দুই নেত্রীর ফোনালাপ

দুই নেত্রীর ফোনালাপ

গত দুই দিন ধরে বাজার গরম দুই নেত্রীর ফোনালাপ নিয়ে। এক সময় পাশে বসে ছবি তুলেছেন, রাজপথে এক সাথে আন্দোলন করেছেন, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে মিলিটারির ধমক কিংবা বিদেশি শক্তির দাওয়াত ছাড়া কোথাও তাঁদের আলাপ হয়নি। যেটুকু মিথষ্ক্রিয়া হয়েছে, সেটাও হয়েছে মেঠো ভাষণ কিংবা সাংবাদিক সম্মেলনে পূর্বলিখিত বক্তৃতার মাধ্যমে। এই প্রেক্ষাপট বিচারে দীর্ঘ ৩৭ মিনিট ধরে তাঁদের সরাসরি আলাপ তাক লাগানোর মতো ব্যাপার।

তার চাইতেও তাক লাগানোর মতো ব্যাপার হলো দেশবাসীর সেই বক্তব্য শুনতে পাওয়ার সৌভাগ্য হওয়া। যারা এই সুযোগ (?) থেকে বঞ্চিত আছেন, তাদের জন্য রইলো রেকর্ডিং-এর লিংক। জীবন থেকে ৩৭ মিনিট অহেতুক ঝড়ে গেলে আমি দায়ী নই।

http://www.jagobd.com/seikh-hasina-khaleda-zia.html

আমরা এতটাই হতভাগা দেশ যে শীর্ষ দুই নেত্রীর আলাপ আমাদের জীবনে স্যার আইজাক নিউটনের আপেলের মতোই গুরুত্ববহ। তাঁদের ব্যাক্তিগত আলাপ যখন শুনেই ফেললাম, তখন সেই আলাপ নিয়ে আলোচনার ধৃষ্টটাটুকুও দেখিয়ে ফেলি নাহয়। যষ্মিনদেশে যদাচরণ।

আপন বলে কিছু নেই

আমি পেটের দায়ে তথ্য-নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করি। পশ্চিমা বিশ্বে তথ্য খুবই ব্যাক্তিগত একটি বিষয়, কোনো প্রকারের ছুতায়ই তার গোপনীয়তা ব্যাহত করা যায় না। একেবারে নিরীহ কথোপকথন রেকর্ড করার আগেও বারংবার সাবধান করা হয়, ওয়ারেন্ট ব্যতীত কারও অজ্ঞাতে কিছু রেকর্ড করা যায় না, লিখিত অনুমতি ব্যতীত কথোপকথন প্রকাশ করা যায় না, আঘাত বা ভীতি ব্যবহার করে আদায় করা কোনো প্রকারের স্বীকারোক্তি আদালতে ব্যবহার করা যায় না, অন্যায় ভাবে পাওয়া কোনো কিছু কোনো গণমাধ্যমে প্রচার করা যায় না।

দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশে এই বিষয়ে তিল পরিমাণ সচেতনতা নেই। ১৬ কোটি মানুষের এই দেশে অনেক কিছুই আছে, নেই শুধু নিজস্ব তথ্য বা আলাপ গোপন রাখার অধিকার। এই প্রসঙ্গে আমাদের চিন্তাধারা এখনও “End justifies the means” প্রথায় সীমাবদ্ধ। গত সামরিক-তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে রাজনৈতিক নেতাদের ধড়-পাকড় করা হয়েছে, পত্রিকায় তাদের বিভিন্ন রকম স্বীকারোক্তির বিস্তারিত ছাপানো হয়েছে। গত কিছুদিন ধরে বিভিন্ন রকম ‘Leak’ প্রকাশ করা হয়েছে। এবার প্রকাশিত হলো দেশের শীর্ষ দুই নেত্রীর ব্যাক্তিগত আলাপ। এই রকম কিছু প্রকাশ করার আগে যেই প্রক্রিয়া অনুসরণ প্রয়োজন, তা কি করা হয়েছে?

প্রকাশের প্রসঙ্গ দ্বিতীয়। তার চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ হলো রেকর্ডিং-এর প্রসঙ্গ। বাংলাদেশে কি এই মুহূর্তে যেকোনো ফোনালাপই রেকর্ড করা হয়? এমন কি শীর্ষ পর্যায়ের আলাপেও? নাকি এই আলাপ নেত্রীদের যে-দুই সহকারীর ফোনের মাধ্যমে হয়েছে শুধু তাদের ফোনই রেকর্ড করা হয়? এই রেকর্ডিং বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে প্রকাশের আগের বেলায় তথ্য মন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, যারা রেকর্ড করে তাদের কাছ থেকে চেয়ে নেবেন। এই ভিডিওতে তাঁর নিজের কণ্ঠেই শুনুন।

http://channeli.priyo.com/node/1856

প্রশ্ন হলো, কারা এই রেকর্ডিং এজেন্সি? সারা বিশ্বে এই মুহূর্তে তোলপাড় চলছে আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থা NSA-র অবৈধ রেকর্ডিং নিয়ে। বাংলাদেশে কি বৈধ ভাবেই এই কাজ করা হচ্ছে? এই আলোচনার ১৬ মিনিটের মাথায় দুই নেত্রীই স্পষ্টত বলছেন যে তাঁদের পাশে ক্যামেরা নেই, রেকর্ড করা হচ্ছে না। তবুও কীভাবে এই রেকর্ডিং বাজারে আসে?

রেড ফোন

রাষ্ট্রের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের সরাসরি যোগাযোগের জন্য রেড ফোন স্থাপিত থাকে। কী দুঃখের বিষয়, এই ফোনটি কাজ করে কি না সেটাও জানার উপায় নেই। অবশ্য যেই দেশে দুই রাজনৈতিক দলের যোগাযোগ শুধু নিজেদের মধ্যে বৈবাহিক সম্বন্ধ তৈরিতে সীমিত, সেখানে এই ফোন না থাকলেই কী? তবুও আলাপের বিশাল একটা অংশ জুড়ে থাকলো রেড ফোন। আর কিছুদূর চললে হয়তো মুর্দা ফোন উঠে দাঁড়িয়ে গান গাওয়া শুরু করতো।

সে যাই হোক না কেন, দুই নেত্রীর আলাপ হয়েছে, বেশ খোলামেলা ভাবেই হয়েছে। অতীতে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সরাসরি বিতর্কের আহ্বান প্রত্যাখ্যাত হয়েছে অনেক বার। ভবিষ্যতে কি সেটা দেখার আশা করতে পারি আমরা? আলাপ ছাড়াও চলছে না, আবার কোনো আলাপই গোপন না, অতএব খোলামেলা ভাবেই না কেন?

শিষ্টাচারের মৃত্যু

বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক পদের প্রতি শ্রদ্ধার চর্চা গড়ে উঠেনি। চূড়ান্ত বিরোধের মুহূর্তেও কোনো সভ্য দেশে শীর্ষ পদের কাউকে অসম্মান করে কথা বলা হয় না। বিশেষ করে বিদেশি কেউ তেমন কিছু করতে এলে সব দল তার প্রতিবাদ করে। শিষ্টাচারের সেই চর্চা থেকে আমরা এখনও বহু দূরে দাঁড়িয়ে আছি। কিছুদিন আগে সিএনএন-এর সাংবাদিক ক্রিশ্চিয়ান আমানপুর যখন প্রধানমন্ত্রীকে ধমক দিচ্ছিলেন, বক্তব্য শেষ করতে দিচ্ছিলেন না, তখন সেই ভিডিও দেখে অনেকেই তালি বাজিয়েছেন। একই ভাবে এই কথোপকথনেও শুনতে পেলাম প্রধানমন্ত্রীকে রীতিমতো ধমক দিয়ে কথা বলা হচ্ছে, তাঁকে বাক্য শেষ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

ক্রান্তিকালীন সময়ে বিরোধীদলীয় নেতার কণ্ঠে এই রকম সুর অত্যন্ত বেদনাদায়ক, অগ্রহণযোগ্য, এবং শিষ্টাচার বহির্ভূত। তবে এই রকম মনোভাব যে সম্পূর্ণ একতরফা, তা নয়। কিছুদিন আগেই সংসদে শেখ সেলিম ভেংচি কেটে কটূক্তি করেছিলেন বিরোধীদলীয় নেত্রীর প্রতি। জানি না সেই বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করা হয়েছিলো কি না।

https://www.facebook.com/photo.php?v=531160116966345

আমাদের দুই নেত্রী পরষ্পরকে আপা-আপনি করে সম্বোধন করছিলেন। হয়তো এর পাশাপাশি নিজেদের পদবী অনুযায়ী সম্বোধন করাও শুরু করা জরুরী। পাশ্চাত্যে অনেক দিনের পুরনো বন্ধুও রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীকে নাম ধরে ডাকার বদলে পদবী উল্লেখ করে সম্বোধন করেন। এর মূলে আছে সেই পদবীর প্রতি শ্রদ্ধা, যা চিরচেনা সম্বোধনের মাঝে প্রায়ই হারিয়ে যায়।

প্রধানমন্ত্রীর ধৈর্য

মুদ্রার অন্য পিঠে আছে প্রধানমন্ত্রীর ধৈর্য করে কথা বলা। রাজনৈতিক মতাদর্শ যার যেমনই হোক না কেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেক উত্তপ্ত বিতণ্ডার মধ্যেও ঠাণ্ডা মাথায় কথা বলেছেন। মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রী এমন কিছু কথা বলেছেন (এবং এমন উত্তাপের সাথে বলেছেন) যাতে মাথা ঠাণ্ডা রাখা দুষ্কর। তবুও প্রধানমন্ত্রী ধৈর্যের সাথেই কথা বলেছেন, এবং ঘুরে-ফিরে শুধুই হরতাল প্রত্যাহারের অনুরোধে সীমিত রেখেছেন কথোপকথন। দুঃখের বিষয় (এবং সামাজিক গণমাধ্যমের পর্যবেক্ষণ) হলো, অনেকেই উদ্ধত আচরণকে শক্তিমত্তা ও ব্যাক্তিত্বের নিদর্শন হিসাবে দেখে থাকেন। গুরুত্ববহ এই কথোপকথনে প্রধানমন্ত্রী নিজেও উত্তপ্ত বাক্যবাণে জড়িয়ে না গিয়ে বরং বিরোধীদলীয় নেত্রীকে তাঁর অসন্তোষ প্রকাশের সুযোগ দিয়েছেন, এই সু-কীর্তি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

পরিকল্পিত গণ-আত্মহত্যা

খুব, খুব, খুব স্বাভাবিক কারণেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলা। তিনি নিজে সেই আক্রমণে আহত হয়েছেন, তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন অনেকে, মারা গেছেন আইভী রহমান সহ অনেকে। বিরোধীদলীয় নেত্রী এর পেছনে সকল দায় সরাসরি উড়িয়ে দিলেন, বলে দিলেন এই হত্যাযজ্ঞ আওয়ামী লীগের নিজেরই তৈরি। এই উদ্ভট এবং অগ্রহণযোগ্য দাবির মুখে প্রধানমন্ত্রী শুধুই হতাশা ব্যক্ত করেছেন এবং দীর্ঘশ্বাস ফেলেছেন।

একটি দেশের বিরোধীদলীয় শীর্ষ রাজনীতিকদের দিনের আলোয় গ্রেনেড ছুঁড়ে মেরে ফেলার চেষ্টা অকল্পনীয়। সেটাকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পরিকল্পিত গণ-আত্মহত্যা হিসাবে দেখেন, এই চিন্তাটা বেশ অস্বস্তিকর। এই উক্তি এমন এক সময়ে এলো যখন তাঁর রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতে ইসলামী দেশব্যাপি বোমা হামলা শুরু করেছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সাথে জড়িত বিচারক ও আইনজীবিদের বাড়িতে আক্রমণ করছে, তাঁদের পক্ষের পোষা বুদ্ধিজীবি ফরহাদ মজহারের বলছেন একাত্তর টেলিভিশনের মতো গণমাধ্যমের অফিসে আরও বেশি করে বোমা হামলা করা উচিত। ভিডিও দেখুন এখানে।

https://www.facebook.com/photo.php?v=186982521487238

বিএনপি-জামায়াতের উচ্চশিক্ষিত সমর্থকরা যেমনটাই দাবি করুন না কেন, বিরোধীদলীয় নেত্রীর এই উক্তিতে এটা খুবই স্পষ্ট যে আগ্রাসী রাজনীতি সম্পর্কে তাঁদের অবস্থান বদলায়নি। কে জানে আরও কতো গণ-আত্মহত্যা অপেক্ষা করছে আগামী দিনগুলোয়।

“নতুন কালচার”

কথোপকথনে বিরোধীদলীয় নেত্রী বেশ কয়েকবার রাজনীতিতে “নতুন কালচার” চালু করার কথা বলেছেন। উল্লেখযোগ্য হলো, তিনি এই কথাগুলো বলেছেন রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের (যুদ্ধাপরাধ, ২১শে আগস্ট) প্রসঙ্গ উঠলেই। এই প্রসঙ্গ অনুধাবনের জন্য বিএনপি-র রাজনৈতিক বক্তব্যের সাম্প্রতিক বিবর্তনের দিকে তাকানো প্রয়োজন।

দল হিসাবে বিএনপি কোনো কালেই রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের বিচারের পক্ষে ছিলো না। ১৯৭১, ১৯৭৫, ১৯৭৭-৮১, ২০০৪, ইত্যাদি সময়কালের বিভিন্ন রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের বিচারে তারা দলগত ভাবে অনীহ। রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডকে বিচারের ঊর্ধ্বে রাখার এই সংস্কৃতি বহু বছর ধরে চাপা পড়ে ছিলো জিয়াউর রহমানের cult-এর আড়ালে। সাম্প্রতিক কালে এই cult-এ ভাটা পড়েছে, তাই প্রচারের মাত্রাও বদলেছে। সর্বোচ্চ অপরাধগুলোকে আইন ও বিচারের ঊর্ধ্বে রাখাকে বিএনপি-পন্থীরা reconciliation নামের ভারি শব্দ ব্যবহার করে পাশা কাটাতে সচেষ্ট। তাদের ভাষায়, জিয়াউর রহমান একমাত্র রাষ্ট্রনেতা যিনি ‘anything that works’ পন্থা অবলম্বন করে রাজাকার-মুক্তিযোদ্ধার সংমিশ্রণে একটি বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন। ক্ষমতায় এলে সেভাবেই সকলে মিলে-মিশে দেশ গড়া হবে। বিরোধীদলীয় নেত্রীর কথায় সেই বহুল-চর্চিত বক্তব্যেরই প্রতিধ্বনি শুনতে পেলাম।

এই ধরনের দাবি বিবেচনা করা সম্ভব শুধু এবং শুধুমাত্র সদিচ্ছার অকাট্য প্রমাণ পাওয়া গেলে। অথচ ১৯৯৬-এর ১৫ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর খুনিকে নির্বাচিত করানো হয়েছে বিএনপি-র ব্যানারে, ২০০১-এর নির্বাচনের সময় থেকে শুরু হওয়া রাজাকার-তোষণ নিয়ে তো নতুন করে বলার নেই কিছু। এই অবস্থায় এই “নতুন কালচার”-এর সংজ্ঞা স্পষ্ট হওয়া জরুরী। আজকের বাংলাদেশে শীর্ষ ঋণখেলাপীদের বিচার-আচার না হওয়া একটি সুপ্রতিষ্ঠিত সংস্কৃতি। হয়তো আগামীতে আমরা এরই ধারাবাহিকতায় ঘৃণ্যতম অপরাধের বিচার না হওয়ার সংস্কৃতি পেতে যাচ্ছি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে তো বিরোধীদলীয় নেত্রী ঘোষণা দিয়েই দিয়েছেন সবাইকে মুক্ত করার।

এইচ টি ইমাম

প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বেশ বড় বাক্যবোমা ফাটিয়েছিলেন “তিনি বলেছেন মুক্তিযোদ্ধারা গণহত্যা করেছে বলে” উদ্ধৃতিটির মাধ্যমে। রেকর্ডকৃত কথোপকথন শুনে ধারণা হয় যে বিরোধীদলীয় নেত্রী ১৯৭১-এর ডিসেম্বর থেকে আওয়ামী লীগের শাসনামলের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের কথা বলেছেন। এর পাশাপাশি “আওয়ামী লীগের যুদ্ধাপরাধী”-দের বিচার না করার বহুল-চর্চিত অভিযোগের পুনরুত্থাপন করেছেন। এ-সময় প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করে নিশ্চিত হয়ে নেন ১৯৭১-এ মুক্তিযোদ্ধারা গণহত্যা করেছে বলে দাবি করা হচ্ছে কি না।

কথোপকথনের এই ভগ্নাংশ শুনেই জনাব এইচ টি ইমাম বেশ গুরুতর একটি দাবি করেছেন প্রকাশ্যে। তিনি কি প্রধানমন্ত্রী বা রেকর্ডকৃত অডিও থেকে এই প্রসঙ্গে নিশ্চিত হয়ে নিতে পারেন না? বাংলাদেশের গনতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো গত দুই আমল ধরে ‘উপদেষ্টাতন্ত্র’-র উত্থান। নির্বাচিত সংসদ সদস্য, মন্ত্রিসভার সদস্য, কিংবা দলের শীর্ষ নেতাদের তুলনায় মুষ্টিমেয় উপদেষ্টার ক্ষমতা অনেক বেশি। জনাব এইচ টি ইমাম সেই অতি-ভাগ্যবানদের একজন। হয়তো সেই অধিকার থেকেই তিনি যাচাই-বাছাইয়ের আগেই এত বড় দাবি করেছেন প্রকাশ্যে। জানি না এর সমাপ্তি কোথায়।

(শর্তসাপেক্ষে) সময় যেখানে স্থির

প্রধানমন্ত্রী ঘুরে-ফিরে বারবার অনুরোধ করছিলেন হরতাল প্রত্যাহারের। তিনি বলছিলেন যে আল্টিমেটামের ভেতরেই ফোন করেছেন, এখন যেন জনসভায় দেওয়া কথা অনুযায়ী হরতাল প্রত্যাহার করা হয়। এর জবাবে বিরোধীদলীয় নেত্রী বলছিলেন যে শরিক দলগুলোর সাথে আলোচনার সময় নেই। তিনি আরও বললেন যে নিজের ডাকা হরতালে তিনি নিজেই ঘর থেকে বের হন না। অথচ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির কথা এলে বললেন যে দাবি মেনে নিলে তৎক্ষণাৎ হরতাল উঠিয়ে নেবেন। এই দেশে ক্ষমতাবানদের জন্য নিয়ম আসলেই ভিন্ন। তাঁদের মন জুগিয়ে চললে তাঁরা যাদুবলে সময়কে স্থির করে দিতে পারেন।

দলকানা আচরণ

রাজনৈতিক দলের ছায়াতলে নির্বাচিত হলে সেই দলের প্রতি অনুরক্তি থাকা স্বাভাবিক। ছোটো-বড় বিভিন্ন বিষয়ে দলের লোককে বাড়তি সুযোগ দেওয়াও স্বাভাবিক। এই পক্ষপাত খুব একটা আপত্তিকর কিছু না। দলের লোকের অপরাধের প্রতি অন্ধ হয়ে যাওয়াটাই সমস্যা। দুই নেত্রীর কথোপকথনে হতভাগ্য বিশ্বজিতের নাম উঠে এলে সবাই পুরনো সেই ক্ষতে আবার আঘাত পেয়েছেন। দুঃখের বিষয়, সেই হত্যাকাণ্ডের মতো আরও সব ব্যাপারে দুই নেত্রীই দুঃখজনক ভাবে দলকানা। কথায় যেমনটা বলে, “The more things change, the more they stay the same.”

নাস্তিকতার ধারণা বদ্ধমূল

আসছে নির্বাচনের একটি বড় অংশ জুড়ে থাকবে ধর্মীয় উন্মাদনা। যেই সময়ে আমাদের সভ্যতার পথে এগিয়ে যাওয়ার কথা, সেই সময়ে আমরা আরও শক্তভাবে জাপটে ধরছি উগ্রতাকে। বিরোধীদলীয় নেত্রী বেশ কটূ ভাবেই কটাক্ষ করলেন প্রধানমন্ত্রীর ধর্মবিশ্বাসকে, হেফাজতে ইসলামের ধ্বংসযজ্ঞ ও কোরআন পুড়ানোর দায় দিলেন প্রধানমন্ত্রীর ঘাড়ে। নির্বাচনের ফর্মুলা যেমনই হোক না কেন, এই সত্য স্পষ্ট যে আসছে দিনগুলোয় সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প আরও ছড়াবে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের পাসপোর্ট-ভিসা ঠিক করার সময় আসছে মনে হয়।

দুই দণ্ড শান্তি

ধুন্ধুমার ঝগড়ায় ভরা এই কথোপকথনের মধ্যেও আশার ঝলক লুকিয়ে আছে কিছু। ফোনালাপের কিছুদিন আগ থেকেই দুই দল বিভিন্ন রকম ছাড় দিয়েছে। আলাপের বিষয়বস্তুতে উঠে এসেছে পারষ্পরিক অবিশ্বাস এবং অনাস্থার প্রায় সবগুলো কারণ। বিশ্বপ্রভু আমেরিকার রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজিনা কোনো প্রকার আমন্ত্রণ ছাড়াই ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রতিবেশি দেশগুলোয়, পৃথকভাবে গোপন বৈঠক করছেন রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে। মধ্যস্থতার ছুতায় বিদেশিদের হস্তক্ষেপের চেয়ে ঝগড়া করে হলেও নিজেদের সমস্যা নিজে সমাধানের চেষ্টা করা উচিত। তাঁদের রাজনীতিতে যত পার্থক্যই থাকুক না কেন, অন্তত কথা বলার জন্য তাঁরা দুই জনই ধন্যবাদের দাবিদার। আপাতত এটুকু আমাদের জন্য নিউটনের আপেল হয়ে রইলো নাহয়।

Source: http://www.sachalayatan.com/ishtiaqrouf/50479


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment