন্ধু জন মুচকি মুচকি হাসত আর অন্যরা দাওয়াতের কথা বলত । রুম মেটরা যুক্তি করে একটা বিগ সাইজের পোস্টার এনে রুমের মাঝে রেখে দিলাম । এইখানে সমুদ্র বিচে ওই ছবিটি কমন দৃশ্য় । বন্ধু জন এর পর থেকে একাই আসত । আর দাওয়াতের কাজে বাহির থেকে দুই একটা ডাক দিয়ে চলে যেত ।
জীবন ভ্রমন ১০ : চিড়া-মুড়ি থেকে পিয়াজু- বেগুনি, আর ডুব দিয়ে পানি খাওয়া । সখ করে সবাই ছোটকালে রোজা রাখার চেষ্টা করে । তখন বড়োরা একটু মজা করে বলতেন, ক্ষিদা পেলে দুপুরে গোসলের সময় ডুব দিয়ে পানি খেয়ে নিবি । কেউ দেখবে না ।
আমি বরাবরই হেলথ মিনিস্টার ছিলাম । রোজা রাখা আমার জন্য একটু কষ্টকর ছিল । একদিন ইফতারের সময় একজন বলে উঠল মুকুল আজ ডুব দিয়ে পানি খাইছে । ওরে শরবত না দিলেও চলবে । আরেকজন বলল তুই দেখলি কেমনে ! আমি বললাম দুজন একসাথে ডুব দিয়েছি । জেঠা (বড় চাচা ) বলল আর কিছু খাইছ । বললাম না । “ঠিক আছে ভাল ট্রেনিং হইছে , আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে” । পূর্ণ ৩০ দিনের ট্রেনিং পেতে বহু বছর সময় লেগেছে । তাও এই বিদেশের মাটিতে । চেষ্টার ত্রুটি করি নাই ।
আজকাল ইফতারীর অনেক আইটেম । শিশু কালে জেঠার সাথে বসে ইফতারি করতাম । গুড়-নারিকেল-চিড়ার শরবত , আদা , কাচা ছোলা , ভিজা মুড়ি ও নারিকেল , লেবুর শরবত , ডাবের পানি ইত্যাদি । যে দিন মুসাফির আসত সেই দিন আমাদের কাচারী ঘরে বসে ইফতারি করতাম । জেঠা ৫০ বছর আগে হজ কবেছেন । প্রায় শত বছর পর বেচেছিলেন । শিশুকালে আদব কায়দা জেঠার কাছ থেকে শিখেছি । আমরা মুসাফিরের সাথে বসে খেতে ইতস্ত করতাম । জেঠা বলতেন গরিব হলেও ওরা আজ আমাদের মেহমান । মুসাফিরের সেবা করা ভাগ্যের ব্যাপার ।
১৯৭২ সাল থেকে ঢাকার ইফতারি । ছোলা, মুড়ি, বেগুনি ,পিয়াজো । মোটামটি নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি পরিবেশে । আব্বা মাজে মধ্যে দুই একজন গরিব লোক কে ইফতারির জন্য ডাকতে বলতেন । মসজিদের সামনে যে কয়জন ভিক্ষা করতেন তাদের পাওয়া মুশকিল ছিল । একদিন এক ভিক্ষুক চাচা বললেন – কি খাওয়াবা ? আমি বললাম এই এই আছে । উনি বললেন আজ একটা বিরিয়ানির দাওয়াত আছে । অনেক দিন পর …। তোমাদের বাসায় কাল যাব । ওই সময়ে বিরানীর দাওয়াত । নিশ্চয়ই রেশন দোকানের ব্যবসা ছিল ।
এক রোজার দিনে বিকালের আড্ডা শেষে বাসায় যাচ্ছি ।এক বন্ধু বললো রোজা রাখছস । বললাম না । বন্ধু বললো আমিও না , চল আজ মসজিদে ইফতার করি । বললাম কিভাবে । দুই টাকার ছোলা কিনে আমরা মসজিদে । গিয়ে দেখি গোল গোল হয়ে কয়েকটা গ্রুপ বসে আছে । মাঝখানে বড় একটা থালায সবকিছু একসাথে মিশানো । আমরা এক গ্রুপে বসে ছোলা গুলো থালায ঠেলে দিলাম । আজানের পর সবাই কয়েক মুঠ খেয়ে নামাজে । হাইজেনিক না হলেও সংযম ও সমতার একটা সুন্দর ব্যবস্থা । তাছাড়া পথচারী দের জন্য একটা ভাল ব্যবস্তা ছিল ।
Related Articles
Why do foreign diplomats speak in our domestic affairs?
Bangladesh is in the grip of a political crisis because the ruling and the opposition parties are unable to reach
Canberra Ramadan 2024 (1445H) Starts Tuesday 12th March
Salamu Alaikum WRT, WBT (Peace be on you). The Imams Council of the ACT announces the start of Holy Ramadan
বন্ধুত্বের স্বরূপ
রাজীবের সাথে আমার তেমন কোন পরিচয় ছিল না। তবে ওকে চিনতাম কলেজ জীবন থেকেই। কলেজ জীবনটা আমাদের কাছে ছোট্ট এক