চালাকের যুগে এক বোকা পাপীর গল্প

চালাকের যুগে এক বোকা পাপীর গল্প

-বিচারক কহিলো, “এখনো সময় আছে, সত্য স্বীকার করিয়া লও।”

-“তিন সত্য করিয়া কহিতেছি হুজুর, আমি বিসিএস পরীক্ষায় নকল করি নাই।” বলিয়া মনে মনে তওবা করিয়া নেয় আসাদুল। বিসিএস পরীক্ষায় সে বেশুমার নকল করিয়াছে।

-বিচারক কহিলো, “বয়স কত তোমার?”

-আসাদুল কহিলো, “সাতাশ বছর হুজুর।”

-রায় হইলো। বিচারক রায় পড়িয়া শুনাইলো, “আগামী দুই বৎসর তোমার জন্য যাবতীয় বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা হইলো।”

রায়ে চরম নাখোশ হইয়া, বন্ধু-বান্ধব লইয়া, আসাদুল প্রেস ক্লাবে সন্মেলন করিয়া ঝড় তুলিতে লাগিলো। বিবেচক মানুষেরা তাহার পক্ষে সরব হইয়া রব তুলিলো, “এ ক্যামন কথা! বিসিএস দেয়ার বয়স শেষ হইবেক তিরিশ বৎসরে। সাতাশ বছর বয়সে, আসাদুল দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ হইলে, সে-তো আর মাত্র একবারই বিসিএস দিতেক পারিবে।”

আসাদুলের ঘটনা দমিতে না-দমিতেই আসিলো বাহালুলের পালা।

-বিচারক কহিলো, “বেকার ভাতার টাকা দিয়া নেশা করো?”

-বাহালুল কাকুতি করিয়া বলিলো, “বিশ্বাস করুন হুজুর, আমি বেকার ভাতা দিয়া গঞ্জিকা সেবন করিনি।” বলিয়া মনে মনে তওবা করিলো। গঞ্জিকা সেবন না করিলে কি হইবে, বেকার ভাতার টাকা দিয়া সে বাংলা মদ তো ঠিকই কিনিয়া খাইয়াছে।

-রায় হইলো। বিচারক রায় পড়িয়া শুনাইলো, “নতুন চাকুরী পাওয়ার আগ পর্যন্ত তোমার বেকার ভাতা বন্ধ থাকিবে। তবে, তোমার পরিবারের হাতে বেকার ভাতার অর্ধেক পরিমাণ টাকা তুলিয়া দেয়া হবে।”

রায়ে চরম অসন্তুষ্ট হইয়া বাহালুল পাড়ার চৌরাস্তার মোড়ে ঝড় তুলিলো। বিবেচক মানুষেরা তাহার পক্ষে সরব হইয়া রব তুলিলো, “এ ক্যামন কথা। চাকুরী পাইলেতো তার বেকার ভাতার টাকা আপনা-আপনি বন্ধ হইবেক। তাহা হইলে, চাকুরি পাওয়া পর্যন্ত বেকার ভাতা বন্ধ রাখিবার কি মানে! মানে দাঁড়াইলো, সারাজীবনই সে আর বেকার ভাতা না পাইবেক। ভাতার পরিমাণ এমনিতেই কম, সেটাকেও আবার অর্ধেক করিয়া পরিবারের হাতে দিলে ক্যামনে কি হইবেক?”

আসাদুল-বাহালুলের ঘটনা ধামাচাপা পড়ার পর, এবারে আসিলো তৃতীয়জন।

-বিচারক কহিলো, “সত্য করিয়া কও হে।”

-এবারে বিবাদী লজ্জিত হইয়া কহিলো, “হুজুর আমি অপরাধী, আমাকে শাস্তি দেন, আমার ভুল হইয়া গেছে।”

-বিবাদীর স্বকণ্ঠে দুগ্ধপোষ্য শিশুর মত স্বীকারোক্তি শুনিয়া বিচারক ‘মুগ্ধ’ হওয়ার বদলে ‘ক্ষুব্ধ’ হইলেন। বলিলেন, “আরো দুইটা বিশ্বকাপ ফুটবল শেষ হইলে তারপরই কেবলমাত্র তুমি স্বকাজে নিয়োজিত হইতে পারিবে, তাহার আগে ঘোড়ার ঘাস কাটিয়া দিনাতিপাত করিবে।”

-দুগ্ধপোষ্য শিশু ‘তথাস্তু’ বলিয়া নতশিরে বিচার মানিয়া লইলো।

শুধু নীরবে শিশুর বাবাটি হিসেব কষিয়া দেখিলো, আরো দুইটা বিশ্বকাপ পার হইলে, তাহার ছানাটির আর স্বকর্মে নিয়োজিত হইবার সুযোগ থাকিবে না। বিবেকবান মানুষেরাও সে হিসেবটা বুঝিতে পারিলো। কিন্তু, তাহারা সবাই চুপ করিয়া রইলো। তবে, ক্ষণে ক্ষণে, মাথার কেশ ছিঁড়িয়া কহিতে লাগিলো, “সবই ঠিক ছিলো, কিন্তু, সত্যি কথাটা কহিবার কি প্রয়োজন ছিলো! ব্যাটা আহাম্মক কোথাকার! সত্যি কথাটা না কহিলো, কি সুন্দর আমরা বিবেক লইয়া তোর পাশে দাঁড়াইতে পারিতাম! যত্তসব।”

বাসায় ফিরিয়া যাইবার পূর্বে বিবেচকদের হঠাৎ মনে পড়িলো, আসাদুল, বাহালুল সকলের নামইতো জানা হইলো, কিন্তু, এই সত্যবাদী আহাম্মকটার নামতো জানা হইলো না। এবারে তাহারা হাঁকিয়া কহিলো, “ওহে, বেচারা, নাম কি তোমার? শাহাদুল না জালালুল?” বেচারা কহিলো, “মোহাম্মদ আশরাফুল।”


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment