Interesting Times

Interesting Times

আমরা হরতাল হরতাল ডেমক্রাচি খেলি

গেল ৪০ বছর ধরে আমরা হরতাল হরতাল ডেমক্রাচি খেলতাছি। হরতাল হরতাল, ভাংচুর ভাংচুর, ডেমক্রাচি লুট পাট, মার্শাল ল লুট পাট, হরতাল হরতাল, ভাংচুর ভাংচুর আবার ডেমক্রাচি লুট পাট – গেল ৪০ বছর ধরে আমরা অবিরাম এই খেলা খেইলাই চলতাছি।
চিন আর ভিয়েতনাম তার উঠে দাড়ানোর ভিত্তি তৈরি কোরলো বহু দশকের যুদ্ধ আর সামাজিক অর্থনৈতিক পরিক্ষা নিরিক্ষার মাধ্যমে। আর আমরা নয় মাসের যুদ্ধ কইরাই ভাইবা ফালাইলাম কেল্লা ফতে – মাইতা উঠলাম একটা কংকালসার দেশের সম্পদ লুট পাটে, আর তার ভাগাভাগির কাইজ্জায়।
ব্রিটিশ শালারা আমাদের উপনিবেশিক ডেমক্রাচি ডেমক্রাচি খেলা শিখিয়ে ছিল, তাদের দস্তরের পুরো ডেমক্রাসি শেখায় নি শালারা, নিজেদের স্বার্থেই। তারা যাওনের সময় বাকি সব রাষ্ট্রিয় ঊপনিবেশিক প্রতিষ্ঠানগুলি অবিকল একই উপনিবেশিয় ধাচে রাইখা, তার মাথার উপর শুধু তাদের তৈরি করা নেতাদের বসাইয়া গেল। তাদের চুপি চুপি বইলা গেলো – আমাদের কথামতো চলো আর আমাদের স্বার্থগুলো দেখে শুনে রাখ, কোনো অসুবিধা হবে না – আমরা ভাল কমিশন দেবো, সে সব টাকা পয়সা আমাদের ব্যাংকেই নিরাপদে রাখতে পারবে, অন্য কেউ ছুতেও পারবে না তোমাদের সে সব টাকা পয়সা। তোমাদের ছেলে মেয়েরা আমাদের দেশে লেখাপড়া করবে, বিলাতি লেবেলের ডিগ্রি নিয়ে তোমাদের পরে তারাই আবার নেতা হবে। আমাদের কথামতো চলো আর আমাদের স্বার্থগুলো দেখে শুনে রাখ আর লুট পাট করো, কোনো অসুবিধা হবে না। তবে, ঘুনাক্ষরেও আমাদের স্বার্থবিরোধি কিছু করতে যেয়ো না, তাহলে কিন্তু ভিষন অসুবিধা হবে তোমাদের – জানোইতো, তোমাদের ক্যান্টনমেন্ট আর সেক্রেটারিয়েট সব আমাদের শিক্ষায় শিক্ষিত লোকে ভর্তি।
এমন মন্ত্র আর এমন এক চাবি মাইরা দিয়া গেলো শালারা – শুরু হইয়া গেলো আমাগো প্রিয় খেলা, প্রথমে ধির লয়ে, তারপর সময়ের সাথে সাথে দ্রুত থেকে দ্রুততর লয়ে চলতেই থাকলো আমাদের অবিরাম হরতাল হরতাল, ভাংচুর ভাংচুর, ডেমক্রাচি লুট পাট, মার্শাল-ল লুট পাট, হরতাল হরতাল, ভাংচুর ভাংচুর আবার ডেমক্রাচি লুট পাট খেলা। চলছেই আমাদের এই খেলা – কি ভিষন নেশা আমাদের এই খেলায়, কি বিষাক্ত এই নেশা, যেনো হেরোইনের নেশায় বুদ হয়ে আছি – বাকি সব পৃথিবি মিথ্যা, দুঃসহ দুর্বিষহ জনজিবনের সব বাস্তবতা মিথ্যা – আবারো তিব্রভাবে চাড়া দিয়ে উঠছে আমাদের এই মরন খেলার নেশা।
গত কয়েক বছরে এই বিষের তিব্রতা আরো বড়েছে। সাথে যুক্ত হয়েছে ১/১১ এর বিষ আর ব্যার্থতা আর বি ডি আর এর ঘঠনা; আরো বেড়েছে জনসংখ্যা, বেকারত্ব, দ্রব্যমুল্য, দারিদ্র আর ধনী দিরিদ্রের বিভৎষ বৈষম্য। পদ্মা, মেঘনা আর যমুনায় গড়িয়েছে অনেক পানি, আর সাগরও এগিয়ে এসেছে আরো খানিকটা। এই বিশ্বব্রহমান্ডে কিছুই বসে থাকে না একযায়গায়।
সেইভাবেই হাডসন, থেমস, দানিয়ুব ইয়াংসি, দজলা আর নিল নদেও গড়িয়েছে অনেক পানি। গ্লোবাল ফাইনানসিয়াল ক্রাইসিস জনান দিয়ে গেল সভ্যতার পালা বদলের বিশাল ঝড়ের আগাম সঙ্কেত মাত্র। তিঊনেশিয়া, মিশর, সিরিয়া আর লিবিয়ার তথাকথিত গনঊত্থান তার সেই ঝড়ের প্রাথমিক সাজ সজ্জা মাত্র; মধ্যপ্রাচ্যের এই প্রাথমিক সাজ সজ্যায়ই বেকার হয়ে ঘরে ফিরবে লক্ষ লক্ষ শ্রমজিবি বাঙ্গালি। তাদের রেমিন্টেন্সের ভাটায় বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের রিজার্ভ যখন শুন্যের দিকে ধাবিত হবে, তখনি মরার উপর খাড়ার ঘায়ের মতো বিশ্ব বাজারে তেলের দাম ঊঠতেই থাকবে – $200, $300, $400/barrel কোথায় যাবে কেউ জানে না! বিশ্বের তেলের সাপ্লাই পিক করে গেছে, এখন ক্রম্বর্দ্ধমান চাহিদার সাথে সাথে এর দাম বাড়া ছাড়া আর কোনো উপায় নাই। লিবিয়ার হামলাটা সেই কারনেই, তার তেল কব্জা করার জন্য, যেমনটা করছিল ইরাকে – গাদ্দাফি, সাদ্দাম ছুতা মাত্র – মূল লক্ষ্

য চিন ভারত শক্তিশালি হয়ে ঊঠার আগে আর তেলের দাম আকাশমুখি হওয়ার আগেই তেল সমৃদ্ধ জায়গাগুলারে নিজেদের কন্ট্রলে নিয়া নেয়া।

যাইহোক, সব মিলাইয়া যেই অবস্থার দিকে আমরা যাইতেছি তাতে এইবারো খালেদা হাসিনা আমাগো নিয়া তাদের সনাতন হরতাল হরতাল খেলা শরু করবে ঠিকই – কিন্তু, এইবার খেলা বোধ হয় তারা শেষ করতে পারবে না, হয়তো এইবারেরে খেলাই তাদের শেষ কইরা দিবে। উপরে বর্নিত সম্মিলিত প্রেক্ষাপটে এইবারের খেলা যে কি দির্ঘস্থায়ি ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে তা আমরা কেউ হয়তো কল্পনাও করতে পারতেছিনা – তাই আমরা খালেদা হাসিনারে নিয়া চিন্তিত।
আমার ধারনা এইবারেরে খেলায় রাষ্ট্রযন্ত্রের ক্ষয়ি ভঙ্গুর প্রতিষ্ঠাঙ্গুলি সব চুড়মাড় হইয়া ভাইঙ্গা পড়বে; সাধারন অসাধারন, অস্ত্রধারি অস্ত্রহিন, ইউনিফরম বিহিন ইউনিফরম ধারি সবাই এই সঙ্ঘাতে জড়াইয়া পরবে – উপরে বর্নিত সম্মিলিত প্রেক্ষাপটের প্রতিক্রিয়ায় আর শাসরুদ্ধকর জিবনের দুর্বিষহতায়ই এমনটা ঘটবে।
এই ভয়াবহ সঙ্ঘাতের ভিতর দিয়ে সহসা যদি নতুন কোনো অসম্ভব সাহসি ও সক্ষম নেতৃত্বের উত্থান না হয়, তবে আমাদের এই নরকবাস যে কতোদিনের হবে বলা মুস্কিল।
আমরা না পারলেও, বহুদিন পর হয়তো প্রকৃতি একদিন তার নিজের সময়ে, নিজের মতো কইরাই আমদের সোনার বাংলা ফিরাইয়া দিবে। আমাদের নাতি পুতিদের বা আরো দুরাগত বংশধরদের কাছে।
কোনো জাতির এইরকম ক্রান্তিকালকে পশ্চিমারা বলে interesting times, আর হাজার হাজার বছরের অভিজ্ঞতায় চাইনিজরা বলে it is a curse to be born in interesting times.

2011/pdf/Hortal_Hortal_Democrachy_119950589.pdf ( B) 


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment