টাকার হিসাব দিন
স্মরনকালের ভয়াবহ “রানা প্লাজা দুর্ঘটনায়” এখন পর্যন্ত ১১৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায়। উদ্ধারকৃত প্রায় ১৮০০ জন ছোট-বড় নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
দুর্ঘটনার প্রায় নয় মাস অতিক্রান্ত হলেও রানা প্লাজার হতাহতদের এক রেশমা ছাড়া কারো কথাই আমাদের তেমন স্মরণ নেই। না থাকারই কথা। নানা সমস্যাসংকুল এই দেশে এক ঘটনা নিয়ে বেশিদিন পরে থাকার জো নেই।
বিস্মৃতপ্রায় রানা প্লাজা দুর্ঘটনা আবার আলোচনায় আসে হতভাগী সালমার আত্মহত্যার কারণে। পত্রিকায় প্রকাশ, রানা প্লাজার সাততলার একটি কারখানায় সালমা চাকরি করতেন। দুর্ঘটনার প্রায় পাঁচ-ছয়দিন পরে উদ্ধারকর্মীরা সালমাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছিল। মাথায় আঘাতসহ তার শরীরে রড ঢুকে গিয়েছিল এবং কয়েকটি স্থানে হাড় ভেঙ্গে গিয়েছিল।
কয়েকমাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত দেড়মাস ধরে সালমা স্বামী-সন্তানসহ নতুন করে জীবন শুরু করেছিলেন। একটা চাকুরীও করছিলেন বলে জানা যায়। কিন্তু সেইসাথে অসহ্য শারীরিক যন্ত্রণাও তার নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছিল।
যথাযথ চিকিত্সা ও আর্থিক অনটনের কারণে সম্প্রতি সালমা আত্মহত্যা করেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।
যেহেতু সালমার মৃত্যুর অন্যতম কারণ হিসেবে “আর্থিক কারণ” প্রকাশ পেয়েছে, তাই আমাদের সৈয়দ আশরাফ সাহেব নড়েচড়ে বসেছেন। সালমার আত্মহত্যার প্রকৃত কারণ চিকিৎসার অভাব ও আর্থিক অনটনের জন্য নয় বলে তিনি বিবৃতিও দিয়েছেন।
খুব ভাল কথা। কিন্তু তবে কেন সালমা মাত্র ষাট হাজার মতান্তরে সরকারি ও বিভিন্ন সাহায্য সংস্থা থেকে মাত্র ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পেয়েছিলেন বলে তার আত্মীয় স্বজন দাবি করছে?
সৈয়দ আশরাফ যেখানে বেশ দায়িত্বের সাথে জোর গলায় দাবি জানালেন যে, সালমাকে কত টাকা সাহায্য দেয়া হয়েছিল তার ব্যাংক একাউন্টে খোঁজ নিলেই জানা যাবে। তাহলে সৈয়দ সাহেব কেন সালমার ব্যাংক একাউন্টে কত টাকা সরকারী তহবিল থেকে দেয়া হয়েছিল সেই স্টেটমেন্ট প্রকাশ করছেন না? এটা তো তার দায়িত্ব।
আমরা জানতে চাই প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য পাঠানো আমাদের টাকার কতটুকু হতভাগী সালমা পেয়েছিল?
দেশ বিদেশের বিভিন্ন কোনা থেকে রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য ১০০ কোটির উপর সাহায্য প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে পাঠান হয়েছিল। যে যেভাবে পেরেছে সাহায্য করেছে। স্কুলের বাচ্চা থেকে শুরু করে দিনমজুর পর্যন্ত সাহায্যের হাত প্রসারিত করেছিল। এছাড়াও গণজাগরণ মঞ্চের কথা বলেও বিভিন্ন দেশে রানা প্লাজার ভিকটিমদের জন্য টাকা ওঠানো হয়েছিল।
প্রশ্ন হলো এই সাহায্যের টাকা রানা প্লাজার আহত এবং নিহতদের পরিবার কে কত পেয়েছিল?
প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে জমাকৃত ১০০ কোটির মধ্যে ১৮.৫ কোটি টাকা সাহায্য এখন পর্যন্ত দেয়া হয়েছে বলে সিপিডি তাদের গবেষণায় সম্প্রতি প্রকাশ করেছে। অনেকেই এখনো প্রতিশ্রুত অর্থ সাহায্য পায়নি বলে জানা যায়!!!
যাদের জন্য অর্থ সাহায্য পাঠানো হয়েছে, তাদেরকে না দিয়ে দীর্ঘ নয় মাস ধরে সেই টাকা কেন প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে এখনো পরে আছে? তাহলে বাকি টাকা কিসের জন্য রাখা হয়েছে?
যদি রানা প্লাজার কেউ এক কোটি করেও পায়, তাতেও তো আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কারণ এই টাকা আমরা শুধু, শুধুই ওদের জন্য পাঠিয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে অলস ফেলে রাখার জন্য নয় কিংবা কবে কোন ভবন পুনরায় ধ্বসে পড়বে সেই আশায়ও নয়।
তবে কেন যাদের জন্য অর্থ দেয়া হয়েছে তাদেরকে দেয়া হচ্ছে না? আমরা এর জবাব চাই। জবাবদিহি সরকারকেই দিতে হবে।
আমরা চাইনা পর্যাপ্ত টাকা সালমাদের নামে বরাদ্দ থাকার পরও আর কোনো সালমা অর্থাভাবে দুনিয়া ছেড়ে চলে যাক। ওদের টাকা ওদেরকে দিয়ে দিন।
রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য গঠিত তহবিলের টাকার হিসাব দিন। এখন পর্যন্ত কাকে কত টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন, সে টাকার হিসাব সংবাদপত্রে প্রকাশ করুন। স্বচ্ছতার পরিচয় দিন।