উলালা!! দিল মে মেরা পাকিস্তান, মেরা হিন্দুস্তান
![উলালা!! দিল মে মেরা পাকিস্তান, মেরা হিন্দুস্তান](https://priyoaustralia.com.au/wp-content/uploads/files/pak_314007931-890x395_c.jpg)
ধরুন, আপনি খেলাধুলার প্রতি মহা অনুরক্ত। আপনার নিজের দেশটি খেলছে না। তখন কি আপনি সুশীল সমাজের সদস্য হয়ে যাবেন? ভাবছেন, খেলার সাথে সুশীলের সম্পর্ক আবার কি? ঠিক আছে একটু খোলাসা করেই বলি।
সুশীল সমাজ যেমন কোনো রাজনৈতিক দলকে সাপোর্ট করেন না এবং নিজেদের নিরপেক্ষ দাবি করে সুশীল বনে যান, খেলার মাঠে কিন্তু সেই নিরপেক্ষতার ভানে সুশীল হওয়া সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। নিজের প্রিয় দলটি সেদিন যদি না খেলে নিজের অজান্তেই সেদিনের কোনো না কোনো টিমের প্রতি সমর্থন এমনিতেই এসে পড়ে। অর্থ্যাত খেলাধুলার ক্ষেত্রে সুশীল হয়ে নিরপেক্ষভাব বজায় রাখা মুশকিল হয়ে পড়ে। এটাই স্বাভাবিক। খেলাধুলায় কোনো দলকে সাপোর্ট না করলে আসলে খেলা দেখার আনন্দই ফিকে হয়ে যায়।
আমরা বাংলাদেশের মানুষ ফুটবল আর ক্রিকেটটাই মূলত দেখি। বিশ্ব ফুটবলে বাংলাদেশ যেহেতু অংশগ্রহনের যোগ্যতা অর্জন করেনি, তাই আমরা বাংলাদেশীরা বেশিরভাগই ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা-ইতালী-ফ্রান্স বা অন্য কোনো দেশকে সমর্থন দিয়ে থাকি। বাড়িতে বাড়িতে প্রিয় দেশটির পতাকা উড়াই, জার্সি গায়ে দেই। আড্ডায়-আলাপে-আলোচনায় দল নিয়ে কেউ কটুক্তি করলে হাতাহাতি, মারামারি এমনকি লাঠালাঠিও করি। দুর্ভাগা অনেকেই চাপ সহ্য করতে না পেরে স্ট্রোক করে পরপারে পাড়িও দিয়েছেন। অর্থ্যাত সমর্থনের ব্যাপারে আমরা বাঙালিরা মহা সিরিয়াস প্রজাতির।
অথচ ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার অনেকেই জানেন না বাংলাদেশ নামক এই দেশটি আসলে কোথায় অবস্থিত। তাতেও আমাদের অবশ্য কিছু যায় আসে না। কারণ আমরা খেলাধুলাপ্রেমী। আমরা অন্য দেশকে নির্ভেজাল সমর্থন দিতে ভালোবাসি। এমনকি মরতেও প্রস্তুত থাকি।
এবার আসি ক্রিকেটের কথায়। বাংলাদেশ যখন ক্রিকেট খেলত না, তখন এদেশের বেশিরভাগ ক্রিকেটবোদ্ধারা পাকিস্তান ও ভারতকেই মূলত সাপোর্ট জানাত। এ কথা সত্য যে, শুধু খেলার জন্য নয়, অন্যান্য অনেক কারণ আছে যার জন্য কেউ এই বিশেষ দুই টিমকে সাপোর্ট করেন।
অস্ট্রেলিয়ার সাথে এশিয়ান কোনো টিমের খেলা হলে কেউ তখন শুধু এশিয়ায় অবস্থিত জন্য দলকে সাপোর্ট জানান। কেউ আছেন একই ধর্মগোত্রীয় বলে, কেউ আছেন বিশেষ কোনো খেলোয়াড়ের খেলা ভালো লাগে জন্য, আবার কেউ কেউ আছেন খেলার ধার না ধেরে শুধুই সুদর্শন খেলোয়াড়ের জন্য এই টিম দুটির প্রতি অনুরক্ত।
প্রিয় পাঠক খেয়াল করুন, খেলার মধ্যে কিন্তু আমি মোটেও রাজনীতি মেশাচ্ছি না। দিল মে যাদের পেয়ারা পাকিস্তান আর হিন্দুস্তান শুধু তাদের সাপোর্টিংয়ের মনস্তত্ব নিয়ে কিঞ্চিত আলোকপাত করছি মাত্র।
এত গেল বাংলাদেশ যখন খেলত না সেই আমলে কেন কেউ কেউ পাকিস্তান ও ভারত দলকে ক্রিকেটে সমর্থন করত তার শানেনযুল।
কিন্তু যখন আমাদের নিজেদের প্রিয় এই দেশটি খেলা শুরু করলো, ক্রমেই নিজেদের অবস্থান পোক্ত করলো তখন কোথায় ভারত আর কোথায় পাকিস্তান! আমরা সবাই বাংলাদেশ দলকেই অকুন্ঠ সমর্থন জানাব এটাই তো স্বাভাবিক। আর এটাই তো হওয়া উচিত। নিজের দেশ যখন অন্য কারো সাথে খেলবে আমরা তো নিজের দলকেই সমর্থন দেব। এখানে অন্য কোনো “কিন্তু ” আসার প্রশ্নই আসে না।
দল হারলে কাঁদব, মন খারাপ করে অনিদ্রায় ভুগব, কেউ নিজের দলকে খারাপ বলতে চাইলে মারামারি, হাতাহাতি, এমনকি লাঠালাঠি করব। নিজেদের খেলায় পতাকা, জার্সি গায়ে খেলার আমেজে নিজেদের দেশকে উদ্বুদ্ধ করব।
কিন্তু আমরা বাস্তবে কি দেখছি? বাংলাদেশ দল যখন পাকিস্তান বা ভারতের সাথে খেলছে তখনও কেউ কেউ আছে (এবং আশ্চর্যের বিষয় হলো তারা অনেকেই এ প্রজন্মের!!) যারা বাংলাদেশকে সাপোর্ট না করে ভারত বা পাকিস্তানকে সমর্থন দিচ্ছে!!! নিজেদের বাংলাদেশী পরিচয় দানকারী এসব সমর্থক শুধু মনে মনে নয়, প্রকাশ্যে নির্লজ্জের মত পাকিস্তান বা ভারতের পতাকা গায়ে, মাথায়, বুকে জড়িয়ে খেলা দেখতে আসছে।
যারা নিজেদের দেশের খেলার সময়ও অন্য কোনো দেশকে সমর্থন জানায়, এদের দ্বারা দেশবিরোধী যেকোনো কাজ করা সম্ভব। এরা পাকিস্তান বা ভারতের কথায় নিজেদের দেশ ধ্বংস করতেও পিছপা হবে না। যারা মনে মনে দেশের হারের জন্য প্রার্থনা করে, তাদের দ্বারা সব কিছু নাশকতা সম্ভব।
ভারতে যেমন ক্রিকেট খেলায় পাকিস্তান সমর্থনকারীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করেছে, আমাদের প্রশাসনেরও উচিত দেশের খেলার দিন প্রকাশ্যে অন্যের পতাকা গায়ে এইসব সমর্থনকারীদের চিন্হিত করে তাদের কর্মকান্ডের প্রতি নজরদারি করা।
সমর্থন করতে চান, নিজের বাসায় বিহারীদের মত চাঁদ-তারা কিংবা চাকা মার্কা পতাকা লাগিয়ে টিভিতে খেলা দেখে সমর্থন করুন। কিন্তু দেশের মাটিতে গ্যালারিতে বসে বাংলাদেশের খেলার দিন অন্য দলকে সমর্থন জানানো কিছুতেই আমরা মেনে নেব না।
খেলার মাঝে রাজনীতি ঢুকাবেন না এই খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে অন্য দলকে সমর্থন আর মেনে নিতে পারি না আমরা। নির্লজ্জতারও একটা সীমা থাকে!
আপনি শেখ মুজিবকে ঘৃনা করতে পারেন, হাসিনাকে দেখলে আপনার দিনটাই কুফা হয়ে যেতে পারে, তার মানে এই নয় যে আপনাকে পাকিস্তান সাপোর্ট করতে হবে। আপনি জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধ করা না করা নিয়ে সন্দিহান থাকতে পারেন, খালেদাকে নিয়ে আপনার মনে অনেক প্রশ্ন থাকতে পারে, তার মানে এই নয় যে আপনি ভারতকে সমর্থন জানাবেন।
আপনি ভুলে যেতে পারেন যে, পাকিস্তান দেশটির অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন আমাদের পূর্বপুরুষ, আপনি হয়ত ভুলে যেতে পারেন ভারতের আগ্রাসী মনোভাবে আমরা কিভাবে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়ছি, কিন্তু আমরা যারা আমাদের প্রিয় এই দেশটিকে ভালোবাসি তারা এসব ভুলে নিজেদের দেশকে ছেড়ে ওই দুই দেশকে কখনই নির্লজ্জের মত সমর্থন জানাতে পারি না। সে যতই তারা ভালো খেলুক না কেন। এখানে রাজনীতি নয়, এখানে মূল কথা হল দেশপ্রেম।
হারি-জিতি আমরা বাংলাদেশকেই সাপোর্ট করি। কারণ আমাদের স্বত্বাই হল আমাদের ক্রিকেট দল।
কাজেই যারা উলালা গেয়ে দিল হ্যায় হিন্দুস্তানি অথবা দিল মে মেরা পাকিস্তান করছেন তাদের প্রতি রইল আমাদের নিদারুন ঘৃনা, করুণা ও ধিক্কার।