অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট সফরকে অসম্ভব করে তুলবেন না

অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট সফরকে অসম্ভব করে তুলবেন না

বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট দলের শিডিউলড সফরটি পিছিয়ে গেছে। এটি আর এখন হবে কিনা বা হলে কবে হবে সেটিই এখন ভাবনা চিন্তার বিষয়। কিন্তু এই সফর পিছিয়ে যাওয়া নিয়ে বাংলাদেশি কিছু কর্মকর্তা, মিডিয়ার ভূমিকা-ভাষাকে মোটেই দায়িত্বশীল মনে হয়নি। কারণ এরা ভুলে গেছেন নিরাপত্তা সমস্যাটি বাংলাদেশের ভেতরেই অবস্থিত। আর অস্ট্রেলিয়া যে তথ্যটি পেয়েছে এর উৎস বাংলাদেশের গোয়েন্দা সক্ষমতার সমমান সম্পন্ন নয়। কাজেই এসব বিষয়ে তাৎক্ষণিক স্বভাবসুলভ মন্তব্য না করে কূটনৈতিক মুন্সিয়ানা জরুরি। কারণ বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট দলের সফর বাতিল হয়ে গেলে তা দেশের ক্রিকেটে যে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষত সৃষ্টি করবে তা তারা বুঝছেন না বা এখনই বুঝতে চাইছেন না!

বাংলাদেশের অনেকের কথাবার্তায় শুরুতেই যে উপলব্ধি নেই, তা হলো এই সফর অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট টিম পিছিয়ে দেয়নি, পিছিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মধ্যপ্রাচ্যে আইএসবিরোধী যুদ্ধসহ নানা সামরিক অভিযানে অস্ট্রেলিয়া আমেরিকার নেতৃত্বাধীন বহু্জাতিক বাহিনীর সঙ্গে জড়িত। এসবের প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য তারা পায় আমেরিকা-ব্রিটেনসহ নানান বিশ্বসংস্থার কাছ থেকে। এদের কতগুলো গোয়েন্দা উপগ্রহ বাংলাদেশের আকাশেও যে সক্রিয় তা ওয়াকিবহালরাই জানেন। সিরিয়ার আইএস স্থাপনা সমূহে সম্প্রতি বিমান হামলা শুরু করেছে অস্ট্রেলিয়া। এ নিয়ে যে প্রতিশোধমূলক পালটা হামলা ঘটতে পারে এ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার নানা ভয়-সতর্কতা এ দেশটির ভেতরে বসে আমরা টের পাই। পুরো বিষয়টি নিয়ে অস্ট্রেলিয়া বেশ স্পর্শকাতর অবস্থায় থাকার কারণ তার মুসলিম নাগরিকদের অনেকে দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে আইএস-এর পক্ষে যুদ্ধ করছেন। এদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি একাধিক আইন পাশ হয়েছে অস্ট্রেলিয়ান পার্লামেন্টে।

অনেক বাংলাদেশি ব্রিটিশ নাগরিক আইএস-এর পক্ষে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে সিরিয়া-ইরাকে। এদের পক্ষ থেকেও পালটা প্রতিশোধের নিরাপত্তা শঙ্কায় ভুগছে অস্ট্রেলিয়া। কাজেই বাংলাদেশে কোনও নিরাপত্তা শঙ্কা নেই, নিরাপত্তার অজুহাত তুলে অস্ট্রেলিয়া সফর পিছিয়েছে, বাংলাদেশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, মিডিয়ার এসব ভাষায় কিন্তু পরিস্থিতিকে অস্ট্রেলিয়ার আস্থায় আনতে মোটেই সাহায্য করছে না।

এত বিপুল জনসংখ্যার ছোটদেশে যে নিরাপত্তা নজরদারির মা-বাপ নেই তা এই পরিস্থিতির ভেতর ঢাকায় ইতালীয় নাগরিকের খুনের ঘটনায় চোখে আঙ্গুল দিয়ে স্পষ্ট করে দিয়েছে! এক মোটরসাইকেলে গুলশানের মতো জায়গায় তিন বাংলাদেশি এক বিদেশিকে অনুসরণ করে লোকজনের সামনে গুলি করে মেরে চলে গেলো! কী নিরাপত্তা দক্ষতা আছে বাংলাদেশের? অন্তত এই সময়টাও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা একটু সতর্ক থাকতে পারতেন না? না এই মূহূর্তে সব নিরাপত্তা মনোযোগ তারা অস্ট্রেলিয়ান অফিশিয়ালসদের নিরাপত্তায় ঢেলে দিয়েছিলেন! আর সব থাকুক ফকফকা! এসব ঘটনা থেকে বারবার বাংলাদেশকে শিক্ষা নিতে বলা হয়। কিন্তু কে শোনেন কার কথা? একজন কম জানলেতো আরেকজনের কথা শুনবেন। বাংলাদেশের দায়িত্বশীলরাতো অনেক বেশি জানেন ভাবেন! তারা আরেকজনের কথা শুনবেন কেন! সফর নিয়ে সিদ্ধান্ত নিলো অস্ট্রেলিয়ার সরকার আর গত ক’দিন ধরে বাংলাদেশের মিডিয়ায় যেভাবে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট টিমকে ধুয়ে দেওয়া হলো বা এখনও হচ্ছে, এর প্রতিক্রিয়ায় অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা এই মূহূর্তে বাংলাদেশে আদৌ নিরাপদ কিনা তা নিয়ে আমি সন্দিহান! কারণ এখন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট টিম বাংলাদেশে গেলেও ‘কিছুসংখ্যক দেশপ্রেমিক’(!) অসি ক্রিকেটারদের দিকে বোতল মারবেন অথবা নানান বর্ণবাদী মন্তব্য করবেন! সবশেষ দক্ষিণ আফ্রিকার সফরের সময় এমন ঘটনা ঘটেছে। টেলিভিশনের টকশোগুলোতে দেখলাম অনেক ‘বিশিষ্ট ব্যক্তি বলছেন পাকিস্তান-ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকার সফর নিয়ে কোনও ঘটনা ঘটলো না, অস্ট্রেলিয়ার বেলায় এমন শঙ্কা দেখানো উদ্দেশ্যমূলক! ওই বিশিষ্ট ব্যক্তিরা নিশ্চয় জানেন পাকিস্তান-ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশসগুলো মধ্যপ্রাচ্য আইএস তথা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে না। তাদের সঙ্গে তুলনামূলক অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তা সতর্কতাটি মিলিয়ে দেখা অমূলক। আর অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তা শঙ্কাটি সাম্প্রতিক বেড়েছে সিরিয়ায় বিমান হামলা শুরু করার পর। কাজেই যে নিজেই ভয় পাচ্ছে তাকে আস্থায় নিতে হবে। অমূলক কটাক্ষ করলে তাকে আরও ভীতসন্ত্রস্ত পিছিয়ে দেওয়া যাবে। এতে কার লাভ? কোনও কোনও মিডিয়ায় দেখলাম বলা হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট টিমের অবস্থা ভালো না। তারা তাই ভয় পেয়ে বাংলাদেশে আসতে চাইছে না! এই মন্তব্যকারীদের সম্ভবত অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট অবকাঠামো-রিসোর্স এসব নিয়ে তথ্য ঘাটতি আছে। কত ক্রিকেটার যে এদেশের জাতীয় দলে সুযোগের অপেক্ষায় বছরের পর বছর মুখিয়ে আছেন! এরা খেলা পাগল জাতি। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট টিমও বাংলাদেশে যাবার জন্য মুখিয়ে ছিল। তাদের সরকার যদি সিদ্ধান্তটি না নিতো এ অবস্থা হতো না। কাজেই আসল বাদ দিয়ে নকল নিয়ে উল্টা-পাল্টা মন্তব্য করে দেশের ক্ষতি করবেন না। ক্রিকেট ট্যুরটি যদি না হয় বাংলাদেশ দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির মুখে পড়বে। এখন ট্যুরটি বাতিল হয়ে গেলে সেটি আর কবে হবে তা নিশ্চিত নয়। কারণ নভেম্বরে নিউজিল্যান্ড অস্ট্রেলিয়ায় আসবে। তারা তখন ব্যস্ত হয়ে যাবে সে ট্যুর নিয়ে। কোনও কোনও অস্ট্রেলিয়ান মিডিয়া আমিরাতে বাংলাদেশের সঙ্গে খেলাটি স্থানান্তরের জন্য বলা শুরু করেছে! এমন কিছু হলে সেটি হবে আরেক আত্মঘাতী যাত্রা! বাংলাদেশ চলে যাবে পাকিস্তানের কাতারে! কাজেই বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের মিডিয়াকে পুরো বিষয়টি সতর্কতার সঙ্গে হ্যান্ডেল করতে হবে। কারণ অস্ট্রেলিয়ান ট্যুর বাতিল হলে ভবিষ্যতে ইংল্যান্ডসহ আরও অনেককে কিন্তু বাংলাদেশে আনা কঠিন হয়ে উঠতে পারে।


Place your ads here!

Related Articles

শত্রু শফি বন্ধু শফি

ফজলুল বারী: যে হেফাজতে ইসলাম বিএনপির সমর্থনে ঢাকায় এসে শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে মতিঝিল সহ রাজধানী জুড়ে তান্ডব চালিয়েছে

যন্ত্রের দৌরাত্ম্য

যন্ত্র যেমন একদিকে আমাদের জীবনযাপনকে সহজ ও সুন্দর করেছে ঠিক তেমনি মাত্রারিক্ত যন্ত্র নির্ভরতা আমাদেরকে ঠেলে দিচ্ছে খারাপ পরিণতির দিক।

নজরদারিতে প্রধান বিচারপতি!

ফজলুল বারী: অস্ট্রেলিয়া এসেও বাংলাদেশ সরকারের নজরদারিতে আছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র নাথ সিনহা! এখানকার প্রবাসী বাংলাদেশি সূত্রগুলোর ধারনা তাই। দু’

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment