Paromita'r Gaaner Kontha God Gifted
পারমিতার গানের কন্ঠ গড গিফটেড -অজয় কর
আমাদের কেনবেরার সন্তান পারমিতা । গত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১২ সন্ধ্যাতে কেনবেরার গান্গালীন কলেজে কুমার বিশ্বজিতের কনসার্টে পারমিতার গাওয়া গানের প্রসংশা সকলের মুখে ।
কনসার্টের আগের রাতে (২৮ সেপ্টেম্বর) কুমার বিশ্বজিতের সন্মানে দেওয়া ঘরোয়া এক ডিনারে উপস্থিত সকলের অনুরোধে পারমিতা দুটো গান গেয়েছিল- ওর সেই গান শুনে বিশ্বজিত পারমিতার গানের কন্ঠ ‘গড গিফটেড’ বলে প্রসংশা করে তখনি পারমিতাকে বলেছিলেন স্টেজে তার অনুষ্ঠানে আগামীকাল গান গাইতে ।
[কুমার বিশ্বজিত যে ভাবে পারমিতার গানের প্রসংশা করলেন সেটা জানতে এখানে এই লিঙ্কটি তে ক্লিক করুনঃ http://www.youtube.com/watch?v=dRs2XjrkpR0&feature=plcp ]
কুমার বিশ্বজিত যেভাবে পারমিতার গানের প্রসংশা করছিলেন তা যে বিশ্বজিতের লোক ভুলানো কোনো সস্তা মানের প্রসংশা ছিল না সেটা আমি বুঝতে পাড়ছিলাম, কিন্তু পরিচিত দু একজনের কাছে বিশ্বজিতের আচরণ সম্পর্কে যা শুনেছি সেই ‘শোনা’ আচরনের সাথে ঘরোয়া আড্ডাটাতে খুব কাছ থেকে ‘দেখা’ আচরনের অসম্ভব রকমের অমিল দেখতে পাচ্ছিলাম আমি । আমার ভিতর তাই বিশ্বজিতকে নিয়ে তখনও অনেক সংশয় চলছিল । তবে সব সংশয়ের অবসান ঘটলো পরের দিন সন্ধ্যা বেলায় ।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১২ , কেনবেরাতে সারাক্ষণ ধরেই ঠান্ডা বাতাস বইছিল । সন্ধ্যাবেলায় সেই ঠান্ডা আবহাওয়ায় ঘর থেকে বেড় হতে মন চাইছিল না । তা ছাড়া আগের রাতে কুমার বিশ্বজিতের সন্মানে দেওয়া ডিনারে বিশ্বজিতের সাথে আলাপচারিতার যে সুযোগ হয়েছিল তার পর কনসার্টে গিয়ে ওর গান শুনতে না পারার জন্যে সীমার কিংবা আমার কোণো আপসোস হছিল না ।
তখন ঘড়িতে বিকেল ৫.১৫ । ফোন আসছে- সীমার ঘনিষ্ঠ অনেকেই যাচ্ছে বিশ্বজিতের কনসার্টে । সীমা মত পাল্টালো – ও বলল, ‘টিকিট যখন কেনাই আছে চল যাই’ । অন্তত ছোট্ট বেলায় শোনা ‘পুতুলের মত করে সাজিয়ে’ এই জনপ্রিয় গানট গাইতে বিশ্বজিত’কে অনুরোধ করার একটা সুযোগতো পাব?’ ঝটপট তৈরী হয়ে নিলাম । গান্গালীন হলে পৌছাতে একটু দেরিই হয়ে গেল । দূর থেকে হলের সামনে মানুষের ভির দেখে সীমা কিছুটা ভয় পেয়ে গেল – নিশ্চয়ই কোনো গন্ডগোল । আমারও তেমন ই মনে হলো । এর আগে কেনবেরার এক কমুনিটি হলে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আমাদের যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তার পর থেকে বাঙালী অনুষ্ঠানে মানুষের ভিড় দেখলে সীমা সবার আগে আমাকে সাবধান করে দেয় । ও জানে কোনো গন্ডগোল দেখে পিছু হটে যাওয়ার লোক আমি নই, বরং ঘটনার কারনটা জানতে আমি বরাবরই আগ্রহী থাকি । এবারেও তাই হলো । সীমাকে একটু নিরাপদ দুরে রেখে সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখলাম ঘটনাটি কি? গেটের কাছ থেকে ফিরে এসে, ভয়ের কোনো কারণ নেই জানিয়ে, সীমাকে নিয়ে তাড়াতাড়ি কনসার্ট হলে আসন নিশ্চিত করতে ভিড়ের মধ্যে আমরাও লাইনে দাড়িয়ে পরলাম । যখন হলের মধ্যে আসন পেলাম তখন প্রায় সোয়া ৬টা বাজে ।
ঠান্ডা আবহাওয়া স্বত্তেও হল ভর্তি দর্শক দেখে একটু অবাক হয়েছিলাম – অনুষ্ঠানে দর্শক হবে কি হবে না অনুষ্ঠানের আগের রাত পর্যন্ত এ নিয়ে আয়োজক সুমন আর নিউটনের চোখে মুখে দুশ্চিন্তা ছিল, কারণ অনেকেই নাকি শেষ পর্যায়ে এসে টিকিট ফেরত দিচ্ছিল । কুমার বিশ্বজিতের কনসার্টে মানুষের এমন ভিড় দেখে কুমার বিশ্বজিত সম্পর্কে আমার সেই পরিচিত লোকজনদের দেওয়া ধারণাটির অমিল নিয়ে হলের মধ্যে যখন চুপি চুপি কথা বলছিলাম সীমার সাথে ঠিক সেসময় মাইক্রোফোনে ফাতেমা তুজ জোহরা (সুমি)’র ঘোষণায় কেনবেরার গায়িকা ‘পারমিতা দে’ স্টেজে উঠে এলো । পারমিতাকে স্টেজে দেখে অনেকে অবাক হলেও আমি এতটুকুও অবাক হইনি – কেননা আগের রাতের ডিনারে কুমার বিশ্বজিত পারমিতার গানের যে ধরনের প্রসংশা করছিলেন, যে ভাবে ওর অনুষ্ঠানে পারমিতাকে গান গাইতে বলছিলেন সেটা যে সত্য ছিল , কোন রকম ভনিতা ছিল না তাতে, সে টা আমি জানতাম ।
বিশ্বজিতের জন্যে তৈরী সেদিনের স্টেজে পারমিতাকে গান গাইতে সুযোগ দেওয়া বড় মনের শিল্পী ‘কুমার বিশ্বজিতের’ পক্ষ্যেই সম্ভব । পারমিতাও পর পর দুটো সুন্ধর গান শুনিয়ে আমরা যারা দর্শক ছিলাম তাদেরকে মুগ্ধ করতে পেরেছিল- তা না হলে দর্শকরা বোধ করি এ গান দুটোর জন্যে আয়োজকদের তক্ষনি ভালমন্দ দু একটা কথা শুনিয়ে দিতেন । যাদের পক্ষ্যে বিশ্বজিতের কনসার্টে পারমিতার গান শুনার সুযোগ হয়নি তাদের জন্যে ওর গাওয়া সেদিনের একটি গানের লিঙ্ক দেওয়া হলো এখানে – http://www.youtube.com/watch?v=EDY20YOZssU&feature=relmfu
আমারতো মনে হয় আমরা কেনবেরার দর্শকরা মুগ্ধ হয়ে সেদিন বিশ্বজিতের স্টেজে পারমিতার গান দুটো শুনে এটাই প্রমান করলাম যে আমরা কেনবেরাতে গুনী শিল্পীর কদর করতে জানি । বস্তুত: সে রাতে পারমিতার গান শুনার পর আমি আর সীমা ইউটিউব থেকে পারমিতার অনেক কয়েকটি গান শুনেছিলাম – যার মধ্যে ওর বিটিভিতে গাওয়া গান ও ছিল । আমি এর আগে জানতাম না যে পারমিতা বিটিভিতে গান গাইত । এখানে ওর বিটিভিতে গাওয়া একটি গানের লিঙ্ক দেওয়া হল- http://www.youtube.com/watch?v=JwxKTaC7D74&feature=plcp
পারমিতার গান শেষ হলে ‘সূর্যোদয়ে তুমি সূর্যাস্তেও তুমি ও আমার বাংলাদেশ’ এই গানটি গাইতে গাইতে মঞ্চে উঠে এলেন কুমার বিশ্বজিত- হল ভর্তি দর্শকদের করতালি- এ করতালি তাদের প্রিয় গায়ক কুমার বিশ্বজিত কে স্বাগত জানানোর করতালি । রীতিমত সম্ভাসন জানিয়ে কুমার বিশ্বজিত উপস্থিত সবাইকে দৃঢ়তার সাথে জানালেন যে কেনবেরাতে এটাই তার প্রথম কনসার্ট [ঘরোয়া পরিবেশে আলাপচারিতায় জেনেছি বিশ্বজিত এর আগে কেনবেরাতে এসেছিলেন কিন্তু কোনো একক কনসার্ট করেন নি].
বিশ্বজিতের শিল্পী জীবনের উপর ৪ মিনিটের একটা প্রামান্য চিত্র দেখানোর পর সুরু হলো ওর মন মাতানো গান- একে একে গাইলেন ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’, ‘ও ডাক্তার’, ‘পদ্মা মেঘনা’, ‘পতুলের মত করে সাজিয়ে’ এমন অনেক গান । গানের মাঝে মাঝে মজার মজার কৌতুক করে যে ভাবে দর্শকদের মাতিয়ে রেখেছিল বিশ্বজিত তা সত্যিই মনে রাখার মত ।
কনসার্টে বিশ্বজিতের গাওয়া কয়েকটি গানের লিঙ্ক এখানে দেওয়া হলোঃ
http://www.youtube.com/watch?v=-FawbDuTvN8&feature=plcp
http://www.youtube.com/watch?v=r_cP4Xu3OqA&feature=plcp
http://www.youtube.com/watch?v=0mqtLOJKyWc&feature=plcp
কুমার বিশ্বজিত সম্পর্কে গুজব শুনতে শুনতে একসময় আমারও ধারণা হয়েছিল লোকটা বুঝি অনেক গম্ভীর প্রকৃতির । কিন্তু কৌতুক করে যে ভাবে কনসার্টে দর্শদের মাতিয়ে রেখেছিল তাতে আমার সেই ভুল ধারণা ভাঙ্গল । ঘরোয়া পরিবেশের সেই আড্ডাতেও কিন্তু আমার ওকে গম্ভীর মনে হয়নি ।
কেনবেরার গান্গালীন কলেজের কনসার্টে গিয়ে কুমার বিশ্বজিত সম্পর্কে আমার ধারণা পাল্টে গেছে । নামকরা এই কন্ঠ শিল্পী নাকি দেশে বিদেশে তার অনষ্ঠানে দর্শকদের সাথে উগ্র আচরণ করে থাকেন – এমনই একটা ধারণা পেয়ে আসছিলাম পরিচিত দু একজনের কথাতে । কিন্তু হল ভর্তি দর্শকদেরকে কুমার বিশ্বজিতের সাথে গলা মিলিয়ে যে ভাবে গান গাইতে দেখলাম, বয়সে তরুন ভক্তরা স্টেজে গিয়ে যে ভাবে শিল্পীর সাথে সুর মিলিয়ে মাইক্রোফোনে গান গাইল- তা দেখে দর্শকদের সাথে শিল্পীর যে সম্পর্কের কথা শুনে আসছিলাম তার মিল খুঁজে পাচ্ছিলাম না ।
কনসার্টের কুমার বিশ্বজিত আর আড্ডার কুমার বিশ্বজিতের মধ্যে আমি তেমন কোনো তফাৎ পাই নি । আড্ডায় জেনেছি ওর শিল্পী হয়ে বড় হবার প্রতিবন্ধকতার কথা – প্রতিবেশীরা যাতে ওর গানের আওয়াজ শুনতে না পায় সে জন্যে বালতি দিয়ে মাথা ঢেকে ছোট বেলায় গানের রেওয়াজ করতেন বিশ্বজিত । ৫ বছর বয়সে কুমার বিশ্বজিত প্রথম গানের প্রতিযোগিতাতে অংশ গ্রহণ করেন । সেদিনের সেই ছোট্ট বিশ্বজিত আজ সারা পৃথিবীতে গান গেয়ে মাতিয়ে রাখছে দর্শক শ্রোতাদের, মাতিয়ে রাখছে বাঙালীদের । গানে গানে আমাদেরও মাতিয়ে গেল কেনবেরাতে ।
কেনবেরাতে কুমার বিশ্বজিতের কনসার্ট-এর আয়োজনে আর্থিক ঝুকি থাকা স্বত্তেও এ ধরনের একটি সুন্দর এবং সফল কনসার্টের আয়োজন করায় কেনবেরার বাঙ্গালীদের পক্ষ্য থেকে আয়োজক সুমন আর নিউটন কে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ । আগামীতেও ওরা এধরনের সাহসি পদক্ষেপ নিতে পিছুপা হবে না বলে আমার বিশ্বাস ।