পরিবার বলছে তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে
নিউইয়র্কে নাশকতার চেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশি তরুণ কাজী মোহাম্মদ রেজওয়ানুল আহসান নাফিসের পরিবার বলছে, তাঁকে কোনোভাবে ফাঁসানো হয়েছে। কিন্তু কেন, কী কারণে, কারা তাঁকে ফাঁসাল, তা স্পষ্ট নয় পরিবারের কাছে।
রাজধানীর উত্তর যাত্রাবাড়ীতে রেজওয়ানুল আহসানের মা-বাবা থাকেন। এটি রেজওয়ানুলের নানাবাড়ি। এখানেই তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা। তাঁর বাবা কাজী মোহাম্মদ আহসানউল্লাহ ন্যাশনাল ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট, মা রোকেয়া সিদ্দিকী গৃহিণী। দুই ভাইবোনের মধ্যে রেজওয়ানুল ছোট। বোন চিকিৎসক। গতকাল এই বাসায় কথা হয় তাঁর বাবা ও অন্য স্বজনদের সঙ্গে।
বাবা আহসানউল্লাহ বলেন, রেজওয়ানুল ২০০৬ সালে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। এইচএসসিতে জিপিএ ৪ দশমিক ৮৮ পান তিনি। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ভর্তি হন নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে।
নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে রেজওয়ানুল ইলেকট্রনিক অ্যান্ড টেলিকম প্রকৌশল বিভাগে ভর্তি হন। আট সেমিস্টার শেষ করে ২০১১ সালের ফল সেমিস্টার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তিনি আর যোগাযোগ করেননি।
আহসানউল্লাহ বলেন, রেজওয়ানুল পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। কিন্তু কখনো কোনো মৌলবাদী বা উগ্রপন্থী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। খুবই অন্তর্মুখী ছিলেন, সারা দিন ঘরে বসে কম্পিউটারে গেমস খেলতেন।
পরিবারের সদস্যরা জানান, এ বছরের ৮ জানুয়ারি পড়াশোনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান রেজওয়ানুল। অর্ধেক শিক্ষাবৃত্তিতে ভর্তি হন মিসৌরি স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে পড়ছিলেন তিনি। সেখানে একটি বাঙালি পরিবারের সঙ্গে থাকতেন তিনি। প্রথম কয়েক মাস পড়াশোনার জন্য দেশ থেকে অর্থ পাঠাতে হয়েছে। সেখানে এক সেমিস্টার শেষ করেই রেজওয়ানুল আরেকটি কোর্স করার জন্য নিউইয়র্কে যান। ৯ অক্টোবর থেকে ক্লাস শুরু হয়। সেখানে ‘মুসলিম পিৎজা হাউস’ নামের একটি রেস্তোরাঁয় সম্প্রতি কাজ পেয়েছিলেন রেজওয়ানুল।
রেজওয়ানুলের বাবার দাবি, তাঁর ছেলে এমন কাজ করতেই পারেন না। তাঁকে অবশ্যই কোনো একটি পক্ষ ফাঁসিয়েছে। তিনি বিষয়টি স্পষ্ট করতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।
রেজওয়ানুল নিউইয়র্কে যে দম্পতির সঙ্গে থাকতেন, পুলিশ তাঁদের ফোন বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে পরিবারের সদস্যরা তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। তাঁর বাবা বলেন, ‘রেজওয়ানুল গাড়ি চালাতে পারত না। যুক্তরাষ্ট্রে তার কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্সও ছিল না। তাহলে কী করে সে নকল বিস্ফোরক বোঝাই ভ্যান চালিয়ে এল, তা বোধগম্য নয়।’
স্বজনেরা জানান, গতকাল থেকে তাঁরা রেজওয়ানুলের ফেসবুকে ঢুকতে পারছেন না। তাঁর নামে গতকাল দুপুরে কে বা কারা একটি ফেসবুক পেজ খুলেছে। সেখানে বলা হচ্ছে, ‘নাফিস একজন অসুস্থ সন্ত্রাসবাদী।’
বাংলাদেশকে জানানো হয়নি: গতকাল সন্ধ্যায় নিউইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা খবরটি জেনেছেন গণমাধ্যম থেকে। আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কিছু জানতে পারেননি। তবে নিউইয়র্কে কর্মরত কনসাল জেনারেল মনিরুল ইসলাম এ বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘যা ঘটেছে, তাতে আমরা যুগপৎ উদ্বিগ্ন ও বিস্মিত। বিষয়টি খুবই লজ্জার।’
অভিযুক্ত রেজওয়ানুল আহসানকে আইনি সহায়তা দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কি না, জানতে চাইলে জনাব মোমেন বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক তথ্য পাওয়ার পর সরকারের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ডিবির উপকমিশনার (দক্ষিণ) মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, রেজওয়ানুলের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে ডিবির একটি দল গতকাল তাঁদের বাড়িতে গিয়েছিল। রেজওয়ানুল দেশে কোনো মৌলবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িয়েছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাঁর পরিবারের সদস্য, স্বজন ও বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলছে ডিবি।
Link requested by Anim Rahman | original source at http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-10-19/news/299263