প্রধানমন্ত্রী কি আদুরির কপালেও স্নেহের চুম্বন আঁকবেন?
কঙ্কালের মত ভাগাড়ে পরে ছিল আদুরী নামের হাড় জিরজিরে একটি শিশু। মহানুভব পুলিশ কর্মকর্তাকর্তৃক উদ্ধার হয়ে ছোট্ট শিশুটির ঠাই হয়েছে হাসপাতালে। জানা যায় ১১ বছরের ছোট্ট মেয়েটি পেশায় ছিল একজন গৃহকর্মী। বেতন ছিল মাসে ৫০০ টাকা, সাথে থাকা ও খাওয়ার বন্দোবস্ত।
মাত্র ৫০০ টাকায় ৯ বছরের একটি শিশু ২৪ ঘন্টার শ্রম বিক্রি করেছিল নওরীন নদী নামক এক গৃহকত্রীর বাসায়। ২ বছর ধরে সে সেখানে বাসাবাড়িতে কাজ করছিল। বিনিময়ে দু বেলা ভাত তো দুরের কথা, স্বাস্থ্যবান গৃহকর্মীর দ্বারা অসহনীয় অত্যাচারের শিকার হয়েছিল মেয়েটি।
জানিনা কি এমন গুরুতর অপরাধ করতে পারে ওই ছোট্ট শিশুটি, যে শাস্তি হিসেবে ব্লেড দিয়ে চিরে চিরে দেয়া হয়েছিল তার নিস্পাপ মুখ। গরম খুন্তি দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল ওর বাড়ন্ত বয়সের অপুষ্ট শরীর। না খেয়ে খেয়ে এতই দুর্বল হয়েছিল যে, ভাগাড়ের পাশে পড়ে থেকেও নড়ার মত তার শক্তি ছিল না। লাশ ভেবে ওর ক্ষত বিক্ষত শরীরের উপর ভনভন করা ওর থেকেও স্বাস্থ্যবান ডুমো নীল মাছিগুলো তাড়ানোর মত শক্তিটুকুও নিঃশেষ করে নিয়েছিল ৫০০ টাকায় কিনে নেয়া পাষন্ড গৃহকর্মী।
আদুরী কিংবা আদুরীর মত সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশুদের কি আদৌ বেঁচে থাকার কোনো অধিকার এই দেশে আছে? যদি থেকে থাকে তবে আদুরীদের অধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি নিয়ে মন্ত্রনালয়ে শপথ নেয়া সেইসব মন্ত্রীরা এখন কোথায়?
জানি সমস্যাসংকুল এই দেশে সবার ঘরে ঘরে গিয়ে অধিকার রক্ষা হচ্ছে কি না জানা কখনই সম্ভব নয়। কিন্তু প্রকাশ্য দিবালোকে আদুরীরা যখন দেশের উন্নয়নের চিত্রটি নগ্নভাবে জনসম্মুখে প্রকাশ করে দেয়, তখন জানতে ইচ্ছে করে আমাদের জনগনের কষ্টার্জিত টাকায় শপথ নেয়া এইসব মন্ত্রীরা আসলে করেন কি?
বাংলাদেশে মহিলা ও শিশু মন্ত্রনালয় আছে। বেগম মেহের আফরোজ চুমকি নামক একজন জনপ্রতিনিধি সেই মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের শপথ নিয়েছিলেন বলে জেনেছি। এই মন্ত্রনালয়ের ওয়েব সাইটে গেলে মহিলা ও শিশুদের অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে অনেক সুন্দর সুন্দর কথার ফুলঝুরি দেখা যায়। কিন্তু বাস্তবায়ন কি আদৌ হয়? পোশাকশিল্পের মহিলাদের স্বার্থ রক্ষায় তাদের এগিয়ে আসতে দেখিনা, আদুরী নামক শিশুদের অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রেও তারা নিশ্চুপ। সবিনয়ে জানতে চাই, মাননীয় প্রতিমন্ত্রী কি ছোট্ট এই কন্যা শিশুটির মৌলিক অধিকার রক্ষায় কোনো ভূমিকা পালন করবেন? নাকি ভাগাড়ে পরে থাকা এই শিশুটির অধিকার রক্ষার দায়িত্ব তার নয়?
শ্রম মন্ত্রনালয়ের মাননীয় মন্ত্রী রাজু উদ্দিন আহমেদ রাজু এবং প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান কি আদুরী নামক শিশুটির শ্রম বিক্রির ন্যায্য অধিকার রক্ষায় এগিয়ে আসবেন? এভাবে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে আদুরির মত শিশুরা নাম মাত্র টাকায় ২৪ ঘন্টা দিয়ে ঠিকমত খেতে পর্যন্ত পারে না, তাদের অধিকার রক্ষায় মন্ত্রীমহোদয়ের কি কিছুই করনীয় নেই?
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের কাছে জানতে চাই আদুরী নামক মেয়েটির শিক্ষার দায়িত্ব কি তাঁর মন্ত্রনালয়ের নয়? আদুরী সুস্থ হয়ে যাতে স্কুলে যেতে পারে, তিনি কি তার নিশ্চয়তা প্রদান করতে পারেন না?
পত্রিকা পরে জানতে পেরেছি আদুরির পরিবার এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আদুরী ও তার পরিবারের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়া কি স্বরাস্ট্র মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব নয়? যদি হয়ে থাকে তবে মাননীয় মন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীরের কাছে জানতে চাই আদুরীদের উপর অত্যাচারের বিচার চেয়ে উল্টা অপরাধীদের ভয়ে থাকতে হবে কেন? কবে আদুরীরা নিশ্চিত হয়ে স্বাস নিতে পারবে? অপরাধ করে শাস্তি পাওয়া তো দুরের কথা অপরাধীরা উল্টা ভিকটিমকে হুমকি-ধামকি দেয়ার এই কালচার বন্ধ হবে কবে?
ঐশীর মত বখাটে ইয়াবাখোর খুনির অধিকার রক্ষায় সোচ্চার বাংলাদেশের মানবাধিকার কমিশন এবং সেই সাথে কিছু মানবাধিকার সংস্থার সুশীল গন্যমান্য ব্যক্তিরাই বা এখন কোথায়? আদুরীরা কি মানুষ নয়? নাকি ওদের মত মানুষের কোনো অধিকার নেই? আদুরির অধিকার রক্ষায় কেন তারা নিশ্চুপ?
আর সবার কথা না হয় বাদ-ই দিলাম। দেশের সকলের অধিকার রক্ষায় শিপথ নিয়েছেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। জাতিসংঘে বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য যখন তিনি বক্তৃতা দিচ্ছিলেন তখন ভাগাড়ে লাশের মতই পরে ছিল আদুরী। মালালার মত সুবিধাবঞ্চিত শিশুটির কপালে যখন আমাদের মামনীয় প্রধানমন্ত্রী স্নেহের চুম্বন এঁকে দেন, তখন দেশে মালালার মতই কিংবা তার থেকেও বেশি সম্ভাবনাময়ী আদুরীরা শিক্ষাবঞ্চিত হয়ে, শারীরিকভাবে নির্যাতিত হয়ে মৃত্যু পথযাত্রী হয়।
মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রীরা হয়ত দেশোদ্ধারের গুরুতর কাজে ব্যস্ত, মানবাধিকার কমিশন হয়ত পত্রিকায় কলাম লেখা কিংবা টক শোতে কি বলবেন এই নিয়ে ভাবনাচিন্তায় আদুরির দিকে তাকানোর সময় পাচ্ছেন না, কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি কি জাতিসংঘের সম্মেলন শেষে একটিবারের জন্য যাবেন হতভাগ্য মেয়েটির কাছে? আপনি কি দিতে পারেন না আদুরির কপালেও স্নেহের একটি চুম্বন?
