ধন্যবাদ নেলসন ম্যান্ডেলা

ধন্যবাদ নেলসন ম্যান্ডেলা

জীবনের যে সময়টা একজন তরুণ সবচেয়ে উপভোগ্য হিসেবে পার করে, সে সময়েই তিনি সংগ্রামে নেমেছিলেন আফ্রিকার কালো মানুষদের হয়ে। এই সংগ্রাম চালাতে গিয়েই তার ওপর নেমে আসে দক্ষিণ আফ্রিকার তৎকালীন বর্ণবাদী সরকারের খড়্গ। এরপর প্রায় তিন দশক তাকে বিভিন্ন কারাপ্রকোষ্ঠের অন্ধকারে আটক রাখা হয়। সশ্রম কারাদ-ের অংশ হিসেবে চুনাপাথর খনিতেও কাজ করাতে বাধ্য করে। কিন্তু এতটুকুর জন্যও বিচলিত হননি এ মানুষটি। চার দেয়ালে আটকে রেখেও স্বপ্নচারী ম্যান্ডেলাকে মেরে ফেলতে পারেনি বর্ণবাদী শাসকগোষ্ঠী। সব অত্যাচার নীরবে সহ্য করে আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। পদে পদে নাজেহাল এবং বৈষম্যের শিকার হওয়া আফ্রিকার কালো মানুষদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন_ শুধু নির্যাতিত এবং অত্যাচারের শিকার হওয়ার জন্যই তাদের জন্ম নয়, তাদের জন্ম আর দশটা শ্বেতাঙ্গের মতো সবধরনের সুযোগ-সুবিধা নিয়েই পৃথিবীর আলো-বাতাস গ্রহণ করার।

এই স্বপ্নের বীজ সব কালো মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন বলেই ২৭টি বছর কারাগারে কাটিয়ে একদিন বের হয়ে এসেছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলা। ১৯৯৪ সালের নির্বাচনে সব বর্ণের মানুষ দক্ষিণ আফ্রিকার ভার তুলে দেয় ম্যান্ডেলার হাতে। কিন্তু বেশিদিন তিনি ক্ষমতা অাঁকড়ে থাকেননি। উত্তরসূরিকে ক্ষমতা হস্তান্তর করেই অবসরে চলে যান। বিনিময়ে সম্ভবত খুব কমই পেয়েছেন তিনি। তাই বলে এভাবে রিক্তহস্তে কেন চলে যাবেন মহানায়ক! মৃত্যুঞ্জয়ী এ মহানায়ককেই উৎসর্গ করে একটি ধন্যবাদ-জ্ঞাপন পত্র লিখেছেন আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলেসের তুলান বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপিকা এবং ম্যান্ডেলার একনিষ্ঠ ভক্ত মেলিসা হ্যারিস পেরি। যদিও এ চিঠিটি যখন লেখা হচ্ছিল তখন সব কিছুর ঊধর্ে্ব মাদিবা। ৫ ডিসেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকার তথা পৃথিবীর বঞ্চিত মানুষ এই মহাপুরুষ নেলসন ম্যান্ডেলাকে হারিয়েছে। তার মহাপ্রয়াণের পর তাই আকাশের ঠিকানায় মেলিসা হ্যারিস পেরি যে ধন্যবাদ-জ্ঞাপন চিঠিটি ছিল এ রকম_

প্রিয় নেলসন ম্যান্ডেলা

আপনার মহাপ্রয়াণ উপলক্ষে লাখো মানুষ শোকাহত। আর এ শোক এবং হারানোর বেদনা তাদের লেখাতেই স্পষ্ট। কথায়ও স্পষ্ট। কিন্তু আমি আমার পক্ষ থেকে দুটি শব্দ আপনার উদ্দেশে বলতে চাই_ ‘ধন্যবাদ আপনাকে’। এ জন্য যে, আপনি শোষকের পদতলে পিষ্ট হওয়া মানবতাকে রক্ষা করেছেন। কিন্তু তা করতে গিয়েই আপনাকে অত্যাচারী শাসকের আঘাতে জর্জরিত হতে হয়েছে। প্রায় তিন দশক আপনাকে অন্ধকার কারা প্রকোষ্ঠে থাকতে হয়েছে, কিন্তু তারা আপনাকে দমাতে পারেনি। আপনি ঘনীভূত অন্ধকারের কারাকক্ষ থেকে আলোর অভিযাত্রী হয়ে বেরিয়ে এসেছেন। আর আপনার আলোয় উদ্ভাসিত হয় শুধু আফ্রিকায় নয়, পুরো পৃথিবী। এই আলোর পথ ধরেই পৃথিবীর শৃঙ্খলবদ্ধ মানুষ জানতে শেখে এবং বুঝতে শেখে_ নিয়মের অধীন হয়ে দাসত্বের শৃঙ্খলে কখনো নিজেকে আবদ্ধ রাখা উচিত নয়। স্বকীয় অধিকার রক্ষার্থে নিয়মের বাইরে গিয়ে কথা বলতে হবে। আর এ কথা বলতে গিয়ে যদি শত বাধা আসে, তাহলে নির্দ্বিধায় সে বাধা জয় করে মানবতাকে সবার ওপরেই স্থান দিতে হবে।

আর এই মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়েই তো আপনি দক্ষিণ আফ্রিকার তৎকালীন বর্ণবাদী সরকারকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন, অন্যায়ভাবে শাসিত হতে এবং বঞ্চনা মাথা পেতে নিতে আপনার জন্ম হয়নি। আপনার জন্ম হয়েছিল মানবতার পতাকা ওড়াতে। সাদা-কালোর বাহ্যিক পার্থক্য ভেদ করে অন্তরের রঙে রঙিন হওয়ার স্বপ্ন দেখাতে। আর এই স্বপ্ন বেশ স্বার্থকভাবেই দেখাতে পেরেছেন আপনি। কারণ পৃথিবীতে এখন কেউ আর তেমন সাদা আর কালোর মধ্যে পার্থক্য নিয়ে কথা বলে না। কালো বর্ণের কারণে কেউ তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় না। সবচেয়ে বড় কথা, আপনার আত্মত্যাগের মাধ্যমেই শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ একই সুতায় আসতে পেরেছে। বিবর্ণ হতে থাকা মানবতা তার নির্ভরযোগ্য আশ্রয় লাভ করেছে। ‘ধন্যবাদ মহানায়ক’।

Source: http://www.jjdin.com/?view=details&archiev=yes&arch_date=12-12-2013&type=single&pub_no=684&cat_id=1&menu_id=15&news_type_id=1&index=1


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment