১৫ ই অগাস্ট

১৫ ই অগাস্ট

পনেরই আগস্ট প্রতিবারই আসে আমাদের সামনে দুঃখ, বেদনা, ােভ, যন্ত্রণা নিয়ে। এইদিনই বাংলাদেশের সামগ্রিক দৃশ্যপটের পরিবর্তন হয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে। সেইদিনের কথা মনে হলে আমি শোকে আপ্লুত হই আর ভাবি যা আমাদের সামনে এগোবার প্রক্রিয়াকে পিছিয়ে দিয়েছিল। আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের ছাত্র, সাংবাদিকতাতে পড়ি। ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে বেশ সক্রিয়। ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা নগরের সভাপতি। তাই স্বাভাবিক কারণেই সে সময় অনেক কিছু সম্মুখেই দেখবার বা জানবার সুযোগ হয়েছিল। প্রতিবারই ভাবি আমার অনুভূতির কথাগুলো লিখব। আজ ঢাকা থেকে একটা ফোন পেয়ে কিছু অন্ততঃ লিখবার তাগিদ অনুভব করলাম। গত বছর ঢাকাতে সেলিম ভাই বলছিলেন তুমি মাহবুব জামানকে সঙ্গে নিয়ে একবার অফিসে এসো এবং আমরা সবাই মিলে সেই সময়ের কিছু ঘটনাগুলো স্মরণ করি, তার ধারাবাহিকতাগুলো সম্পর্কে একটু এসেস করার চেষ্টা করি। পরে হয়তো এই তথ্যগুলো হেল্প করবে আমাদের বা অন্যদের পথ চলার দিকনির্দেশক হিসেবে। আমরা খুব শিঘ্রই ইতিহাস ভুলে যাই। তাই প্রয়োজন এটাকে সংরণ করা। একটা ডিজিটাল রেকর্ডার কিনে ফেলেছিলাম তার জন্য। কিন্তু মাহবুব ভাইয়ের ব্যস্ততার জন্য তা সময় করে বসতে পারি নি।

পনেরোই আগস্ট ছিল আমাদের জাতির জন্যই সত্যি একটি বিয়োগান্তক ঘটনা। নৃশংক হত্যার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে আমাদের স্বাধীনতার বিজয়কে মূলে আঘাত করা হয়েছিল। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে আমি এবং আমার সহকর্মীরা সেদিনের তীব্র প্রতিবাদ করেছিলাম। নিজে একজন ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য হয়ে আমরা সেদিন সবাই মিলে বেশ সাহসিকতার সঙ্গে রুখে দাঁড়িয়েছি। বঙ্গবন্ধু রেসকোর্সে আমাদের সম্মেলনে বলেছিলেন যে, আমি মরব তবুও আমি সাম্রাজ্যবাদের কাছে মাথা নত করবো না। প্রতিক্রিয়াশীল, দণিপন্থীদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধেই তিনি সাহক করে দাঁড়িযেছেন বাংলাদেশের কাক্সিত শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থার জন্যই। মানুষ আর আম জনতার জন্যই তাঁর এই দৃঢ় প্রত্যয় আমাকে আর আমার বন্ধুদের তাঁর এই হত্যার বিরুদ্ধে রুখে দছাড়াতে আমাদের সাহক জুগিয়েছে এবং আমরা দাঁড়িয়েছিলামও।

ঢাকা ইউনির্ভার্সিটিতে আমরা ’৭৫-এর ১৫ তারিখে প্রস্তুতি নিচ্ছি ছাত্র শিক কেন্দ্র জাতির পিতা এবং বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আসবেন ছাত্র শিকদের উদ্দেশ্যে একটি নীতি নির্ধারক ভাষণ দিতে। ডাকসুতে তখন আমাদের সেলিম ভাই আর মাহবুব ভিপি ও জিএস. স্বাভাবিক কারণেই কিছুটা বেশি দায়িত্ব পড়েছিল আমাদের উপর সমগ্র অনুষ্ঠান যাতে নির্বিঘেœ করা যায়। পুরো সপ্তাহ ধরে কাজ চলছে কলেজ, স্কুল এবং ইউনির্ভার্সিটিগুলোতে। আমি ও নুরু, ছাত্র লীগের নগর সভাপতি পুরো ঢাকা শহর চষে বেড়িয়েছি, শিা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যাপক জমায়েত আর সভা করেছি ছাত্র শি দের সম্প্রীতি সভা যাতে সবাই মিলে নতুন দিনের জন্য কাজ করতে পারি একত্রে। সবশেষে পালা ঢাকা ইউনিভার্সিটির ১৪ তারিখ রাতে আমাদের প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। হঠাৎ খবর পেলাম সায়েন্স এনেক্স বিল্ডিংএ একটি বোমা ফুটিয়েছে।

খবর পেয়ে আমরা দৌড়ে সবাই গেলাম। দেখলাম এর ফলে কিছু ফার্নিচার ড্যামেজ হয়েছে আর ছাত্ররা একটু আতঙ্কিত। আমরা বুঝিয়ে নিলাম এটা আমাদের বিরোধীদের কাণ্ড। তারা আমাদের এই নবযাত্রাকে শুরুটাই বাধাগ্রস্থ করতে চায়। আমরা বেশ সতর্ক হয়ে গেলাম এবং খুব ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চললাম অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সঙ্গে।

সারাদিন চলে গেল কলা ভবনের সায়েন্স এনেক্স করে। কাজ করছি আর ভাবছি একটা কিছু চলছে ভেতরে ভেতরে যা আমরা কিছু জানি না। একটা কিছু আঁচ করা যাচ্ছিল যে, বিরোধিরা একটা ষড়যন্ত্র আঁটছে। মুজাহিদুল ইসলাম, মাহবুব জামান, শেখ শহীদ, নূহ উল আলম লেনিন, ইসমত কাদির গামাসহ অনেকেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং কাজ কর্ম তদারকি করছেন। সঙ্গে সব সময় আছে শেখ কামাল। তাকে আমরা বিদায় দিলাম রাত ১২টার দিকে অনেকটা তার ইচ্ছার বিরুদ্ধেই। তাকে বলা হলো রাতে রেষ্ট করে খুব সকালে যাতে চলে আসে। আমরা তাকে নানা কাজে সবসময় একসঙ্গে পেয়েছি।

৬০ দশকে অনেক মিছিল করেছি একসঙ্গে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে, এগারো দফা আর রাজবন্দীদের মুক্তির দাবিতে হোক, তারুন্নে খোড়া একজন সক্রিয় ছাত্র কর্মী। সে যাই হোক আমরা কজন থেকে গেলাম ইউনিভার্সিটিতে অনেক রাত অবধি। সেটা হবে প্রায় রাত ১টা। লেনিন ভাইয়ের সঙ্গে অনেক রাত পর্যন্ত দাঁড়িয়ে বটতলার রেলিং ধরে কথা বলছিলাম আর আঁচ করছিলাম কি হতে পারে আর কি করে এটা বের করা যায় কারা এর সঙ্গে জড়িত। আমার মনে ভয় হয়েছিল যে বঙ্গবন্ধুর একটা তি করার চেষ্টা চলছে।

লেনিন ভাইকে বললামও। একথাও বললাম মোস্তাকের মত রিএ্যাকশনারীদের নিয়ে বাকশাল নির্বিঘেœ করা যাবে? ওদের নিশ্চয়ই একটা ইল মটিভ আছে। এইসব নিয়ে আরো অনেক কথা হলো। আমি এও বললাম বঙ্গবন্ধুর অতো প্রত্যয়ের কথা যা তিনি আমাদের জাতীয় সম্মেলনেই বলেছিলেন। যাই হোক আমরা কজন রাত দুটার পরে চলে গেলাম হলগুলোতে। আমি ছিলাম সূর্য সেন হলে, সঙ্গে মটর সাইকেল, যা ছিল আমার সব কাজের সঙ্গী। পামের হলের নেতাদের বলাছিল কোন রুমে আমি থাকব। যাতে খুব সকালে আমাদের উঠিয়ে দিতে পারে সকালের বঙ্গবন্ধুর অনুষ্ঠানে। হোটেল রুমের দরজা জোরে জোরে ধাক্কা “কামরুল ভাই উঠুন, সর্বনাশ হয়ে গেছে!” দরজা খুলে দেখি সূর্য সেন হলের খোকন দাঁড়িয়ে। কান্না ভেজা কণ্ঠে বলছে, “এইমাত্র রেডিওতে এ্যানাউন্স করলো বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে।” শুনে তো স্তম্ভিত। আমি বললাম তোমরা ওয়াচফুল থাকো এবং খোঁজ খবর নাও। আমিও যাই নির্ভরযোগ্য খবর নিতে। আমাদের কর্মীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে আমি চলে গেলাম পার্শ্বে পিলখানা বিডিআর হেড কোয়ার্টারএ ভাবলাম ওখানে কারেক্ট খবর পাওয়া যাবে। ওখানে আমার চাচা জেনারেল এনাম কাজ করেন জেনারেল খলিলুর রহমানের সঙ্গে। বিডিআর চীফ উনিও আমাদের এলাকার লোক হিসাবে খুবই পরিচিত। যেয়ে দেখি চাচা বাসাতে নাই। খবর পেয়ে খুব সকালে মিটিং-এ গেছেন মিটিং করতে। আমার আসার খবর পেয়ে চাচীকে দিয়ে জানালেন অপো করতে।

প্রায় দু ঘণ্টা পর উনি এসে বললেন আমরা বিডিআর এখনও ওদের সঙ্গে জয়েন করিনি। আমরা কিছু একটা করার চেষ্টা করছি এই অপকর্মের বিরুদ্ধে। তুমি থাকো। আমার কাছ থেকে কিছু খবরও উনি নিলেন ইউনিভার্সিটির অবস্থা। আমি রেডিও শুনছি আর কটা জায়গা ফোন করে খবর নিলাম। রেডি তে দেখলাম অনবরত বলেই চলেছে ডালিমের কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুকে খুন করার কথা। শুনতে শুনতে একেবারে চোখে পানি এসে গেল। সকাল ১১টা হতে হতে নেভি, এয়ারফোর্স, আনসার, পুলিশ হুমকির মুখে কুচক্রীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করলো। বিডিআর করলো সবশেষে। পরে বুঝলাম ওরা পুরো ব্যাপারটা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ফেলেছে। আর্মি, পুলিশ, নেভি, এয়ারফোর্স, সবাই বন্দুকের মুখেই ওদের সঙ্গে চলে গেল ওদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে শুধু গুলির ভয়ে।

বঙ্গবন্ধুর মতো লোককে যারা হত্যা করতে পারে তারা ওদের হত্যা করতে একটু পিছপা হবে না। যেমন হত্যা করেছিল কর্নেল জামিলকে একদিন রাতে। কিছুটা হতাশ হয়ে বেরিয়ে পড়লাম পুরনো ঢাকার কয়েকটি বাড়িতে। সব জায়গাতে দেখলাম একটা চাপা ােভ এবং হতাশা। কোন একটা নির্দেশের অপোতে। কিন্তু তেমন কোন একটা সাড়া আসলো না কেন্দ্রীয় নেতাদের প থেকে। সবাই স্তম্ভিত হয়ে কৌশল নিল সরে থাকার। আমিও আলাপ করে তাই করবার সিদ্ধান্ত নিলাম অন্তত ক’দিনের জন্য। ঢাকা শহরের কিছু কর্মীদের নিয়ে আমরা কদিনের মধ্যেই নেটওয়ার্ক গড়ে তুললাম। শুরু হলো আবার নতুন করে প্রস্তুতি। যেহেতু আমি ইউনিয়নের সর্বশেষ নগর কমিটির সভাপতি ছিলাম তাই নরমালি আমার ওপর দায়িত্ব পড়লো নারায়ণগঞ্জসহ বৃহত্তর ঢাকার। ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ হলো। শেখ শহীদ ভাইকে কোনভাবেই যোগাযোগ করা গেল না। সেলিম ভাই, লেনিন ভাই, মাহবুব ভাই, আকরাম ভাই ও ঢাকা ইউনিভার্সিটির নেতাদের সঙ্গে ভালো নেটওয়ার্ক গড়ে উঠল অল্প সময়ের মধ্যেই। আমরা ঠিক করলাম যে, যেভাবেই হোক একটা ডেট ঠিক করে আমরা বড় ধরনের একটা প্রটেষ্ট র‌্যালি করবো।

ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে কথা হলো। ঠিক হলো আমরা ক’জন ওখানে বসে দিন তারিখ ঠিক করবো। আমরা প্রায় জন দশেক ছিলাম মিটিংএ মমতাজ ভাইয়ের বাসায় নয়া পল্টনে। নূরুসহ আরো ক’জন ও নগর ও কেন্দ্রীয় নেতা ছিল। নূরু বললো, ওদের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিয়ে লড়তে হবে। ওই খুনীদের অস্ত্র দিয়েই মোকাবেলা করতে হবে। ভীষণ সাহসী কর্মী। আমাদের সৈয়দ নূরু। সে ছিল ছাত্র লীগের নগর সভাপতি। কিন্তু আমরা অনেককেই বললাম তা নয় আমাদের দেশের ভিতর থেকে ওদের মোকাবেলা করতে হবে সবাইকে নিয়ে। সবাই মত দিল আমাদের প।ে নূরু বেশ উত্তেজিত হয়ে সভা থেকে বলে গেল এবং পরে জানলাম সে চলে গেছে খুনিদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াইয়ের জন্য। তার অনেক সহকর্মী তার সঙ্গে দেশের বাইরে প্রতিরোধ লড়াইয়ে অংশগ্রহণের জন্যে চলে গিয়েছিল। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কিছু দেশপ্রেমিক তরুণদের নিয়ে সে চেষ্টা করেছিল তাদের সংগঠিত করতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে কোন ষড়যন্ত্রের জন্য দুর্ভাগ্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করতে হয়।

এক মাসের মধ্যেই আমরা আবার নিয়মিত ওপেন জাযগায় আসা শুরু করলাম আমাদের কন্ট্যাক্ট পয়েন্টগুলে তে। উদ্দেশ্য একটা বড় ধরনের প্রতিবাদ সংগঠিত করা। কেও বা কাশে বার কেউ বা খেলার মাথাই জেয়ে নিজেদের সবার সঙ্গে এসোসিয়েট করেছে। আমাদের এই কৌশল বেশ কাজে দিল। কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে কিছু শক্তি যা ছিল মাইক্রোস্কপি তারা তো ওত পেলে রইল কিভাবে আমাদের ভয় দেখিয়ে সরিয়ে দেয়া যায়। এজেন্সীগুলো অনেক টাকা ঢাললো আর নানা ভাবে হুমকি দেয়ার চেষ্টা হলো। মুলত তথাকথিত পিকিং পন্থী কিছু দল আমাদের বিভিন্নভাবে ঝামেলা শুরু করতে লাগলো। যাই হোক কয়েকদিনেই মধ্যেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম যে আমরা একটা প্রটেষ্ট র‌্যালি করবো এবং তা বের হবে মধুর ক্যান্টিন থেকে। যেই চিন্তা সেই কাজ। আমরা ইউনিভার্সিটি ছাত্র আর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছাত্রদের নিয়ে জড়ো করলাম মধুর ক্যান্টিনে। সকালে জমায়েত হয়ে দেখি ওরা হকি স্টিক নিয়ে কজন বসে আছে ক্যান্টিনের ভেতর।

আমাদের জমায়েত একটু বড় হতেই ওরা প্রস্তুতি নিলো আমাদের আঘাত করতে। আর আমরা সঙ্গে সঙ্গে তাদের একসঙ্গে রণহুঙ্কার দিয়ে তাদের ইউনিভার্সিটি ছাড়া করছিলাম আর সবাইকে নিয়ে প্রথম প্রতিবাদ সংহত করেছিলাম ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে। কাজী আকরাম হোসেনের সেই এ্যাসাল্েটর নেতৃত্ব দেখাল। সেদিন ওই প্রতিবাদ সংহত করার পর আমাদের দুঃখ, বেদনা যেন কিছু সময়ের জন্য তিরোহিত হলো। প্রতিনিয়ত বঙ্গবন্ধু হত্যার সংঘটিত হবার পর কোন প্রতিবাদ না করতে পরাই আমরা অনেকটা মনোবেদনাই হতাশাই ভুগছিলাম। সবা কে নিয়ে এমনি একটি প্রতিবাদ করাতে দেশ জুড়ে খবর ছড়িয়ে গেলো আর প্রস্তুতি শুরু করলেন এমনি একটি কর্মসূচির। ছোট ছোট গোপন সভা আর লিফলেট ওয়াল পোষ্টারিংয়ের চেষ্টা হলো।

আমাদের নেতারা লিফলেট ছেপে ঢাকা শহরে বিলির প্রস্তুতি নিল। ঢাকা শহরকে কয়েকটি জোে ন আমাদের ভাগ করে কাজ করতাম। যথাসময়ে লিফলেট ছেপে বিভিন্ন কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হলো এ কাজে মটর কার, বেবী ট্যাক্সি, মটর সাইকেল ব্যবহার করা হলো। কয়েক ল লিফলেট পৌছে গেল মুহূর্তের মধ্যেই বিভিন্ন এলাকায়। এ কাজে মূলত ছাত্র ইউনিয়ন কর্মীরা ছিল সব চাইতে উদ্যোগী। লিফলেট বিলি করতে যেয়ে ধরা পড়লো, ঢাকা নগর কমিটির শওকত হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজল বন্দ্যোপাধ্যায় ও চামেলীবাগ এর শাহ জামাল, সিদ্দিকসহ আরো অনেকেই। ওদের দীর্ঘদিন জেল খাটতে হয়েছে আর কঠিন নির্যাতনের মধ্যেই থাকতে হয়েছে। ওদের আজকের দিনে স্মরণ করি শ্রদ্ধাভরে। তাদের সাহস আজ আমরা কিছুটা হলেও সামনে এগুতে পেরেছি। হয়তো আমাগ তে আরো পারবো।

কেন্দ্রীয় ভাবে বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিবাদ করার জন্যে বেশ কটা তারিখ হলো। কিন্তু এবার ঠিক হলো একটু সময় নিয়ে করা হবে জাতে ব্যাপক মানুষকে নিয়ে করা যায়। সর্বশেষ তারিখ ঠিক হলো ৩রা নভেম্বর। সিদ্ধান্ত হলো আমার সুধুই পদযাত্রা করে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে শ্রদ্ধা জানাই ফুল দিয়ে আসবো। বিভিন্ন মহল থেকে ব্যাপক সুড়া মিলছিল এ প্রোগ্রামের। ক্রমশ এই বর্বর হত্যার বিরুদ্ধে মানুষ গণতান্ত্রিক ভাবে এগিয়ে আসছিল। খুব সকালেই শোক র‌্যালী হবে ৩রা নভেম্বরের। সব প্রস্তুতি শেষ। যোগাযোগ রা করে চলছি যাতে সুশৃঙ্খল ভাবে মিছিল করা যায়।

রেজাউল হায়াত ভাই ছিলেন আমাদের কাছের মানুষ। এক সঙ্গে কাজ করেছি। ৭৪এ বিভিন্ন ক্যাম্পে। ম্যাজিষ্ট্রেট আর ছাত্র ইউনিয়নের কর্মীরা দুর্ভি ক্যাম্পগুলো চালিয়েছে। আমি ছিলাম ডাকসুর প থেকে ওটার কোঅর্ডিনেটর। দীর্ঘ ক মাস অকান্ত কাজ করে আমরা প্রশাসনের বেশ কাছেই এবং তাদের কনফিডেন্স পেয়েছিলাম। সঙ্গে ছিল আমাদের অনেক কর্মী। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য এম. এম. আকাশ, শওকত হোসেন, খোন্দকার জুলিয়াস, একরাম আহমেদসহ আরো অনেকেই। সে যাই হোক আমাদের বড় যে প্রোগ্রামের প্রস্তুতির কাজ প্রায় শেষ ঠিক ওইদিন ৩ নভেম্বর তারিখ সকালে আমাকে ফোন করে সেলিম ভাই জানালেন একটা খারাপ খবর শুনলাম। তুমি এখনই মটর সাইকেল নিয়ে সেন্ট্রাল জেলে চলে যাও। আমি খেন্দকার শওকত হোসেন জুলিয়াস (বর্তমানে ডিভিশনাল কমিশনার, ঢাকা)কে নিয়ে চলে গেলাম সেন্ট্রাল জেলে এবং ডেপুটি জেলারের বাসাতে গিয়ে চার নেতা হত্যার বিষয়টি কনফার্ম হলাম। মটর সাইকেল নিয়ে চলে গেলাম সেলিম ভাইয়ের কাছে খবর পৌঁছানোর জন্যে। উনি জানালেন তুমি এটা কাকেও আপাতত বলো না, তাহলে পুরো ব্যাপারটা গুবলেট হয়ে যাবে। মিছিল আর শেষ করা যাবে না। তাই হলো আমি চুপ করে থাকলাম।

পরে ওই শোকযাত্রা পরেই ঘোষণা দেয়া হলো চার নেতার নির্মম হত্যার বর্ণনা। দ্রুত সারা শহরে খবর ছড়িয়ে পড়ল। ৪ নেতাকে হত্যা করা হয়েছে জেলের ভিতরে নির্মমভাবে। ব্যাপক জনসমাগমের খবর শুনে খুনিরা আমাদের জাতীয় নেতা তাজউদ্দিনসহ সবাইকে হত্যা করেছে যাতে আমরা বিকল্প শক্তি গড়ে তুলতে না পারি।

এসব হচ্ছিলো ছক বাধা নক্সা অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু পরে ৪ নেতাকে হত্যা আমাদের সামনে চলার পথকেই রুদ্ধ করার চেষ্টা হচ্ছিলো এবং এমনি অনেক ঘটনার জন্য চেষ্টা চলছে আজও। আমার আজও মনে পরে শেখ কামাল ভাইয়ের সময় আমরা যখন গিয়াছিলাম তখন আমরা ছাত্র নেতৃবৃন্দ অল লাইন সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। জাতীয় নেতার সামনে দিয়া যাচ্ছিলেন বঙ্গবন্ধু আর শেখ কামালকে আশীর্বাদ করতে। এক সময় এলেন খন্দকার মোস্তাক। সেলিম ভাই আমাকে বাঙালী সিআইএ এজেন্ট দেখো মোস্তাক এর দিকে অঙ্গুলী দেখিয়ে। উনি এতোটা ুব্ধ হয়ে বলছিলেন যে অনেকটাই শুনতে পাচ্ছিল হয়তো। আামি উনার পাঞ্জাবী ধরে টেনে বলেছিলাম আস্তে বলেন শুনে ফেলবে। রিসিপশনের এডজ্যাক্ট তারিখটা আমার মনে নেই তবে সেটা ছিল বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর কদিন আগে। সবাই জানতো সে একজন সাম্রাজ্যবাদের এজেন্ট এবং ভেতর ভেতর ষড়যন্ত্র আঁটছে। তবুও তাকে নিয়ে এবং তার মতো আরও লোকদের নিয়ে করা হয়েছিলো বাকসাল। তাদেরি হাতে শেষ পর্যন্ত প্রাণ দিতে হলো বঙ্গবন্ধু আর তার পরিবার আর তার সহকর্মি বীর ৪ জাতীয় নেতাকে। আজও যারা তোশামুদি করে বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ও তার দলকে নানাভাবে অসহযোগিতা করতে চাচ্ছে তাদের ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন। যারা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের নামে সবকিছু নামকরণ এর নামে বঙ্গবন্ধুকে ছোট করেছেন খুব অতিসত্তর তাদের ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন আছে। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু শুধু বঙ্গবন্ধুর তি করেনি পুরো জাতিকে পিছিয়ে দিয়েছে অনেক। যার কারণে তাকে হত্যা করা হলো সেই আদর্শ থেকে যদি তার কর্মীরা বা দল সরে আসে তাহলে সেই আদর্শ বাদদিয়া কি জাতির পিতা হিসেবে ** করে আমাদের জাতি হিসেবে কোন লাভ আছে আমাদের? তাই ভাবী যদি সত্যি বঙ্গবন্ধু কে শ্রদ্ধা জানাতেই হয় তাহলে তার ঘোষিত নীতিকে অনুসর করেই এগুতে হবে অন্যথাই আমার কোন বিজয়কে ধরে রাখাতে পারবো না। বঙ্গবন্ধুর ৩৯ তম মৃত্যু দিবসী আমাদের সবারই হোক প্রত্যাশা যা তার ঘোষিত নীতিমালা বাস্তবই কার্যকর করে আমরা তাকে শ্রদ্বা জানাই। শুধু তার নাম সর্বস্ব চাটুকারিতা করে আমরা তেমন অর্জন করতে পারবো না।


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment