প্রিয় লেখকের পক্ষপাতিত্ব! – জন মার্টিন
এক:
ইন্টারনেট আমাদের অনেক কিছু বদলিয়ে দিয়েছে। সারা পৃথিবী হাতের মুঠোয় এনে দিলেও মানুষের সাথে মানুষের দূরত্বটি অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা এখন একজন আরেকজনকে না দেখেও গড়ে তুলি বন্ধুত্ব, পরিবার,প্রতিবেশী । সিম সিটি বলে একটি কম্পিউটার গেম আছে যেখানে একজন তার নিজের কল্পনায় নিজের বাড়ী, পরিবার,প্রতিবেশী তৈরী করে। একে বলে ভারচুয়াল কমিউনিটি-যেখানে মানুষ একজন আরেক জনের সাথে কখনই মুখোমুখি হয় না কিন্তু গড়ে তুলে তাদের যোগাযোগ। কম্পিউটারের এই অদৃশ্য জগৎটিতে মিথ্যে কথা বলার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। যেহেতু এক জন আরেক জনের সাথে কথনোই মুখোমুখি হয় না, দেখা করে না অতএব অন্য জনের ছবি দিয়ে দিব্যি অন্য নামে এক জন আরেক জনের সাথে বছরের পর বছর যোগাযোগ চালিয়ে যেতে পারে । ইন্টারনেট আরেকটি কাজ খুব সহজ করে দিয়েছে। এক সময় পত্রিকা বেড় করতে গেলে লেখা সংগ্রহ , প্রেসে গিয়ে কম্পোস করা , ছাপানো এবং তার পর তা বিক্রি বা পোষ্ট করার এক বিশাল আয়োজন ছিল। খরচের বিষয়টিও ছিল বিশাল। আর এখন ঘড়ে একটি কম্পিউটার , ইন্টারনেটের কানেকশন এবং সদিচ্ছাই একটি ওয়েব সাইট চালানোর জন্য যথেষ্ট এবং এই ওয়েব সাইট গুলো কমিউনিটি ওয়েব সাইট হিসাবে কমিউনিটির সাথে একটি ভারচুয়্যাল যোগাযোগা তৈরী করে। কিন্তু ওয়েব সাইটের তদারকি এবং কন্ট্রোল এর বিষয়টি সব সময়ই থাকে ঐ ওয়েব মাষ্টার এর হাতে। তিনিই সর্বেসর্বা। তার ইচ্ছা অনিচ্ছা, কখনো কখনো স্বেচ্ছাচারিতা ওয়েব সাইটটিকে পরিচালনা করলেও সেই কমিউনিটির কিন্ত কিছু বলার বা করার থাকে না। কারন সকল কন্ট্রোল ঐ ওয়েব মাষ্টারের হাতে। যেহেতু কমিউনিটির সাথে যোগাযোগাটি অদৃশ্য তাই কমিউনিটির কাছে ওয়েবমাষ্টারেরএকাউন্টিবিলিটি কিন্তু তত শক্ত নয়। জবাবদিহিতা নেই। দৃষ্টিভঙ্গিটা এমন যে ’ইচ্ছে হলে পড়েন- না পড়লেও আপত্তি নেই’। কারন এখানে পত্রিকা বিক্রির বিষয়টা মূখ্য নয়। তাই কমিউনিটি বা পাঠক অনেকটা জিম্মি হয়ে থাকে ।প্রিয় অষ্ট্রেলিয়া ডট কম কে ও আমি ঠিক একই ফর্মূলায় ভাবতাম। কিন্তু ঐ পাঁচ বছরের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে আমি মূহুর্তের জন্য একটু থমকে দাড়ালাম। জন্মদিনে মানুষ আসে শুভেচ্ছা জানাতে, কেক খেতে । কিন্তু এই অনুষ্ঠানে দেখলাম প্রায় অর্ধেক মানুষই জন্মদিন উদযাপন করছে । এ যেন তাদের নিজেদেরই জন্ম দিন! বিষয়টি কি? ইন্টারনেটের হিসাব অনুযায়ী এখানে তো যোগাযোগটি অদৃশ্য হওয়া উচিত। কিন্তু যে ভাবে ইতিহাসের বিভিন্ন চরিত্র দিয়ে অনুষ্ঠানটি সাজানো হয়েছে এবং যে পরিমান মানুষ সেই অনুষাঠানে অংশ গ্রহন করেছে তাতে ইন্টারনেটের সাইবার নেইবারহুডের হিসাবটি ঠিক মিলে না।
মানুষের সাথে মানুষের সরাসরি যোগাযোগটি দেখে মনে হলো প্রিয় অষ্ট্রেলিয়া ডট কম এর ওয়েবমাষ্টার এখন ইচ্ছা করলেই তার ইচ্ছা মাফিক এই ওয়েব সাইটি আর চালাতে পারবেন না। এটা এখন আর তার হাতে নেই। সাহাদাত মানিক জেনে শুনে এই কাজ টি করেছেন কিনা জানিনা। তবে এই অনুষ্ঠানটি আমার মনের কিছু দ্বিধা আর শংকা দূর করেছে। মানুষের সাথে মানুষের সরাসরি যোগাযোগের শক্তির কোন বিকল্প নেই। গত পাঁচ বছরে প্রিয় অষ্ট্রেলিয়া ডট কম এই কাজটি যে চমৎকার ভাবে করেছে তা জন্মদিনের অনুষ্ঠানে বুঝা গ্যাছে। পুরো দলটিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। কেউ কেউ বলবে, ‘ওয়েবসাইটের আবার ঘটা করে জন্মদিন করার কি দরকার’? ওদের কথা আপনাদের শোনার দরকার নেই। জন্মদিন মানে নিজেদের মনে করিয়ে দেয়া গত এক বছরে কি করেছি ? কেমন কাটিয়েছি এবং আগামী বছর কেমন কাটাবো ? আপনাদের আগামী দিনগুলো ভালো কাটুক। মানুষতো আশা নিয়েই বাঁচে।
দুই:
আমি প্রিয় অষ্ট্রেলিয়া ডট কমে লিখিনি। তার পরও শাহাদাত মানিক যখন জানালো পাঠকের জরীপে যে তিন জন প্রাথমিক ভাবে প্রিয় লেখকের তালিকায় যোগ হয়েছে তার মধ্যে আমি একজন তখন একটু সংকোচিত বোধ করেছি। এই সংকোচ থেকে মুক্তি পাবার জন্য বলেছিলাম যে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যাবো। কিন্তু অনুষ্ঠানে যখন গিয়ে দেখলাম প্রিয় লেখকের পুরুষ্কারটি আমার জন্য বরাদ্দ হয়েছে তখন সংকোচটি বদলে অসস্থিতে পরিবর্তিত হয়েছিল । যারা ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচন করেছেন তাদের প্রতি আমার কৃতঞ্জতা। লেখকের কাছে পাঠকগন দেবতাতুল্য। আমরা আমাদের লেখা দিয়ে তাদের তুষ্ট করতে চাই কেবল তাদের সন্তুষ্টির জন্য। কিন্তু প্রবাসী বাঙ্গালী দেবতারা বড় কঠিন। আমরা একজন আরেক জনকে নানা অজুহাতে নানা ভাবে আহত করতে এত পচ্ছন্দ করি যে ভাল কিছুর জন্য প্রশংসা করার কথা ভুলে যাই । এমন একটা দম বন্ধ করা আবস্থা থেকে প্রিয় অষ্ট্রেলিয়া ডট কমের আয়োজন আমাদের এক পশলা বৃষ্টির কথা মনে করিয়ে দেয়। এই সম্মামনার আয়োজনটি আপনারা না করলেও পারতেন । কিন্তু তারপর ও করেছেন। আমাদের পাঠকদের সেই দূর্নাম থেকে বের হবার সুযোগ দিয়েছেন। আপনাদের ওয়েব সাইটে লিখিনি। লিখেছি বাংলা সিডনি ডট কম এ। তারপর ও পাঠকের সেই মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে আপনারা আপনাদের অবস্থানকে আরো পরিচ্ছন্ন করেছেন। আপনাদের প্রতি যে আমার পক্ষপাতিত্ব জন্মাচ্ছে !
পুনশ্চ: পাঁচ বছর -কম সময় নয়। এবার বোধহয় পত্রিকার গেটআপ এর দিকে একটু নজর দেয়া দরকার। প্রথমেই বলব এর ফন্টটি বদলানো যায় কিনা? যে ফন্টটিতে বাংলা লেখা ছাপা হয় তাতে মনে হয় ‘বিদেশী বাংলা’ পড়ছি। আর একটি কথা- প্রথম পাতার চারপাশ জুড়ে এত সব লিংক যে মাঝে মাঝে খেই হারিয়ে ফেলি। সমস্যাগুলো যদি শুধু আমার হয় তাহলে সব ফেরত নিয়ে নিলাম। আর আমার দলে যদি দু-একজনও থাকে তাহলে বিষয়টি ভেবে দেখবেন কি?
জন মার্টিন
মনোবিঞ্জানী
probashimartins@gmail.com
Related Articles
A Message from Mirza Shamsuzzaman, Former High Commissioner to Australia, Adviser Ouderland memorial committee
Ouderland Memorial Committee in Canberra Distinguished Guests,Excellencies,Ladies & Gentlemen,Assalamu Alaikum and Good afternoon, First of all please allow me to
স্বপ্ন-বিধায়ক (অন্তরা ১)
মা ছোটোবেলায় সবসময় একটা কথা বলতেন,” বাবা মেয়েদের সবসময় সন্মান করে চলবা, নিজের বোনের মত দেখবা, তুমি একা তোমার তো
মিয়ানমারের গণহত্যা : অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে বিশেষ আলোকচিত্র প্রদর্শনী
‘ফিল্মস ফর পিস ফাউন্ডেশন ’‘ব্রুটালিটি এগেইনস্ট হিউম্যানিটি’ শিরোনামে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের উইন্ডহ্যাম পার্ক কমিউনিটি সেন্টারে ৬ জানুয়ারী ২০১৮ এই বিশেষ প্রদর্শনীর