লেবাননে বাংলাদেশি নারীদের দেখবে কে ? যেখানে রাষ্ট্রদূত নিজেই …!
![লেবাননে বাংলাদেশি নারীদের দেখবে কে ? যেখানে রাষ্ট্রদূত নিজেই …!](https://priyoaustralia.com.au/wp-content/uploads/files/2014/modern_day_slavery_595350378-890x395_c.jpg)
স্ক্যান্ডিনেভিয়ান ক্যাপিটাল সুইডেনে স্ক্যান্ডাল ! হাঁ, ২০১৩ সালে স্টকহলমে ঘটে যাওয়া অপ্রকাশিত কিছু সত্যের মুখোমুখি হতেই এই মন্তব্য প্রতিবেদনের সূত্রপাত। তার আগে পাঠক চলুন মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বেশি নারী শ্রমিকের দেশ লেবাননে, যেখানে কর্মরত প্রায় ২ লাখ বাংলাদেশি নারীদের ৬০ হাজারই হচ্ছেন গৃহপরিচারিকা।
‘কাফা’ ও ‘লিগ্যাল এজেন্ডা’ নামের দু’টি সংস্থা কর্তৃক বাংলাদেশি ও নেপালী নারী কর্মীদের উপর পরিচালিত অতি সাম্প্রতিক বিশেষ জরিপ অনুযায়ী, ৮২ ভাগ নারী কর্মীকে তাদের মতের বিরুদ্ধে কাজ করতে বাধ্য করা হয়। প্রতিদিন ১৬ থেকে ২০ ঘন্টা কাজ করে থাকেন ৬২ ভাগ নারী। এক মাস বা বেশি সময়ের জন্য বেতন আটকে রাখা হয় ৫৪ ভাগ নারী শ্রমিকের। কখনও একা বাইরে যেতে দেয়া হয় না ৯০ ভাগকে। সাপ্তাহিক ছুটির অধিকার থেকে বঞ্চিত ৯১ ভাগ।
জরিপের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, বাইরে থেকে তালাবদ্ধ রেখে কাজ করতে বাধ্য করা হয় ৫০ ভাগ নারী শ্রমিককে। রান্নাঘরে ঘুমান ১৯ ভাগ, ব্যালকনিতে ৭ ভাগ, বাথরুমের কাছেও ঘুমাতে বাধ্য করা হয় অনেককে। ভালো খাবার খেতে দেয়া হয় না ৩২ ভাগকে। মারাত্মক যৌন নিগ্রহের শিকার শতকরা ১০ ভাগ নারী। বাংলাদেশি নারী কর্মীদের উপর অব্যাহত যৌন নির্যাতনের ব্যাপকতা বিশেষভাবে হাইলাইটেড হয়েছে উক্ত জরিপে।
মরুপ্রান্তর ভেসেছে আজ আমাদেরই মা-বোনদের চোখের জলে, লেবাননের আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে চাপা কান্নায়। তাদের দেখভাল করতে সরকার আদৌ আন্তরিক কি-না বা প্রবাসী কল্যান মন্ত্রণালয় করেটা কি – এসব প্রশ্ন বিগত দিনে বহুবার উচ্চারিত হয়েছে এবং হচ্ছে। প্রবাসী কল্যান মন্ত্রণালয়ের সাথে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা নিয়েও অতীতে কথা উঠেছে বহুবার। কার কানে কে দেবে পানি ? আগে জর্ডান থেকে দেখা হলেও গত বছর লেবাননে প্রতিষ্ঠিত হয় পূর্ণাঙ্গ বাংলাদেশ দূতাবাস।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, এমন একজন ব্যক্তি লেবাননে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে আছেন যার স্ত্রী কর্তৃক গৃহকর্মীকে নির্যাতন তথা জঘন্য অপকর্মের খেসারতে গত বছর সুইডেনে ইমেজ সংকটে পড়ে বাংলাদেশ, বিনষ্ট হয় লাল-সবুজ পতাকার ভাবমূর্তি। লেবাননে দায়িত্বরত বর্তমান রাষ্ট্রদূত গওসোল আযম সরকার তখন স্টকহলমে। সুইডেন ছাড়াও নরওয়ে ফিনল্যান্ড ডেনমার্ক ও আইসল্যান্ড, এতোগুলো দেশের বিশাল দায়িত্ব পালনে তিনি কতটা উপযুক্ত ছিলেন তা নিয়ে কানাঘুষা হয় বিভিন্ন মহলে। এমনও শোনা যায়, ঐ সময় দায়িত্বে থাকা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিশেষ আস্থাভাজন হবার সুবাদে ২০১০ সালের অক্টোবরে বেশ ক’জন সিনিয়র কূটনীতিবিদকে ডিঙিয়ে গওসোল আযম সরকারকে প্রথম বারের মতো রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল সুইডেনে।
৫টি দেশের দায়িত্বে তার সাফল্য-ব্যর্থতা মূলায়নের আগেই ঘটে অঘটন। স্টকহলমের অভিজাত বাড়িতে কর্মরত গৃহপরিচারিকা তৈয়বাকে অনেক আগ থেকেই নিয়মিত দৈহিক নির্যাতন করতেন রাষ্ট্রদূতের স্ত্রী সাদিয়া আযম। তৈয়বাকে কাজের জন্য নিয়ে আসা হয়েছিল ঢাকা থেকে। দিনকে দিন টর্চারের মাত্রা যখন প্রায় সীমাহীন, এমন এক সময় গত বছর মার্চে অত্যাচার-নির্যাতন আর সইতে না পেরে তৈয়বা কোনমতে বাড়ি থেকে পালিয়ে সোজা গিয়ে উঠেন পুলিশ অফিসে। নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। জানাজানি হয়ে যায় সুইডিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।
রাষ্ট্রদূত গওসোল আযম সরকারের স্ত্রী কর্তৃক গৃহপরিচারিকা তৈয়বাকে শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা স্টকহলম পুলিশের তদন্তে প্রমাণিত হবার পর যা হবার তাই হলো। জিরো টলারেন্স। সাদিয়া আযমকে সুইডেন ছাড়ার নির্দেশ দেয় সুইডিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কয়েক মাসের মাথায় গ্রীষ্মকালীন ছুটির পরপরই রাষ্ট্রদূত গওসোল আযম সরকারকে সুইডেন থেকে সরিয়ে নেয় বাংলাদেশ সরকার। স্টকহলম টু বৈরুত। নির্মম বাস্তবতায় এভাবেই রচিত হয়েছিল নেক্কারজনক এই ট্র্যাজেডি।
সময়ের পরিক্রমায় লেবানন প্রবাসী ২ লাখ বাংলাদেশি নারীদের সুখ-দুঃখ দেখভালের দায়িত্বে আজ সেই রাষ্ট্রদূত গওসোল আযম সরকার। তার মধ্যে ৬০ হাজার বাংলাদেশি গৃহপরিচারিকার অধিকার রক্ষায় তথা নির্যাতিতা বাংলাদেশি নারী কর্মীদের আর্তনাদে তিনি কি ব্যথিত হবেন? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সিনিয়র কূটনীতিবিদ এই প্রতিবেদককে আফসোস করেই বললেন, গৃহপরিচারিকার স্বার্থ রক্ষায় যিনি নিজের ঘরেই ছিলেন উদাসিন, তিনি কি করে আজ লেবাননে হাজার হাজার স্বদেশী নারীদের কান্না থামাবেন ?