Bhai Girish Chandra Sen

Bhai Girish Chandra Sen

ভাই গিরিশচন্দ্র – নিশ্চিহ্নের পথে কোরআন অনুবাদকের বাড়ি
সুমন বর্মণ, নরসিংদী
ভাই গিরিশচন্দ্র সেন। পবিত্র কোরআন শরিফের প্রথম বাংলা অনুবাদক। এ মহাগ্রন্থের অনুবাদ করে কেবল বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যেই নয়, সারা বিশ্বেই ব্যাপক সাড়া ফেলেছিলেন তিনি। জন্মেছিলেন নরসিংদীর সদর উপজেলার পাঁচদোনা গ্রামের পৈতৃক বাড়িতে আনুমানিক ১৮৩৫ বা ১৮৩৬ সালে। আবার তাঁর ইচ্ছে অনুযায়ী শেষকৃত্যও হয়েছিল এ বাড়িতেই। সংরক্ষণের অভাবে মহান এ ব্যক্তির স্মৃতিবিজড়িত জরাজীর্ণ বাড়িটি ও তাঁর সমাধিস্থল এখন প্রায় নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে। বেদখল হয়ে গেছে জায়গা-জমিও। আগামী ১৫ আগস্ট রবিবার তাঁর শততম মৃত্যুবার্ষিকী। এ দিবসটি পালনেও স্থানীয় প্রশাসন এমনকি কোনো সংগঠন কোনো উদ্যোগ নিয়েছে, এমন কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

গিরিশচন্দ্র সেন ছিলেন একাধারে সাহিত্যিক, গবেষক ও ভাষাবিদ। তিনি প্রায় সব ধর্মগ্রন্থ নিয়েই গবেষণা করেছেন। ১৮৮০ থেকে ১৮৮৬ সাল পর্যন্ত একটানা সাত বছর কাজ করে পবিত্র কোরআনের বাংলা অনুবাদ সম্পন্ন করেন তিনি। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩৩টি। এর মধ্যে ২০টি ইসলাম ধর্মবিষয়ক। তিনি ব্রাহ্মধর্ম প্রচারক হিসেবে ‘ভাই’ খেতাবে ভূষিত হন। আবার আরবি-ফার্সি ভাষার ব্যুৎপত্তি সন্ধান ও পবিত্র কোরআনের প্রথম অনুবাদক হিসেবে লাভ করেন ‘মৌলভী’ খেতাব। তিনি ১৯১০ সালের ১৫ আগস্ট ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

সরেজমিনে পাঁচদোনায় তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ি বলতে কেবল চার দেয়ালের একটি পুরাতন দালান। তাও কোনো রকমে দাঁড়িয়ে আছে। ছাদ ধসে গেছে। ভেতরে জমেছে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। দেওয়াল ঘিরে ক্রমেই বেড়ে উঠছে লতাপাতা। ঘরে ঢোকার কোনো প্রবেশ পথও নেই আর এখন। ঘরের সামনেই ‘তাজমেরী সাইকেল স্টোর’ নামে একটি রিকশার গ্যারেজ। এর পাশে সদর উপজেলার মেহেরপাড়া ও পাঁচদোনা ইউনিয়ন ভূমি অফিস। তাঁর শেষকৃত্যের জায়গায় নির্মিত মঠটিও জরাজীর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।

স্থানীয়রা জানায়, গিরিশচন্দ্র সেনের ঘরটি ছাড়া বাড়িটির আশপাশের জায়গা-জমি তাঁর উত্তরসূরিরা বিক্রি করে দিয়েছে, আবার কোনোটা বেদখল হয়ে গেছে। তাঁর সমাধিস্থল মঠের আশপাশের জমিও ইতিমধ্যে বেদখল হয়ে গেছে। ওই বাড়ির পশ্চিম পাশে বসবাস করছেন তপন কুমার সিংহের পরিবার। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা ফনিভূষণ সিংহ ৩০ বছর আগে রঞ্জিত কুমার সেনের কাছ থেকে এখানকার ২৭ শতাংশ জমি কিনেন। এরপর থেকে আমরা এখানে বসবাস করছি।’

নিজেকে গিরিশচন্দ্রের বংশধর দাবি করে রঞ্জিত কুমার সেনের ভাগ্নে প্রবাল দত্ত গুপ্ত বলেন, ‘যাঁরা অংশীদার তাঁদের অংশটুকু বিক্রি করে দিয়েছেন, কিন্তু গিরিশচন্দ্রের কোনো জায়গা বিক্রি করা হয়নি। আশপাশের অনেকেই জমি দখল করে রেখেছে।’

স্থানীয়রা জানান, ‘দেশ-বিদেশ থেকে লোকজন এসে বাড়িটির করুণ অবস্থা দেখে হতাশ হয়ে ফিরে যায়।’

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক অমৃত বাড়ৈ বলেন, ‘বাড়িটিতে বর্তমানে ৩ শতাংশ জমি অক্ষত রয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় প্রকাশিত ঐতিহ্য স্থাপনা সংরক্ষণ তালিকায় এ বাড়িটিও রয়েছে। সরকার উদ্যোগ নিলে জমি অধিগ্রহণ করে এ বাড়িটি সংরক্ষণ করা যাবে।’

স্থানীয়দের দাবি, গিরিশচন্দ্র সেনের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি ও সমাধিসৌধ রক্ষায় সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেবে। এছাড়া নরসিংদীতে গিরিশচন্দ্র সেনের একটি স্মৃতি জাদুঘর তৈরি এবং যথাযথভাবে তাঁর জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী উদ্যাপন হলে নতুন প্রজন্ম এ মহান ব্যক্তি সম্পর্কে জানতে পারবে।

Link requestd by Anim Rahman | Original source

http://en.wikipedia.org/wiki/Girish_Chandra_Sen


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment