দেশের টান – চৌধুরী মোহাঃ সদর উদ্দিন
বিদেশে থাকার নানা যন্ত্রণা আর বিড়ম্বনার মাঝে একটা হচ্ছে বিনিশুতায় বাধা দেশের টান। এই টানা টানি ব্যাপার গুলি আমার কাছে সব সময়ই একটু গোলমেলে লাগে। আনেক ভেবে দেখেছি এই সব টানাটানি না মানে ব্যাকারন না মানে গনিত। আর এর প্রকাশও হয় কোন নিয়মের তোয়াক্কা না মেনে । সেকারনেই বোধ হয় নিশ্চিত পরাজয়ের জ্ঞানটাও আমাদের পিছাতে পারে না পতাকা হাতে দেশের ক্রিকেট দলকে গলা ফাটিয়ে সমর্থন করা থেকে। কেও এই টানা টানির চাপে নির্জনে শুনেন দেশের গান, কেও উদ্বগ্রিব হয়ে বসে থাকেন কবে আসবে নুতন নাটকের ডিভিডি, কেও কাজের ফাঁকে সময় পেলেই চেস্টা করেন দেশের পত্রিকার নেট ভার্সনে চোখ বুলাতে, আর দেশে টেলিফোনের কথা নাইবা বল্লাম, আমার গিন্নির মাথা এবং হূদয়ের মাঝে এই টানা টানির বন্ধের সবচেয়ে বড় ঔষধ হছে টেলিফোন। তবে কারও কারও মধ্যে এই টানটা জন্মদেয় দেশের জন্য কিছু করার এক অদ্ভুত আকর্ষনের। এমনি আকর্ষনের টানে বিভর হয়ে নিরবে কাজ করে চলেছেন অস্ট্রেলিয়ার দুই কোনে বাস করা দুই বাংলদেশী, ক্যানবেরার বোরহান উদ্দিন (বিজয়) আর ডারুইনের শামীম ইকবাল ফারুকি। শুরুটা বিজয়কে দিয়ে। এই টানা টানির চাপে বেশ কিছুদিন থেকেই উনি খুজে ফিরছিলেন এর পরিত্রানের পথ। অবশেষে এক অস্ট্রেলিয়ান Fread Hyde পথ দেখালেন কিভাবে এই টানা টানি থেকে মুক্তি পওয়া যায়। ফ্রেডের বয়স ৯০এর কোঠায়, বছরের একটা লম্বা সময় তিনি কাটান বাংলাদেশের ভোলা অঞ্চলে। তৈরি করে চলেছেন আগামী দিনের দেশ গড়ার কারিগর তৈরীর কারখানা – স্কুল। তার প্রতিষ্ঠিত এনজিও চলে এই অস্ট্রেলিয়ানদের চাঁদায় www.fredhyde.org। ফ্রেডের এই কাজের জন্য গত বছর উনি পেয়েছেন অর্ডার অফ অস্ট্রেলিয়ানের সন্মান। বাংলাদেশ তাকে কি সন্মান দিয়েছে সে প্রসংগটা না হয় আজ থাক। বিজয় ফ্রেডকে সাহায্য করার জন্য প্রতিষ্ঠিত করলেন লেটস ওয়ারক ফর বাংলাদেশের। তাদের উদেশ্য এখন একটাই, ভোলায় নতুন স্কুল তৈরি করা। একটা স্কুল তৈরিতে দরকার ৮০০০ ডলারের। টার্গেট ৮০ জনের বছরে ১০০ ডলারের প্রতিশ্রুতি। ব্যাপারটা আমার কাছে একটু হাস্যকর রকমের সহজ মনে হয়েছে কিন্তু বাস্তবতাটা মনে হয় একটু আলাদা।
এই টানাটানি রোগটা আবার ছোয়াচেও মনে হয়। নাহলে প্রায় ৪০০০ কিলোমিটার দুরে বাস করা হাইস্কুল শিক্ষক ইকবাল ভাই এর দ্বারা আক্রান্ত হলেন কিভাবে। ডারুউইন শহরে বাংলাভাষাভাষি মাত্র ৩৫টার মতন পরিবারের বাস। সবগুলি পরিবার আংশগ্রহনে রাজি হলেও আসে ৩৫০০ ডলার, অতএব ব্যাপারটা একটু দুঃসাহসিক মনে হয়। তবে ইকবাল ভাইয়ের টানাটানি রোগটা একটু কঠিন প্রকৃতির বলেই মনে হয়। বার্ডফ্লুর মতই মিউটেডের ভাইরাস। এর মাঝেই ২১ টা প্রতিশ্রুতি তৈরি। তবে উনি যেকাজটা করলেন সেটা হলে মহা মিউটেডেট এই ভাইরাস দিয়ে অক্রান্ত করে ফেল্লেন তার স্কুলের সবাইকে। পার্মাস্টন হাই তাই প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফেল্লো অর্ধেক খরচের। আর এই ৪০০০ ডলারের জন্য তারা এখন করে চলেছে একটার পর একটা ফান্ড তুলার অভিনব ব্যবস্থা। সম্প্রতি ১২০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার মাঝে ১০০-জন জনপ্রতি ১২ ডলার করে লাঞ্চ করলেন একদিন। খাবারটা অবশ্য তৈরি করলেন কয়জন বাংলাদেশি। ক্লাস সেভেন করছে নাটক আর সবাই সেই নাটক দেখবে টিকেট কেটে। এক জন শিক্ষক তৈরি করেছেন বাংলাদেশি কুড়ে ঘরের আদলে দান বাক্স। স্কুলের ভবিষ্যত পরিকল্পনা হচ্ছে ভোলায় স্কুলটা তৈরি হলে ছাত্রদের নিয়ে সেটা দেখতে যাওয়া। এর মাঝে এ নিয়ে কথা বার্তা চলছে ফ্রেডের সাথে। ডারুউইনের একমাত্র পত্রিকা NT News এনিয়ে ছাপিয়েছে খবর।
আমি জানিনা এদেশে আমরা কতজন বাংলাদেশি বাস করি। তবে আমি এখন উপায় খুজছি কিভাবে এই ভাইরাসটাকে সবার মাঝে সংক্রামিত করা যায় তারই পথ। করও জানা থাকলে আমাকে জানাবেন।
চৌধুরী মোহাঃ সদর উদ্দিন
ডারুউইন
১৭/০৯/২০০৯